সীমান্ত ভ্রমণের সাতটি দিন ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা ; পর্ব- ১১ : স্বপন চক্রবর্তী
Home Page » সাহিত্য » সীমান্ত ভ্রমণের সাতটি দিন ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা ; পর্ব- ১১ : স্বপন চক্রবর্তীবঙ্গ-নিউজ: জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন বলেছেন, তিনি বাসন্তীকে ও তার পরিবারকে ঘর দেবার জন্য খোঁজ খবর নিচ্ছেন। কারিতাস নামের একটি এনজিও ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে বাসন্তীর নামে একটি ঘর বরাদ্দ দেয়। সেই সঙ্গে তার নামে একটি গ্রামেরও নামকরণ করা হয়। সেটাই ছিল বাসন্তীর ঠিকানা। কিন্তু ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গনে কপাল পুড়ে বাসন্তীর। “বাসন্তী” গ্রামটিও বিলীন হয়ে যায়। এরপর তার ঠাঁই হয়েছে তার ভাইয়ের বাড়িতে।
এ কথা অনস্বীকার্য যে, ইতিমধ্যে দেশের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। অনেকের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। শুধু পরিবর্তন ঘটেনি ’৭৪ এর আলোচিত চিলমারীর বাসন্তীর। জাতীয় পরিচয় পত্রে তার জন্ম তারিখ ১১/১০/১৯৪২ উল্লেখ করা হলেও বয়স্ক ভাতা কার্ডে জন্ম তারিখ ১৩/০২/১৯৫১ । আবার অনেক পত্র পত্রিকায় তার জন্ম সাল উল্লেখ করা হয়েছে ১৯৪৬ সাল। জন্ম সাল যাই হোক , বাসন্তীর এখন অনেক বয়স হয়েছে। চলতে প্রায় অক্ষম । তবুও তাকে প্রতি বেলার খাদ্যের জন্য ভাবতে হয়।
নদী ভাঙ্গনে বাসন্তীর গ্রাম ও ঘর বিলীন হলে বাসন্তীর আশ্রয় জুটে তার দুই ভাইয়ের নিকট। তাদেরকে নিয়ে সে থাকতো রমনা ইউনিয়নের জোড়গাছ এলাকায়। ভাই বিশু মারা গেলে বিশু দাসের স্ত্রীর সঙ্গে একটি ভাঙ্গা টিনের ছাপড়া ঘরে দিন কাটে বাসন্তীর। সরকারের দেওয়া বয়স্ক ভাতার ১৫শ টাকা ৩ মাস পরপর পায় বাসন্তী। এতে করে কোন রকমে দিন চলে ’৭৪ এর দুর্ভীক্ষ কন্যা বাসন্তীর।
আগেই উল্লেখ করেছি যে, ১৯৯৮ সালের ৪ জুন বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষের উপর ছবি তোলা বাসন্তীর মর্মস্পর্শী ছবির জন্য ফটো সাংবাদিক আফতাব উদ্দিনকে পুরস্কৃত করার ঘোষণা দেন। ঘোষণাটি আফতাব আহমেদের জবানিতে দৈনিক ইত্তেফাকে ছাপা হয়। আর ২০০৬ সালে ক্ষমতায় আসলে মতিউর রহমান নিজামীর হাত থেকে একুশে পদক গ্রহন করেন আফতাব উদ্দিন। ১৯৯৬ সালের ৫ অক্টোবর “দৈনিক খবর” পত্রিকায় এক প্রতিবেদন লেখা হয়। সেখানে বলা হয়- “ চিলমারীর বন্দর থেকে কয়েকশ গজ দুরে বেশ কিছু কুঁড়ে ঘড়। এখানেই বাসন্তীদের আবাস। জেলে পাড়ায় ঢুকতেই একটি মনোহারী দোকান। দোকানের মালিক ধীরেন বাবুর সঙ্গে কথা হলো। ধীরেন বাবু জানালেন, ’৭৪ অনেক কথা। যে দিন বাসন্তীদের ছবি তোলা হয় সেদিনও তার পরনে কাপড় ছিল। কিন্তু ছেঁড়া জাল পড়িয়ে কৌশলে তাদের ছবি তোলা হয়। এটা এক ধরনের চক্রান্ত ছাড়া কিছুই নয় বলে মনে করেন অনেকে “ ।
রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া থানার মহিপুরে আফতাব আহমেদের জন্ম। ২৫/১২/২০১৩ সালে রামপুরার নিজ বাস ভবনে খুন হন আফতাব আহমেদ। তদন্তে এটাকে ডাকাতি বলে জানা যায়। কিন্তু এই বিষয়ে সাংবাদিক শামছুল আলম লিটন তা অস্বীকার করে বলেন, আফতাব আহমেদ খুনের ঘটনাটি একটি খুনের ঘটনা, যা ডাকাতির ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়া হয়। যা একটি ভয়ংকর রাষ্ট্রীয় অপরাধ। তিনি তার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলেন যে, আফতাব আহমেদ একজন মুক্তি যোদ্ধা। তিনি ১৬ ডিসেম্বর নিয়াজীর আত্ম সমর্পণের ছবি তুলে ছিলেন। তিনি আরও আক্ষেপ করেন যে, এই সাংবাদিকের নৃশংস হত্যাকান্ডের পর সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রকৃত হত্যাকারীদের গ্রেফতার এবং বিচারের দাবিতে সাংবাদিক ইউনিয়ন অথবা আফতাব ভাইয়ের সহকর্মীদের পক্ষ থেকে কোন আন্দোলন , সংগ্রাম এমনকি তদন্তের দাবি জানাতেও দেখা যায়নি।
জনাব শামছুল আলম সাহেব যে কথাগুলো বলেছেন, সেখানে আফতাব আহমেদ কে মুক্তিযুদ্ধের ছবি তুলার জন্য একজন মুক্তিযোদ্ধা বলতে চেয়েছেন। তিনি তো একজন চিত্র সাংবাদিক। তাই তিনি ছবি তুলবেন, এটাই স্বাভাবিক। আর মুক্তিযোদ্ধা তো খন্দকার মোশতাক আহমেদ গং ও ছিলেন। তা ছাড়া তার হত্যার বিচারের দাবিতে সাংবাদিক ইউনিয়ন অথবা আফতাব আহমেদের সহকর্মীদের পক্ষ থেকে কোন দাবি বা আন্দোলন সংগ্রাম না হওয়ায় হয়তো তাদেরও যুক্তি আছে। হয়তো আন্দোলন করার মতো যৌক্তিক কোন কারন তাদের কাছে নেই।
যে রংপুরে আফতাব আহমেদের জন্ম হয়েছে সেখানে জন্ম হয়েছিল প্রয়াত সাংবাদিক মাহমুদ হোসেনের, জন্ম হয়েছিল কাজী ইদ্রিস এবং চারণ কবি মোনাজাত উদ্দিনের। এই মোনাজাত উদ্দিন দৈনিক সংবাদের সাংবাদিক ছিলেন । তার বিশিষ্ট কলাম ছিল “ পথ থেকে পথে”। তাঁর রিপোর্ট ছিল আমার খুব প্রিয়। আমার সৌভাগ্য হয়েছে কয়েকবার তাঁকে দেখার। মোনাজাত উদ্দিন এই ঘটনাকে ভালো চোখে দেখেন নি।
