সোমবার ● ৩১ জুলাই ২০২৩

গয়েশ্বর-আমানকে নিয়ে বিভিন্নমূখী আলোচনা

Home Page » জাতীয় » গয়েশ্বর-আমানকে নিয়ে বিভিন্নমূখী আলোচনা
সোমবার ● ৩১ জুলাই ২০২৩


গয়েশ্বর-আমানকে নিয়ে  আলোচনা

বঙ্গ-নিউজঃ    স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের প্রতি সরকারের ‘নমনীয়তা’কে দলে বিভেদ তৈরির কূটচাল হিসেবে দেখছে বিএনপি। দলটির মূল্যায়ন, জ্যেষ্ঠ নেতাদের সরকারের সঙ্গে আঁতাত রয়েছে– আন্দোলনে নামা নেতাকর্মীর মনে এই সন্দেহ তৈরির চেষ্টা চলছে।

গত শনিবার রাজধানীর প্রবেশপথে বিএনপির গণঅবস্থান কর্মসূচি থেকে গয়েশ্বর রায় ও আমান উল্লাহকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। ভিডিওতে দেখা গেছে, ধোলাইখাল থেকে গয়েশ্বর রায়কে গাড়িতে তোলার আগে মাটিতে ফেলে বেধড়ক পেটানো হয়। আর কল্যাণপুরে টানাহ্যাঁচড়ায় মাটিতে লুটিয়ে পড়া আমান উল্লাহকে গাড়িতে তুলে নেয় পুলিশ।

কিন্তু পরের ঘটনাপ্রবাহ গত এক দশকের রাজনীতি থেকে ভিন্ন। গয়েশ্বর রায়কে নিয়ে প্রিজন ভ্যান আসে বেইলি রোডের ডিবি কার্যালয়ে। ঘণ্টা তিনেক পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো ভিডিওতে দেখা যায়, গয়েশ্বরকে আপ্যায়ন করছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ।

আর বুকে ব্যথা অনুভব করা আমান উল্লাহকে প্রথমে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে এবং পরে নেওয়া হয় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে। সেখানে তাঁকে ফলের জুস নিয়ে দেখতে আসেন প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) গাজী হাফিজুর রহমান লিকু। বলেন, আমান উল্লাহ তাঁর পছন্দের যে কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারবেন।

গয়েশ্বরকে আপ্যায়ন ও আমানকে হাসপাতালে দেখতে যাওয়ার ছবি-ভিডিও খুব দ্রুত ফেসবুকে ছড়ায়। আওয়ামী লীগ সমর্থকরা তা পোস্ট করে লেখেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিকতার বহিঃপ্রকাশ পেয়েছে। সাধারণ মানুষের মতো অনেক বিএনপি সমর্থক সন্দেহ করেন, সরকারের সঙ্গে এ দুই নেতার সমঝোতা আছে কিনা?

বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের অনেকে একই মনোভাব জানান। যদিও দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে জানান, তাঁর ধারণা, মার্কিন ভিসা নীতির কারণে গয়েশ্বর ও আমানের সঙ্গে ভালো আচরণ করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

অবশ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ভিসা নীতি নয়, মানবিকতা দেখানো হয়েছে। কেউ কেউ সন্দেহ করলেও গয়েশ্বর এবং আমান দু’জনই জোরের সঙ্গে বলেছেন, সরকারের সঙ্গে সমঝোতা-আঁতাতের প্রশ্নই আসে না।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সমকালকে বলেছেন, বিএনপির কেউ গয়েশ্বর ও আমানকে সন্দেহ করছেন না। করার প্রশ্নও নেই। দিবালোকের মতো স্পষ্ট, গণঅবস্থানে হামলার খবরকে আড়াল করতে সরকার আপ্যায়ন এবং হাসপাতালে দেখতে যাওয়ার ছবি ছড়িয়েছে কিছু অনুগত সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে।

রিজভী আহমেদ বলেন, গ্রাম্য প্রতারকরা প্রতিপক্ষের মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে যেসব কূটকৌশল করে, আওয়ামী লীগও সেগুলো করছে। এসব নাটকে কোনো লাভ হয়নি। বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীর কাছে বিষয়টি স্পষ্ট। সবাই সরকার পতনের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ রয়েছে।

গয়েশ্বর রায় রোববার নয়াপল্টনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, আপ্যায়ন করে ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ও ঘৃণ্য কাজ। এতে সরকার কী প্রমাণ করতে চায়, আমরা হা-ভাতে? ভিক্ষা করে খাই? গ্রামের ভাষায় বলা হয় ‘খাইয়ে খোঁটা দেওয়া’।

ডিবি অফিসে খাওয়ার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে গয়েশ্বর রায় জানান, ডিবি কার্যালয়ে সোনারগাঁও হোটেল থেকে আনা খাবারের যে আয়োজন করা হয়, তা তাঁর স্বাস্থ্যের উপযোগী ছিল না। ওই খাবার নিয়ে সন্দেহও ছিল। সে কারণে তিনি খাননি। অনুরোধে এবং সৌজন্য রক্ষায় ডিবিপ্রধানের বাসা থেকে আনা খাবার থেকে ভাত, সবজি ও রুই মাছের একটি টুকরো খান।

গয়েশ্বর বলেছেন, ডিবিপ্রধান অনুরোধ করে বলেন, ‘রুই মাছটি আমার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ থেকে আনা।’ যেহেতু ডিবিপ্রধান নিজেই খাবারটি খাচ্ছেন, তখন মনে হলো আমিও খেতে পারি। সমস্যা হবে না। খাওয়ার ছবি তুলে ছড়িয়ে দেওয়া নিম্নরুচির কাজ। ডিবি অফিসে আমার সঙ্গে যা করা হলো, তা ওই রকমই।

গয়েশ্বর রায় বলেন, আমার বাড়িতে অনেক লোক খায়। এটা সম্মানের। খাওয়ার ছবি উঠিয়ে কি আমি ছড়িয়ে দেব? এটা কি আমার জন্য ভালো হবে? সরকারের প্রলোভন গয়েশ্বরকে কিনতে পারবে না। সরকারের কাছে এত টাকা নেই যে গয়েশ্বরকে কিনতে পারে। সরকার গ্রেপ্তার করতে পারে, প্রাণও নিতে পারে; কিন্তু গয়েশ্বরকে কিনতে পারবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১০:৩৮:৫৯ ● ১৩২ বার পঠিত