সীমান্ত ভ্রমণের সাতটি দিন ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা ; পর্ব- ৬৯:-স্বপন চক্রবর্তী
Home Page » সাহিত্য » সীমান্ত ভ্রমণের সাতটি দিন ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা ; পর্ব- ৬৯:-স্বপন চক্রবর্তী১৯৭১,মুক্তিযুদ্ধ
দইখাওয়ায় থেকে মুক্তি যুদ্ধকে প্রতি মূহুর্তে খুব কাছে থেকেই দেখেছি। প্রতিদিন মূহুর্মুহূ গুলির শব্দ। ঠ্যা ঠ্যা ঠ্যা,, দ্রিম দ্রিম দ্রিম…। কত ধরনের আওয়াজ। দিন রাত বিরামহীন চলতো । বিশেষ করে ভোর বেলাতে আওয়াজ শোনা যেতো খুব বেশি। । উভয় সীমান্তে লোক জনের চলাচলে তখন কোন বাধা ছিল না। বর্ডার ছিল বাধাহীন। লোকজন প্রাণ ভয়ে প্রতিদিন হাজারে হাজারে ভারতে যেতো। গরু ছাগল হাঁস মুরগী মায় শেষ সম্বল নিয়ে পাড়ি জমাচ্ছিল। এক কাঁধে শিশু অথবা বৃদ্ধ মা-বাবা, আর অন্য কাঁধে অথবা হাতে হাঁস-মুরগী গরু,ছাগলের রশি ধরা ছিল। মানবতার এই বিপর্যয় কাছে থেকে দেখেছি। নিজে কষ্ট ভোগ করেছি। অন্যদের কষ্টও দেখেছি। যুদ্ধ শুরুর প্রথম দু’এক মাস বাংলাদেশে থাকা গেলেও পরে প্রচন্ড আক্রমণের ফলে সীমান্ত পার হয়ে ভারতে যেতে হয়ে ছিল।
একদিন সকালের দিকে দেখলাম একটি জঙ্গী বিমান বাংলাদেশের অভ্যন্তর হতে দ্রুত ছুটে আসছে ভারতের দিকে। সীমান্তের প্রায় কাছাকাছি আসলে ভারতের কুচবিহার জেলার বড়মরিচা হাইওয়ের নিচে রাখা কামানের ব্যারেল থেকে দুটি গুলা বের হয়ে গিয়ে বিমানটিকে আঘাত করলো। বিমানটি প্রথমে আকাশেই থেমে গেলো। অনেকগুলো কামান রাস্তার নীচে সারি সারি করে বসানো, শুধু মাথাগুলো তাক করে আছে আকাশের দিকে। প্রবেশ চেষ্টাকারি বিমানটি বাংলাদেশের আকাশেই কয়েকটি পাল্টি খেয়ে একবারে সীমান্তের প্রায় কাছাকাছি এসে নীচে পড়ে গেলো। গাছের আড়ালে পড়ে যাওয়ায় আর কিছু দেখা যাচ্ছিল না। দুরে ভারত সীমান্ত থেকে দেখলাম অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে বাঁশ ঝাড়ের উপর দিয়ে আকাশ অন্ধকার করে ধোঁয়া উঠতে লাগলো। প্রচন্ড ধোঁয়া। আমরা সবাই ছুটে গিয়েছিলাম দেখতে। বাংলাদেশের ভিতরে উত্তর গোতামারি এলাকার আজিম বাজারে বিমানটি পড়েছিল। কয়েক ঘন্টা পর ভারতের একটি সামরিক বাহিনীর হেলিকপ্টার আসে। তিনজন সামরিক পোশাক পরিহিত লোক এসে বিধ্বস্ত বিমানের পাইলটদের টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া দেহাবশেষ গুলি সাদা কাপড়ে জড়িয়ে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে তাদের সাথে করে নিয়ে উড়ে চলে গেলো। তাদের মুখ ছিল খুব বিমর্ষ। বিমানের পতিত হওয়ার জায়গাটি অন্তত ত্রিশ ফুট গর্ত হয়ে গেলো। বিমানের অংশ সেই মাটির গর্ত হতে মাটির উপর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে পড়ে রইলো। অনেক দিন পরে অবশ্য আস্তে আস্তে