ফারহানা আকতার এর কলাম :নতুন প্রজন্মের চোখে বাংলাদশের মুক্তিযুদ্ধ -পর্ব:৫২

Home Page » সাহিত্য » ফারহানা আকতার এর কলাম :নতুন প্রজন্মের চোখে বাংলাদশের মুক্তিযুদ্ধ -পর্ব:৫২
সোমবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১



ফারহানা আকতার এর কলাম :নতুন প্রজন্মের  চোখে বাংলাদশের মুক্তিযুদ্ধ -পর্ব:৫২

৮. সত্তরের (১৯৭০) নির্বাচন : এই পয়েন্টটি নিম্নোক্ত কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করে আলোচনা করা হলো :

১/ আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলা :
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ছিলো সামরিক একনায়ক বা আইয়ূব খানের শাসনামলের এক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র। বাঙ্গালির অধিকার আদায়ের লড়াই নস্যাৎ করতে এবং আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে রাজনীতির ময়দান হতে নির্মূল করতে পাকিস্তানী শাসক চক্র এ ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করে। ১৯৬৬ সালে ছয় দফা উত্থাপিত হওয়ার পর দ্রুত তা বাংলার গ্রাম গঞ্জে জনপ্রিয়তা লাভ করে। ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি ছয়দফা আন্দোলন পূর্ব পাকিস্তানে আইয়ূব বিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়। এরই প্রেক্ষাপটে দায়ের করা হয় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা।
রাষ্ট্রদোহিতার অভিযোগে ১৯৬৮ সালের ৬ জানুয়ারি ২ জন সিএসপি অফিসারসহ ২৮ জনের বির“দ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। মামলার আর্জিতে বলা হয়, অভিযুক্তরা পাকিস্তানের একটি বিশেষ দিনে পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক সরকারকে উৎখাত করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পরিকল্পনা করেছে। পরিকল্পনা মতে তারা রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে পুর্ব বাংলাকে (পূর্ব -পাকিস্তান ) ‘স্বাধীন’ হিসাবে ঘোষণা করবে। রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ করে, ১৯৬৭ সালের ডিসেম্বর মাসে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় অভিযুক্তরাসহ ভারতীয় কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তা এ ষড়যন্ত্রের ‘নীল নকশা’ প্রণয়ন করে। অভ্যুত্থান সফল করার জন্য তারা ভারতীয়দের নিকট থেকে অর্থ ও অস্ত্র সংগ্রহ করেন বলে অভিযোগ করা হয়। মামলা দায়েরের কয়েকদিন পর সরকারী এক প্রেসনোটে বলা হয়, গ্রেপ্তারকৃত আসামীরা নিজেদের অপরাধ স্বীকার করেছে এবং এ ব্যাপারে বিশদ তদন্ত চলছে। যদিও পরবর্তীতে তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রথমদিকে শেখ মুজিবুর রহমানকে যুক্ত করা হয়নি। কিন্তু ১৯৬৮ সালের ১৮ জানুয়ারি শেখ মুজিবকে প্রধান আসামী করে পূর্বের ২৮ জনসহ মোট ৩৫ জনের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্র পরিকল্পনা ও পরিচালনা’র অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করা হয়। এক্ষেত্রে অভিযোগনামায় বলা হয়, শেখ মুজিবের নেতৃত্বে ও ভারতের সহযোগিতায় অভিযুক্ত সামরিক সদস্যরা পূর্ব পাকিস্তানকে সশস্ত্র অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে পাকিস্তান হতে বিচ্ছিনড়ব করার ষড়যন্ত্র করেছিলো। মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত এ মামলাই আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত।
