
আমি বোধ হয় নদীর রচনা লিখতে গিয়ে গরুর রচনা লিখা শুরু করে দিয়েছি। তবুও লিখছি, এটা প্রয়োজন বলে মনে হয়েছে আমার কাছে। । নইলে অনেকে বুঝতে পারবেন না। অনেকে গ্রুপে পরে যুক্ত হয়েছেন। সে যাই হোক, রঙলেপার ষষ্ঠ জন্মদিন উপলক্ষ্যে এর জন্মের ঠিকুজি তুলে ধরতে গিয়ে কিছুটা লিখতে হচ্ছে বৈকি। ব্যক্তি পর্যায়ে লিখতে গেলে লিখা অনেক বড় হবে। তবে অপরিহার্য ব্যক্তিবর্গ, যাদের নাম একান্ত উল্লেখ্য ছিল, কিন্তু উল্লেখ করিনি, তাদের নিকট ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। তাপরও পর্যায় ক্রমে অনেকের নাম হয়তো প্রাসঙ্গিক ভাবে চলে আসবে আমার লেখায়।
রঙলেপা নিয়ে অধুনা অল্প-বিস্তর কিছু সমালোচনা আছে। সমালোচনা বিহীন কোন সৃষ্টিই নাকি পারফেক্ট না। অনেকেই বলছেন যে, তারা থাকবেন না। অনেকে ব্যাক্তিগত ঈগোর কারণে রঙলেপা পিছিয়ে যাচ্ছে বলে সমালোচনা করেছেন। কেহ কেহ আবার লিখা নিয়মিত না লিখার জন্য রঙলেপা গতি হারিয়েছে বলেছেন। কেহ কেহ তাদের লিখা অ্যাপ্রুভ না করার জন্য অসন্তুষ্ট হয়েছেন। আবার কেহ বিলম্বে অ্যাপ্রুভ করার জন্য অভিমান করেছেন। এভাবে অভিযোগ আসতে থাকায় এটিকে রঙলেপার প্রতি গভীর ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ বলে আমার মনে হয়েছে। তবে এটা যথাযথ প্রক্রিয়ায় না হবার কারণে নেহায়েৎ কাদা ছুড়াছুড়ি বলে বাইরের সদস্যদের মনে ধারণা জন্ম নিতে পারে। রঙলেপার পরিসীমা এখন আর শুধু অগ্রণী ব্যাংকের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। আন্তঃব্যাংক, এমনকি সারা দেশ তথা সকল সাহিত্য প্রেমি মানুষের সংগঠন হয়েছে। দেশের বাইরেও অনেক সদস্য আছেন, আছেন নামিদামি প্রতিষ্ঠিত লেখকও। আমরা এখন রূঢ় কিছু বাস্তবতার সম্মুখীন। গ্রুপটি সম্পূর্ণ অনলাইন ভিত্তিক ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচালিত সংগঠন। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, প্রতিটি সদস্যের সাথে সরাসরি আলাপ আলোচনা হয়না। ফলে সমস্যা সমূহ নিয়ে নীতি নির্ধারক পর্যায়ের বৈঠক করা তেমন হয়ে উঠে না। ব্যক্তি পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেয়াও সঠিক না। তবে সমস্যার উদ্ভব হলে সমাধান অবশ্যই হবে। আমরা আশাবাদী হতে চাই। এতো সংখ্যক সদস্য একত্রিত হওয়া অবশ্যই কঠিন কাজ। অবাস্তবও বটে। কারো সাথে কারো পরিচয়ও সম্ভব নয়। ব্যক্তি পর্যায়ে আমাদের অনেকের সাথে এখন পর্যন্ত দেখা সাক্ষাৎ হয়নি। হবে বলে আশা করাও সুদুর পরাহত। তবে সমাধান হয়তো বেড়িয়ে আসবে।
রঙলেপা থাকাতে আমার মনে হয়েছে যে, আমাদের ভিতর যে একটা সুপ্ত লেখক সত্ত্বা রয়েছে, তার অঙ্কুরিত হচ্ছে। প্রতিটি মানুষের ভিতর একটা সুপ্ত সাহিত্য প্রতিভা থাকে। সেটাকে ঘষে মেজে তীক্ষ্ণ করতে পারলে সফল হওয়া সম্ভব। কথায় বলে-Practice makes a man perfect. আমি নিজেও কোন দিন সাহিত্য নিয়ে লিখিনি। এখানে মন্তব্য করতে করতে এখন ইচ্ছে জাগে যে কিছু লিখি। তখন একদিন ছানাপোনার মা আমাকে