বঙ্গনিউজঃ ‘যদি ভালোবাসা পাই জীবনে আমিও পাব/ মধ্য অন্তমিল।’ভালোবাসা পেলে কত কী করা যায় আর কত কী পাওয়া যায়, কবি রফিক আজাদ তা লিখে গেছেন কবিতায়! ভালোবাসা পেলে যে ফুটবল মাঠেও রূপকথা লেখা যায়, ডেনমার্ক সেটা দেখাচ্ছে এবারের ইউরোতে।বিশ্ব সাহিত্যে ডেনিশ রূপকথার বিশেষ সুনাম আছে। বিশ্বের অন্যতম সেরা রূপকথা রচয়িতা হান্স ক্রিস্টিয়ান অ্যান্ডারসনও ডেনিশ। কিন্তু কোপেনহেগেনের পার্কেন স্টেডিয়াম থেকে আমস্টারডামের ইয়োহান ক্রুইফ অ্যারেনা কিংবা বাকুর অলিম্পিক স্টেডিয়াম—এবারের মাঠে মাঠে রূপকথা রচনা করে যাচ্ছেন স্মাইকেল-কিয়ার-হইবিয়ারারা। আর এ রূপকথা লেখার পেছনে ডেনিশ ফুটবলারদের প্রেরণাও একজন ক্রিস্টিয়ান! তিনি তাঁদেরই সতীর্থ ক্রিস্টিয়ান এরিকসেন।ফিনল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে এরিকসেনও মাঠে নেমেছিলেন স্মাইকেলদের সহযোদ্ধা হিসেবে। কিন্তু প্রথমার্ধ পেরোনোর আগেই কী থেকে কী হয়ে গেল! মাঠে হার্ট অ্যাটাক হলো এরিকসেনের। ছিটকে পড়লেন ম্যাচ থেকে। তাঁর জায়গা হলো হাসপাতালে। মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে হাসপাতাল থেকে জীবন নিয়ে ফিরেছেন। তবে এবারের ইউরোতে আর খেলা হবে না তাঁর। কখনো আর ফুটবল খেলতে পারবেন কি না, সংশয় আছে তা নিয়েই।এমনিতেই ‘মোটামুটি ভালো’ একটি দল নিয়ে এবারের ইউরোতে পা রেখেছিল ডেনমার্ক। সেখান থেকে আবার দলের সবচেয়ে বড় তারকা খসে পড়ায় ডেনমার্ককে ঘিরে সমর্থকদের চাওয়া-পাওয়ার কিছু আর ছিল না। প্রথম দুই ম্যাচে হেরে যাওয়া ডেনমার্ক গ্রুপ পর্ব শেষেই বাড়ি ফিরবে বলে ধরে নিয়েছিলেন সবাই। কিন্তু একটা বিষয় পাল্টে দিল সব। রাশিয়ার বিপক্ষে গ্রুপ পর্বে ডেনমার্কের শেষ ম্যাচের ঠিক আগে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেন এরিকসেন। হাসপাতাল থেকে ফিরেই তিনি গেলেন দলের অনুশীলনে, সতীর্থদের উৎসাহ দিতে। স্মাইকেল-কিয়াররাও প্রতিজ্ঞা করে বসলেন—এরিকসেনের জন্য জিততে চান তাঁরা।এরিকসেনকে হারিয়ে ডেনমার্ক হয়ে পড়েছিল যেমন শুষ্ক আর রুগ্ণ! তাঁকে ফিরে পেয়ে আবার যেন প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসে দলটিতে। সতীর্থের প্রতি ভালোবাসা দেখাতে দলের প্রত্যেক খেলোয়াড়ের মনপ্রাণ যেন উদ্বেল হয়ে ওঠে। গোলকিপার কাসপার স্মাইকেলের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে সবাই গেয়ে উঠলেন ‘জীবনের জয়গান’। প্রাণপ্রাচুর্যের সেই ঢেউয়ে রাশিয়াকে ভাসিয়ে শেষ ষোলোতে ওঠে ডেনিশরা। সতীর্থের প্রতি ডেনমার্কের খেলোয়াড়দের এমন ভালোবাসা দেখে মোহিত হয়ে যান বিশ্বজোড়া ফুটবলপ্রেমীরা। এবার ডেনিশদের ভালোবাসার জোয়ারে ভাসাতে শুরু করেন তাঁরা।সেই ভালোবাসার জোরেই ডেনিশরা তাদের খেলায় ফিরে পায় মধ্য অন্তমিল! যে ছন্দে শেষ ষোলোর ম্যাচে ডেনিশদের কাছে উড়ে গেছে ওয়েলস। শেষ আটে পরশু রাতে কিয়াররা রচনা করলেন চেক-বধ কাব্য। এখন তো স্বপ্ন দোলা দিয়ে যাচ্ছে তাদের। চোখে ভেসে উঠছে ১৯৯২ ইউরোয় রচনা করা রূপকথার গল্প। সেবার উয়েফার ‘বিশেষ আমন্ত্রণে’ খেলতে গিয়ে ইউরোপ জয় করে ফিরেছিল ডেনিশরা। ৯২ উল্টো করে লিখলে হয় ২৯, গত সপ্তাহেই ডেনিশদের ইউরোপ জয়ের ২৯ বছর পূর্তি ছিল। ২৯ বছর পর আবার কি রচনা হবে সেই রূপকথা!ডেনমার্কের কোচ বা খেলোয়াড়েরা মুখ ফুটে এ নিয়ে কিছু বলছেন না। তবে দলটির সমর্থকেরা এমন কিছুর অপেক্ষায়ই আছেন। এবারের ইউরোতে ডেনমার্কের স্বপ্নযাত্রার নামকরণ করেছেন তাঁরা এভাবে—ক্রিস্টিয়ানের অ্যাডভেঞ্চার! এ নামকরণের মর্মে হান্স ক্রিস্টিয়ান অ্যান্ডারসন, নাকি ক্রিস্টিয়ান এরিকসেন? যার যেমন ইচ্ছা ধরে নিতে পারেন। তবে ডেনমার্কের কোচ কাসপার হিউলমান্ড বা অধিনায়ক সিমোন কিয়ারের কাছে এই স্বপ্নযাত্রা আর জয়রথের এগিয়ে চলা শুধুই এরিকসেনের জন্য।চেক প্রজাতন্ত্রের বিপক্ষে পরশু রাতে জয়ের পর হিউলমান্ড তো সরাসরিই বলেছেন, ‘সে এখনো এ দলের বড় একটা অংশ। আমাদের এই ফলেরও বড় একটা অংশ।’ আর কিয়ারের কথা, ‘আমার বিশ্বাস, আমাদের এই জয় ক্রিস্টিয়ানকে খুব আনন্দ দেবে।’
বাংলাদেশ সময়: ১৬:০৯:৩৬ ৪৪১ বার পঠিত # #ইউরোপ #ক্রিস্টিয়ান #খেলা #ডেনমার্ক #ডেনিশ #ফুটবল #হিউলমান্ড