২/ ছাত্র সমাজের ১১ দফা :
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাকে কেন্দ্র করে পুর্ব বাংলার রাজনীতি বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ছয়দফার স্বীকৃতি ও শেখ মুজিবের মুক্তির দাবিতে জনগণ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের সূচনা করে। ১৯৬৯ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ, পূর্ব পকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (মতিয়া ও মেনন গ্রুপ), জাতীয় ছাত্র ফেডারেশনের একাংশ (দোলন গ্রুপ), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ঐক্যবদ্ধ হয়ে আইয়ূব বিরোধী ‘কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করে। আওয়ামী লীগের ছয় দফা কর্মসূচির প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করে ১৯৬৯ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ সংবাদ সম্মেলন করে ১১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে (পূূর্ব-পরি। নিম্নে এ কর্মসূচি সংক্ষেপে আলোচনা করা :
১। জাতীয় শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট : হামুদুর রহমান কমিশন রিপোর্ট, বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিনেন্স বাতিলসহ
বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে স্বায়ত্তশাসন প্রদান ও ছাত্রবেতন হ্রাস। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত— অবৈতনিক শিক্ষা প্রবর্তন ও বাংলাভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে চালুকরণ।
২। সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে সংসদীয গণতন্ত্রের পুনঃ প্রতিষ্ঠা। ইত্তেফাক পত্রিকার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার।
৩। ছয় দফার ভিত্তিতে পূর্ব পাকিস্তানে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন প্রদান।
৪। বেলুচিস্তান, সিদ্ধু ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে স্বায়ত্তশাসন দানের পর, পশ্চিম পাকিস্তানে সাব-ফেডারেশন প্রতিষ্ঠা।
৫। ব্যাংক, বীমা ও বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠানের জাতীয়করণ।
৬। কৃষকের করভার লাঘব। বকেয়া খাজনা ও ঋণ মওকুফ। সার্টিফিকেট প্রথা বাতিল।
৭। শিল্প-শ্রমিকদের অধিক মজুরি প্রদান।
৮। পূর্ব পাকিস্তানের জন্য স্থায়ী বন্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ। জলসম্পদের সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ।
৯। জরুরি অবস্থার নামে নিরাপত্তা আইন, জরুরি আইন ও অন্যান্য দমনমূলক আইন বাতিল।
১০। স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ এবং ‘সিয়াটো’ ও ‘সেন্টো’ সামরিক চুক্তি হতে পাকিস্তানের নাম প্রত্যাহার।
১১। সকল রাজবন্দীর মুক্তি এবং তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাসহ সকল রাজনৈতিক মামলার অবসান ঘোষণা। সকল গ্রেফতারি পরোয়ানা ও হুলিয়া প্রত্যাহার ।

