
শুক্রবার ● ১১ জুলাই ২০২৫
টেলিগ্রাম চ্যানেলের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় তথ্য পাচার: CDMS অ্যাকাউন্ট ও বায়োমেট্রিক ডেটা বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্যে, পুলিশ নীরব
Home Page » এক্সক্লুসিভ » টেলিগ্রাম চ্যানেলের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় তথ্য পাচার: CDMS অ্যাকাউন্ট ও বায়োমেট্রিক ডেটা বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্যে, পুলিশ নীরব
ঢাকা, ১১ জুলাই ২০২৫ — প্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক অপরাধের নতুন রূপ নিয়েছে টেলিগ্রাম ভিত্তিক চক্রগুলোর মাধ্যমে। সম্প্রতি, বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তথ্য ব্যবস্থাপনা সিস্টেম (CDMS) এবং মোবাইল নম্বর-ভিত্তিক বায়োমেট্রিক তথ্য অবৈধভাবে বিক্রির ঘটনায় দেশজুড়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। তদন্তে বেরিয়ে এসেছে দুইটি সক্রিয় টেলিগ্রাম চ্যানেল, যারা অবাধে এই সংবেদনশীল তথ্য বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।
‘Dark Cyber Security’: বায়োমেট্রিক ও CDMS অ্যাকাউন্ট বেচাকেনার হাব
একটি চ্যানেলের নাম Dark Cyber Security। চ্যানেলটি পরিচালনা করছেন একজন ব্যক্তি যার পরিচিতি নাঈম নামে, টেলিগ্রাম ইউজারনেম @owner_of_dcs। উক্ত চ্যানেলের মাধ্যমে মোবাইল নম্বরের বিপরীতে সংযুক্ত বায়োমেট্রিক তথ্য (জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মতারিখ, ঠিকানা ইত্যাদি) সরবরাহ করা হচ্ছে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে — যার মূল্য নির্ধারণ করা হয় নম্বর অনুযায়ী।
আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো, এই চ্যানেল থেকেই CDMS ওয়েবসাইটের একাধিক প্রশাসনিক অ্যাকাউন্ট বিক্রি করা হচ্ছে। যেকোনো সাধারণ নাগরিক কিংবা সাইবার অপরাধী এ অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে পুলিশ ডেটাবেজে প্রবেশ করতে পারছে, যা সরাসরি জাতীয় নিরাপত্তার ওপর আঘাত।
‘Black Master Squad’: ভয়ভীতি, ব্ল্যাকমেইল ও পরিচয় গোপন করে রাষ্ট্রীয় পরিচয় ব্যবহার
অন্যদিকে, Black Master Squad নামের আরেকটি টেলিগ্রাম চ্যানেলেও ভয়ংকর এক চিত্র দেখা যাচ্ছে। এই চ্যানেলের অন্যতম সদস্য Venom ছদ্মনামে পরিচিত, যার প্রকৃত নাম সিয়াম বলে শনাক্ত হয়েছে। এই ব্যক্তি একটি CDMS অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে এক ব্যক্তিকে মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে ভিডিও কলের মাধ্যমে হুমকি দেন। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, তিনি নিজেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হিসেবে উপস্থাপন করে ভুক্তভোগীকে ভয়ভীতি ও মানসিক চাপে ফেলেন।
অবাধেই চলছে অবৈধ তথ্য বিক্রি: পুলিশ কি করছে?
এই দুটি চ্যানেলের কার্যক্রম চলছে একেবারেই প্রকাশ্যে — দিনরাত টেলিগ্রামে চলছে বায়োমেট্রিক তথ্য ও পুলিশের অভ্যন্তরীণ সিস্টেমের অ্যাক্সেস বিক্রির ভয়াবহ বাণিজ্য। অথচ, এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো পদক্ষেপ বা বিবৃতি দেখা যায়নি। প্রশ্ন উঠছে, এত বড় পরিসরে রাষ্ট্রীয় তথ্যের অপব্যবহার চললেও, সাইবার ক্রাইম ইউনিট বা ডিজিটাল নিরাপত্তা সংস্থা কোথায়?
সাইবার অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরণের সিস্টেমিক লঙ্ঘন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভেতর থেকেই এক প্রকার সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব নয়। একাধিক সূত্র ইঙ্গিত দিয়েছে, কিছু পুলিশ সদস্য বা টেকনিক্যাল পার্সোনেল এই অ্যাকাউন্ট বিক্রির সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন — যদিও এই অভিযোগ এখনো প্রমাণিত নয়।
জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধুমাত্র অপরাধীদের ধরা যথেষ্ট নয়; বরং তথ্য ব্যবস্থাপনায় যে ফাঁকফোকর রয়েছে, তা চিহ্নিত করে অবিলম্বে নিরাপত্তা জোরদার করা প্রয়োজন। CDMS-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্মে বহিরাগত প্রবেশ ঠেকাতে মাল্টি-লেভেল অথেনটিকেশন, লগ মনিটরিং এবং ফিজিক্যাল এক্সেস নিয়ন্ত্রণ না থাকলে এমন অপব্যবহার চলতেই থাকবে।
সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (BTRC), এবং পুলিশের সাইবার ইউনিটকে দ্রুত সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এই প্রতিবেদন চলমান অনুসন্ধানের অংশ। ভুক্তভোগীদের নিরাপত্তার স্বার্থে কিছু নাম ও তথ্য আংশিক গোপন রাখা হয়েছে।
অপরাধের কিছু প্রমাণ
ছবি ১: টেলিগ্রাম চ্যানেল থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট
ছবি ২: CDMS অ্যাক্সেস সংক্রান্ত তথ্যের স্ক্রিনশট
বাংলাদেশ সময়: ২০:০২:৫৩ ● ৫২ বার পঠিত