তারুণ্যের সমাবেশে নির্বাচনের আহ্বান

Home Page » জাতীয় » তারুণ্যের সমাবেশে নির্বাচনের আহ্বান
বৃহস্পতিবার ● ২৯ মে ২০২৫


 তারুণ্যের সমাবেশে নির্বাচনের আহ্বান

বঙ্গ নিউজ ডেস্ক:আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে যাতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তার প্রস্তুতি নিতে শুরু করুন। প্রত্যেকে নিজ নিজ এলাকায় যান। জনগণের পাশে দাঁড়ান। জনগণের মন জয় করুন। সে অনুযায়ী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গতকাল বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে নেতাকর্মীর উদ্দেশে এ কথা বলেন। বক্তৃতার এক পর্যায়ে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকেও ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান
বেলা সাড়ে ৩টার দিকে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ উদ্যোগে ঢাকা বিভাগীয় তারুণ্যের সমাবেশ শুরু হয়। তাতে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন তারেক রহমান।

তারেক রহমান বলেন, ‘ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে আমরা দ্রুত জনগণের সরাসরি ভোটে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ ও জবাবদিহিমূলক একটি সরকার দেখতে চাই।’ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। আমরা আবারও বলতে চাই, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’

এরপর সমাবেশের নেতাকর্মীদের নিয়ে স্লোগান ধরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘দিল্লি নয়, পিন্ডি নয়, নয় অন্য কোনো দেশ; সবার আগে বাংলাদেশ।’ এ কর্মসূচি ঘিরে সকাল ১০টা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে তিন সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী সমাবেশস্থলে জড়ো হতে থাকেন। নেতাকর্মীর স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে নয়াপল্টন। নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উপস্থিতিতে নয়াপল্টন ও এর আশপাশের এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে একে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সমাবেশ বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা।
সবুজ, হলুদ ও লাল রঙের ক্যাপ ও টি-শার্ট পরে নেতাকর্মীরা সমাবেশে যোগ দেন। স্লোগান আর গান-নাচে প্রাণচঞ্চল হয়ে ওঠে নয়াপল্টনের পরিবেশ। মঞ্চে সংগীত পরিবেশন করেন জাতীয় পর্যায়ের শিল্পীরা।

দুপুর ১২টার মধ্যে সমাবেশস্থল পেরিয়ে তারুণ্যের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে বিজয়নগর, পুরানা পল্টন, জিরো পয়েন্ট, ফকিরাপুল, আরামবাগ, মতিঝিল, কাকরাইল, শান্তিনগর, মালিবাগ, মগবাজার, শাহবাগ, মৎস্য ভবনসহ বিভিন্ন এলাকায়। এতে পুরো এলাকার সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তীব্র যানজটে সব স্থবির হয়ে যায়। শহরে সাধারণ মানুষকে হেঁটে নিজ নিজ গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।

ব্যানার, জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবিসংবলিত ফেস্টুন এবং মাথায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা বেঁধে সমাবেশে আসেন নেতাকর্মীরা। ঢাকায় বিভিন্ন ওয়ার্ড-থানাসহ দলের তিন সাংগঠনিক বিভাগ সিলেট, ফরিদপুর ও ময়মনসিংহের নেতাকর্মীরা এই সমাবেশে যোগ দেন। এটি এই তিন সাংগঠনিক বিভাগের সমাবেশ থাকলেও অন্যান্য জেলা থেকেও নেতাকর্মী কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন।

তরুণদের দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে মে মাসজুড়ে কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপির তিন সংগঠন। চারটি বড় বিভাগ ও শহরে দু’দিন করে আট দিন সেমিনার ও সমাবেশ করা হয়। চট্টগ্রাম, খুলনা ও বগুড়ায় সেমিনার ও সমাবেশ শেষে গতকাল ঢাকায় ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার’ এই সমাবেশ হয়।

নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা চলছে

সমাবেশে তারেক রহমান বলেন, নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা শুরু হয়েছে। অল্প সংস্কার আর বেশি সংস্কারের অভিনব শর্তের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে আগামী জাতীয় নির্বাচনের ভবিষ্যৎ। এরই মধ্যে জনগণ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে, সংস্কার নিয়ে সময়ক্ষেপণের আড়ালে অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরে এবং বাইরে কারও কারও কিছু মনে হয় ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে।

আদালতকে অবমাননা করা হচ্ছে

সমাবেশে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘পলাতক স্বৈরাচারের সময় আমরা দেখেছি, তারা কীভাবে আদালতকে অবজ্ঞা করেছে। আদালতের রায়কে অবজ্ঞা করেছে। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, পলাতক স্বৈরাচারের পর যেই সরকারের কাছে দেশের মানুষ আশা করেছিল, আইনের প্রতি সম্মান দেখাবে। আমরা দেখলাম, আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান না দেখিয়ে ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণের মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করেছে। সেই স্বৈরাচারের পুনরাবৃত্তি আমরা দেখতে পাচ্ছি।’

দলের নেতাকর্মীর উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, ‘যারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখায় না, যারা আদালতকে, আদালতের নির্দেশকে অবজ্ঞা করে– তাদের কাছ থেকে আমরা কতটুকু সংস্কার আশা করতে পারি। ইশরাকের শপথ গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করে আজ আমরা আবারও স্বৈরাচারী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ দেখতে পাচ্ছি।’

রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রতিপক্ষ বানাবেন না

সরকারের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, নিরপেক্ষতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতাই কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান পুঁজি। তাই তাদের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, পরামর্শ থাকবে, জনগণের বিশ্বাস ভালোবাসা নষ্ট হয় অন্তর্বর্তী সরকারের এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া ঠিক হবে না। একই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আবারও আহ্বান জানিয়ে বলতে চাই, গণতন্ত্রকামী জনগণ এবং গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোকে দয়া করে প্রতিপক্ষ বানাবেন না।

বিএনপি নেতা বলেন, যদি আপনাদের কেউ রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকতে চান, তাহলে সরকার থেকে পদত্যাগ করে জনগণের কাতারে আসুন, নির্বাচন করুন। যদি ভবিষ্যতে নির্বাচনে জনগণের রায় পান, তাহলে আবার সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করুন।

নতুন সাড়ে তিন কোটি ভোটার ভোটের সুযোগ চায়

নতুন প্রজন্মের প্রায় সাড়ে তিন কোটি ভোটার সংযুক্ত হয়েছে জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, এই নতুন ভোটাররা আজ পর্যন্ত একটি জাতীয় নির্বাচনেও ভোট দিয়ে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করার সুযোগ পায়নি। সুতরাং সংস্কার ইস্যুর পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের দৃশ্যমান প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।

অতীতের তত্ত্বাবধায়ক সরকার তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করলেও এবার অন্তর্বর্তী সরকার দশ মাসেও সেই নির্বাচন করতে পাচ্ছে না– মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, অতীতে বিভিন্ন সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচন করেছে এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে তত্ত্বাবধায়ক সরকার তিন মাসের মধ্যেই সফলভাবে জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করেছে। আমরা ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে জনগণের সরাসরি ভোটে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক, জনগণের কাছে দায়বদ্ধ একটি সরকার দ্রুত দেখতে চায়।


সরকারের মাথা থেকে নিচ পর্যন্ত পচন ধরেছে
সমাবেশে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা বক্তব্য দেন। উপস্থিত ছিলেন দলের সর্বস্তরের নেতা। সমাবেশে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা বারবার তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি, কেন অতিদ্রুত নির্বাচন দরকার। কারণ দেশ-বিদেশে নানা ষড়যন্ত্র চলছে। নির্বাচনকে বিলম্বিত করার জন্য তারা ষড়যন্ত্র করছে। আমরা চাই নির্বাচনের সংস্কার অতি দ্রুত শেষ করে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হোক। তা না হলে এই ষড়যন্ত্র জনগণই মোকাবিলা করবে।

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, সরকারের মাথা থেকে নিচ পর্যন্ত পচন ধরেছে। এভাবে চলতে থাকলে আওয়ামী লীগ যা ক্ষতি করেছে, এরা তার চেয়ে বেশি ক্ষতি করবে। অন্তর্বর্তী সরকারের কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন, এই সরকার দেশের মানুষকে অবজ্ঞা করছে। এই সরকার ঔপনিবেশিক সরকার। সরকারের মধ্যে যারা আছেন, তার ৯০ ভাগই এ দেশের নাগরিক নন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা নির্বাচনী রোডম্যাপ চেয়েছি। কারও পদত্যাগ চাইনি। এর পরও মানুষ পদত্যাগের নাটক দেখেছে। ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা সুস্পষ্টভাবে সংসদ নির্বাচনের কথা বলেছি। আশা করি, আইনের শাসন কায়েম হবে, ইশরাকের (ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে) শপথের ব্যবস্থা করবেন। নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করবেন। আর যদি না করেন, নির্বাচনের দাবিতে যদি দেশের মানুষকে আন্দোলন করতে হয়; তাহলে সেটা হবে দুর্ভাগ্যজনক।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এই সমাবেশ গণতন্ত্রের বার্তা দিচ্ছে। গণতন্ত্রের বার্তা হচ্ছে নির্বাচন। নির্বাচন নিয়ে কোনো হেলাফেলা চলবে না। সংস্কারের কথা বলে নির্বাচনের রোডম্যাপ পেছানোর সুযোগ নেই। বিচারের কথা বলে রোডম্যাপ পেছানোর সুযোগ নেই। তিনি বলেন, কান পেতে শুনুন, সংস্কার করবে দেশের জনগণ। যতই গুরুত্বপূর্ণ হোক, সেই সংস্কার ব্যালট-ভোটের মাধ্যমে হবে। আপনাদের মাধ্যমে হবে না।

আমীর খসরু বলেন, শেখ হাসিনার পতন না হলে এই লোকগুলো কোথায় থাকত? কেউ বিদেশে, কেউ চাকরিতে। আমরা থাকতাম জেলে, না হয় ফাঁসির মঞ্চে। তাই তোমাদের ওপর ভরসা নেই। বিচার বিএনপি করবে। ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার গঠন করতে হবে। সেই নির্বাচন বিলম্বিত করা হলে তরুণরা জবাব দেবে।
বৃষ্টিতে ভোগান্তি

সমাবেশে ফ্রি চিকিৎসার আয়োজন করে বিভিন্ন বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। সকাল থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত তীব্র রোদ উপেক্ষা করে নেতাকর্মীরা বক্তব্য শোনেন। ৪টার দিকে পল্টনসহ আশপাশের এলাকায় শুরু হয় বৃষ্টি। এতে ভোগান্তিতে পড়েন নেতাকর্মীরা। অনেকেই সড়কসংলগ্ন দোকান, শপিংমল ও অফিসের বারান্দায় আশ্রয় নেন। বড় অংশ বৃষ্টিতে ভিজেই দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য শোনেন।

যুবদলের সভাপতি এম মোনায়েম মুন্নার সভাপতিত্বে এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছিরের যৌথ সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বক্তব্য দেন।

বাংলাদেশ সময়: ৮:৩১:৫২ ● ৫২ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