ফোন দিলেন। বললেন, স্যার, আপনি লিখুন। ভেবে পাচ্ছিলাম না কি নিয়ে লিখবো। সেটাও চট করে তিনি বলে দিলেন। বললেন, আপনি তো এক সময় নাটক-টাটক করতেন, সে বিষয়েই নিয়েই না হয় লিখুন। আমি লিখার একটা ধারণা পেয়ে গেলাম। কিছু স্মৃতি তো আছেই। ঢাকা বসবাস কালীন কিছু স্মৃতি নিয়ে কয়েকটি পর্ব লিখেছি মাত্র। পোস্ট করা হয়নি এখনও। তখন একদিন সীমান্ত ভ্রমণের একটি ছবি পোস্ট দিয়ে ছিলাম। সেটা দেখে জালাল স্যারসহ কেহ কেহ বললেন, আমি যেন সীমান্ত ভ্রমণের উপর কিছু লিখি। তখন তাই শুরু করে ছিলাম । লিখে ছিলাম “ সীমান্ত ভ্রমণের সাতটি দিন ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা”। প্রায় পচাত্তরটি পর্ব পর্যন্ত পোস্ট করেছি। শেষ করতে পারিনি আজও। আরও কিছু লিখা আছে, কিছু লিখতে হবে। লিখার বাকি আছে “ দরুহ ইনচার্য ( অবশ্যই জালাল স্যারের দুরুহ কর্মি অনুপ্রেরণা), “ মাথায় কত প্রশ্ন আসে”, লিখা শুরু করে ছিলাম “ আমারও লোন হয়েছিল, কিন্তু ছুটি মিলেনি’ ( যার সংক্ষিপ্ত নোট খুঁজে পাচ্ছি না।) এমন আরও আরও কত কি। কিন্তু হয়ে উঠছে না।
আমি উল্লেখ করেছি যে, প্রত্যেকের ভিতরে একটা করে সাহিত্য প্রতিভা সহজাত হয়েই চলে আসে। কারো মাঝে বিকশিত, আর কারো মাঝে কলি। তার জন্য মনে হয় খুব বেশি শিক্ষিত হওয়ার প্রয়োজন হয় না। স্বভাব কবিদের সৃষ্টিক্ষম প্রতিভা দেখেছি। অনর্গল ছন্দ সৃষ্টি করতে পারেন। মঞ্চ কবিদের লড়াই দেখেছি। উপস্থিত ও তাৎক্ষণিক ছন্দ রচনা করে প্রতি পক্ষের কবিকে ঘায়েল করার দুর্দান্ত প্রচেষ্টা। অশিক্ষিত মানুষ শাহ আব্দুল করিম। অনেক গান লিখেছেন, যা আমাদের লোক সাহিত্যের ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে। রবীন্দ্রনাথ নজরুল –ওনাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সনদ ছিল না। দশম শ্রেণিতে পড়াকালীন নজরুল যোগ দিয়েছিলেন ৪৯নং বাঙ্গালী পল্টনে। পরে আর পড়াশোনা করেননি। শরৎচন্দ্র মাত্র কুড়ি টাকার জন্য F A ( Final of Arts) পরীক্ষা দিতে পারেননি। তবে তাদের সমগ্র সাহিত্য কর্ম খুব কম লোকেই সমাপ্ত করতে পেরেছেন। অনেকে বই কিনে আলমিরাতে হয়তো সাজিয়ে রেখেছেন। কারণ যত লিখেছেন, আমরা ততো পড়তে পারি না। তাই আমাদের লেখা লাইক কমান্ড না দেওয়ার অভিমানে লেখা ছেড়ে দিতে উদ্ধত হই।
শরৎ বাবুর কুড়ি টাকার সমমূল্যের অর্থ দিয়ে আজ কালকার বখাটে ছেলেরা একটি সিগারেটের শলা কিনে নিজের ভিতরকে জ্বালিয়ে দিতে তারা প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা করে। রুখবে তাদের কে? অন্য দিকে সাহিত্য নিয়ে না পড়েও অনেকে সুসাহিত্যিক হয়েছেন। ড. হুমায়ুন আহমেদ। তিনি রসায়ন নিয়ে পড়েও সাহিত্যের রসায়ন দিয়ে অমর সৃষ্টি রেখে গেছেন। ডা. নীহার রঞ্জন গুপ্ত, তিনি ডাক্তারি পড়েছেন। তসলিমা নাসরিন একজন ডাক্তার। নির্মলেন্দু গুণ প্রথম দিকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়েছেন। লালন ফকির ও হাসন রাজা, তারাও বিদ্যান ছিলেন কিনা জানা যায়না। ( চলবে)