শনিবার ● ২০ ডিসেম্বর ২০২৫

রঙলেপা- ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরেঃ পর্ব-৪ স্বপন চক্রবর্তী

Home Page » সাহিত্য » রঙলেপা- ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরেঃ পর্ব-৪ স্বপন চক্রবর্তী
শনিবার ● ২০ ডিসেম্বর ২০২৫


স্বপন কুমার চক্রবর্তী
গ্রুপে আমার যোগদান যেভাবে-
আমি তখন অবসরে । সবে মাত্র ভারত থেকে বাইপাস অপারেশন সম্পন্ন করে এসেছি। ব্যাথা প্রচন্ড। কোন ভাবেই স্বস্তি পাচ্ছি না। এমন সময়ে কোন একদিন ফোন এলো। মহিলা কন্ঠ। আমার অপরিচিতা। আমাকে আমন্ত্রণ জানালেন রঙলেপায় অন্তর্ভুক্তির জন্য। যেহেতু আমিও “ আমার রঙে ভরা ব্যাংকিং জীবন “ নিয়মিত পড়ছি, এবং মন্তব্য করে যাচ্ছি, তাই দ্বিমত করার কোন কারণ ছিল না। এমনি ভাবেই” ছানাপোনার মা” নামের অন্তরালে জামেল- ই- গাজী শারকী নিরলসভাবে সবাইকে আমন্ত্রণ জানাতেন। সঙ্গে রঙলেপার প্রতিষ্ঠাতা অন্যরাও । আজ এর সদস্য সংখ্যা প্রায় ছয় হাজার। বয়স হলো ছয় বছর। ব্যাংকের মতো কঠিন চাকুরি করে তার ছানাপোনাদের আপ্যায়ন, স্কুলের পড়া তৈরি করে দেয়া, তাদের স্কুলে পাঠানো এবং স্কুল থেকে বাসায় ফিরে আসাটি নিশ্চিত করন, সংসার , রান্নাবান্না সব কিছুর পরও তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে গ্রুপকে এগিয়ে নেয়া– সব ছিল খুব একটি দুরূহ কাজ। তবুও তিনি ক্লান্তিহীনা । তার আরও গুণের কথা ইতিমধ্যেই অনেকে জেনে গেছেন যে, তার লেখার হাতও ভালো। যারা গ্রুপে লিখতে লিখতে ক্লান্ত হয়েছেন, তাদেরকে লেখা চালিয়ে যাবার অনুরোধ তিনি করে যাচ্ছেন। তার অনুরোধ অত্যন্ত শালীন ও মার্জিত, তবে বলিষ্ঠ। নতুন বা পুরাতন, যাকেই অনুরোধ জানান, তা যেন একটি আদেশের সমতূল্য হয়ে যায়। কারণ একটা অধিকার নিয়ে তিনি কথা বলেন। ফলে সবাই তাকে স্নেহ করেন। উপেক্ষা করেন এমন সাধ্য কার? তাই আমিও তার অবদানের কথা অস্বীকার করি কেমন করে। এ প্রসঙ্গে প্রকৃতির নিয়ম নিয়ে পদার্থ বিজ্ঞানের একটি নিয়মের কথা উল্লেখ করা যায়, যেমন- When a body is said to be at rest, his tendency at rest .Its call Inertia. Similarly, When a body is said to be at Motion, his tendency at Motion. অর্থাৎ একটা বস্তু যদি বিশ্রামে থাকে বা থেমে থাকে, তার ইচ্ছাটাই হলো থেমে থাকা। তাকে ধাক্কা না দেওয়া পর্যন্ত সে থেমেই থাকবে। যেমন একটি থেমে থাকা বল। সে বল প্রয়োগ না করা পর্যন্ত দাঁড়িয়েই থাকবে। আবার পাল্টা শক্তি প্রয়োগ করলে থেমে যাবে। যেমন বাতাস বা অন্য কিছুর বাধার কারণে। ঠিক তেমনি চলমান বস্তুর বেলায়ও তাই, সে চলতেই থাকে, চলতেই থাকে। যেমন একটা চলন্ত ট্রেন। ইঞ্জিন বন্ধ হলেও চলতেই থাকে। পরে বিপরীত দিক থেকে আসা বাতাসের ধাক্কায় অথবা ব্রেক কষলে তা থেমে যায়। এই থেমে থাকা ব্যাক্তিদের ধাক্কা দিয়ে চালু করার কাজটি করে চলেছেন শারকী। তবে তিনি প্রচার বিমুখ এক মানুষ। আবার সবাই তাকে চিনেন। যদিও আদ্যাবধি তাকে কোন দিন দেখিনি। গ্রুপের অধিকাংশকেই চোখে দেখিনি। শুধু বিশ্বাস করে চলেছি যে, ছানাপোনার মা নামে একজন আছেন। আছেন তপতী রানী দাস, আছেন তাসমিনা জেবিন, আছেন সমীর লোধ স্যার, আছেন আরও আরও অনেকেই। আছেন প্রায় ছয় হাজার সদস্য/সদস্যা। