ইউক্রেনের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ ব্যবহারের লক্ষ্যে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে যুক্তরাষ্ট্র

Home Page » অর্থ ও বানিজ্য » ইউক্রেনের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ ব্যবহারের লক্ষ্যে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে যুক্তরাষ্ট্র
বৃহস্পতিবার ● ১ মে ২০২৫


সংগৃহীত ছবি-খনিজ সম্পদ ব্যবহারের লক্ষে ইউক্রেন-যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি স্বাক্ষর

বঙ্গ-নিউজ: কয়েক মাসের উত্তেজনাকর আলোচনার পর । যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে গতি আনতে একটি পুনর্গঠন বিনিয়োগ তহবিল প্রতিষ্ঠা করতেও সম্মত হয়েছে দুই দেশ। বুধবার ওয়াশিংটনে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট বলেছেন, এই চুক্তি প্রমাণ করে যে উভয় পক্ষই ইউক্রেনে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিয়েভের জন্য, মার্কিন সামরিক সহায়তা, বিশেষ করে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাওয়ার ক্ষেত্রে এই চুক্তিটি অপরিহার্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। ধারণা করা হয়, ইউক্রেনে গ্রাফাইট, টাইটানিয়াম এবং লিথিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থের বিশাল মজুদ রয়েছে, যা নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সামরিক সরঞ্জাম তৈরি এবং শিল্প অবকাঠামোতে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

চুক্তিটি এমন এক সময়ে হলো যখন চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধ চলছে। বিশ্বের বর্তমান রেয়ার-আর্থ (বিরল মৃত্তিকা) মজুদের ৯০ শতাংশই চীন থেকে আসে, যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি উদ্বেগের কারণ। এই চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদে নিজেদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে চাইছে।

মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নতুন গঠিত ইউএস-ইউক্রেন পুনর্গঠন বিনিয়োগ তহবিলটি ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া আগ্রাসন চালানোর পর থেকে ইউক্রেনকে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের ‘উল্লেখযোগ্য আর্থিক ও বস্তুগত সমর্থনকে’ স্বীকৃতি দেয়। স্কট বেসেন্ট এক ভিডিও বিবৃতিতে বলেছেন, এই চুক্তি ‘ইউক্রেনের প্রবৃদ্ধির সম্পদ উন্মোচন করতে’ সাহায্য করবে।

চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য ওয়াশিংটনে যাওয়া ইউক্রেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইউলিয়া সভিরিডেনকো এক্স-এ (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে বলেছেন, নতুন তহবিলটি ‘আমাদের দেশে বৈশ্বিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে’। তিনি নিশ্চিত করেন, চুক্তিতে খনিজ, তেল এবং গ্যাস সম্পর্কিত প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত থাকলেও এই সব সম্পদের মালিকানা ইউক্রেনেরই থাকবে। অংশীদারিত্ব হবে সমান, ৫০:৫০ ভিত্তিতে এবং কিয়েভের আইনপ্রণেতাদের দ্বারা এটি অনুমোদিত হতে হবে।

জানা গেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কিয়েভকে ভবিষ্যতে কোনো নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়ার পূর্বশর্ত হিসেবে এই চুক্তির জন্য চাপ দিয়ে আসছিলেন। চুক্তির খসড়া ইঙ্গিত দেয় যে, ভবিষ্যতের মার্কিন নিরাপত্তা সহায়তার বিনিময়ে ইউক্রেন ওয়াশিংটনকে তার কিছু প্রাকৃতিক সম্পদে প্রবেশাধিকার দেবে। যদিও এটি ট্রাম্পের মূল দাবির (যুদ্ধের শুরু থেকে দেওয়া সমস্ত মার্কিন সামরিক সহায়তার অর্থ ফেরত) চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে কম।

পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যানুষ্ঠানের পার্শ্ববৈঠকে ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মুখোমুখি বৈঠকের কয়েকদিন পরই এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো। ট্রাম্প বুধবার সন্ধ্যায় এক সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি ভ্যাটিকান সিটিতে জেলেনস্কিকে চুক্তিটি সম্পন্ন করার জন্য চাপ দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, এই চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধের শুরু থেকে ইউক্রেনকে দেওয়া বহু বিলিয়ন ডলারের মার্কিন সহায়তা পুনরুদ্ধার হবে এবং ‘তাত্ত্বিকভাবে আরও অনেক বেশি’। ট্রাম্প আরও বলেন, `দেখুন, আমাদের রেয়ার আর্থ পেতে হবে। তাদের কাছে দারুণ রেয়ার আর্থ আছে…নির্দিষ্ট কিছু খনিজ, পদার্থ…যা অনেক জায়গায় নেই।’

মার্কিন কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, কিয়েভ শেষ মুহূর্তে কিছু শর্ত পরিবর্তনের চেষ্টা করায় চুক্তিটি বিলম্বিত হয়েছিল। এর মধ্যে তহবিলের প্রশাসন, স্বচ্ছতার বিষয় এবং তহবিলের পূর্ণাঙ্গ নিরীক্ষার মতো বিষয়গুলো ছিল। এর আগে ফেব্রুয়ারিতেও হোয়াইট হাউসে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের পর প্রাথমিক চুক্তি স্বাক্ষরের চেষ্টা ভেস্তে গিয়েছিল, যখন ট্রাম্প জেলেনস্কিকে ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে জুয়া খেলার’ অভিযোগে অভিযুক্ত করেছিলেন।

এবারের ঘোষণার ভাষা ট্রাম্প প্রশাসনের স্বাভাবিক অবস্থানের চেয়ে ইউক্রেনের প্রতি অনেক বেশি সংহতি প্রকাশ করে। এতে ‘রাশিয়ার পূর্ণ মাত্রার আগ্রাসনের’ কথা উল্লেখ করে যোগ করা হয়েছে যে, ‘রাশিয়ার যুদ্ধযন্ত্রকে অর্থায়ন বা রসদ সরবরাহকারী কোনো রাষ্ট্র বা ব্যক্তিকে ইউক্রেনের পুনর্গঠন থেকে লাভবান হতে দেওয়া হবে না’। ক্রেমলিন এখনো এই চুক্তির বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

বাংলাদেশ সময়: ২০:৫৯:০৬ ● ৮ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