শুক্রবার, ২৮ জুলাই ২০১৭
মুক্তিযোদ্ধা মেজর জিয়াউদ্দিন আহমেদ মারা গেছেন
Home Page » জাতীয় » মুক্তিযোদ্ধা মেজর জিয়াউদ্দিন আহমেদ মারা গেছেন![]()
বঙ্গ-নিউজঃ মুক্তিযুদ্ধে সুন্দরবন সাব সেক্টর কমান্ডার মেজর (অব.) জিয়াউদ্দিন আহমেদ মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি..রাজিউন)। তিনি শুক্রবার দুপুরে সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল হাসপাতালে মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর।
গত ১২ জুলাই অসুস্থ অবস্থায় তাকে সিঙ্গাপুর নেয়া হয়। এর আগে তিনি দুই সপ্তাহ ধরে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার দু’টি কিডনি এবং লিভার খারাপ অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হন। তখন আইসিইউতে নিয়ে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।শুক্রবার বাংলাদেশ সময় রাত আড়াই টার দিকে মেজর জিয়ার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটে এবং দুপুরে মারা যান। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে, দুই মেয়ে, দুই ভাই ও এক বোন রেখে গেছেন।
তার পূর্ব পুরুষের বাড়ি পিরোজপুর জেলার ভাণ্ডারিয়ায়। আইনজীবী পিতা আফতাব উদ্দিন আহমেদের ছেলে জিয়া উদ্দিন ১৯৫০ সালে পিরোজপুর শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া তার আপন চাচাতো ভাই।
পিরোজপুর সোহরাওয়ার্দী কলেজে স্নাতক শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে তিনি ১৯৬৯ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ৭১’র সালের ২০ মার্চ সেকেন্ড লেফটেনেন্ট হিসেবে ছুটিতে বাড়ি আসেন এবং ২৭ মার্চের পর মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। প্রথমে তিনি পিরোজপুর শহরে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করেন এবং সুন্দরবনে ঘাঁটি স্থাপন করে ১৪ হাজার মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে যুদ্ধ শুরু করেন।
এ সময় তিনি মুক্তিযুদ্ধের নবম সেক্টরের অধীনে সাব সেক্টর কমান্ডার নিযুক্ত হয়ে সুন্দরবনেই সদর দফতর স্থাপন করে পাকিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা শুরু করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথমে ক্যাপ্টেন ও পরে মেজর পদে পদোন্নতি পান। ১৯৭৫ সালে ৩ নভেম্বর ও ৭ নভেম্বর পর পর দু’টি সেনা অভ্যুত্থান কালে মেজর জিয়া সরকারি কাজে পিরোজপুর শহরে মুক্তিবাহিনী সদস্যদের পুলিশে ভর্তি জন্য পিরোজপুরে ছিলেন।
ঢাকায় ফিরে কর্নেল তাহেরর নির্দেশে জেনারেল জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী ঘোষণা করে ৭১ সালের মত ঘাঁটি স্থাপন করেন। ৭৬’র সালের জানুয়ারি মাসে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া মাঝের চরে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে কর্নেল তাহেরসহ মেজর জিয়া এবং জাসদ নেতৃবৃন্দের বিচার হয়। এ বিচারে কর্নেল তাহেরকে ফাঁসি এবং মেজর জিয়াকে যাবজ্জীবনসহ অন্যান্যদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়।
৮০ সালে তিনি সাধারণ ক্ষমায় মুক্তি পান এবং জাসদে যোগ দেন। ১৯৮৩ সাল থেকে তিনি সুন্দরবনে দুবলার চরে মাছের ব্যবসা শুরু করেন এবং জেলেদের আর্থিক নিরাপত্তা, জলদস্যু দমন, দুর্যোগ মোকাবেলায় সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণসহ বিভিন্ন সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। ১৯৮৯ সালে পিরোজপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তার কিছু স্মৃতি গ্রন্থ রয়েছে। ‘মুক্তিযুদ্ধে সুন্দরবনের সেই উন্মাতাল দিন গুলো’ ও ‘সুন্দরবন সমরে ও সুসময়’ যার মধ্যে অন্যতম।
বাংলাদেশ সময়: ১৮:০৩:৫৩ ৫৭৩ বার পঠিত