মঙ্গলবার ● ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫

রঙলেপা- ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরেঃ-পর্ব-১ স্বপন চক্রবর্তী

Home Page » সাহিত্য » রঙলেপা- ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরেঃ-পর্ব-১ স্বপন চক্রবর্তী
মঙ্গলবার ● ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫


স্বপন কুমার চক্রবর্তী

বাল্যকালে পড়ালেখা ভালো লাগতো না। কেন ভালো লাগতো না তা জানিনা। তবে মনে হয় পড়ায় মনোনিবেশ করা হতো না। কিন্তু না পড়লেও গত্যন্তর নেই। বাবা মা বড় ভাই সবার কড়া নজর। তাছাড়া স্কুলে পড়া দিতে না পারলে শাস্তি। যা হোক, খুব জোরে জোরেই পড়তাম। তবে একই শব্দ বারংবার পড়া, কারণ হাতে হয়তো আরও গুরুত্বপূর্ণ কাজ একই সাথে চলছে। হয়তো একটা কাগজের নৌকা বানানো চলছে, নয়তো একটা ঘুড়ি তৈরি, অথবা দিদেন পক্ষে মার্বেল গুলোর ব্যালেসিং করা, বার বার গুণা। ফলে কনসেন্ট্রেশন ছিল না বই পড়ার প্রতি। যার ফলে একটি শব্দ বা লাইন বার বার পড়তাম অভিভাবকদের শুনানোর জন্য। যেমন পৃথিবী গোল ,পৃথিবী গোল, পৃথিবী গোল। অথবা গরু গৃহ পালিত চতুষ্পদ জন্তু, গরু গৃহ পালিত চতুষ্পদ জন্তু, গরু গৃহ পালিত চতুষ্পদ জন্তু। আর একই সাথে চলতো অন্যসব ব্যক্তিগত গুরুত্বপূর্ণ কর্মাদি। কলের গানের (গ্রামোফোন) ভাঙ্গা রেকর্ড প্লেয়ারের মতো একই স্থানে শুধু আবর্তিত হতো আমার লেখাপড়া। ভাওয়াইয়া সম্রাট আব্বাস উদ্দিনের গানও ভাঙ্গা রেকর্ডের কারণে বিরক্তিকর লাগতো। গান বাজতে বাজতে ভাঙ্গা স্থানে পিন এসে আটকে পড়লে বাজতে থাকে- ফান্দে পড়িয়া ব, ফান্দে পড়িয়া ব, ফান্দে পড়িয়া ব। তখন অপারেটর দৌড়ে এসে পিনটা ম্যানুয়েলি একটু এগিয়ে দিলেই বেশ চলতে থাকে- ফান্দে পড়িয়া বগায় কান্দে রে। আমিও ধমক খেলে তখন পড়া আরও একটু এগিয়ে যায়। কখনও বা ঘুমের আক্রমণে কি বলতেছি খেয়াল নেই। যা হোক, এমনি ভাবেই পড়ালেখা এগিয়ে যেতো। এভাবেই মুখস্থ করেছিলাম- পদার্থের তিন অবস্থা, পদার্থের তিন অবস্থা, পদার্থের তিন অবস্থা, পদার্থের তিন অবস্থা। কিন্তু এই তিন অবস্থাও পিন উঠানোর মতো ধমক খেয়ে আরও একটু এগিয়ে গিয়ে ছিল। তখন পড়েছিলাম পদার্থের তিন অবস্থা- যথা কঠিন, তরল বায়বীয়। চাক্ষুস দেখে ছিলাম কাঠ কয়লা লোহা ইত্যাদি কঠিন পদার্থের উদাহরণ। আর নদীর জল হলো তরল পদার্থের উদাহরণ। বাতাস, অক্সিজেন ইত্যাদি হলো বায়বীয় পদার্থের উদাহরণ। তা হোক, পদার্থ গোল্লায় ‍যাক, আমার মুখস্থ কপ্লিট। এভাবেই বেশ চলছিল। পরীক্ষাতেও উত্তীর্ণ হয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু দিনগুলি আর সোনার খাঁচায় রইলো না। বিজ্ঞানীদের অত্যাচারে পড়ালেখা আর সহজ রইলো না। কঠিনতর হতে থাকলো। যখন আরও অপেক্ষাকৃত একটু জ্ঞানী হলাম তখন আবারও বিড়ম্বনা দেখা দিতে থাকলো। কঠিন তরল আর বায়বীয় পদার্থের উদাহরণ গুলো আর যথেষ্ট হলো না। অর্থাৎ আমার কষ্ট করে শেখা পদার্থের তিন অবস্থা আর ঠিক থাকলো না। বলা হলো প্রতিটি পদার্থেরই তিনটি অবস্থা হতে হবে। তাও মেনে নিলাম। কিন্তু প্রশ্ন হলো এক টুকরো কাঠেরও তিন অবস্থা হতে হবে! এমন পদার্থের বিষয়টি আমি অপদার্থের মাথায় তো বিরাট গোলমাল বাধিয়ে দিল। আমার ধারনা এটার কোন সমাধান নেই। কি সব অবাস্তব কথা। আগের মতো করেই তিন অবস্থা থাকলেই বা ক্ষতি কি ছিল? জানা গেলো, কঠিন পদার্থ তাপ দিলে তরল হয়, আর তরল পদার্থ বাষ্প হয়। শুকনো কাঠে দিলাম তাপ। কাঠ তো পুড়ে ছাই হবে। তাও তাপ হতে হবে প্রায় ২০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেট। পরে জেনে ছিলাম ,শর্ত আছে। সেটা বায়ু শূন্য অবস্থায়, তথা অক্সিজেন শূন্য অবস্থায় এই তাপ প্রয়োগ করতে হবে। আর এক সমস্যা । তা হলে ব্যবস্থা? বকযন্ত্র ( retort) নামক যন্ত্রের ভিতরে কাঠখন্ড রেখে পাত্রটিকে বায়ু শূন্য করে ছিপিটি শক্ত করে আটকে দিতে হবে। তারপর তাপ প্রয়োগ করতে হবে। তাতে কাষ্টখন্ডটি তরল হবে। কি কসরত! অর্থাৎ রস বের করতে হলে কসরত অনেক করতে হবে।

না, বিজ্ঞান বিষয়ে কাউকে জ্ঞান দান করার ইচ্ছে নিয়ে আমি কিছুই লিখতে চাই না। সে বিষয়ে আমার জ্ঞান কম। তবে যে কারণে এতসব কিছুর অবতারণা, তাহলো ব্যাংকারদের জীবন থেকে রস বের করা নিয়ে কথা বলা। রুক্ষ শুষ্ক জীবন হলো ব্যাংকারদের। রস বা সাহিত্য- রস আসবে কোথা থেকে? রস কোন সময়ে থেকে থাকলেও চাকুরিতে এসে তা শুকিয়ে কিসমিস হয়ে যায়। তাদের সম্পর্কে কথা প্রচলিত আছে যে, নিজের সন্তান দাঁড়ালে কত উঁচু দেখা যায় তা তারা জানে না। কারণ অফিস যাবার সময়ে দেখে খাটে শুয়ে ঘুমাচ্ছে। অফিস হতে ফিরে দেখে ঘুমিয়ে গেছে। (চলবে)

বাংলাদেশ সময়: ২০:০৫:৪৩ ● ৫৫ বার পঠিত