চট্টগ্রামে ১৮টি খালের বাঁধে বিপদ দেখছে সিসিসি
Home Page » জাতীয় » চট্টগ্রামে ১৮টি খালের বাঁধে বিপদ দেখছে সিসিসি
বঙ্গনিউজঃ শাখ-জ্যৈষ্ঠের বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা ইঙ্গিত দিচ্ছে- চট্টগ্রাম নগরীতে বর্ষায় পরিস্থিতি এবার কেমন হতে পারে। ১৮টি খালে থাকা ৩৬টি অস্থায়ী বাঁধের মাটি ও জমে থাকা আবর্জনা দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে নগরবাসীর।
আসন্ন বর্ষায় জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে চলতি মাসের মধ্যেই এসব অস্থায়ী বাঁধ অপসারণ করতে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ) চিঠি দিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি)।
তবে জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সিডিএ বলছে, গতবারের চেয়ে এবার পরিস্থিতি ‘ভালো’ থাকবে। পাশাপাশি জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে খাল-নালার পলিথিন ও আবর্জনা অপসারণ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পৃথক প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে সিসিসিকে।
চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ‘খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ নামের চলমান ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার প্রকল্পে ৩৬টি খালের ৫ লাখ ২৮ হাজার ঘনমিটার মাটি খনন এবং ৪ লাখ ২০ হাজার ঘনমিটার কাদা অপসারণ করা হবে।
নালা তৈরি করা হবে ১ হাজার ৭৭ কিলোমিটার। প্রায় ১০৮ একর জমি অধিগ্রহণ এবং রিটেনিং ওয়াল নির্মাণ করা হবে ১ লাখ ৭৬ হাজার মিটার। ৮৫ কিলোমিটার রাস্তা ও ৫টি স্লুইস গেট করা হবে।
খালের দু’পাশে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণের জন্য খালে মাটি ফেলে ‘অস্থায়ী বাঁধ’ তৈরি করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১২টি খালের কাজ শেষ হয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে আরও ৫টি খালের কাজ শেষ হবে।
খালে ৩৬ বাঁধ
বৃহস্পতিবার নগরীর বাকলিয়া এলাকায় দেখা যায়, রাজখালী খালের এক পাশে রিটেইনিং ওয়ালের কাজ চলছে। অন্য পাশে দেয়াল নির্মাণ শেষ। এখানে খালের ভিতর থাকা বাঁধের মাটি সরানো হচ্ছে দুটি লং বুম স্কেভেটর দিয়ে।
শ্রমিক মো. শাহজাহান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “১৫ দিন হইলো মাটি তুলতেছে। খাল থেকে তুলার পর শুকাইলে ট্রাক আসি মাটি নিয়া যাবে। ওয়ালের বাকি কাজ শেষ হইতে দুই সপ্তাহ লাগতে পারে।”
বাকলিয়া তুলাতলি এলাকায় রাজখালী খালের ৫ নম্বর ব্রিজ অংশে একপাশের রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ মাত্র শুরু হচ্ছে। এখানে খালের ভিতর বাঁধ দেওয়া।
স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, “পানি চলাচলের জন্য ব্রিজের অন্য পাশ থেকে বড় দুইটা পাইপ বাঁধের নিচ দিয়ে এপাশে আনছে। কিন্তু এত পানি অল্প জায়গা দিয়ে যেতে পারে না। তাই পূর্ণিমায় জোয়ারের পানি পাশের রাস্তায় উঠে যায়। বৃষ্টিতে তো উঠেই।”
বৃহস্পতিবার সিডিএকে দেওয়া সিসিসি’র তালিকায় নগরীর ১৮টি খালের ৩৬টি অস্থায়ী বাঁধ মে মাসের মধ্যে সরাতে বলা হয়েছে।
এরমধ্যে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ চাক্তাই খালের বহদ্দারহাট পুলিশ বক্স, হাইজ্জার পুল ও ফুলতলা এই তিন পয়েন্ট এবং হালিশহর ও বন্দর এলাকার মহেশখাল থেকে সর্বোচ্চ ৮টি পয়েন্টের বাঁধ সরাতে বলেছে সিসিসি।
