সীমান্ত ভ্রমণের সাতটি দিন ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা ; পর্ব- ৪ : স্বপন চক্রবর্তী

Home Page » সাহিত্য » সীমান্ত ভ্রমণের সাতটি দিন ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা ; পর্ব- ৪ : স্বপন চক্রবর্তী
বৃহস্পতিবার ● ১৯ মে ২০২২


স্বপন কুমার চক্রবর্তী

বঙ্গ-নিউজ:  ( গত নভেম্বর’২১ এর শেষ সপ্তাহে হাতীবান্ধা উপজেলার দইখাওয়া সীমান্তে বেড়াতে গিয়েছিলাম। তার উপর কিছু লিখার জন্য অনুরোধও ছিল। তাই বসে বসে একটু চেষ্টা করেছি মাত্র। জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা হেতু সন্নিবেশিত ভুল তথ্যগুলো শুধরে দিলে উপকৃত হবো )।
ফিরে আসার প্রাক্কালে উত্তর গোতামারী ছিটমহল দেখতে গিয়েছিলাম। ব্রিটিশদের হাত থেকে ভারতবর্ষ স্বাধীন হলো ১৯৪৭ সালে। কিন্তু কোন যৌক্তিকতায় ছিটমহল নামক এক “কালাপানি” রূপী দ্বীপের সৃষ্টি করে দিয়েছিল তা আমার অনুর্বর মস্তিষ্কে আজও ধরে না। চতুর্দিকে বাংলাদেশ। মাঝখানে একখন্ড জমি ভারত। যার নাম ছিটমহল।,আবার কিছু আছে তার বিপরীত। চারদিকে ভারত মাঝখানে একখন্ড ভুমি বাংলাদেশ । ভিতরে অবস্থিত অধিবাসীরা একেবারে বন্দী জীবন কাটাতো। তাদের কোন ভোটাধিকার ছিল না। চিকিৎসার জন্য কোথাও যেতে পারেতো না। ডাকাতি হয়ে গেছে, তবুও কোথাও অভিযোগ দায়ের করতে পারতো না। থানায় যাওয়ারও কোন অনুমতি নেই। ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করতে পরেতো না। কারন তাদের কোন নাগরিকত্ব নেই। এই ছিল ছিটমহল বাসীর জীবন। পরে ২০১৫ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদী সরকারের ঐকান্তিকতায় এর সমাধান হয়। ১৯৭৪ সালে অনুষ্ঠিত ইন্দিরা-মুজিব স্থল-সীমান্ত চুক্তির অংশ হিসাবেই এটা সম্পন্ন হয়ে যায়। তবে অনেক আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে বহু সময় পরে এটি নিষ্পন্ন হয়। ভারতের আদালতে মামলা চলে বহুদিন। পরে সংসদে সর্বসম্মত ভাবে বিলটি পাশ হয়। বন্দী অধিবাসীরা মুক্ত হয়।
বাংলাদেশের ভিতরে ভারতের ১১১ টি ছিট মহল ছিল। মোট বাসিন্দা ছিল ৩৭ হাজার। ছিটমহল বিনিময়ের ফলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ১৭ হাজার ১৬০ একর ভূমি পেলো বাংলাদেশ। যা এখন বাংলাদেশের নিজস্ব ভূমি। আর অধিবাসিরা হলো বাংলাদেশী।

ছবিতে আমি ও আমার পুত্র স্বনন চক্রবর্তী
অপর দিকে ভারতে পেলো ৫১টি ছিট মহল। তাদের অভ্যন্তরে থাকা ভূমি পেলো মোট ৭ হাজার ১১০ একর । বাসিন্দা ছিল ১৪ হাজার- যারা সবাই হলো ভারতীয় নাগরিক।
বাংলাদেশে থাকা ভারতীয় ছিটমহল গুলোর সবচেয়ে বেশী মোট ৫৯ টিই ছিল লালমনির হাট জেলায়। তার মধ্যে ১৭ টিতে কোন জনবসতি নেই। অন্যান্য ছিটমহল গুলোর ৪টি নীলফামারীর ডিমলাতে, ৩৬ টি পঞ্চগড়ে, ১২ টি কুড়িগ্রামে। এই ছিটমহল গুলোর বাসিন্দারা নাগরিক হলেন বাংলাদেশের। তবে ভারতে চলে যেতে চেয়েছেন প্রায় এক হাজার নাগরিক। আর ভারত থেকে কোন নাগরিক বাংলাদেশে আসতে চাননি।
নাগরিকদের সব ধরনের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। তারা এখন ভোটার হয়েছেন। ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করছে স্কুল কলেজে। ছিটমহলেই গড়ে উঠেছে স্কুল ও কলেজ। সুচিকিৎসাও এখন তারা পাচ্ছেন। দীর্ঘ ৬৮ বছরের দুর্বিসহ জীবনের পরিসমাপ্তি হলো। আমার সৌভাগ্য যে, আমি ছিটমহল বাসীর দুই জীবনেরই প্রত্যক্ষ সাক্ষী।
(চলবে)-

বাংলাদেশ সময়: ২০:১৬:৩২ ● ৬২৪ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