ভালোবাসা দিবসের ইতিহাস
Home Page » ইতিহাস » ভালোবাসা দিবসের ইতিহাসবঙ্গনিউজঃ ‘ভালোবাসা’, শব্দটি খুব সহজেই সকলের সহজাত প্রবৃত্তির সাথে মিশে যায়। কারণ জন্মের পর থেকেই মানুষের বেড়ে উঠা এই ভালোবাসাকে কেন্দ্র করেই। প্রতি বছরের একটি বিশেষ দিনকে ঘোষণা করা হয়েছে ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’ যার বাংলায় মানে দাঁড়ায় ভালবাসা দিবস। পাশ্চাত্যের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী দিনটি ১৪ ফেব্রুয়ারি, মানে ঠিক ফাল্গুনের ২য় দিনটিতে।
আমার মতো অনেকেই বলে অত ভালবাসা দিবসের প্রয়োজন কি? প্রতিটি দিন হোক ভালবাসা দিবস। একটু খোঁজ নিলেই দেখা যাবে, এরও এক পুরোনো ইতিহাস আছে? কেন এই ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’ ? আর কবে থেকেই এই দিবসের এর শুরু ? কেই বা ছিলেন ভ্যালেন্টাইন ? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পেতে হলে ইতিহাসের পথে পেছনে হাঁটতে হবে কয়েক শতাব্দী। এই দিনটির শুরুর গল্পটাও বেশ রঙিন। ভালবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে অনেক গল্পই প্রচলিত আছে। আজ ভালবাসা দিবসের সবচেয়ে প্রচলিত দুটো গল্পের সঙ্গে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দেব।
সম্পর্কিত খবর
প্রথম গল্পটি হলো, সেন্ট বা সন্তো ভ্যালেন্টাইন নামের এক রোমান ক্যাথলিক ধর্মযাজক ছিলেন৷ তিনি ধর্মযাজক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছিলেন চিকিৎসকও৷ সে সময় রোমানদের সম্রাট ছিলেন দ্বিতীয় ক্লডিয়াস৷ হয়েছে কি, বিশ্বজয়ী রোমানরা একের পর এক রাষ্ট্র জয় করে চলেছে৷ আর যুদ্ধের জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী সেনাবাহিনী৷ কিন্তু, সমস্যা দাঁড়ায় তরুণীদের নিয়ে৷ তারা যে কিছুতেই তাদের পছন্দের পুরুষটিকে যুদ্ধে পাঠাতে চায় না৷ তখন সম্রাট ক্লডিয়াস মনে করলেন, পুরুষরা বিয়ে না করলেই বোধ হয় যুদ্ধে যেতে রাজি হবে৷ ভাবনাটার বাস্তবায়ন করলেন তিনি। বিয়ে নিষিদ্ধ করলেন সম্রাট৷ কিন্তু ভালবাসার তাড়নায় ছুটে চলা তারুণ্যকে কি আর আইন করে বেধে রাখা যায়? এগিয়ে এলেন সেন্ট বা সন্তো ভ্যালেন্টাইন৷ তিনি নিজে সকল প্রেমে আবদ্ধ তরুণ -তরুনীদের এক করার ব্যবস্থা করলেন, বিয়ে দিলেন সবাইকে। কিন্তু সেই প্রথা বেশি দিন তার ধারা বজায় রাখতে পারলো না৷ ধরা পড়লেন ভ্যালেন্টাইন৷ তাকে বন্দী করা হলো৷
কিন্তু, তখন নতুন করে আরেকটা সমস্যা দেখা দিল৷ তার অনেকে ভক্তরাই ভ্যালেন্টাইন’কে দেখতে কারাগারে যেতেন৷ দিয়ে আসতেন তাদের অনুরাগের চিহ্ন হিসেবে অনেক ধরনের ফুলের শুভেচ্ছা৷ তাদের মধ্যে একটি অন্ধ মেয়েও ছিল৷ শোনা যায়, সেন্ট ভ্যালেন্টাইন তার অন্ধত্ব দূর করেন৷ শুধু যে তার দৃষ্টি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তাই নয়, সঙ্গে মেয়েটির প্রেমে আবদ্ধ হয়ে ধর্মযাজকের আইন ভেঙে তাকে বিয়েও করে জীবনসঙ্গী করেন তিনি৷ কিন্তু তারপর? এমন একটা খবর রাজার কানে পৌঁছোতেই তিনি ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেন৷
ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগে, প্রিয়াকে লেখা ভ্যালেন্টাইনের শেষ চিঠিতে ছিল – ‘লাভ ফ্রম ইউর ভ্যালেন্টাইন’৷ আর সেই দিনটিও ছিল ১৪ই ফেব্রুয়ারি৷ ৪৯৬ খ্রিস্টাব্দে পোপ গেলাসিয়াস প্রথম এই দিনটিকে ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ হিসেবে ঘোষণা করেন৷ ১৭০০ শতাব্দীতে দিনটিকে জনপ্রিয়ভাবে পালন শুরু করে ব্রিটেন৷ শুরু হয় হাতে লেখা কার্ড অথবা উপহার বিনিময়৷ এরপর ১৮৪০ সালে বাণিজ্যিকভাবে প্রথম ‘ভালবাসা দিবস’-এর উপহার তৈরি শুরু করেন এস্থার এ হাওল্যান্ড৷ উল্লেখ্য, পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো ‘ভ্যালেন্টাইন কার্ড’-টি সংরক্ষিত আছে লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়ামে৷
আরেকটি গল্প: এই গল্পটির সঙ্গে আগের গল্পের মিলও আছে খানিকটা। খ্রীষ্ট ধর্মের শুরুর দিকে ‘ভ্যালেন্তিনাস’ নামধারী একাধিক সন্তের বা সেন্টের কথা ইতিহানে জানা যায়, আর এই গল্পটি ঘিরে আছে প্রকান্ড অনিশ্চয়তা। তবে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য তথ্যমতে ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’ এর উৎপত্তি রোমান সন্ত ‘ভ্যালেন্তিনাস’ এর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে । খৃষ্টীয় তৃতীয় শতকের মাঝামাঝি ক্লদিয়াস গোথিকাস নামে একজন রোমান সাম্রাজ্যের সম্রাট ছিলেন। সে সময়ে তার অনুমতি ছাড়াই খ্রিস্টান যুগলের বিয়ে আয়োজন করা এবং সহায়তা করার অপরাধে সন্ত ভ্যালেন্তিনাসকে আটক করা হয়। এরপর সম্রাটের নির্দেশে রোম নগরীর ফ্লামিনিয়ান গেট’ এর বাইরে শিরচ্ছেদ করে তাকে হত্যা করা হয় । পরবর্তীতে চতুর্দশ শতাব্দীতে ইংরেজী সাহিত্যের জনক জিওফ্রি চোচার ‘দি পার্লামেন্ট অব বার্ডস’ কবিতায় ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’ এর কথা তুলে ধরেন । এছাড়াও আরও কিছু সাহিত্যের পাতায় এই ভালবাসা দিবস নামের বিশেষ দিনটির খোঁজ পাওয়া যায় । এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে উইলিয়াম শেক্সপিয়ার রচিত বিখ্যাত ট্র্যাজেডি ‘হেমলেট’ । প্রথমদিকে ভালবাসার উদযাপনের দিনটি সীমাবদ্ধ ছিল ইংল্যান্ডের রাজকীয় পরিবার এবং অভিজাত সমাজে।
উনবিংশ শতাব্দীতে এই দিনটি সার্বজনীন উৎসব হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। শুরু হয় ভালবাসার মানুষকে ফুল, গ্রিটিংস কার্ড, চকলেট, অলংকারসহ নানা উপহার দেয়া ও একান্তে সময় কাটানোর রীতি। বিংশ শতাব্দীতে ভালবাসা দিবস পৌঁছে যায় মানুষের হৃদয়ে গভীরে, ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী । বিভিন্ন দেশে এ নিয়ে নানা বৈচিত্র লক্ষণীয়। চীনে ভালবাসা দিবসকে বলা হয় ‘কিক্সি ফেস্টিভাল’ যেটি উদযাপিত হয় চন্দ্রপঞ্জিকার সপ্তম মাসের সপ্তম দিনে, ফিনল্যান্ডে এর নাম ‘ইস্তাভানপাইভা’ যার অর্থ ‘বন্ধুত্বের দিন’, ল্যাটিন আমেরিকাতেও এই দিবস উদযাপিত হয় বন্ধুত্ব ও ভালবাসার দিন হিসেবে।
তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, পর্তুগাল, গ্রীস, জাপান সহ বিভিন্ন দেশে ভিন্ন নামে দিনটি উদযাপিত হয়। পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অনুকরুনণে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান সহ সব দেশেই বাড়ছে দিনটির কদর। বিশেষত তরুণ সমাজে দিনটির মূল্য রীতিমত চোখে পড়ার মত। যদিও ভালবাসা নিয়ে মানব মস্তিষ্কে কিছু সমীকরুনণ আর হৃদয়ের গহনে কিভাবে তার উৎপত্তি হয়,- এখনো নির্ণয় করা বিজ্ঞানীদের জন্য সম্ভবপর হয়নি। শোনা যায়, পৃথিবী থেকে যত সত্যিকারের প্রেমিক প্রেমিকা মারা যায় তাদের ভালবাসা নাকি জমা থাকে সুর্যের কাছে,তাইতো সুর্যের রং লাল। ভোরের সুর্যোদয় ভালবাসার মানুষের মনে রং ছড়ায়।
তাইতো বিশ্বের সব প্রেমিক ভোরের সুর্যের ছড়িয়ে দেয়া আলোর কাছ থেকে দীর্ঘ নিশ্বাসে ভালবাসা সংগ্রহ করে। প্রকৃতি থেকে নেয়া এ ভালবাসা বিলায় সারাদিন একে অন্যের মাঝে। যদিও এই মিথের উৎপত্তি কোথা থেকে আমার তা জানা নেই।
Model:
Mosharof Adnan
Founder & Video Creator, Adnan Vlog
Jui Islam
Chief Marketing Officer, Adnan Vlog
বাংলাদেশ সময়: ১১:২৭:৫০ ১০৪৬ বার পঠিত
পাঠকের মন্তব্য
(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)ইতিহাস’র আরও খবর
৩ নভেম্বর,ঐতিহাসিক জেলহত্যা দিবস
টাইটানিক রহস্য
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আদ্যোপান্ত - অন্তিম পর্ব
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আদ্যোপান্ত - পর্ব ২
চলনবিলের ইতিকথা
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আদ্যোপান্ত - পর্ব ১
নাইটহুড সম্মান পাওয়া প্রথম পেঙ্গুইন আর্মির ব্রিগেডিয়ার নিলস ওলা
ভালোবাসা দিবসের ইতিহাস
ঐতিহাসিক “ছয় দফা”-বাঙ্গালীর মুক্তির সনদ -নুরুজ্জামান শুভ
-
সালাম, আমান, রিজভী, খোকন, শিমুল ও এ্যানিসহ গ্রেফতার শতাধিক
বুধবার ● ৭ ডিসেম্বর ২০২২ -
ভারতকে হারিয়ে টাইগারদের সিরিজ জয় নিশ্চিত
বুধবার ● ৭ ডিসেম্বর ২০২২ -
নয়াপল্টনে বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ ,নিহত ১
বুধবার ● ৭ ডিসেম্বর ২০২২ -
জাতীয় শুদ্ধাচার পুরস্কারে ভূষিত ওসমানীনগরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিক
বুধবার ● ৭ ডিসেম্বর ২০২২ -
বিয়েবর্হিভূত যৌন সম্পর্ক নিষিদ্ধ: প্রতিবাদে বিক্ষােভ ইন্দোনেশিয়ায়
মঙ্গলবার ● ৬ ডিসেম্বর ২০২২ -
আড়াইহাজারে অর্থনৈতিক অঞ্চল উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
মঙ্গলবার ● ৬ ডিসেম্বর ২০২২
আর্কাইভ
Head of Program: Dr. Bongoshia
News Room: +8801996534724, Email: [email protected] , [email protected]