এছাড়া যেসব খালে অস্থায়ী বাঁধ আছে সেগুলো হলো- শীতল ঝর্ণা, ডোম খাল, উত্তরা খাল, বিজ্যা খাল, ত্রিপুরা খাল, মির্জা খাল, গয়নার ছড়া, সুরভী খাল, গুলজার খাল, রামপুর খাল, নাছির খান ছড়া, বারমাসিয়া খাল, টেকপাড়া এবং ৭, ৯ ও ১৫ নম্বর খাল।
পাথরঘাটায় ব্যাপ্টিস্ট মিশন চার্চ রোডে দেখা যায়, দু’পাশে ভবন ভেঙে এর মাঝখান থেকে খালের জমি উদ্ধারের পর সেখানে শ্রমিকরা রিটেইনিং ওয়ালের পাইলিংয়ের কাজ করছে।
স্থানীয় মো. ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, এখানে পুরো খালটাই ছিল অনেকগুলো বিল্ডিং এর নিচে। রমজানের সময় কাজ শুরু হয়েছে। সেখানকার শ্রমিকরা জানান, কাজ শেষ হতে আরও মাস খানেক লাগতে পারে।
সিসিসির প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক বলেন “সিডিএ বলছে, চলতি মাসের মধ্যে বাঁধগুলো সরানো সম্ভব। যদি সেটা হয় তাহলে পরিস্থিতি সহনীয় থাকবে। আর না হলে যা হবার তাই হবে। পুরো প্রকল্প শেষ না হলে সব সুফল মিলবে না।”
জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক ও ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশন ব্রিগেডের লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শাহ আলী বলেন, “খালে মাটি ফেলে নিমার্ণ কাজ করা হচ্ছে। এগুলোকে আপনারা বাঁধ বলছেন। কিছু ইতোমধ্যে কেটে দিয়েছি। যেসব এলাকায় কাজ শেষ সেগুলো এমাসের মধ্যেই সরিয়ে নেওয়া হবে।
“কিন্তু যেসব খালে বেজমেন্ট ও ওয়ালের কাজ হয়নি, সেখান থেকে কাজ শেষ না করে ফিরলে ক্ষতি হয়ে যাবে। কিছু খালে মাটি থাকবে। তাতে জলাবদ্ধতা হবে না। কারণ পয়েন্টগুলোতে প্রয়োজনীয় পানি চলাচলের পথ রাখা হবে। এবার পরিস্থিতি অবশ্যই গতবারের চেয়ে ভালো থাকবে।”
নগরীর চশমা খালের তিনটি স্থানে থাকা মাটি আগামী তিন দিনের মধ্যে সরিয়ে পানি চলাচলের মত অংশ উন্মুক্ত করা হবে বলেও জানান তিনি।
পলিথিন-আবর্জনায় অচল পানি প্রবাহ
চকবাজার ধুনিরপুল এলাকায় বৃহস্পতিবার গিয়ে দেখা যায়, সেখানে চাক্তাই খালের প্রবাহ থামিয়ে দিয়েছে জমে থাকা পলিথিন-আবর্জনা ও মাটি।
এছাড়া চাক্তাই খালের বহদ্দারহাট মোড়ে পুলিশ বক্সের পিছনের অংশেও একই পরিস্থিতি। নগরীতে বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা হয় চকবাজার, বাদুরতলা, কাপাসগোলা, ডিসি রোডসহ আশেপাশের এলাকায়।
ধুনিরপুলের বাসিন্দা সাইফুল আলম বলেন, “খাল থেকে ময়লা তুলে খাল পাড়েই রাখে। বৃষ্টিতে আবার সেগুলো খালে গিয়ে পড়ে। এলাকার বড় নালা-নর্দমাগুলোও নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না।”
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, “সিটি করপোরেশনের কোনো ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান্ট নেই। সংগ্রহের পর সব আবর্জনা ডাম্পিং করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে সংগ্রহ করা আবর্জনা আবার খালে গিয়েই পড়ে।
“এক মাস আগে পরিষ্কার করা খাল এখন আবার আবর্জনায় ভরে গেছে। এভাবে চললে সুফল মিলবে না।”
খালগুলোতে চলমান কাজ শেষ করার গুরুত্ব দিয়ে কাজী হাসান বিন শামস বলেন, “একটা পুরো খালের যদি একাংশে কাজ হয় কিন্তু অন্য অংশে না হয় তাহলে ফলটা পাওয়া যায় না। তাই পুরো কাজ শেষ করতে হবে।”
