শনিবার ● ২০ ডিসেম্বর ২০২৫

পাকিস্তানে হামলা চালিয়ে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে ভারত

Home Page » জাতীয় » পাকিস্তানে হামলা চালিয়ে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে ভারত
শনিবার ● ২০ ডিসেম্বর ২০২৫


পাকিস্তানে হামলা চালিয়ে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে ভারত

জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগাঁওয়ে হামলার জেরে পাকিস্তান ভূখণ্ডে ভারতের সামরিক অভিযান আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে বলে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা।

তাদের মতে, এসব পদক্ষেপ দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, আন্তর্জাতিক আইন এবং কোটি কোটি মানুষের মানবাধিকারের ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে।

পর্যবেক্ষণগুলো ১৬ অক্টোবরের একটি প্রতিবেদনে উঠে আসে, যা ১৫ ডিসেম্বর প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করেছেন জাতিসংঘের পাঁচজন বিশেষ র‌্যাপোর্টিউর এবং একজন নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ। তারা পেহেলগাঁও হামলার পর ভারতের সামরিক প্রতিক্রিয়া এবং এর আইনি ও মানবিক পরিণতি পর্যালোচনা করেন।

বিশেষজ্ঞরা উপসংহারে বলেন, ভারতের আচরণ জাতিসংঘ সনদ, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন এবং চুক্তিভিত্তিক আইনের আওতায় তার বাধ্যবাধকতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে প্রতীয়মান হয়।

তারা আরও সতর্ক করেন, হামলার পর গৃহীত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে সীমান্ত পেরিয়ে সামরিক হামলা এবং একতরফাভাবে আন্তর্জাতিক চুক্তির কার্যকারিতা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত- নিজেই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও মানবিক আইনের দৃষ্টিতে গুরুতর উদ্বেগ তৈরি করছে।

এই বিষয়টি যৌথভাবে জাতিসংঘের একাধিক বিশেষ র‌্যাপোর্টিউর ও স্বাধীন বিশেষজ্ঞ জারি করেন। এর মধ্যে সন্ত্রাসবাদ দমন ও মানবাধিকার, বিচারবহির্ভূত বা ইচ্ছামতো হত্যাকাণ্ড, নিরাপদ পানীয় জল ও স্যানিটেশনের অধিকার, পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশের অধিকার এবং ন্যায়সংগত ও গণতান্ত্রিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার প্রসারের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষজ্ঞরাও রয়েছেন।

১৭ পৃষ্ঠার নথি অনুযায়ী, বিশেষজ্ঞরা এমন প্রতিবেদন পর্যালোচনা করেছেন যেখানে বলা হয়- ভারত অপারেশন সিঁদুর নামে পাকিস্তানের ভেতরে ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা চালিয়েছে এবং এতে ডজনখানেক মানুষ নিহত হয়েছে বলে দাবি করা হয়। তবে জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞরা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন, পেহেলগাঁও হামলায় পাকিস্তানের জড়িত থাকার বিষয়ে ভারত কোনও প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি। বিশেষজ্ঞরা স্বীকার করেন, সন্ত্রাসবাদ থেকে নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়ার অধিকার রাষ্ট্রগুলোর রয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে তারা বলেন, আন্তর্জাতিক আইন বিশেষ করে সীমান্ত অতিক্রম করে বলপ্রয়োগের ক্ষেত্রে কঠোর সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে। তারা উল্লেখ করেন, জাতিসংঘ সনদের ৫১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে অবহিত করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু ভারত তা করেনি। নিরাপত্তা পরিষদে এ ধরনের নোটিফিকেশন এবং অন্য কোনও রাষ্ট্রের দ্বারা আসন্ন সশস্ত্র হামলার নির্ভরযোগ্য ও প্রকাশযোগ্য প্রমাণের অনুপস্থিতিতে, সীমান্ত পেরিয়ে সামরিক অভিযান বলপ্রয়োগ নিষিদ্ধ করার আন্তর্জাতিক নীতির লঙ্ঘন হতে পারে এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনে স্বীকৃত জীবনাধিকারের ওপর আঘাত হানতে পারে বলে তারা সতর্ক করেন।

জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞদের বড় উদ্বেগের একটি জায়গা ছিল পেহেলগাঁও হামলার পর ভারতের পক্ষ থেকে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত রাখার ঘোষণা। ১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত এই চুক্তি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ছয়টি নদীর পানিবণ্টন নিয়ন্ত্রণ করে এবং এটি বিশ্বের সবচেয়ে স্থিতিশীল পানিবণ্টন চুক্তিগুলোর একটি হিসেবে বিবেচিত। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেন, চুক্তির বাস্তবায়নে যেকোনও বিঘ্ন পাকিস্তানের কোটি কোটি মানুষের অধিকারের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে, যারা পানীয় জল, কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা ও জীবিকার জন্য সিন্ধু নদী ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল। তারা উল্লেখ করেন, নিরাপদ পানীয় জল ও স্যানিটেশনের অধিকার একটি মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃত। সীমান্ত অতিক্রমকারী নদী নিয়ে গৃহীত যেকোনও সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে এর মানবিক ও পরিবেশগত প্রভাব বিবেচনা করা বাধ্যতামূলক।

বিশেষজ্ঞরা জোর দিয়ে বলেন, আন্তর্জাতিক পানি চুক্তিগুলো আইনি বাধ্যবাধকতা তৈরি করে। নির্ধারিত বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে একতরফাভাবে চুক্তি স্থগিত করা আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও অভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর প্রতিষ্ঠিত আইনের শাসনকে দুর্বল করে। সূত্র: এক্সপ্রেস ট্রিবিউন, ডন নিউজ, পাকিস্তান টুডে

বাংলাদেশ সময়: ১৩:৪০:১৬ ● ১৭ বার পঠিত