সীমান্ত ভ্রমণের সাতটি দিন ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা ; পর্ব- ৬১: স্বপন চক্রবর্তী

Home Page » সাহিত্য » সীমান্ত ভ্রমণের সাতটি দিন ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা ; পর্ব- ৬১: স্বপন চক্রবর্তী
রবিবার ● ৪ জুন ২০২৩


রূপবানকন্যা খ্যাত চিত্রনায়িকা সুজাতা

রূপবান-১

১৯৬৫ সালে পরিচালক সালাহউদ্দিন তৈরী করেন ”রূপবান” ছবি। রূপবান ছবিটিও দারুণ ব্যবসা সফল হয়। এই সফলতা দেখে পরে রূপবান নিয়ে আরও ছবি নির্মিত হয় । বনবাসে রূপবান, “আবার বনবাসে রূপবান”, নির্মিত হয় রহিম বাদশা ও রূপবান এবং নির্মিত হয় ”রঙিন রূপবান” ইত্যাদি। অনুরূপভাবে রূপকথার কাহিনী নিয়ে তৈরী হয়েছিল সুয়োরানী–দোয়োরানী,পাতালপুরীর রাজকন্যা, সাতভাই চম্পা, দস্যুরানী, আলাল আর দুলাল, আলালের ঘরের দুলাল, আপন দুলাল ইত্যাদি অনেক ছবি। প্রতিটি ছবিই দারুণ ভাবে দর্শক নন্দিত হয়েছিল। তবে রূপবান ছিল বেশি দর্শক নন্দিত।

”রূপবান” একটি পুরুষ বাচক শব্দ এবং এর স্ত্রী বাচক শব্দ ”রূপবতী” হলেও এই ছবিটির ব্যপারে নায়িকার নাম কিন্তু রূপবানই রাখা হয়েছিল । কি কারণে এমন ব্যকরণ বিভ্রাট হয়েছে তা নিয়ে আমার মনে একটি প্রশ্ন থেকেই গেল। যাক এ বিষয়ে মাথা না ঘামিয়ে রূপবানের জনপ্রিয়তা নিয়ে একটু বলি। সিনেমা ছাড়াও প্রতিটি অপেরা পার্টি এই কাহিনী নিয়ে লেখা বইটি প্রযোজনা করতে থাকে। আর সিনেমা হলে কোথাও কোথাও বৎসরাধিক কাল চলে এই ছবি। যাত্রা এবং ঝুমুর যাত্রাতে রূপবান ব্যাপক আলোড়ন তুলে । আমি তখন কেবল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাই। আমাদের গ্রামের একটি ধান ক্ষেতে ধান কাটার পর একদিন রূপবান যাত্রা পালা হলো। আষাঢ়ী ধানক্ষেত হিসাবে পরিচিত এই ক্ষেতে একদিন শুরু হলো রূপবান যাত্রাপালা। সামিয়ানা টানিয়ে এবং স্টেজ বানিয়ে মঞ্চস্থ হয় রূপবান পালা। যেহেতু কোন প্যান্ডেল ছিল না ,মাত্র চারটি কাঠের চৌকি একত্রিত করে তৈরী করা হয়েছিল স্টেজ। কোন টিকিট লাগেনি তাই এটাকে একটা সৌখিন যাত্রাপালা বলা যায়। অভিভাবকের নিকট হতে অনেক অনুরোধ করে অনুমতি নিয়ে সেটা উপভোগ করেছিলাম। বার দিনের শিশু রহিমকে রেখে বার বৎসরের স্ত্রী রূপবান যখন জল আনতে যায় তখন বাঘে এসে রহিমকে ধরে। আর তখনই রূপবান এসে ঝাপিয়ে পড়ে উদ্ধার করে রহিমকে। এই দৃশ্য দেখে রীতিমতো ভয় পেয়েছিলাম।
সংক্ষেপে কাহিনীটি বললে বলতে হয় , বাদশাহ হরিণ শিকারে যায়। সেখানে এক দরবেশের সাথে বিরূপ আচরণের কারণে দরবেশ বাদশাহকে অভিশাপ প্রদান করে। বলে তোর পুত্রশোক হবে। বাদশাহ হাসতে হাসতে বলে ,আমার তো কোন পুত্রই নেই। তখন দরবেশ বলে- তোর পুত্র হবে, তবে তার আয়ুষ্কাল হবে মাত্র বার দিন। অপুত্রক বাদশাহ তখন ভেঙ্গে পড়ে, দরবেশের কাছে এর প্রতিকার চায়। দরবেশ বলে যে, যদি বার দিনের শিশুর সাথে বার বছরের কন্যার বিবাহ দিতে পারিস এবং এক যুগের জন্য তাদেরকে বনবাসে পাঠাতে পারিস তবেই রক্ষা হবে। সারা রাজ্য খোঁজে কোথাও বার বছরের কন্যার সন্ধান পাওয়া গেলো না। অবশেষে সন্ধান পেলো উজির কন্যা রূপবানের। তার বয়স ছিল বার বছর। ‍কিন্তু উজির কিছুতেই এই প্রস্তাব মানতে রাজি ছিল না। বাদশাহ তাকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করে। তখন উজির কন্যা রূপবান পিতাকে রক্ষার জন্য বার দিনের শিশু রহিমকে স্বামী রূপে বরণ করে এবং বিবাহ সম্পন্নের পর পরই বনবাসে চলে যায়। তারপর অনেক বাধা পার হয়ে যেতে থাকে। রহিম পূর্ণ বয়স্ক হলে তাজেল নামক এক কন্যার প্রেমে পড়ে। রূপবান নিজ ধৈর্য গুণে সেখান থেকেও রহিমকে উদ্ধার করে। বনে রূপবানের সহায়ক হয়ে আবির্ভুত হয় এক জংলী সর্দার। সকল বিপদে সে রূপবানকে নিজ কন্যার মতো সহায়তা দিয়ে রক্ষা করে।
(চলবে )

বাংলাদেশ সময়: ২১:৪৮:২৮ ● ৩৯৫ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