শনিবার ● ১৩ আগস্ট ২০২২

NUB EEE Research Cell এর আয়োজনে বিশ্বযুব দিবস পালিত

Home Page » শিক্ষাঙ্গন » NUB EEE Research Cell এর আয়োজনে বিশ্বযুব দিবস পালিত
শনিবার ● ১৩ আগস্ট ২০২২


NUB EEE Research Cell এর আয়োজনে বিশ্বযুব দিবস পালিত

১২ আগস্ট বিশ্ব যুব দিবস এর স্লোগান হল সবার জন্য একটা পৃথিবী গড়ি ۔ মূলত বর্তমান গ্লোবাল সমস্যা যেমন বৈশ্বিক উষ্ণতা, জলবায়ু পরিবর্তন, ফসিল ফুয়েল এর সীমাবদ্ধতা, পরিবেশ দূষণ ইত্যাদির ফলে পৃথিবী হুমকির সম্মুখীন ۔ এ থেকে টেকসই পৃথিবী গড়তে সব বয়সের মানুষের উদ্যোগ নিতে আহ্বান করা হয়েছে এবারের 2022 বিশ্ব যুব দিবসের স্লোগানে ۔ সেই রূপরেখা বাস্তবায়নে NUB EEE Research cell, Dept of EEE, Northern University Bangladesh এর ছাত্র ছাত্রীরা শিক্ষকদের অনুপ্রেৰণায় সারা বিশ্বকে টেকসই পৃথিবী নির্মাণের বার্তা ও জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতার চিত্র পৌঁছে দিতে আজ এই দিবস টিকে পালন করেছে বার্তাবহ প্রতীকী মুকচিত্রের মাধ্যমে۔

ছবিতে দেখা যাচ্ছে ছাত্রছাত্রীরা মুখে কাপড় গুঁজে তাদের গলায় বৈদ্যুতিক পাখার সাথে ফাঁসির দড়ি বেধে হাটু গেড়ে আছেন। ছবিতে ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে তারা ICE বা প্রতীকী বরফের টুকরোর উপর দাঁড়িয়ে আছে এবং ফাঁসির দড়ির দণ্ডটি হল প্রতীকী গ্রিন হাউজ গ্যাস আর ফসিল ফুয়েল এর অভাবে জ্বালানী সংকটে বৈদ্যুতিক পাখাগুলো অকেজো। আর কার্বন ইমিশনে বায়ু দূষিত হবার ফলে অক্সিজেন এর অভাবে নিঃশাস নিতে কষ্ট ফলে মুখে কাপড় গোজার প্রতীকী চিত্র۔

তাদের এহেন আচরণের কারন হলো, তারা বিশ্ব ব্যাপী এই বার্তা দিতে চায় যে, গ্লোবাল ওয়ার্মিং আমাদের জন্য ধ্বংস স্বরুপ । আত্মহত্যা স্বরুপ যা ফসিল ফুয়েল ব্যবহার প্রধান কারণ জলবায়ু পরিবর্তন তথা গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমনে ۔ কোনো না কোনো সময় তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারনে বরফ গলে জল হয়ে যাবে , তার ফল অবশ্যই গলায় ফাঁসি, পানিতে ডুবে ও দূষিত বায়ুতে শাসকষ্টে অবশ্যম্ভাবী মৃত্যু ঠিক মৃত্যু নয়, আত্মহত্যা । বিশ্ব উষ্ণায়ন নিঃসন্দেহে পৃথিবীর জন্য অভিশাপ , আমরা নিজেরা নিজেদের চাহিদা পুরনের জন্য বিশ্বকে উত্তপ্ত করে তুলছি প্রতিনিয়ত । জলবায়ু পরিবর্তনের অবহেলা যে মৃত্যু নয় আত্মহত্যা তা এই ছবি দ্বারা সুস্পষ্ট । আমার আপনার সহ সমগ্র বিশ্বের ভাবা উচিত জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে এখনই । কারণ আমাদের হাতে আর বেশি সময় নেই এই একটাই পৃথিবীকে বাঁচাবার۔ এজন্য নবায়নযোগ্য শক্তির ওপর জোর দিতে হবে۔

