মঙ্গলবার ● ৩ জুন ২০২৫

‘দারিদ্র্য’ কবিতায় নজরুলের বিদ্রোহী চেতনা

Home Page » সাহিত্য » ‘দারিদ্র্য’ কবিতায় নজরুলের বিদ্রোহী চেতনা
মঙ্গলবার ● ৩ জুন ২০২৫


 “‘দারিদ্র্য’ কবিতায় নজরুলের বিদ্রোহী চেতনা

জন্মগতভাবে সর্বতোমুখী প্রতিভার অধিকারী কাজী নজরুল ইসলাম যাপিত জীবনে অর্জন করেছিলেন বৈচিত্র্যমুখী অভিজ্ঞান; যার অনেকখানিই আনকমন ও অনন্য। তাঁর কবিতায় ও সংগীতে সেই অনন্যতার ছাপ ফুটে উঠেছে সোনালি রঙের সচ্ছলতায়। তাঁর ‘দারিদ্র্য’ কবিতাটি যাপিত জীবন ও ব্যতিক্রমী শৈল্পিক সক্ষমতার উজ্জ্বলতর শিল্প হয়ে আছে। কবিতাটি তাঁর সুচারুতায় সমৃদ্ধ শিল্পের জমিনে ধারণ করেছে দারিদ্র্যের নিবিড়তম, গভীরতম ও সূক্ষ্মতম ছাপ। অর্থনীতিবিদরা বহুদিন যাবৎ দারিদ্র্যের নানাবিধ সংজ্ঞা প্রদান এবং সীমা-পরিসীমা নির্ধারণ করে আসছেন। সেসব সংজ্ঞায় মূলত দারিদ্র্যকে খাদ্যগ্রহণের ক্যালরি এবং কতিপয় মৌলিক চাহিদা পূরণের-অপূরণের মাপকাঠিতে চেনানোর চেষ্টা আছে। নজরুল সেটাকে হিসাবে রেখে তার সঙ্গে দারিদ্র্যের আরও কিছু ডাইমেনশন যোগ করেছেন। কবিতার শুরুতেই তিনি বলেছেন যে, দারিদ্র্য মানুষকে সত্য কথা বলার দুঃসাহস জোগায়, দান করে অসংকোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস। দারিদ্র্যের প্রভাবে তাঁর মুখের কথা এবং লেখার বাণী ক্ষুরধার তরবারির মতো শানিত হয়ে ওঠে। দরিদ্র মানুষেরা নির্ভীকভাবে সত্য কথা উচ্চারণ করতে পারেন, তারা ন্যায়ের সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারেন। তাদের কোনো পিছুটান থাকে না। কিন্তু যাদের ধনসম্পদ বেশি থাকে, তারা প্রতিষ্ঠানবিরোধী সংগ্রামে শরিক হতে দ্বিধাগ্রস্ত হন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে কিংবা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে জমিদার নন্দন-ধনবান ব্যবসায়ী-শিল্পপতি-জোতদাররা অংশগ্রহণ করেননি বলেই চলে। কারণ, তাদের ধনসম্পদ এবং আয়েশি জীবনের পিছুটান ছিল। কিন্তু ছাত্র-কৃষক-দিনমজুরের সেই পিছুটান ছিল না। তাই সেসব সংগ্রামে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ছিল ব্যাপকভাবে বেশি। এভাবে দারিদ্র্য মানুষকে ব্যক্তিগত পিছুটান ফেলে মহত্তর ও বৃহত্তর কাজে শরিক হওয়ার প্রণোদনা দান করে, প্রেরণা জোগায়। নজরুল তাঁর ‘দারিদ্র্য’ কবিতার শুরুতেই তাই বলেছেন– ‘হে দারিদ্র্য, তুমি মোরে করেছ মহান।/ তুমি মোরে দানিয়াছ খ্রীষ্টের সম্মান/ কণ্টক-মুকুট শোভা!– দিয়াছ, তাপস,/ অসঙ্কোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস;/ উদ্ধত উলঙ্গ দৃষ্টি, বাণী ক্ষুরধার,’। এই প্রশংসার ভেতরেই দারিদ্র্যের নেতিবাচক দিক স্পষ্ট। ‘কণ্টক-মুকুট’ কিন্তু রাজার মুকুটের মতো পুষ্পশয্যার সুখ দেয় না, তার কাজ নিত্য যন্ত্রণাদান। আর বীণা যখন শাপে তরবারি হয়ে যায়, তখন যুদ্ধ করাই হয়ে ওঠে নির্মম নিয়তি। যাকে সারাজীবন যুদ্ধ করতে হয়, তার জীবন হয় আঘাতের ও রক্তপাতের, বিশ্রামহীনতার ও স্বস্তিহীনতার। সে জীবনে সুখ থাকে না।
প্রতিটি পিতামাতা চান তাদের সন্তান যেন দুধেভাতে থাকে কিন্তু দুধভাত সংগ্রহে রাখার সামর্থ্য গরিব মানুষের থাকে না। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। একজন অনাহারক্লিষ্ট অর্থাৎ দারিদ্র্যপীড়িত মা তাঁর দুধের শিশুকে বুকের দুধ দিতেও ব্যর্থ হন। কারণ, খাদ্যের অভাবে শীর্ণ-জীর্ণ শরীরে বুকের স্তনে মাতৃদুগ্ধ সঞ্চিত হয় না।

বাংলাদেশ সময়: ১৫:৫১:৫৫ ● ২৫৪ বার পঠিত