বিখ্যাত উপন্যাসিক মানিক বন্দোপাধ্যায়ে একটি উপন্যাস আছে। নাম ”পদ্মা নদীর মাঝি”। এই পদ্মা নদীর মাঝিতে, মাঝিদের সুখ-দুঃখ অভাব অনটন ভাল ভাবে ফুটে উঠেছে। এই ছবিটি নিয়ে পরে সিনেমাও হয়েছে। অন্যদিকে শ্রী অদ্বৈত মল্লবর্মণ লিখেছিলেন তাঁর জীবনের বিখ্যাত একটি উপন্যাস , ”তিতাস একটি নদীর নাম”। উপন্যাসটি লিখিত হয়েছিল ১৯৫৬ সালে। লেখকের জীবনের একটি মাত্র উপন্যাস দিয়েই তিনি অমর হয়ে আছেন। এই উপন্যাস নিয়েও ১৯৭৩ সালে সিনেমা তৈরী হয়েছে। সিনেমাটি পুরস্কার পেয়েছে। তিতাস একটি নদীর নামের নায়িকাও বাসন্তী। তারও স্বামী ছিল না। বিধবা ছিল। সেই জেলে বাসন্তীর পরিণতিও খুব করুন । তার যৌবনের প্রতি লোভ জাগে কতিপয় লোকের। সে তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে জয়ী হয়। কিন্তু পরে গ্রাম শুদ্ধ জ্বালিয়ে তাদেরকে ভিটে ছাড়া করে। তিতাস শুকিয়ে যায় বালু চড়ে এক ফোঁটা পানির জন্য বালুতে গর্ত খুড়ে, এভাবেই তিতাস নদীর পারের বাসন্তীর জীবনাবসান হলেও ব্রহ্মপুত্র পারের জেলে বাসন্তীরা এখনো কালের সাক্ষী হয়ে বেঁচে আছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানির মতো তার জীবনের দুঃখের প্রবাহ যেন বিরামহীন বয়ে চলেছে ।
পদ্মা নদীর মাঝিতে উৎপল দত্ত, রূপা গাঙ্গুলী. রাইসুল ইসলাম আসাদ, প্রমুখ অভিনয় করেছেন। অপর দিকে প্রখ্যাত পরিচালক ঋত্বিক ঘটক পরিচালনা করেছেন তিতাস একটি নদীর নাম। এই ছবিতে অভিনয় করেছেন প্রবীর মিত্র, কবরী , রোজী সামাদ, রানী সরকার, রহিমা খালা প্রমুখ। তাদের অভিনয়ও হৃদয় ছুঁয়ে যায়। ছবিটির পরিচালক ঋত্বিক ঘটক নিজেও অভিনয় করেছেন। চলবে-
বাংলাদেশ সময়: ২০:১৬:৫১ ● ৬০৬ বার পঠিত
পাঠকের মন্তব্য
(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)-
আজ বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
শনিবার ● ২৭ জুলাই ২০২৪ -
জাতীয় ঐক্যের ডাক বিএনপির
শনিবার ● ২৭ জুলাই ২০২৪ -
রিমান্ডে ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ
বৃহস্পতিবার ● ২৫ জুলাই ২০২৪ -
বিএনপি-জামায়াত অহিংসতার নামে সহিংস আন্দোলন চালিয়েছে :সজীব ওয়াজেদ জয়
বৃহস্পতিবার ● ২৫ জুলাই ২০২৪ -
মেট্রোরেল স্টেশন পরিদর্শনে প্রধানমন্ত্রী
বৃহস্পতিবার ● ২৫ জুলাই ২০২৪ -
সংগীতশিল্পী শাফিন আহমেদ ইন্তেকাল করেছেন
বৃহস্পতিবার ● ২৫ জুলাই ২০২৪ -
ভাষাবিদ ড. মাহবুবুল হক আর নেই
বৃহস্পতিবার ● ২৫ জুলাই ২০২৪ -
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার মতো পরিবেশ এখনও তৈরি হয়নি: শিক্ষামন্ত্রী
বুধবার ● ২৪ জুলাই ২০২৪ -
লন্ডনে প্রশংসিত বাংলাদেশি চলচ্চিত্র ‘লতিকা’
বুধবার ● ২৪ জুলাই ২০২৪ -
আপাতত বন্ধ থাকছে ফেইসবুক-টিকটক
বুধবার ● ২৪ জুলাই ২০২৪
-
আজ বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
শনিবার ● ২৭ জুলাই ২০২৪ -
জাতীয় ঐক্যের ডাক বিএনপির
শনিবার ● ২৭ জুলাই ২০২৪
আর্কাইভ
Head of Program: Dr. Bongoshia
News Room: +8801996534724, Email: [email protected] , [email protected]