৩/ ১৯৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থান :
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক অনন্যসাধারণ ঘটনা। প্রকৃতপক্ষে এই অভ্যুত্থান ছিল সারা পাকিস্তানের জনগণের এমন একটি গণঅভ্যুত্থান যা ঘটা পর্যন্ত কারো পক্ষেই এটা বিশ্বাস করা সম্ভব ছিল না। স্বৈরাচারী একনায়কত্ববাদী শাসন তথা আইয়ুব সরকারের বিরুদ্ধে সারা পাকিস্তানের জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনরূপে মূলতঃ বিকাশ লাভ করে এই গণঅভ্যুত্থান। পূর্ববাংলায় এই অভ্যুত্থানের রূপ ছিল ব্যাপক। পূর্ববাংলায় এই অভ্যুত্থান এক বিপ্লবী অবস্থা সৃষ্টি করেছিল। আইয়ুব সরকার সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং বিরোধী দলগুলোর সাথে রাজনৈতিক আপোষে আসতে বাধ্য হয়। পতন হয় আইয়ূব শাহী শাসনের। আইয়ূব বিরোধী গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার ভূমিকা ছিলো মুখ্য। ছয়দফা ও ১১ দফার মিলিত শক্তি পাকিস্তানী শাসক চক্রের ক্ষমতা-কাঠামো ভেঙ্গে দেয়। পূর্ব-পাকিস্তানে শেখ মুজিবুর রহমান ও পশ্চিম পাকিস্তানে জুলফিকার আলী ভুট্টো গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেন।
উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের গতি-প্রকৃতি, নেতৃত্ব, আকাঙ্খা প্রভৃতি বহুদিক থেকে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সংগ্রামের মধ্যে তারতম্য থাকলেও স্বৈরাচারী আইয়ুবের বিরুদ্ধে সারা পাকিস্তানে গণঅভ্যুত্থানের একই সাধারণ পটভূমি গড়ে ওঠেছিল। প্রকৃতপক্ষে কেবল আইয়ূবী শাসনের দশ বছরের স্বৈরাশাসনই নয় বরং পাকিস্তানের জন্মের পর থেকেই দীর্ঘ ২২ বছরব্যাপী এই শাসকশ্রেণীর শোষণ, নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকারে পরিণত হয়ে জনজীবনে যে সংকট সৃষ্টি হয় তা-ই ছিল গণঅভ্যুত্থানের পটভূমি।
বিশেষ করে ১৯৫৪ সালে পূর্ব বাংলায় মুসলিম লীগের মারাত্মক পরাজয়ের পর থেকেই বারবার জনগণ বিচ্ছিনড়বভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছিল। ’৬৪-৬৫ সালে সারা পাকিস্তানের জনগণ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের প্রচেষ্টা গ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধুর ছয়দফা প্রস্তাবকে ঘিরে বাঙ্গালি সংঘবদ্ধ আন্দোলন শুরু করে। প্রহসনমূলক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুর গ্রেপ্তার এ আন্দোলনকে বৈপ্লবিক রূপান্তর ঘটায়।