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে এখন নাকি অনেক কিছু হয়। AI দিয়ে নাকি ডুপ্লিকেট মানুষ তৈরি করা যায়। রোবট দিয়ে সংবাদ পাঠের সংবাদ জেনেছি। মোট কথা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়েও যদি এমন সব সৃষ্টিশীল কাজ হয় তো মন্দ কি। তাহলে তো AI ই ভালো।
তবে মানুষ ত্রুটির উর্ধে নয়। তারও হয়তো ভুলভ্রান্তি থাকাটা স্বাভাবিক।নইলে আর মানুষ কেন? আমাদেরও জেনে না জেনে বহু ত্রুটি মনের অজান্তেই ঘটে চলেছে হয়তো। এসব নিয়ে বসে থাকলে সামনে এগুনো কঠিন। এই তো আমার এ লেখার প্রাক্কালে ছানাপোনার মা কতগুলো নাম লিখে জানতে চেয়েছেন যে তারা এখন কোথায় ? নীরব কেন? আমরা ক্লান্ত হলেও তিনি সক্রিয় । তিনি এখানে শুধু তাদের উপস্থিতির অভাব অনুভব করছেন না, অনুভব করছেন লেখার । নামগুলো আমিও uncut তুলে ধরতে চাই। তারা হচ্ছেন-
Aktaruzzaman Mondol Jalal Uddin Mahmud Swapan Kumar Chakraborty Tapati Rani Das Zahirul Islam Abdul Baquee Nurul Ahsan Andrew Nazlin Sultana Ali Ashraf Khan Shyamal Sarker Mir Kamrul Islam Bulbul Md Mahbubul Islam Arundhati Mondal Arefin Azad Mohammad Nazmul Huda Robin Mahmood Reza Suvra Rashna Shakhawat Hossain জাহান মারুফা শ্রদ্ধেয় এ সকল লেখকের কে যে কোথায়,কে জানে।
আমাদের আর এক নিরলস যোদ্ধা চট্টগ্রামের অবসরপ্রাপ্ত ডিজিএম বাবু সমীর লোধ। একজন বয়স্ক মানুষ। নিজের শারীরিক অবস্থা এবং তাঁর স্ত্রীর অবস্থা খুবই নাজুক। সে সব কিছুকে পাশ কাটিয়ে তিনি যেন স্বয়ংক্রিয় ভাবে সক্রিয় গ্রুপের পোস্ট দাতাদের সম্মানে। বলতে গেলে একজন নেপথ্য পরিচালক। বয়স্ক এবং অসুস্থ মানুষ তিনি। তারপরও ফেসবুকের প্রতিটি লিখা যত্নসহ পড়েন। আবার সুন্দর সমালোচনা করেন। সমালোচনা যথার্থ হয়, কারণ না পড়ে তিনি মন্তব্য করেন না। এতে করে লেখক-পাঠক সকলে প্রাণিত হন। উৎসাহ বেড়ে যায়। আমি ভেবে পাই না যে, দৈনিক এতো পোস্ট কি করে পড়েন এবং কষ্ট করে মন্তব্য করেন। লেখক অপরিচিত বা আংশিক পরিচিত বা পরিচিত ,যাই হোক , সমান সম্মান দেন সকলের লেখাকে। আমরা তাঁর এই মহানুভবতার জন্য তাঁকে সাধুবাদ জানাই। আবারও বলছি, কাজটি সহজসাধ্য নয়।
অতপর রঙলেপার আর একজন অন্তপ্রাণা, যার কথা অবশ্যই উল্লেখ করা প্রয়োজন- তিনি হবিগঞ্জের তপতী রানী দাস। তিনিও অগ্রণী ব্যাংকের একজন প্রিন্সিপাল অফিসার ছিলেন। স্বেচ্ছায় অবসরে চলে গেছেন। তিনি চাকুরি জীবনে এমনকি অবসরে থেকেও নিজের সংসার সামলে রঙলেপার সংসারটিকে আগলে রেখেছেন। তাঁর উপস্থিতি পাঠকগণ হয়তো অবশ্যই লক্ষ্য করে থাকবেন। ( চলবে )

বাংলাদেশ সময়: ২০:০৯:২১ ● ৪৭ বার পঠিত