বিশ্বের জনসংখ্যা যেমন বাড়ছে তেমনি আমাদের ঘর-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও জনপদগুলোকে শক্তিশালী করার জন্য শক্তির চাহিদাও বাড়ছে। একবিংশ শতাব্দীতে শক্তি বা জ্বালানি নিরাপত্তা যেকোনো দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দেশের উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে শক্তির নিরবচ্ছিন্ন সরবারাহ আবশ্যক। সাধারণত উৎসের উপর নির্ভর করে মোটামুটি জীবাশ্মশক্তি ও নবায়নযোগ্যশক্তিতে বিভক্ত করা যায় শক্তিকে। জীবাশ্মশক্তি ও নবায়নযোগ্যশক্তির মধ্যে মূল পার্থক্য হলো জ্বালানি বা শক্তি উৎসটির নবায়নযোগ্যতা অর্থাৎ যে জ্বালানিটি ব্যবহার করা হবে সেটি যেনো সহজে নিঃশেষ না হয়। শক্তির টেকসই স্তর বজায় রাখতে এবং আমাদের গ্রহকে জলবায়ু পরিবর্তন থেকে রক্ষা করার জন্য নবায়নযোগ্যশক্তির উৎসগুলোর উদ্ভাবন ও এর সম্প্রসারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, পারমাণবিক শক্তি ও কয়লার মতো জ্বীবাশ্ম জ্বালানিগুলোর নিঃশেষ হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও সৌরশক্তি, পানিবিদ্যুৎ ও বায়ুশক্তির মতো নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎসের সহসা নিঃশেষ হওয়ার আশঙ্কা নেই। ফলে, আগামীর পৃথিবীকে বাঁচাতে হলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি বা শক্তির কোনো বিকল্প নেই।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি বা শক্তি হলো এমন শক্তির উৎস, যা স্বল্প সময়ের ব্যবধানে পুনরায় ব্যবহার করা যায় এবং এর ফলে শক্তির উৎসটি নিঃশেষ হয়ে যায় না। বিভিন্ন প্রাকৃতিক উৎস যেমন, সূর্যের আলো ও তাপ, বায়ুপ্রবাহ, পানিপ্রবাহ, জৈবশক্তি (বায়োগ্যাস, বায়োম্যাস, বায়োফুয়েল), ভূ-তাপ, সমুদ্রতরঙ্গ, সমুদ্রতাপ, জোয়ারভাটা, শহুরে আবর্জনা, হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল ইত্যাদি নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়। নবায়নযোগ্য শক্তিকে কখনো কখনো সবুজশক্তি বা পরিষ্কারশক্তি নামেও অভিহিত করা হয়। শিল্পবিপ্লবের পর থেকে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে জীবাশ্ম জ্বালানি প্রাধান্য পেয়েছে। এটি বিশ্বব্যাপী জলবায়ুর পাশাপাশি মানবস্বাস্থ্যের জন্য বড় প্রভাব ফেলে। শক্তির জন্য জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে তিন-চতুর্থাংশ বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ঘটে এবং এটা স্থানীয় বায়ু দূষণের জন্য দায়ী, যা এমন এক স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করে, যাতে প্রতি বছর কমপক্ষে ৫ মিলিয়ন মানুষ মৃত্যুবরণ করে।