৪/ গণঅভ্যুত্থানের চূড়ান্ত— পর্যায় :
ছাত্র সমাজের ১১ দফা ঘোষিত হবার পর আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন নতুন মাত্র পায়। আগরতলা মামলার কার্যবিবরণী যতই পূর্ব বাংলার পত্রিকায় প্রকাশিত হতে থাকে ততই জনতা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। মুক্তি পাগল বাঙ্গালি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ, সান্ধ্য আইন লক্সঘন, আইন-শৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে উপেক্ষা করে রাজপথে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। সূচিত হয় অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থান। জনগণের দাবির কাছে মাথানত করে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান আগরতলা মামলা প্রত্যাহারসহ শেখ মুজিবুর রহমানকে নিঃশর্ত মুক্তি দেন। নিম্নে গণঅভ্যুত্থানের একটি ধারাবাহিক দিবসওয়ারী প্রতিবেদন দেয়া হলো −
১৭ই জানুয়ারি ১৯৬৯ : এ দিন ডাকসুর সহ-সভাপতি তোফায়েল আহামেদের নেতৃত্বে শোভাযাত্রার মাধ্যমে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা হয়। এতে পুলিশ লাঠিচার্জে অসংখ্য ছাত্র আহত হয়।
১৮ই জানুয়ারি : ঢাকায় ধর্মঘট ও ১৪৪ ধারা ভঙ্গ এবং পুলিশের সাথে সংঘর্ষে ২৫ জন গুর“তর আহত।
২০শে জানুয়ারি : রমনা এলাকায় বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে। এ সময় প্রগতিশীল ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামানকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এ হত্যার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ নগড়বপদে মিছিল করেন। একই দিনে রাজশাহীসহ অন্যান্য শহরেও ধর্মঘট পালিত হয়।
২৪শে জানুয়ারি : এই দিন নারায়ণগঞ্জে পূর্ণদিবস হরতাল পালিত হয়। ময়মনসিংহে পুলিশের গুলিতে ২ জন নিহত ও ২০ জন আহত হয়।
২৫শে জানুয়ারি : ঢাকায় ও খুলনাতে সান্ধ্য আইন জারি করা হয়। পুলিশের গুলিতে ২ জন নিহত হয়।
২৬শে জানুযারি : এই দিন ন্যাপ (ওয়ালী) সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহামদসহ অনেক রাজনৈতিক নেতাকে আটক করা হয়।
১লা ফেব্রুয়ারি : আন্দোলনে ভীত আয়ূব খান গোলটেবিল বৈঠকের আহবান জানান এবং ইত্তেফাকের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেন।
৫ই ফেব্রুয়ারি : ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ প্রদেশব্যাপী ছাত্র ধর্মঘট পালন করে।
১৫ই ফেব্রুয়ারি : কুর্মিটোলা সেনানিবাসে আগরতলা মামলার আসামী সার্জেন্ট জহর“ল হককে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। অপর আসামী সার্জেন্ট ফজলুল হক গুরুতর আহত হন।
১৬ই ফেব্রুয়ারি : পল্টন ময়দানে মাওলানা ভাসানী এক জনসভায় শেখ মুজিবের মুক্তির কঠিন শপথ ব্যক্ত করেন। আন্দোলন আরো উত্তাল হয়ে ওঠে উত্তেজিত জনতা আগরতলা মামলার প্রধান বিচারপতির বাসভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়।
১৮ই ফেব্রুয়ারি : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড: সামসুজ্জোহাকে সেনাবাহিনী গুলি করে হত্যা করে। কয়েকজন ছাত্র গুলিবিদ্ধ হন।
২০শে ফেব্রুয়ারি : এই দিন ঢাকা মিছিলের নগরীতে পরিণত হয় এবং সেদিনের শ্লোগান ছিল একটাই ‘জেলের তালা ভাঙ্গবো শেখ মুজিবকে আনব’। জনগণ ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট আক্রমণ করে শেখ মুজিবকে মুক্ত করার আল্টিমেটাম প্রদান করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরদিন শেখ মুজিবকে মুক্তি দেয়া হবে বলে ঘোষণা করা হয়।
২১শে ফেব্রুয়ারি : বেতার ভাষণে আইয়ূব খান ঘোষনা করেন যে, তিনি আর নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবেন না।
২২শে ফেব্রুয়ারি : শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দেয়া হয় এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বাতিল করা হয়।
২৩ ফেব্র“য়ারি : ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) লাখো ছাত্র-জনতার উপস্থিতিতে বাঙ্গালির জননেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
১০ই মার্চ : পিন্ডিতে গোলটেবিল বৈঠক শুরু হয়। শেখ মুজিব ৬ দফা ও ১১ দফার পক্ষে কথা বলেন। এই বৈঠকে প্রত্যক্ষ ভোটাধিকার ও পার্লামেন্টোরি ফেডারেল গভর্নমেন্ট গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
২৫শে মার্চ : এই দিন রাত ৮-১৫ মিনিটে আইয়ূব খান দেশের শাসনভার সেনাবাহিনীর হাতে ছেড়ে দেন।

