সীমান্ত ভ্রমণের সাতটি দিন ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা ; পর্ব- ৫০: স্বপন চক্রবর্তী

Home Page » সাহিত্য » সীমান্ত ভ্রমণের সাতটি দিন ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা ; পর্ব- ৫০: স্বপন চক্রবর্তী
শনিবার ● ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩


ফাইল ছবি-কাজী নজরুল ইসলাম
কাজী নজরুল; বহু বিশ্রুত ও বিস্ময়কর এক প্রতিভা: পর্ব-৫
”আনোয়ার” ও “কামাল পাশা” কবিতার প্রেক্ষাপট নিম্নে উদ্ধৃত করা হলো।; ১৯১৮ খ্রীস্টাব্দের অক্টোবর মাসে মিত্র পক্ষের সঙ্গে তুরস্কের সন্ধি শর্ত স্বাক্ষরিত হলে তুরস্কের সামরিক অফিসার তালাত পাশা আনোয়ার পাশা ও কামাল পাশা একটি জার্মান যুদ্ধ জাহাজে দেশ ত্যাগ করে জার্মানীতে গিয়ে ছিলেন। কিন্তু পরাজিত জার্মানীর কাছ থেকে সাহায্যের কোন আশা নেই জেনে আনোয়ার পাশা ও কামাল পাশা রাশিয়ায় গেলেন, তালাত পাশা জার্মানীতে থেকে যান। কামাল পাশা এই সময়ে স্বদেশ ত্যাগ করলেও আবার তুরস্কে প্রত্যাবর্তন করেন। এম এন রায়ের স্মৃতি চারণ থেকে জানা যায় যে, আনোয়ার পাশা বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে মধ্য প্রাচ্যের মুসলমান এবং ভারতের খেলাফত আন্দোলন কারীদের বিদ্রোহ সংগঠনের জন্য সোভিয়েত রাশিয়ার সাহায্য চেয়েছিলেন। আনোয়ার পাশার এই ইংরেজ ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ভুমিকাই নজরুলকে অনুপ্রাণিত করেছিল তাকে নিয়ে কবিতা রচনায়।
”কামাল পাশা” কবিতার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। প্রথম মহাযুদ্ধ শেষ হবার পর ইউরোপের রুগ্ন ব্যক্তি নামে পরিচিত তুরষ্কের সুলতান আব্দুল হামিদ সিংহাসন ত্যাগ করেন। ১৯১৮ খ্রীস্টাব্দের জুলাই মাসে সুলতানের কনিষ্ঠ ভ্রাতা মোহাম্মদ ওয়াহিদুদ্দিন তুরস্কের সুলতান হন। কিছু দিনের মধ্যেই মিত্র শক্তির সঙ্গে যুদ্ধ বিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সঙ্গে সঙ্গে মিত্র পক্ষের একটি বিরাট নৌবহর ইস্তাম্বুলে প্রবেশ করে এবং ৮ই ডিসেম্বর তুরষ্কে মিত্র পক্ষের সামরিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। ফরাসী বাহিনী সিরিয়া থেকে সিলসিয়া এবং আদানায় প্রবেশ করে। ইংরেজ বাহিনী দার্দানেলেস,স্যামসুন,আয়েতাব, এবং সমগ্র আনা তোলিয়া রেল পথ অধিকার করে নেয়। ১৯১৯ খ্রীস্টাব্দের এপ্রিল মাসে ইতালীয় বাহিনী আনা তোলিয়ায় অবতরন করে।