বৈশ্বিক উষ্ণতা যা পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ। সূর্য থেকে পৃথিবীতে আলো আসে, কিছু অংশ প্রতিফলিত হয়ে ফিরে যায়, কিছুটা পৃথিবী কর্তৃক শোষিত হয়। ভূপৃষ্ঠে আলো শোষিত হয়ে ফলস্বরূপ তাপ উৎপাদন করে। আমরা যে আলো দেখি সেটা ক্ষুদ্র তরঙ্গ। আর উৎপাদন করে দীর্ঘ তরঙ্গ (লং ওয়েভ ইনফ্রারেড রেডিয়েশন)। এই দীর্ঘ তরঙ্গ অধিকাংশই আবার মহাশূন্যে ফিরে যায়। যে অংশ যেতে পারে না সেটাই গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর জন্য দায়ী কিছু গ্যাস যেমন: জলীয় বাষ্প,কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন সিএফসি (ক্লোরো ফ্লোরো কার্বন)। এই গ্যাস সমূহ তাপকে ধারণ করে,আটকে রাখে এবং ভূপৃষ্ঠ গরম হতে ভূমিকা পালন করে। এজন্য আমরা এই গ্যাসগুলোকে গ্রিন হাউজ গ্যাস বলে থাকি। গ্রিন হাউজ যেমন কৃত্রিম ভাবে তাপ ধরে রাখে। এই গ্যাস সমূহ একই কাজ করে ভূপৃষ্ঠে উত্তপ্ত করতে ভূমিকা রাখে। কার্বন ডাই অক্সাইড প্রাকৃতিক ভাবে (আগ্নেয়গিরির উদ্গীরণ, প্রাণিদের নিঃশ্বাসের ফলে সৃষ্ট) এবং গাছপালা পোড়ানোর মধ্য দিয়ে উৎপন্ন হয়। মিথেন - কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস, তেল পোড়ানোর মধ্য দিয়ে মিথেন ও কার্বন উৎপন্ন হয়। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইড ও অন্যান্য গ্রিন হাউস গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে যাওয়াকে এক কথায় বলে কার্বন এমিশন। ফসিল ফুয়েল অর্থাৎ কয়লা, পেট্রোল, ডিজেল যত বেশি পোড়ানো হয় কার্বন এমিশন ততই বাড়ে। আর এর জন্যই ঘটে জলবায়ুর পরিবর্তন। জীবাষ্ম জ্বালানি হলো, শক্তির এমন উৎস, যা শত শহস্র বছর ধরে জীবন্ত প্রাণির অবশিষ্টাংশ মাটির নীচে চাপা পড়ে থাকতে থাকতে তৈরি হয়৷ কয়লা বা তেলের মতো মাটির নীচ থেকে পাওয়া শক্তির উৎসের ব্যবহার পৃথিবীতে গ্রীন হাউস গ্যাস নিঃসরণের অন্যতম কারণ৷ সময়ের সাথে সাথে যতই জ্বালানির প্রয়োজন বাড়ছে, ততই বেশি পরিমাণে ব্যবহৃত হচ্ছে এ জীবাষ্ম জ্বালানি এবং সেই সাথে বাড়ছে গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ৷ ফলশ্রুতিতে আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে পৃথিবীর উত্তাপ৷

সামগ্রিক ভাবে দেখতে গেলে বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্রের জলস্তর যেমন বৃদ্ধি পায়, বৃষ্টিপাতের ধরনের পরিবর্তন হয়, ম্য‌ালেরিয়া এবং নতুন ধরনের রোগব্য‌াধির প্রকোপ۔ বিরূপ আবহাওয়া (হঠাৎ ঘূর্ণিঝড়,শুষ্কতা,বনে আগুন, দাবানল, ভূমিকম্প۔۔ প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের সূচনা) যেমনঃ ব্রাজিলের আমাজন যা পৃথিবীর ফুসফুস, অস্ট্রেলিয়াতে বনের পর বনে, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ও এশিয়ার পাম বাগানগুলোতে সাম্প্রতি দাবানল এই উষ্ণতার কারণ যার ফলে বনকে বন ও প্রাণী পুড়ে ছারখার۔ যে ক্ষতি পৃথিবী কখনো পোষাতে পারবে না আর । সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি যা এই বছরে বিশ্বের বৃহত্তম হিমবাহে ভাঙন ধরেছে ও বিপদ ঘনাচ্ছে মালদ্বীপ, শ্রীলংকা, ভারত ও বাংলাদেশের মত দেশের, মৃত্যুর মুখে এ ধরিত্রী (মেরুর বরফ গলে, জলীয় বাষ্পের কারণে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি,৫০ সে.মি. বৃদ্ধি পেলে পৃথিবীর অধিকাংশ শহর তলিয়ে যাবে, বিজ্ঞানীরা আশংকা করছেন এরকম চলতে থাকলে,একবিংশ শতাব্দীতে সমুদ্রের উচ্চতা ৯-৮৮ সে.মি. বৃদ্ধি পেতে পারে)। জৈববৈচিত্র ধ্বংস (আগামী ৩০ বছরে ২৫% স্তন্যপায়ী এবং ১২% পাখির প্রজাতি পৃথিবী থেকে চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যাবে)। কৃষির ক্ষতি- অনেক এলাকা শুষ্ক হয়ে মরুভূমি হয়ে যেতে পারে)। রোগবালাইয়ের বিস্তার যা এখন বৈশ্বিক মহামারী রূপে খ্যাত মরণঘাতী করোনা যা জীবদেহ থেকে ছড়িয়েছে এরকম মহামারী ( করোনা,ডেঙ্গু,ইয়েলো ফিভার, এনসেফালিটিস সহ নানা রোগের প্রাদুর্ভাব হতে পারে) আরো একটি কারণে সারা বিশ্বে ইহা প্রাদুর্ভাব ঘটাতে পারে কারণ এন্টার্কটিকা, গ্রিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড ও দুই মেরুর বরফ অঞ্চলে অনেক জীবের মৃতদেহ বছরের পর বছর ধরে ফ্রিজিং হয়ে আছে যা বরফ গলতে শুরু করলে পানির মাধ্যমে সারা বিশ্বে মড়ক ছড়িয়ে পড়বে ও মহামারীর সম্ভাবনা নিশ্চিত ۔ যুদ্ধ এবং বিবাদের সূত্রপাত: তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হবে সুপেয় পানির দখল নিয়ে। কারণ ক্রমাগত (ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগ,অ্যাকুয়াফেয়ার অর্থাৎ ভূগর্ভের সুপেয় পানির আধার) নষ্ট করে ফেলার ফলাফল সুপেয় পানির তীব্র অভাব দেখা দিতে পারে।