৫/ জেনারেল ইয়াহিয়ার সামরিক শাসন জারি :
সামরিক একনায়ক আইয়ূব বিরোধী গণআন্দোলন ১৯৬৯ সালের শুরুতে গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান এবং পশ্চিম পাকিস্তানে পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর নেতৃত্বে পাকিস্তানের জনগোষ্ঠী আইয়ূব খানের বির“দ্ধে দুর্বার গণ-আন্দোলন গড়ে তোলে। এ সময় পাকিস্তানের প্রশাসন যন্ত্র বিকল হয়ে পড়ে। বিক্ষুব্ধ জনগণ সরকারী-বেসরকারী অফিস আদালত এমনকি আইয়ূব সমর্থক কয়েকটি সরকারী পত্রিকা অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয়। টানা ধর্মঘট-অবরোধ আইনশৃক্সখলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটে। পাকিস্তানে অভূতপূর্ব এই গণ-অভ্যুত্থানে সামরিক শাষক আইয়ূব খান কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন! পরিস্থিতি শান্ত করার লক্ষে তিনি রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে গোল টেবিল বৈঠক আহবান করেন। বাঙ্গালীর জননেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আপোষহীন মনোভাবের কারণে সামরিক জান্তার গোল টেবিল বৈঠক থেকে তেমন কোন ফয়দা লুটতে পারেনি। গোল টেবিল বৈঠকের ব্যর্থতার প্রেক্ষাপটে প্রেসিডেন্ট আইয়ূব খানের ক্ষমতা ত্যাগ ছাড়া আর কোন পথ খোলা ছিলো না। বাধ্য হয়েই প্রেসিডেন্ট আইয়ূব খান সেনাপ্রধান আগা মোহাম্মাদ ইয়াহিয়া খানের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। পাকিস্তানে শুরু হয় নতুন সামরিক জান্তার শাসন।
অশান্তময় রাজনৈতিক পরিবেশে ১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ জেনারেল ইয়াহিযা খান ক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং সারা পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি করেন। জাতির উদ্দেশ্যে এক বেতার ভাষণে তিনি অচিরেই পাকিস্তানের রাজনীতিতে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের ঘোষণা দেন। আইয়ূব খানের ১৯৬২ সালের সংবিধানসহ পাকিস্তানের জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ বাতিল ঘোষণা করেন। ১৯৬৯ সালের ৩ এপ্রিল নতুন সামরিক জান্তা একটি শাসন পরিষদ গঠন করেন এবং ৪ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট হিসেবে এক অস্থায়ী সাংবিধানিক আদেশ জারি করেন। ১৯৭০ সালের ৫ই অক্টোবর সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে পাকিস্তানের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা প্রদান করেন। এ উদ্দেশ্যে ১৯৭০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে দেশের রাজনৈতিক কার্যকলাপের ওপর প্রবর্তিত বাধা-নিষেধ প্রত্যাহার করেন এবং সাবেক পশ্চিম পাকিস্তানের এক ইউনিট প্রথা বাতিল করেন।
৬/ জেনারেল ইয়াহিয়ার আইনগত কাঠামো আদেশ :
জেনারেল ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা গ্রহণের পর ১৯৭০ সালের ৩০ মার্চ সাধারণ নির্বাচনের ভিত্তি হিসেবে পাকিস্তানের সংবিধান প্রণয়ন, গ্রহণ এবং মূলনীতি ও নির্বাচনের পদ্ধতি সম্বলিত এক আইনগত কাঠামো আদেশ জারি করেন। তাঁর আইনগত কাঠামো আদেশ ছিল নিম্ন রূপ –

