সীমান্ত ভ্রমণের সাতটি দিন ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা ; পর্ব- ৬৩: স্বপন চক্রবর্তী

Home Page » সাহিত্য » সীমান্ত ভ্রমণের সাতটি দিন ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা ; পর্ব- ৬৩: স্বপন চক্রবর্তী
বৃহস্পতিবার ● ৮ জুন ২০২৩


স্বপন কুমার চক্রবর্তী
মহুয়া পালা:-

বেদের মেয়ে জোৎস্নার মতই প্রায় কাছাকাছি কাহিনী নির্ভর আর একটি পালা হচ্ছে ”মহুয়ার পালা”। বেদের মেয়ে জোসনা মিলনাত্মক কাহিনিী হলেও মহুয়া কিন্তু বিয়োগান্তক একটি পালা। মিল শুধু উভয়েই বেদের মেয়ে । এটিও উত্তরাঞ্চলের কোন পালা নয়। শুধু বেদের মেয়ে জোসনার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ এবং প্রাসঙ্গিক বলে কাহিনীটি সম্পর্কে সামান্য একটু বর্ণনা করা হলো।

ময়মনসিংহে ১৬৫০ সালে রচনা হয় ”মহুয়া” পালা। ড. দীনেশ চন্দ্র সেন মহুয়া পালাকে ২৪ টি অধ্যায়ে বিভক্ত করেন। মৈমনসিংহ গীতিকায় ”মহুয়া” কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২৩ টি ভাষায় মুদ্রিত হয়। মহুয়া গাছের নাম থেকেই সৃষ্টি হয় ”মহুয়া” পালা।
মহুয়া পালার রচয়িতা দ্বিজ কানাই। রসের দিক থেকে রোমান্টিক ট্রাজেডি ঘরানার এই কাব্য মহুয়া পালার সংগ্রাহক দীনেশ চন্দ্র সেন। এর মূখ্য চরিত্রগুলো হলো নদের চাঁদ, মহুয়া, হুমরা বেদে। এটির রচনা কাল ধরা হয় ১৬৫০ সাল। এই পালায় মোট ৭৮৯ টি ছত্র আছে। রয়েছে অনেক গান। এটিও একটি গীতিনাটক।

নদের চাঁদের বসতভিটা নেত্রকোনা জেলার সুসং দুর্গাপুরের সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্ব দিকে এবং ঝাঞ্জাইল বাজার থেকে তিন কিলোমিটার পূর্বে বাউরতলা গ্রামের পাশে। সুদর্শন পুরুষ নদের চাঁদ ছিলেন এক জমিদারের দেওয়ান। অপর দিকে রূপবতী মহুয়া বেদে সর্দার হুমরা বেদের পালিত কন্যা, যাকে শিশুকালে হুমরা বেদে নেত্রকোনার কাঞ্চনপুর থেকে ডাকাতি করে নিয়ে আসে। জানা যায় বেদে মহুয়াও এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে ছিলেন। বেদেরা ঘাটে ঘাটে নোঙ্গর ফেলে হাট বাজারে পাড়ায় পাড়ায় সাপের খেলা দেখাতো। বেদে মহুয়া যখন নদের চাঁদের গ্রামে সাপের খেলা দেখাতে আসেন তখন মহুয়ার রূপে মুগ্ধ হয়ে নদের চাঁদ তাকে প্রণয় নিবেদন করেন। মহুয়াও নদের চাঁদের প্রণয়ে সম্মতি জ্ঞাপন করেন। কিন্তু দুজনের প্রেমের মাঝখানে বাধা হয়ে দাঁড়ায় সরদার হুমরা বেদে। একদিন নদের চাঁদ মহুয়াকে নিয়ে পালিয়ে যায়। এদিকে হুমরা বেদে তা জানতে পেরে দলবল নিয়ে তাঁদের পিছু ধাওয়া করে। অবশেষে তারা মহুয়া ও নদের চাঁদকে ধরে ফেলে এবং নদের চাঁদকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়। সর্দার হুমরা বেদে মহুয়ার হাতে বিষলক্ষার ছুরি তুলে দিয়ে বলে “ যাও নদের চাঁদকে মেরে ফেল “। বিষলক্ষার ছুরি নিয়ে মহুয়া নদের চাঁদের দিকে এগিয়ে যায় এবং নিজেই নিজের বক্ষ ভেদ করে এই ছুরি দিয়ে। মহুয়া মাটিতে ঢলে পড়ে। প্রণয় পিয়াসী নদের চাঁদ মহুয়ার এই আত্মত্যাগ সহ্য করতে না পেরে প্রেমের প্রতিদান স্বরূপ বিষলক্ষার ছুরি দিয়ে নিজ জীবন আত্মাহুতি দেন। মহুয়া ও নদের চাঁদের এই আত্মত্যাগ চিরন্তন প্রেমকে মহিমান্বিত করেছে। আজও এই প্রেমের অমর কাহিনী লোক মুখে বিরাজমান।
দীনেশ চন্দ্র সেন মৈমনসিংহ গীতিকার প্রথম খন্ডের ভূমিকায় লিখেছেন, “ মহুয়ার প্রেম কি নির্ভীক, কী আনন্দপূর্ণ। শ্রাবনের শতধারার ন্যায় অশ্রু আসিতেছে, কিন্তু প্রেমের মুক্তহার কন্ঠে পরিয়া মহুয়া চিরজীবি, মৃত্যুকে বরণ করিয়া মৃত্যুঞ্জয়ী হইয়াছে। “
( চলবে )

বাংলাদেশ সময়: ২০:১৬:৪৯ ● ৭৭৭ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