ধ্বংসাবশেষ লুন্ঠিত হয়ে যায়। অবশ্য তপ্ত বিমানটি শীতল হওয়া অবদি জনগণ লুন্ঠন করা থেকে বিরতও ছিল। আশপাশের লোকজন সবাই কিছু কিছু করে নিয়ে গেলো। শুধু ভারী যন্ত্রাংশ গুলো পড়ে রইলো। সর্বশেষ বিমানের ভারী একটা অংশ অনেক দিন এখানে পড়েছিল, যার উপর দাঁড়িয়ে কিছুদিন আজান দেওয়া হয়েছিল । পরে সেই গোলাকৃতির অংশটুকুও ৩২০০/ টাকায় বিক্রি করে দেওয়া হয়। উত্তর গোতামারির মোঃ মজিবুর রহমানের জমিতে বিমানটি পতিত হয়ে ছিল।
বিমানটি লালমনিরহাটে বোমা ফেলে ফিরার পথে পিছনের দিকে শত্রু পক্ষের গোলায় আঘাত প্রাপ্ত হয়। বিমানের নির্ধারিত স্তরের অনেক নিচু দিয়ে আসছিল আহত বিমানটি। ফলে রাডারে ধরা পড়েনি। লালমনির হাটে পাকিস্তানি সৈন্যরা গুলি করেছিল । ফলে বিমানে আগুন ধরে যায়। এই অবস্থায় দ্রুত ভারতে প্রবেশ করতে গিয়ে সিগন্যালের কিছু নিয়ম ভঙ্গ হয়, আর তৎক্ষণাৎ নিজেদের গুলিতে নিজেদেরই এই বিমানটি পুনরায় আক্রান্ত হয়। এমন সব ছিল তখনকার নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। আমি ও আমার ছোট ভাই সীমান্তের ওপারে কুচবিহার জেলার শীতলখুচি থানাধীন পাগলা ডাঙ্গা শরনার্থী শিবিরে তখন আশ্রয় নিয়েছি। প্রতিদিন খুব কাছে থেকে এই সীমান্তে যুদ্ধ দেখেছি। শরনার্থী শিবির হতে অনতি দুরে সীমান্ত। তা অতিক্রম করে প্রায় প্রতিদিন বাংলাদেশে চলে এসেছি। অনেক সময় রাজাকারদের আক্রমণের মুখে সর্বশক্তি দিয়ে দৌড়ে আবার ভারতে গিয়ে পৌঁছেছি। কি শিহরণ জাগানিয়া সব ঘটনা। এখন ভাবতে গেলে গা ঝাঁকুনি দেয়। অতি পরিচিত ব্যক্তিদের কিছু সংখ্যককে দেখলাম তখন শত্রুপক্ষের এক একজন অস্ত্রধারী । তারা রাজাকার। (চলবে)
বাংলাদেশ সময়: ১৯:৫৬:৩৭ ● ৫৩৫ বার পঠিত
পাঠকের মন্তব্য
(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)-
প্রতিষ্ঠিত হয়ে বিয়ে করতে চায় সিলেটের ছেলেমেয়েরা
মঙ্গলবার ● ৫ ডিসেম্বর ২০২৩ -
মধ্যনগরে কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরন
সোমবার ● ৪ ডিসেম্বর ২০২৩ -
এবার ট্রেনে সেবা দিচ্ছে বিমানের মতো ‘ট্রেনবালা’
সোমবার ● ৪ ডিসেম্বর ২০২৩ -
ভূমিকম্পে খসে পড়েছে ঢাবির হলের পলেস্তারা
রবিবার ● ৩ ডিসেম্বর ২০২৩ -
কার বিরহে বিলীন হতে চান প্রভা!
রবিবার ● ৩ ডিসেম্বর ২০২৩ -
মেসি মেসি’ স্লোগান রোনালদোর সামনেই
রবিবার ● ৩ ডিসেম্বর ২০২৩
-
মধ্যনগরে কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরন
সোমবার ● ৪ ডিসেম্বর ২০২৩ -
প্রতিষ্ঠিত হয়ে বিয়ে করতে চায় সিলেটের ছেলেমেয়েরা
মঙ্গলবার ● ৫ ডিসেম্বর ২০২৩ -
এবার ট্রেনে সেবা দিচ্ছে বিমানের মতো ‘ট্রেনবালা’
সোমবার ● ৪ ডিসেম্বর ২০২৩
আর্কাইভ
Head of Program: Dr. Bongoshia
News Room: +8801996534724, Email: [email protected] , [email protected]