(১) সাধারণ নির্বাচনের পদ্ধতিগত নীতিমালা :

(ক) সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকার নীতি গ্রহীত হবে।
(খ) ‘এক ব্যক্তি, এক ভোট’ এ নীতি অনুসৃত হবে।
(গ) পাকিস্তানে জাতীয় পরিষদে প্রত্যেক প্রদেশ জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতিনিধিত্ব প্রদান করবে।

(২) জাতীয় পরিষদ গঠন সম্পর্কে নিয়মাবলি :
(ক) ৩১৩ জন সদস্য নিয়ে জাতীয় পরিষদ গঠিত হবে
(খ) জাতীয় পরিষদের ৩১৩টি আসনের মধ্যে ৩০০টি সাধারণ আসন এবং বাকি ১৩টি আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। সাধারণ আসন জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবে।
(গ) প্রত্যেক প্রদেশের জন্য একটি করে প্রাদেশিক পরিষদ গঠিত হবে।

(৩) সংবিধান সম্পর্কিত মূলনীতিমালা :

(ক) পাকিস্তান একটি ইসলামী প্রজতন্ত্র’- এ আলোকেই পাকিস্তানের সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে।
(খ) সংবিধানে সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কদের প্রত্যক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থা, মৌলিক অধিকারসমূহ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সুনিশ্চিতকরণ পদ্ধতিসহ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার উলে−খ থাকতে হবে।
(গ) সংবিধানে প্রদেশসমূহে সর্বাধিক স্বায়ত্তশাষন সুনিশ্চিত করতে হবে, তবে দেশের অখণ্ডতা ও স্বাধীনতা রক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে শাসন, আইন ও অর্থ-সংক্রান্ত বিষয়ে পর্যাপ্ত ক্ষমতা প্রদান করার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
(ঘ) ১২০ দিনের মধ্যে জাতীয় পরিষদকে সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে এবং তা করতে ব্যর্থ হলে জাতীয় পরিষদ ভেঙ্গে দেয়া হবে।
(ঙ) জাতীয় পরিষদ কর্তৃক প্রণীত শাসনতান্ত্রিক বিল প্রেসিডেন্টের অনুমোদন ছাড়া সংবিধানে রূপ নেবে না।
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঘোষিত ‘আইনগত কাঠামো আদেশ’ স্পষ্টতই প্রস্তাবিত জাতীয় পরিষদকে সার্বভৌম ক্ষমতা প্রদান করেনি। চূড়ান্ত- ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের হাতেই ন্যস্ত ছিল। কেননা, তিনি জাতীয় পরিষদের গৃহীত সংবিধান বাতিল করার ক্ষমতা রাখতেন। ফলে আওয়ামী লীগসহ প্রায় সকল রাজনৈতিক দলের নেতা এ আদেশের তীব্র সমালোচনা করেন। তারা এ আদেশ সংশোধন করে জাতীয় পরিষদকে সার্বভৌমত্ব প্রদানের দাবি জানায়। এ পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঘোষণা করেন ‘আইনগত কাঠামো আদেশে বর্ণিত সাধারণ নীতির ভিত্তিতে সংবিধান প্রণীত হলে তিনি অবশ্যই তা অনুমোদন করবেন। জনগণ কিংবা তাদের প্রতিনীধিদের ক্ষমতা খর্ব করার কোন ইচ্ছা তাঁর নেই।’ এ আশ্বাসবাণীকে গ্রহণ করে শেষ পর্যন্ত সকল রাজনৈতিক দলই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে। শেখ মুজিবের মতে, ছয় দফার প্রতি জনসমর্থন প্রমাণ করার জন্য আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে।

৭/ ১৯৭০ সালের নির্বাচন :
১৯৭০ সালের নির্বাচন ছিলো পাকিস্তানের প্রথম জাতীয় সাধারণ নির্বাচন। ১৯৫৬ সালের সংবিধানে ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা ছিলো, কিন্তু ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারির প্রেক্ষাপটে নির্বাচন আয়োজন স্থগিত হয়ে যায়। ১৯৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়টি সামনে চলে আসে। পাকিস্তানের সম- রাজনৈতিক দল সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি করে।
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ইয়াহিয়া খান ১৯৬৯ সালের ৩০ মার্চ ‘আইনগত কাঠামো আদেশ’ জারি করেন। জেনারেল ইয়াহিয়া খান ১৯৭০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে পূর্ণ রাজনৈতিক কার্যকলাপ শুরকরার অনুমতি প্রদান করেন। তিনি ৫ অক্টোবর জাতীয় পরিষদের নির্বাচন এবং ২২ অক্টোবরের মধ্যে প্রাদেশিক আইন পরিষদসমূহের নির্বাচন অনুষ্ঠানের তারিখ ঘোষণা করেন। কিন্তু জাতীয় পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর এবং প্রাদেশিক পরিষদসমূহের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯ ডিসেম্বর। অবশ্য পূর্ব পাকিস্তানের জলোচ্ছ্বাস-দুর্গত এলাকার আসনে ১৯৭১ সালের ১৭ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

নির্বাচনে ২৪টি রাজনৈতিক দল এবং বেশ কিছু স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। দলগুলোর মধ্যে উলে−খযোগ্য হচ্ছে আওয়ামী লীগ, পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পি.পি.পি) ন্যাপ (ওয়ালী খান), মুসলিম লীগের বিভিন্ন গ্রুপ, জামায়াত-ই-ইসলামী, জামাতে উলামা-ই-ইসলাম, জামায়াতে উলামা-ই-পাকিস্তান , নিজামে ইসলাম, পাকিস্তান ডেমোμোটিক পার্টি (পি.ডি.পি) ইত্যাদি। নির্বাচনের প্রধান দুটি দল হচ্ছে শেখ মুজিবের আওয়ামী লীগ এবং জুলফিকার আলী ভুট্টোর পি.পি.পি। প্রথমটি ছিল পূর্ব বাংলা ভিত্তিক এবং দ্বিতীয়টি ছিল দেশের পশ্চিম অংশে সীমাবদ্ধ। কোন দলই ৩০০টি আসনের সব কটিতে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেনি। পূর্ব বাংলার বামপন্থী জনপ্রিয় দল ন্যাপ (ভাসানী) নির্বাচন বয়কট করে।