মানবসভ্যতাকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষার জন্য এবং একই সঙ্গে এই সবুজ গ্রহকে প্রাণিজগতের বসবাসের জন্য অনুকূল রাখতে কার্বন ও অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের পরিমাণ অবশ্যই একটা সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে। এই দৃশ্যকল্প বাস্তবায়নের জন্য শক্তির উৎস হিসেবে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ক্রমাগত কমিয়ে এনে পরিবেশবান্ধব বিকল্প ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে হবে। আজকের পৃথিবী সে লক্ষ্যেই এগিয়ে চলছে যার ফলস্বরূপ সাসটেনেবল এনার্জি ডেভেলপমেন্ট বা টেকসই শক্তি উন্নয়ন পারে পরবর্তী বংশধরদের সুরক্ষা দিতে। এই পৃথিবীকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার্থে রিনিউএবল এনার্জির ব্যবহার বিভিন্ন সেক্টরে বৃদ্ধির লক্ষ্যে NUB EEE গবেষণা গ্রুপ ছাত্র শিক্ষক সমন্বয়ে নবায়নযোগ্য ও জৈব জ্বালানী নিয়ে কাজ করছেন যার পরিপ্রেক্ষিতে তারা মালয়েশিয়া, USA, Australia, Germany, Switzerland, Canada, Nepal, Sweden, Finland, UAE, ইন্ডিয়া ও Mexico সহ বিভিন্ন দেশে ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নিয়ে বিভিন্ন এওয়ার্ড ও সম্মাননা কুড়িয়েছেন ۔ NUB EEE বিভাগের গবেষক টিচার ও ছাত্ররা ফান্ডেড ঘুরে এসেছেন এসব দেশ থেকে ও প্রকাশনার মাধ্যমে রেখেছেন অনন্য অবদান ۔ তাই পৃথিবীকে আমাদের ও প্রাণীকুলের বাসযোগ্য করে তুলতে জয়েন করতে পারেন আমাদের সাথে ۔
আমার আপনার ও আমাদের সন্তানের মেধা ও শিক্ষার মননে বেঁচে থাকুক এই ধরণী,
অসামান্য অবদানে হয়ে উঠুক ধরিত্রীর মানব, প্রাণিকুল ও প্রকৃতি সঞ্জীবনী ۔

ধন্যবাদ ও শুভ কামনা EEE Research Cell, EEE, NUB
লেখকঃ ড: ইঞ্জি: নাসির উদ্দিন
ইভেন্ট পরিচালক: সাফিউল আলম
নর্দার্ন বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ সময়: ২১:২৮:২২ ● ৪১১ বার পঠিত