সিসিসির প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক বলেন, “আমাদের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম নিয়মিত চলছে। খাল-নালা থেকে প্রতিদিন পলিথিন-আবর্জনা তোলা হচ্ছে।”
স্লুইস গেট খুলবে জুনে
২০১৮ সালে শুরু হওয়া প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের জুনে। তবে এখন পর্যন্ত অগ্রগতি ৬৭ শতাংশ।
প্রকল্পের অধীনে ৫টি স্লুইস গেট নির্মাণ হচ্ছে মহেশখাল, কলাবাগিচা, মরিয়ম বিবি খাল, টেকপাড়া ও ফিরিঙ্গি বাজার খালে।
জানতে চাইলে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শাহ আলী বলেন, “১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে চারটি স্লুইস গেটের কাজ শেষ হবে। জুনে খুলে দেওয়া হবে। আর মহেশখালের স্লুইস গেটের কাজ শেষ হবে জুলাইয়ের মাঝামাঝি।
“প্রকল্পের মেয়াদ আগামী বছর পর্যন্ত বাড়াতে এবং চলতি অর্থ বছরে আরও ৪৬২ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। টাকা পেলে বাকি থাকা জমি অধিগ্রহণ কাজ এগুবে।”
প্রকল্পের পূর্ত কাজে মোট বরাদ্দ ৩৮৪৩ কোটি টাকার মধ্যে এখন পর্যন্ত ২১৯৮ কোটি টাকা পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি।
জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে কালুরঘাট থেকে শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত সড়ক ও বাঁধ নির্মাণে সিডিএর আরেক প্রকল্পে স্লুইস গেট হবে ১২টি।
সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বলেন, “চাক্তাই, রাজাখালীসহ ৫টি বড় খালের স্লুইস গেট জুনের মধ্যে হয়ে যাবে। মোট ১০টি স্লুইস গেট চালু হলে জোয়ারে নদীর পানি শহরে ঢুকবে না।
“অর্থ বরাদ্দের বিষয়ে আমরা গৃহায়ন ও গর্ণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। এখনও বরাদ্দ পাইনি।
বাংলাদেশ সময়: ১০:২৯:৪৬ ● ৫৮৫ বার পঠিত
পাঠকের মন্তব্য
(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)-
জটিল রাজনীতিকে সরল করা যায় না?_এ কে এম শাহনাওয়াজ
শনিবার ● ২৭ জুলাই ২০২৪ -
আজ বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
শনিবার ● ২৭ জুলাই ২০২৪ -
জাতীয় ঐক্যের ডাক বিএনপির
শনিবার ● ২৭ জুলাই ২০২৪ -
রিমান্ডে ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ
বৃহস্পতিবার ● ২৫ জুলাই ২০২৪ -
বিএনপি-জামায়াত অহিংসতার নামে সহিংস আন্দোলন চালিয়েছে :সজীব ওয়াজেদ জয়
বৃহস্পতিবার ● ২৫ জুলাই ২০২৪ -
মেট্রোরেল স্টেশন পরিদর্শনে প্রধানমন্ত্রী
বৃহস্পতিবার ● ২৫ জুলাই ২০২৪ -
সংগীতশিল্পী শাফিন আহমেদ ইন্তেকাল করেছেন
বৃহস্পতিবার ● ২৫ জুলাই ২০২৪ -
ভাষাবিদ ড. মাহবুবুল হক আর নেই
বৃহস্পতিবার ● ২৫ জুলাই ২০২৪ -
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার মতো পরিবেশ এখনও তৈরি হয়নি: শিক্ষামন্ত্রী
বুধবার ● ২৪ জুলাই ২০২৪ -
লন্ডনে প্রশংসিত বাংলাদেশি চলচ্চিত্র ‘লতিকা’
বুধবার ● ২৪ জুলাই ২০২৪
-
আজ বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
শনিবার ● ২৭ জুলাই ২০২৪ -
জাতীয় ঐক্যের ডাক বিএনপির
শনিবার ● ২৭ জুলাই ২০২৪ -
জটিল রাজনীতিকে সরল করা যায় না?_এ কে এম শাহনাওয়াজ
শনিবার ● ২৭ জুলাই ২০২৪
আর্কাইভ
Head of Program: Dr. Bongoshia
News Room: +8801996534724, Email: [email protected] , [email protected]