এ নির্বাচনকে ৬ দফার পক্ষে ‘গণভোট’ বলে বর্ণনা করেন। বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদ ও আঞ্চলিক বৈষম্যকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের প্রচারাভিযানে জনগণ দার“ণভাবে সাড়া দেয়। এ সময় আওয়ামী লীগের সাড়া জাগানো একটি পোস্টার ছিলো- সোনার বাংলা শ্মাশান কেন? অন্যদিকে দলটির শ্লোগান ছিলো ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা’ ।
পাকিস্তানের অপর বৃহৎ রাজনৈতিক দল ছিলো জুলফিকার আলী ভূট্টোর পি.পি.পি। দলটি ছিলো মূলতঃ পশ্চিম পাকিস্তান ভিত্তিক। পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষা, ভারত বিরোধিতা, সামরিক শক্তি বৃদ্ধি, কৃষি সংস্কার, অর্থনৈতিক সাম্য প্রভৃতি ছিলো পি.পি.পি’র নির্বাচনী প্রচারাভিযানের মূল বিষয়বস্তু। ভুট্টোর নির্বাচনী শ্লোগান ছিলো ‘ইসলাম হচ্ছে আমাদের বিশ্বাস, গণতন্ত্র হচ্ছে আমাদের নীতি এবং সমাজতন্ত্র হচ্ছে আমাদের অর্থনীতি।’ ভুট্টোর নির্বাচনী প্রচারাভিযানের উলেখযোগ্য দিক ছিলো শেখ মুজিব ও ছয় দফার সমালোচনা। তিনি ছয় দফাকে পাকিস্তানের অখন্ডতার জন্য হুমকি বলে বর্ণনা করেন।
মুসলিম লীগ ও অন্যান্য ধর্মীয় দলগুলো ইসলামী সংবিধান, পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষা, ভারত বিরোধিতার ওপর জোর দিয়ে নির্বাচনী প্রচারাভিযান চালায়।

৮/ ১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফলাফল :
১৯৭০ এর নির্বাচন ছিলো পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৩১৩টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি (মহিলা আসনসহ) আসন লাভ করে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। ভুট্টোর পিপিপি পশ্চিম পাকিস্তানে ৮৮টি আসন (মহিলা আসনসহ) লাভ করলেও পূর্ব -পাকিস্তানে কোন আসন পায়নি। নির্বাচনে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগকে পূর্ণ ম্যান্ডেট প্রদান করে। জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের অন্যতম কারণ ছিলো ছয় দফা প্রস্তাব ও বঙ্গবন্ধুর ক্যারিসমেটিক (সম্মোহনী) নেতৃত্ব। নির্বাচনী ফলাফলে দেখা যায, জাতীয় পরিষদে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসন (৭টি মহিলা আসনসহ) লাভ করে। বাকি দু’টি আসনের মধ্যে ১টি লাভ করে পিডিপি নেতা নুর“ল আমীন এবং অপর আসনটি লাভ করেন নির্দলীয় প্রার্থী রাজা ত্রিদিব রায় চৌধুরী। জাতীয় পরিষদের ৩১৩টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসন পেয়ে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় পশ্চিম পাকিস্তানী শাসক চক্র বিপাকে পড়ে যায়। পূর্ব পাকিস্তানে মুসলিম লীগ জাতীয় পরিষদে কোন আসন পায়নি।
জাতীয় পরিষদে পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য বরাদ্ধকৃত ১৪৪টি আসনের মধ্যে ৮৮টি আসন লাভ করে ভূট্টোর পিপলস পার্টি।
প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনেও পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগের বিজয় ছিলো জাতীয় পরিষদের মতো ঈর্ষণীয়। প্রাদেশিক পরিষদের ৩০০টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৮৮টি আসন লাভ করে। প্রদত্ত ভোটের ৮৯ ভাগ পায় দলটি। বাকী ১২টি আসনের মধ্যে ৯টি স্বতন্ত্র প্রার্থীরা, ২টি পিডিপি এবং ১টি জামায়াত-ই-ইসলামী। আওয়ামী লীগ সংরক্ষিত ১০টি মহিলা আসন সহ নির্বাচনে ৩১০টি আসনের মধ্যে সর্বমোট ২৯৮টি আসন লাভ করে।

