ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের ওপর আসছে খড়্গ

Home Page » অর্থ ও বানিজ্য » ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের ওপর আসছে খড়্গ
বুধবার ● ১৩ মার্চ ২০২৪


বাংলাদেশ ব্যাংক

 

বঙ্গনিউজঃ    ব্যাংক কোম্পানি আইনে সংজ্ঞা নির্ধারণের পর এখন ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি চিহ্নিত করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রতিটি ব্যাংককে এখন থেকে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের তালিকা করতে হবে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকে তা পাঠাতে হবে। এ ধরনের খেলাপির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সরকারের বিভিন্ন সংস্থা বিভিন্ন ব্যবস্থা নেবে। এসব বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশনা দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিরা কোনো রাষ্ট্রীয় পুরস্কার বা সম্মাননা পাওয়ার যোগ্য হবেন না। তাদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। তারা কোম্পানি গঠন করতে পারবেন না।
কেউ একবার ইচ্ছাকৃত খেলাপি চিহ্নিত হয়ে তালিকা থেকে অব্যাহতির পাঁচ বছর পার না হলে কোনো ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হতে পারবেন না।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, খেলাপি ঋণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও ব্যাংকিং খাতের ঋণ ব্যবস্থাপনার অন্যতম প্রধান অন্তরায়। ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা চিহ্নিত করা এবং তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিলে শ্রেণীকৃত ঋণ কমানোসহ ব্যাংকিং খাতের ঋণ শৃঙ্খলা, দক্ষতা এবং সক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব হবে। আর ব্যাংক খাতের সক্ষমতা বাড়লে মূলধন, আয়, মুনাফা, তারল্য ও স্বচ্ছলতার ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

কোনো ব্যাংক ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি শনাক্ত করার নির্দেশনা পরিপালন না করলে তাঁর বিরূদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কোনো ব্যাংক ইচ্ছাকৃত খেলাপি চিহ্নিত করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে না পাঠালে ৫০ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা জরিমানা করা হবে। নির্দেশনা লঙ্ঘন অব্যাহত থাকলে প্রথম দিনের পর প্রত্যেক দিনের জন্য অতিরিক্ত ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। ইচ্ছাকৃত খেলাপির তথ্য ঋণ তথ্য ব্যুরোতে (সিআইবি) রিপোর্ট করতে হবে। এ ধরনের খেলাপির তথ্য প্রতি ত্রৈমাসিক শেষে পরবর্তী মাসের ১০ তারিখের মধ্যে ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগে পাঠাতে হবে।

ইচ্ছাকৃত খেলাপি কারা
ইচ্ছাকৃত খেলাপি বলতে কাকে বোঝানো হবে সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইনে তা বলে দেওয়া হয়েছে। গতকালের নির্দেশনায় বিষয়টি উল্লেখ করে বলা হয়েছে– নিজ নামে, পরিবারের সদস্য, স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির অনুকূলে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ বা অন্য কোনো আর্থিক সুবিধা নিয়ে সামর্থ্য থাকার পরও পরিশোধ না করলে তাঁকে ইচ্ছাকৃত খেলাপি বলা হবে। আবার জালিয়াতি, প্রতারণা বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে নিজে, পরিবারের সদস্য, স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির নামে ঋণ নিলে কিংবা এক উদ্দেশ্যে ঋণ নিয়ে আরেক কাজে ব্যবহার করলেও ইচ্ছাকৃত খেলাপি হবেন। ঋণের বিপরীতে দেওয়া জামানত লিখিত পূর্বানুমতি ছাড়া হস্তান্তর বা স্থানান্তর করলে তাঁকেও এ কাতারে ফেলা হবে।

ইচ্ছাকৃত খেলাপিকে যেসব সুবিধা দেওয়া যাবে না: ইচ্ছাকৃতভাবে চিহ্নিত হওয়ার পর নানা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন। ইচ্ছাকৃত খেলাপির বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা, ট্রেড লাইসেন্স ইস্যুতে নিষেধাজ্ঞা এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ও রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসের (আরজেএসসি) নিবন্ধনে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থায় চিঠি দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক কোম্পানি আইনের ২৭খ(৬) ধারার আওতায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। ইচ্ছাকৃত খেলাপি কোনো রাষ্ট্রীয় পুরস্কার বা সম্মাননা পাওয়ার যোগ্য হবেন না। গাড়ি, জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাট ইত্যাদির নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের নিকট এ ধরনের খেলাপির তালিকা পাঠাবে বাংলাদেশ ব্যাংক। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিদ্যমান আইনের আওতায় যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।
এতে আরও বলা হয়েছে, একবার কেউ ইচ্ছাকৃত খেলাপি চিহ্নিত হলে পুরো ঋণ পরিশোধের পর পাঁচ বছর না হওয়া পর্যন্ত কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হতে পারবেন না। কেউ পরিচালক থাকলে পরিচালক পদ শূন্য হবে। ইচ্ছাকৃত খেলাপির আরোপিত বা অনারোপিত কোনো সুদ মওকুফ করা যাবে না। এ ধরনের ঋণ পুনঃতপশিলও করা যাবে না। অন্য ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান অধিগ্রহণ করতে পারবে না।

যেভাবে চিহ্নিত হবে ইচ্ছাকৃত খেলাপি
ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, কোনো ঋণ ৬ মাস মেয়াদোত্তীর্ণ হলে তা খেলাপি হিসেবে বিবেচিত হয়। অবশ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক মেয়াদোত্তীর্ণ হিসাবের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে রেখেছে। কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি খেলাপি হওয়ার পর তিনি খেলাপি কিনা তা চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া বলে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ইচ্ছাকৃত খেলাপি চিহ্নিত করতে আগামী ৯ এপ্রিলের মধ্যে এমডির দুই ধাপ নিচের একজন কর্মকর্তার অধীনে ‘ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা শনাক্তকরণ ইউনিট’ গঠন করতে হবে। নির্ধারিত সংজ্ঞার আলোকে এ ইউনিট থেকে ইচ্ছাকৃত খেলাপি চিহ্নিত করবে। চিহ্নিত হওয়ার পর সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট ঋণগ্রহীতাকে তাঁর বক্তব্য দেওয়ার জন্য ১৪ কর্মদিবস সময় দিতে হবে। নির্ধারিত সময়ে সন্তোষজনক বক্তব্য না পেলে চূড়ান্ত করার জন্য এমডির কাছে দিতে হবে। তবে বড় শিল্পে ৭৫ কোটি টাকার বেশি মাঝারি ৩০ কোটি এবং অন্যান্য খাতে ১০ কোটির বেশি ঋণের ক্ষেত্রে পরিচালনা পর্ষদ বা নির্বাহী কমিটির অনুমোদন নিতে হবে। সাত দিনের মধ্যে তাঁকে লিখিতভাবে জানাতে হবে। তিনি ৩০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে আপিল করতে পারবেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে কোনো ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণ চিহ্নিত হলে তা বিবেচনায় নিতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১:০৪:৪৩ ● ৬৪ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