১৯২১ খ্রীস্টাব্দের জুলাই মাসে গ্রীকরা নতুন করে আক্রমণ শুরু করলে সাকারিয়া নদীর তীরে গ্রীক ও তুর্কী বাহিনী মুখোমুখি হয়। এখানে ২৪ শে আগস্ট এক প্রচন্ড লড়াইয়ে মোস্তফা কামালের পরিচালনায় তুরস্ক বাহিনী গ্রীক বাহিনীকে শোচনীয় ভাবে পরাজিত করে। “ গ্রান্ড ন্যাশনাল এসেম্বলি “ বিজয়ী জেনারেল আতাতুর্ককে “গাজী” উপাধীতে ভূষিত করেন। এই যুদ্ধ জয়ের পটভুমিকাতেই নজরুলের “কামাল পাশা” কবিতাটি রচিত হয়।
নজরুল “ আনোয়ার” ও কামাল পাশার” পরে রচনা করেন “বিদ্রোহী” কবিতা। এ সম্পর্কে পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে। আবারও কিছুটা উল্লেখ করা হলো।
১৯২১ খ্রীস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে ৩/৪ সি তালতলা লেনের বাড়ির নীচের তলার দক্ষিণ পূর্ব কোনের ঘরটিতে। কবিতাটির প্রথম শ্রোতা মুজফ্ফর আহমদ নজরুলের স্মৃতি কথায় বর্ণনা করেছেন নজরুলের “ বিদ্রোহী” রচনার কাহিনী।
সে কবিতাটি লিখেছেন রাত্রিতে। রাত্রির কোন্ সময়ে তা আমি জানিনে। রাত দশটার পর আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে মুখ ধুয়ে এসে আমি বসেছি , এমন সময় নজরুল বললো, সে একটি কবিতা লিখেছে। পুরো কবিতাটি সে তখন আমায় পড়ে শোনাল। “বিদ্রোহী” কবিতার আমিই প্রথম শ্রোতা। …. আমার মনে হয় নজরুল ইসলাম শেষ রাতে ঘুম থেকে উঠে কবিতাটি লিখেছিল। তিনি আরও জানিয়েছেন যে,সকাল বেলা “মুসলেম ভারত” পত্রিকার আফজালুল হক সাহেব কবিতাটি শুনে খুবই উচ্ছসিত হয়ে উঠলেন এবং “ মুসলেম ভারত” এর জন্য কবিতাটি তখনই কপি করে নিলেন। তারপর এলেন “ বিজলী” পত্রিকার ম্যানেজার অবিনাশ ভট্টাচার্য। তিনি কবিতাটি শুনে “মুসলেম ভারত” প্রকাশের অনিশ্চয়তার কারনে “বিজলী”তে ছেপে দিতে চাইলেন। নজরুল “বিজলীর’ জন্যও “ বিদ্রোহী” কপি করে দিলেন। কবিতাটি প্রথমে “বিজলী”তেই প্রকাশিত হয় ১৯২২খ্রীস্টাব্দের ৬ ই জানুয়ারী। “ মুসলেম ভারত” এর কার্তিক ১৩২৮ সংখ্যায় “ বিদ্রোহ “ ছাপা হয়েছিল , তবে সে সংখ্যাটি ফাল্গুন মাসের আগে প্রকাশিত হয়নি। এভাবে “ মুসলেম ভারত “ পত্রিকার জন্যও “ বিদ্রোহী” ছাপতে দিলেও তা প্রথম প্রকাশিত হয় “ বিজলী” পত্রিকায় ।
”বিদ্রোহী কবিতার প্রথম শ্রোতা ও ”বিদ্রোহী “ কবিতা প্রকাশনা সম্পর্কিত ঘটনাবলীর সাক্ষী মুজফ্ফর আহমদ “বিজলীর’ ম্যানেজার ও সম্পাদকের দাবী সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন যে, “ এই ভাবে স্মৃতি মানুষের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। “ অবিনাশ ভট্টাচার্য আরও জানিয়েছেন, “বিজলী” তে ”বিদ্রোহী” প্রকাশের পর দিন নজরুল জোড়াসাঁকো গিয়ে রবীন্দ্রনাথকে কবিতাটি শুনিয়ে আসেন। পরের দিন সকালে এসে কবি চারখানা “বিজলী” নিয়ে গেল, বললে গুরুজীর কাছে নিয়ে যাচ্ছি। ( চলবে )

বাংলাদেশ সময়: ১৯:৪২:০৭ ● ৩২৯ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