শুভ জন্মদিন, আলোর ফেরিওয়ালা

Home Page » প্রথমপাতা » শুভ জন্মদিন, আলোর ফেরিওয়ালা
মঙ্গলবার ● ২৫ জুলাই ২০২৩


আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ

বঙ্গ-নিউজঃ  আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের ৮৪ বছর পূর্ণ হলো আজ। জন্মদিনে তাঁকে শুভেচ্ছা জানাই। প্রার্থনা করি, উজ্জ্বল উপস্থিতি নিয়ে তিনি আরও বহু বছর আমাদের মধ্যে থাকুন।অধ্যাপক, উপস্থাপক, সংগঠক, লেখক কিংবা বক্তা– এমন সব ব্যক্তিগত পরিচয় ছাপিয়ে আজ বাংলাদেশজুড়ে সবাই তাঁকে চেনেন অনন্য এক অনুপ্রেরণাময় মানুষ হিসেবে। লোকে তাঁকে ভালোবেসে নানা নাম দিয়েছে– ‘আলোর বাতিঘর,’ ‘আলোর ফেরিওয়ালা,’ ‘আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর।’ তিনি নিজে অবশ্য বলেন, ‘আমার কাজ সন্ধান করা, আমি খুঁজে বেড়াই আলোকিত মানুষ।’আলোকসন্ধানী আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের ছোটবেলা কেটেছে পাবনা, টাঙ্গাইল আর বাগেরহাটে। তাঁর মায়ের নাম করিমুন্নেসা। অল্প বয়সেই তিনি মাকে হারান। মায়ের অকালমৃত্যুতে তাঁর জীবনে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছিল, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের পরবর্তী জীবনের নানা লেখায় তার উল্লেখ আছে। তাঁর বাবা আযীমুদ্দিন আহমদ একজন নিষ্ঠাবান শিক্ষক ও সাহিত্যানুরাগী ছিলেন। বাবার শিক্ষা ও সাহিত্য অনুরাগের প্রভাব আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের জীবনে পড়েছিল। হিসাবরক্ষণে পড়াশোনা করলে ভালো চাকরি পাওয়া যাবে– এই প্রলোভন অগ্রাহ্য করে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন।

পড়াশোনা শেষে ১৯৬১ সালে শিক্ষকতাকেই তিনি পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। শিক্ষক হিসেবে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ মুন্সীগঞ্জ হরগঙ্গা কলেজ, সিলেট মহিলা কলেজ, রাজশাহী কলেজ, ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট টেকনিক্যাল কলেজ এবং সবশেষে ঢাকা কলেজে অধ্যাপনা করেছেন। তাঁর শিক্ষক জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা বই ‘নিষ্ফলা মাঠের কৃষক’ শুধু সুপাঠ্য নয়; বাংলাদেশে শিক্ষামানের ক্রমাবনতি ও দুর্দশার একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল।

শিক্ষকতার পাশাপাশি আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ সাহিত্য আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ষাটের দশকে তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘কণ্ঠস্বর’ পত্রিকাটি সে সময়ের বহু তরুণ কবি-সাহিত্যিককে নতুন চিন্তা, নতুন ধারণা প্রকাশের সুযোগ করে দিয়েছে। সেই সময় থেকেই তিনি জড়িয়ে পড়েছিলেন টেলিভিশনের সঙ্গে। সত্তরের দশকে তিনি হয়ে উঠেছিলেন দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় উপস্থাপকদের একজন।

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ প্রতিষ্ঠিত বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের লক্ষ্য দুইটি– ‘আজকের তরুণদের অর্থাৎ আগামী দিনের মানুষদের বড় করে তোলা’ এবং ‘তাদের সংঘবদ্ধ জাতীয় শক্তিতে পরিণত করা’। তিনি চেয়েছেন জ্ঞানের সামগ্রিক চর্চার পাশাপাশি হৃদয়ের উৎকর্ষ ও উচ্চতর মানবিক মূল্যবোধের বিকাশ ঘটিয়ে বহুসংখ্যক আলোকিত, সম্পন্ন, উদ্যমী মানুষ গড়ে তুলতে।

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রকে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের জীবনের শ্রেষ্ঠ কীর্তি বলা চলে। নানা বাধা-বিঘ্ন-সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র এখন সত্যিকারভাবে জাতীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ‘মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়’– এই মূলনীতি নিয়ে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র সারাদেশে প্রায় ৩০ লাখ কিশোর-তরুণকে বই পড়া কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত করেছে। এ ছাড়া ঢাকার বাংলামটরে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের মূল ভবনের বিশাল গ্রন্থাগার, প্রদর্শনী কক্ষ, চলচ্চিত্র, গান ও সংগীতের আর্কাইভ বহু সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষের মনের খোরাক জুগিয়ে চলেছে। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগার প্রকল্প শুধু বাংলাদেশ নয়; সারা পৃথিবীতেই বিস্ময় জাগিয়েছে।

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ তাঁর কাজের স্বীকৃতি হিসেবে র‍্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার, একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন। কিন্তু তাঁর কাজের বিপুলতা ও প্রভাব দেখে মনে হয়, তাঁকে স্বীকৃতি দিয়ে পুরস্কারগুলোই সম্মানিত হয়েছে। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ তাঁর প্রকৃত পুরস্কার বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কাছ থেকে পেয়েছেন। বিশ্বমঞ্চে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো যে বাংলাদেশের স্বপ্ন তিনি দেখেছেন, সে বাংলাদেশকে যেন তিনি জীবদ্দশায় প্রত্যক্ষ করে যেতে পারেন– আলোকসন্ধানী আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের জন্মদিনে আজ এই আমাদের প্রার্থনা।

বাংলাদেশ সময়: ১২:২৬:১৭ ● ৩৬৫ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