
রবিবার, ১২ জুলাই ২০১৫
দেখলাম, খালি মাইয়ার জানটাই নাই’
Home Page » প্রথমপাতা » দেখলাম, খালি মাইয়ার জানটাই নাই’ময়মনসিংহে জাকাতের কাপড় নিতে এই ফটক দিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকতে গিয়ে পদদলিত হয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে। ফটকের সামনে পড়ে আছে হতাহতদের স্যান্ডেল। পরে সেখানে মোতায়েন করা হয় পুলিশ l বঙ্গনিউজ ডটকমঃনানির ভীষণ ভক্ত ছিল ১২ বছরের বৃষ্টি। ছোটবেলা থেকে সে নানি খোদেজার (৬০) কাছে থাকত। মরলও নানির সঙ্গে জাকাত আনতে গিয়ে। গতকাল শুক্রবার ভোরে ময়মনসিংহ শহরের অতুল চক্রবর্তী সড়কে জাকাতকে কেন্দ্র করে যে ২৭ প্রাণ ঝরে গেল, তাদের মধ্যে এই নানি-নাতনিও আছে।
নানির সঙ্গে বৃষ্টি থাকত পৌরসভা থেকে একটু দূরে, আকুয়ার খালপাড় এলাকায়। আজ শনিবার সকালে সেখানে গিয়ে দেখা গেল, নানি-নাতনির ছোট্ট ঘরটি খালি পড়ে আছে। কয়েকজন প্রতিবেশী জানান, খোদেজা স্থানীয় বাজারে কলা বিক্রি করতেন। যা আয় হতো, তা দিয়ে চলত নানি-নাতনির সংসার। ছোটবেলা থেকেই নানির সঙ্গে ছিল বৃষ্টি। নানি ছাড়া কিছু বুঝত না। তাঁরা জানান, বৃষ্টি ব্র্যাকের স্কুলে পড়ত। রোল নম্বর ছিল ১। পড়াশোনার পাশাপাশি নাচে-গানেও ভালো ছিল।
ওই বাড়ি থেকে একটু দূরে থাকেন বৃষ্টির মা সালেহা। ১০ মিনিটের পথ। ভাঙাচোরা এক টিনের ঘরে থাকেন তিনি। মা-মেয়েকে হারিয়ে এখন কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন সালেহা। কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত সালেহা ঘরের চৌকির ওপর একরকম অচেতন হয়ে পড়ে ছিলেন। ডাক দেওয়ার পর উঠলেন। বললেন, স্বামী মারা গেছেন। ছেলেমেয়ে ছিল তিনটা। বড় মেয়েটাই মরে গেল। কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘মাইয়া আমারে কুনো দিনও না জানায়ে কোতাও যায় নাই। আমার মায়েরও জাকাত খাওনের স্বভাব আছিল না। নিজে কলা বেইচ্যা চলত। প্রতিবেশীগোলা কান পরা দিয়া নিয়া গেছে।’
সালেহার ভাষ্য, গতকাল ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে সাইফুল নামের এক ভাগনের ফোনে তিনি মা ও মেয়ের মৃত্যু-সংবাদ পান। পরে দেড় কিলোমিটার দূরে ঘটনাস্থলে যান। গিয়ে শোনেন, তাঁর মা-মেয়েকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এরপর হাসপাতালে যান তিনি।
সালেহা বিলাপ করে বলতে থাকেন, ‘কাপড় দিয়া মাইয়ার মুখটা মুইছা দিলাম। কোনো দাগ নাই। কিচ্ছু নাই। সুন্দর মুখটা আমার মাইয়ার। দেখলাম, খালি মাইয়ার জানটাই নাই।’
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও প্রতিবেশী সাইফুলের ভাষ্য, তাঁদের এলাকা থেকে ৮-১০ জন জাকাত আনতে যান। জাকাতদাতা ব্যবসায়ী শামীম তালুকদারের বাড়ির সামনে ওই সময় তিন দিকেই প্রচুর মানুষ ছিল। আগের দিন থেকে শোনা যাচ্ছিল, সবাইকে জাকাত দেওয়া হবে, টাকা দেওয়া হবে। তাই ভিড় বাড়ছিল। বাড়িটির ফটক বন্ধ ছিল। সামনে ছিল শত শত মানুষ। সেখানে অনেকে বসে ছিলেন। ভোর পৌনে পাঁচটার দিকে ফটক খুলে দেওয়ার পর পেছনের লোকজন সামনে ধাক্কা দিতে থাকে,। এতে সামনে যাঁরা বসে ছিলেন, তাঁদের অনেকে পদদলিত হয়ে হতাহত হন।
সাইফুলের ভাষ্য, জাকাতদাতার বাড়ির ফটকে চারজন দারোয়ান ছিলেন। হাতে লাঠিও ছিল। কিন্তু এত মানুষের মধ্যে দারোয়ানেরা কিছু করতে পারেননি। তাঁর অভিযোগ, এত মানুষকে জাকাত দেবে বলেছে, কিন্তু পুলিশ রাখেনি। ফটকও আগে খোলেনি। তাই চাপ খেয়ে মানুষ মরেছে। তিনি বলেন, গত বছরও তিনি এখান থেকে জাকাত নিয়েছেন। কিন্তু এত ভিড় ছিল না। বাড়ির ফটকও খোলা ছিল।
বাংলাদেশ সময়: ১১:৩৩:৪৩ ২০৬ বার পঠিত
Head of Program: Dr. Bongoshia
News Room: +8801996534724, Email: [email protected] , [email protected]