বুধবার ● ১৮ জানুয়ারী ২০২৩

অবশেষে সেই জাকিয়ার জায়গা হলো শাবিপ্রবিতে

Home Page » বিবিধ » অবশেষে সেই জাকিয়ার জায়গা হলো শাবিপ্রবিতে
বুধবার ● ১৮ জানুয়ারী ২০২৩


 ---

সাফল্যের জন্য তোমাকে ৩টি মূল্য দিতে হবে: ভালোবাসা, কঠোর পরিশ্রম, আর স্বপ্নকে বাস্তব হতে দেখার জন্য ব্যর্থতার পরও কাজ করে যাওয়া।”

– ফ্র্যাঙ্ক লয়েড (আমেরিকান লেখক ও শিল্পী)

 

সত্যিই তাই।খুব কাছে থেকে এই তিনটি জিনিসকেই আপন করে নিতে এবং সাফল্যকে হাতের মুঠোয় নিতে দেখলাম আজ।


গল্পটার শুরুর দিকে যাওয়া যাক।সালটা ২০১৮ হবে।তখন আমি সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার স্বনামধন্য বিদ্যাপীঠ লায়েছ ভূঁইয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ এ শিক্ষকতার সুবাদে বংশীকুন্ডা বাজারে বসবাস শুরু করি।বংশীকুন্ডা কেন্দ্রীয় হাওরসাহিত্য গণপাঠাগারের কার্যক্রম সবে মাত্র বছর হলো শুরু করি।তখনি জাকিয়া সুলতানা নামের মেয়েটির সাথে পাঠাগারে প্রথম দেখা।সাথে আকিব মাহমুদ (বর্তমানে হবিগঞ্জ শেখহাসিনা মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নরত)। প্রাইভেট পড়তে আসার প্রথম দিনেই আমার চিনতে ভুল হয়নি জাকিয়াকে।সেদিনই আমি বলে দিয়েছিলাম তোমার মত মেয়েই একদিন মা বাবার মুখ উজ্জ্বল করবে।সেই থেকে সে নিয়মিতই পড়া লেখা পুরোদমে চালিয়ে যেতে লাগলো।কিন্তু অজানা কারণে বা কপালের ফের বলা যেতে পারে,এই পর্যায়ে তার জার্নিটা যেনো রীতিমতো আমাকেও অবাক করেছে!


এত ভালো পার্ফরম্যানস থাকার পরো আকিব ঠিকই এসএসসিতে এ প্লাস পেলো কিন্তু জাকিয়া পেলো না! বিষয়টা জাকিয়াকে যতটা না অবাক করেছে তার চেয়েও যেনো একজন শিক্ষক হিসেবে বেশি অবাক হলাম আমি।তবু বিশ্বাস ছাড়লাম না।জাকিয়াকে শান্তনা দিলাম তুমি ইন্টারে এপ্লাস পাবে।সে ও আমার কথায় বিশ্বাস রেখে শুরু করলো আবারো পুরোদমে পড়া লেখা।কিন্তু বিধি বাম! করোনার ছোঁবলে বিশ্ব যখন নূহ্যমান তখন পড়লো তার পরীক্ষা! সরকার একপর্যায়ে অটোপাশ দিতে বাধ্য হয়।আবারো ভাগ্যের ফেরে এ প্লাস মিস হয় জাকিয়ার। এদিকে তার সহযাত্রী আমার ছাত্র আকিব মাহমুদ আবারো এসএসসির রেজাল্টের ধারাবাহিকতায় ইন্টারমিডিয়েটে এ প্লাস পেয়ে মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়ে যায়।তারা দুজনকে আমার নিজ গাড়িতে করে মেডিকেল কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় এটেন্ড করানোর সৌভাগ্য হয়েছিল,কিন্তু বিধি বাম হলে যা হয়।এ যাত্রায় ও ব্যর্থ হয় জাকিয়া।এতে সে অনেকটা হাতাশায় পরে যায়। তার পর থেকে তার ব্যার্থতা যেনো আর পিছু ছাড়ছিলনা।ডেন্টাল থেকে বিভিন্ন ইউনিভার্সিটি সকল পরীক্ষাতেই তার ব্যার্থতা চলে আসলো,তখন আমার কাছে মনে হলো আমি ছাড়া আর কেউ বিশ্বাস করতে পারছিলনা তার দ্বারাই পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স হবে।বিষয়টি বুঝতে পারি যখন আমার এক ছাত্র ভার্সিটিতে চান্স পাবার পর আমি  ফেসবুক পোষ্ট দেই তখন কিছুক্ষণ পর সে আমাকে ফোন করে তার পারিবারিক মন্তব্য, আত্মীয় স্বজনের মন্তব্য,বন্ধু বান্ধবের মন্তব্য সব মিলিয়ে তার কাঁদো কাঁদে কণ্ঠ।তখনো আমি হাল ছাড়িনি,তাকে এক প্রকার সিউরই দিলাম এবার তোমার হয়তো যা তা একটা ভার্সিটিত হতো আগামী বছর তোমার সাস্টেই হবে।সেই থেকে শুরু হলো সাস্টের স্বপ্ন।আবারো সকল হতাশা ঝেঁরে নব উদ্যমে পড়াশোনা। চারদিকে যখন ব্যার্থতার হাত ছানি এমতাবস্থা থেকে উত্তরণের একজন সফল সৈনিক আজ আমি পেয়ে গেলাম তার সদ্য প্রকাশিত ফলাফলে দেশের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্সের মধ্য দিয়ে।এতে আমার শিক্ষকতার ক্যারিয়ারে যুক্ত হলো আরেকটি ‘প্রেরণার গল্প’ যে গল্পের স্বাক্ষী হবে আরো শত জাকিয়ারা। 


তাই লেখাটির শুরুতেই ফ্র্যাংক লয়েডের তিনটি মূল্যের সফল প্রয়োগই আমি দেখতে পেলাম জাকিয়ার মাঝে।একদিকে পড়ালেখার প্রতি ছিল তার অগাধ ভালোবাসা অপরদিকে সাথে ছিল কঠোর পরিশ্রম আর বার বার ব্যার্থ হয়েও কাজ করে যাওয়ার মানসিকতা।


পরিশেষে আমি এতটুকুই বলবো,জাকিয়া মামনি, সবে তোমার সাফল্যের শুরু।যেতে হবে অনেক দূর।সাথে ফ্র্যাংক লয়েডের উপরিউক্ত তিনটি বাণীকে ভুলোনা কভু। তুমি অনেক বড় হও,তোমার সাফল্যে যেনো নিস্তেজ দেহে প্রাণ ফিরে পাই বারেবার।তাই সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে  বড় হয়ে দেশ ও দশের উপকারে ফিরে আসো দ্রুত।সবসময় এই কামনাই করি।লেখাটি শেষ করার আগে আমাদের প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা চরণটুকু উচ্চারণ করে যাই-


 

“যখন তুমি এসেছিলে ভবে

দেখেছিলে তুমি, হেসেছিলো সবে।

এমন জীবন তুমি করিও গঠন,

মরণে হাসিবে তুমি, কাদিবে ভুবন।”

 

লেখক-

হাওরকবি জীবন কৃষ্ণ সরকার

হাওরবাদী লেখক ও গবেষক


বাংলাদেশ সময়: ১৬:২৯:০১ ● ৫৬১ বার পঠিত