বুধবার ● ১০ ডিসেম্বর ২০২৫
জোটের নেতাদের বেছে বেছে আসন দেবে বিএনপি
Home Page » জাতীয় » জোটের নেতাদের বেছে বেছে আসন দেবে বিএনপি![]()
সংখ্যার আধিক্য নয়, বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে জোটের এমন জনপ্রিয় নেতাদের বেছে বেছে আসন ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এ বিষয়ে ফয়সালা করতে আজ বুধবার থেকে যুগপৎ আন্দোলনের মিত্রদের সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছে দলটি। বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা মনে করছেন, শুধু আসন ছাড়লেই হবে না, মিত্র দলগুলোর সম্ভাবনাময় নেতাদের জিতিয়েও আনতে হবে। সেভাবেই আসন ছাড় দেয়া হবে। আর যারা নির্বাচন করবেন না, তাদেরকেও সরকার গঠন করলে সংসদের উচ্চকক্ষসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় যথাযথভাবে জায়গা করে দেয়া হবে।
গত সোমবার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে জোটের শরিকদের সাথে আসন সমঝোতা নিয়ে এমন আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
নির্বাচন সামনে রেখে গত ৩ নভেম্বর প্রথম পর্যায়ে ২৩৭ আসনে দলের প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছিল বিএনপি। এর এক মাস পর গত ৪ ডিসেম্বর আরো ৩৬ আসনে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। সে হিসাবে মোট ২৭২ আসনে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে বিএনপি। এখন ফাঁকা রয়েছে আর ২৮ আসন। বিএনপি থেকে বলা হয়েছে, এই ফাঁকা আসনগুলোতে মূলত শরিকরাই নির্বাচন করবেন।
তবে ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের মিত্রদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির চাওয়া অনুযায়ী দল ও জোটের প্রার্থী তালিকা জমা দিলেও তাদের সাথে কোনো আলোচনা ছাড়াই ২৭২ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। এ ঘটনায় তারা বিস্মিত, অনেকে ক্ষুব্ধও। দুই দফায় ঘোষিত প্রার্থী তালিকায় অন্তত ছয়টি আসনে ‘অনিবন্ধিত’ মিত্ররা জোরালোভাবে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। আসনগুলো হলো কুষ্টিয়া-২, মৌলভীবাজার-২, নড়াইল-২, কিশোরগঞ্জ-৫, ঝালকাঠি-১ এবং যশোর-৫। তবে এসব আসনে দলীয় নেতাদের প্রার্থী করেছে বিএনপি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। জানা গেছে, শরিকদের কাঙ্ক্ষিত আসনগুলো যেখানে বিএনপি ইতোমধ্যে তাদের দলীয় প্রার্থীকে প্রাথমিক মনোনয়ন দিয়েছে, সেগুলোর মধ্যে দু-একটিতে মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার চিন্তাভাবনা করছে দলটি। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় যৌক্তিকভাবে ফ্যাসিবাদবিরোধী জোটের ঐক্য ধরে রাখতে চায় বিএনপি। তাই মিত্রদের মধ্যে যাদেরকে শেষ পর্যন্ত আসন ছাড়া সম্ভব হবে না, সরকার গঠন করলে তাদেরকে যোগ্যতা অনুযায়ী যথাযথ মূল্যায়ন করবে দলটি।
জানা গেছে, বৈঠকে নির্বাচন সামনে রেখে মিত্রদের সাথে আসন সমঝোতা বা আসন বণ্টনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট দূরত্ব বা সঙ্কট নিরসনের উদ্যোগ নেয়া হয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বাধীন কমিটি যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সাথে বসে এই বিষয়টির সমাধান করবে। এর অংশ হিসেবে আজ বুধবার ১২ দলীয় জোটের সাথে বৈঠক করবে বিএনপি। এ ছাড়া দ্রুততম সময়ে গণতন্ত্র মঞ্চ ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সাথেও বসবে।