৯/ ১৯৭০ এর নির্বাচনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য :
পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে ’৭০ এর নির্বাচনের গুরুত্ব অপরিসীম। এক যুগ সামরিক শাসন শেষে এই নির্বাচনের মাধ্যমে পাকিস্তানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সুযোগ সৃষ্টি হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদের ৩১৩টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসন লাভ করায় সরকার গঠনের জন্য জনগণের পূর্ণ ম্যান্ডেট (অন্য কোন দলের সাহায্য ছাড়া) লাভ করে। এর ফলে পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী বিপাকে পড়ে যায়। শেখ মুজিব তথা বাঙ্গালির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর ছাড়া আর কোন পথ খোলা ছিলো না। নিম্নে ’৭০ এর নির্বাচনের গুরুত্ব বর্ণনা করা হলো−
(১) নির্বাচনের মধ্যদিয়ে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের জয় হয়েছে। কারণ আওয়ামী লীগের বিজয় ছিলো বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদেরই বিজয়।
(২) জনগণ ছয়দফা প্রশ্নে আওয়ামী লীগকে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে। নির্বাচনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগের ছয় দফা থেকে সরে আসার পথ খোলা ছিলো না।
(৩) এই নির্বাচনের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে যায়, পাকিস্তান ভৌগোলিক কারণে কার্যতঃ বিভক্ত হয়ে পড়েছে। কেননা, পাকিস্তানের কোন রাজনৈতিক দল বা নেতার পাকিস্তানের দু’অংশে গ্রহণ যোগ্যতা ছিলো না। পিপিপি বা আওয়ামী লীগ নিজ অঞ্চলের বাইরে কোন আসন লাভ করেনি।
(৪) পূর্ব বাংলার জনগণ ’৭০ এর নির্বাচনে মুসলিম লীগসহ সকল ধর্মীয় বাসা প্রদায়িক রাজনৈতিক শক্তিকে প্রত্যাখ্যান করে। এর ফলে বাঙ্গালির জাতীয়তাবাদী আন্দোলন যে অসাম্প্রদায়িক ছিলো তা প্রমাণিত হয়।
(৫) বাঙ্গালি জনগোষ্ঠী ’৭০ এর নির্বাচনের মাধ্যমে পাকিস্তানী শাসক চক্রের শোষণ ও নিপীড়নের জবাব দিয়েছে। (চলবে)   তথ্যসূত্র : বুকস্,ইন্টারনটে ।

লেখক : ফারহানা আকতারলেখকের নতুন বই

লেখক : ফারহানা আকতার, পরিচালক ও সহযোগী অধ্যাপক, ইন্টারন্যাশনাল রবীন্দ্র রিসার্চ ইনস্টিটিউট,  এবং সহ-সভাপতি, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডৈশন ও সদস্য, সম্পাদকমন্ডলী ‘বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন র্জানাল’ ৷

বাংলাদেশ সময়: ১৫:৫৬:৫০   ৭৯৮ বার পঠিত   #  #  #  #  #  #  #




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

সাহিত্য’র আরও খবর


সাধক কবি রামপ্রসাদ সেন: স্বপন চক্রবর্তী
ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা “আমি তো গাঁয়ের মেয়ে ”
৫০ বছরের গৌরব নিয়ে জাবির বাংলা বিভাগ বিশাল ‘সুবর্ণ জয়ন্তী’ উৎসব আয়োজন করেছে
অধ্যক্ষ ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা- ‘তোমার খোঁজে ‘
অতুলপ্রসাদ সেন: ৩য় (শেষ ) পর্ব-স্বপন চক্রবর্তী
অতুলপ্রসাদ সেন;পর্ব ২-স্বপন চক্রবর্তী
অতুলপ্রসাদ সেন-স্বপন চক্রবর্তী
অধ্যক্ষ ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা ” যাবে দাদু ভাই ?”
বাদল দিনে- হাসান মিয়া
ইমাম শিকদারের কবিতা ‘ছোট্ট শিশু’

আর্কাইভ