স্কুলের শিক্ষক প্রশ্নফাঁস ব্যবসায় এখন কোটিপতি!

Home Page » জাতীয় » স্কুলের শিক্ষক প্রশ্নফাঁস ব্যবসায় এখন কোটিপতি!
বৃহস্পতিবার ● ১৯ মে ২০২২


সহকারী শিক্ষক ইকবাল হোসেন

বঙ্গ-নিউজ: ইকবাল হোসেনের গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায়। ২০০৮ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। নিজ এলাকায় শিক্ষকতা করার সময় ২০১৫ সালে অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মচারী আলতাফ হোসেন নামক এক ব্যক্তির সাথে পরিচয় হয়। তার কাছ থেকে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় উর্ত্তীণের নিশ্চয়তা দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার কৌশল রপ্ত করেন ইকবাল।

আলতাফের ছিল একটি বিশাল একটা চক্র। করোনা মহামারীর সময় আলতাফ হোসেন মারা গেলে ইকবাল এই প্রতারক চক্রটি পরিচালনা করা শুরু করেন। এরপর অল্প দিনের ব্যবধানেই কোটিপতি বনে গেছেন প্রাইমারি স্কুলের এই সহকারী শিক্ষক। কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়াসহ বিলাসবহুল বাড়িও করেছেন নিজ এলাকায়।

এই সব কিছুই করেছেন সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করার মাধ্যমে। হিডেন স্পাই ওয়্যারলেস কিট ব্যবহার করে বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণের নিশ্চয়তা দিয়ে চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে হাতিয়েছেন লাখ লাখ টাকা।

তার বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা ও বেশ কয়েকটি সাধারণ ডায়েরি রয়েছে।

র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং-এর পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, আগামী ২০ মে অনুষ্ঠিত হবে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা। এই পরীক্ষাকে সামনে রেখে প্রতারক চক্রগুলো তাদের তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে বলে র‌্যাব গোয়েন্দা সূত্রে জানতে পারে।

এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল বুধবার রাতে র‌্যাব-২ এর একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানী ও তার আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের মূলহোতা মো. ইকবাল হোসেন (৪২) এবং তার ৩ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃত অন্যরা হলেন- রমিজ মৃধা (৩০), মো. নজরুল ইসলাম (৫০) ও মো. মোদাচ্ছের হোসেন (৬২)।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, এই চক্রটি প্রথমে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি নিয়োগ পরীক্ষা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে। পরবর্তীতে ওই নিয়োগ পরীক্ষার স্থান ও পরীক্ষার গার্ড সম্পর্কে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে। তারপর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চাকরিপ্রত্যাশীদের খুঁজে বের করে ১০-১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে পরীক্ষায় পাশ ও চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখাত।

আগ্রহী পরীক্ষার্থীদের ডিজিটাল ডিভাইসগুলো প্রদান করে এর ব্যবহারবিধি নিয়ে প্রশিক্ষণ শেষে প্রাথমিকভাবে এক বা দুই লাখ টাকা জামানত হিসেবে গ্রহণ করত। অবশিষ্ট টাকা চাকরি পাওয়ার পর পরিশোধ করবে বলে চুক্তি করত। এভাবে তারা বিগত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।

বিদেশ থেকে আনা ডিজিটাল ডিভাইসগুলো মূলত দুটি অংশে বিভক্ত। ডিভাইসটির একটি অংশ পরীক্ষার্থীদের কানের ভিতর এবং অটোমেটিক কল রিসিভ হওয়া সীম লাগানো অপর অংশটি শরীরের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ কায়দায় লুকিয়ে তাদের পরীক্ষার হলে প্রবেশ করাত। পরবর্তীতে পরীক্ষার্থীরা নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ছবি তাদের নিকট পাঠাত।

প্রতারক চক্রটি প্রশ্নপত্রের উত্তর দেওয়ার জন্য পূর্ব থেকেই মেধাবী শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে একটি টিম প্রস্তুত রাখত। অতঃপর এই চক্রের সদস্যরা পরীক্ষার হল থেকে পাঠানো প্রশ্নপত্রের উত্তরসমূহ মেধাবী শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত টিমের মাধ্যমে খুঁজে বের করে চুক্তিবদ্ধ পরীক্ষার্থীদের কাছে পাঠাতো।

বাংলাদেশ সময়: ২১:০৯:৫২ ● ৪৭৩ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