অবশ্য শরিকদের সাথে আসন বণ্টনে সংশোধিত আরপিও’র বিষয়টি ভাবাচ্ছে বিএনপিকে। কারণ, সংশোধিত আরপিও অনুযায়ী নির্বাচনে নিবন্ধিত একাধিক দল জোটভুক্ত হলেও ভোট করতে হবে নিজ নিজ দলের প্রতীকে। অথচ আগে কোনো দল জোটভুক্ত হয়ে নির্বাচনে অংশ নিলে তারা জোটের শরিক যেকোনো দলের প্রতীক নেয়ার সুযোগ পেতো। এ অবস্থায় নির্বাচনে প্রতীক একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছে বিএনপি।
দলটির নেতাদের অভিমত, শরিক অন্য দলগুলোর প্রতীককে নির্বাচনী মাঠে পরিচিত করানো অত্যন্ত কঠিন হয়ে যাবে। ধানের শীষের পক্ষে নেতাকর্মীদের যেভাবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে নামানো যাবে, অন্য দলের প্রতীকের পক্ষে সেভাবে নামানো হয়তো সম্ভব হবে না। তার পরও জোটের ঐক্যের স্বার্থে শরিক দলগুলোর মধ্যে যারা খুব পরিচিত মুখ, মাঠ পর্যায়ে যাদের অবস্থান আছে সর্বোপরি যারা বিজয়ী হয়ে আসতে পারবেন- তাদের সবাইকে আসন ছাড়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।
অবশ্য স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এক নেতা বলেন, যেহেতু দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষণা করেছেন যে, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে যুগপৎ আন্দোলনের মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি প্ল্যাটফর্ম গঠন করা যেতে পারে। এই প্ল্যাটফর্মের নাম হতে পারে ‘ডেমোক্র্যাটিক রিফর্ম অ্যালায়েন্স’। এই প্ল্যাটফর্মে মিত্র রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের কার্যক্রম পরিচালনা করবে। ক্ষমতায় গেলে উচ্চকক্ষসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যোগ্যতা অনুযায়ী দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে। তবে, এই প্রস্তাব নিয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিস্তারিত কোনো আলোচনা হয়নি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, আসন বণ্টন বা সমঝোতা নিয়ে সব শরিকের সাথে অসন্তোষ-সমস্যা হয়নি, কিছু কিছু শরিকের সাথে হয়েছে। এলডিপিসহ দু-একটি ইসলামী দলের সাথে তাদের মোটামুটি বোঝাপড়া আছে। সংশ্লিষ্ট আসনে বিজয়কেই সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। তাই যারা বিজয়ী হতে পারবে, তাদের আসন ছাড় দেয়া হবে; বাকিদের অন্যভাবে সম্মান জানানো হবে।
জানা গেছে, বৈঠকে আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দলের যেসব প্রতিশ্রুতি আছে, সেগুলোর মধ্যে সরকার গঠন করলে সেক্টরভিত্তিক অর্থাৎ কৃষক কার্ড, ফ্যামিলি কার্ড, স্বাস্থ্য কার্ড, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, ক্রীড়াসহ মোটা দাগে অন্তত ৮টি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। এসব প্রতিশ্রুতি যাতে প্রতিটি নাগরিকের দোরগোড়ায় পৌঁছানো যায়, সে জন্য সর্বাত্মক উদ্যোগ নেবে বিএনপি। এ লক্ষ্যে লিফলেট বিতরণ করা হবে, বিজ্ঞাপন প্রচার করা হবে এবং নেতাকর্মীদের ব্যাপকভাবে মাঠে নামানো হবে। স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নির্বাচনের তফসিলের পরেই এ কাজে নেমে পড়বে বিএনপি। বৈঠকে নির্বাচনের সম্ভাব্য তফসিল নিয়েও আলোচনা হয়। আজ বা কালের মধ্যে এই তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। বিএনপি মনে করছে, তফসিলের মধ্য দিয়ে দেশ পুরোপুরি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্যে ঢুকে যাবে।
বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে স্থায়ী কমিটিকে ব্রিফ করেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন। তিনি জানান, বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন- তাকে কীভাবে সুস্থ করে তোলা যায়। আপাতত তাকে লন্ডনে নেয়া হচ্ছে না।
বাংলাদেশ সময়: ১১:৫৮:৫৮ ● ৭ বার পঠিত