গ্যাসের ওষুধ বিপদ বেশি খেলে

Home Page » বিজ্ঞান-প্রযুক্তি » গ্যাসের ওষুধ বিপদ বেশি খেলে
মঙ্গলবার ● ৯ জানুয়ারী ২০২৪


গ্যাসের ওষুধ বিপদ বেশি খেলে

বঙ্গনিউজঃ  অম্লের জ্বালাপোড়ার সঙ্গে বোধ হয় প্রায় সব বাঙালির খানিকটা পরিচয় আছে। এর কার্যকর দাওয়াই বাজারে আসে ১৯৮৯ সালে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এ ওষুধগুলো প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর নামে পরিচিত। এ গ্রুপে রয়েছে ওমিপ্রাজল, প্যান্টোপ্রাজল, ইসোমিপ্রাজল, লানসোপ্রাজল, রেবিপ্রাজল এবং অতি সাম্প্রতিককালের ভনোপ্রাজন। সাধারণভাবে এগুলোকে অনেকে গ্যাসের ওষুধ বলে থাকেন।

আমরা অনেক সময় মুড়ি-মুড়কির মতো এ ওষুধগুলো সেবন করে থাকি। দীর্ঘদিন এ ধরনের ওষুধ সেবন করার কারণে অনেক জটিলতা তৈরি হতে পারে। ভিটামিন ঘাটতি, রক্তশূন্যতা, রক্তে ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি, বিশেষ ধরনের ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, হাড় ক্ষয়, এমনকি হাড় ভেঙে যাওয়া, কিডনির রোগ– এগুলোর সবই হতে পারে ওষুধ সেবনের ফলে।

ওষুধটির কারণে পাকস্থলীর অম্লীয় পরিবেশ বদলে যায়। এতে জীবাণুর বংশবিস্তার সহজতর হয়, বিশেষত হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়। এসব জীবাণু একসময় পাকস্থলী থেকে বসত গড়ে ফুসফুসে। ফলে নিউমোনিয়ার প্রকোপ বেড়ে যায়।

এ ওষুধটির কারণে গ্যাস্ট্রিন নামক একটি উৎসেচকের পরিমাণ বাড়তে থাকে। এর ফলে ওষুধ ছেড়ে দেওয়ার পর হঠাৎ করে আবার এসিডের মাত্রা বেড়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস্ট্রিন নামক এ উৎসেচকের প্রভাবে এক ধরনের কোষ স্ফীত হয়ে যায়। কালক্রমে সেটি ক্যান্সারে রূপ নিতে পারে।

এই ওষুধ সেবনের ফলে অন্ত্রে ক্যালসিয়াম শোষণ ব্যাহত হয়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, দুই সপ্তাহ ওমিপ্রাজল ওষুধ সেবন করলে অন্ত্রে ক্যালসিয়াম শোষণ ৪১ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। ফলে হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। দীর্ঘদিন এমন চলতে থাকলে একসময় হাড় ভেঙে পড়ে।

দীর্ঘদিন এ ওষুধ সেবনের ফলে রক্তে ম্যাগনেসিয়ামের পরিমাণ কমে যায়। এর অভাবে মাংসে কামড়ানো ব্যথা, দুর্বলতা, টিটেনি, খিঁচুনি, রক্তচাপ বৃদ্ধির মতো
ঘটনা ঘটে।

ভিটামিন বি-১২ শরীরের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এর অভাবে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়; স্নায়ু বৈকল্য সৃষ্টি হয়। দীর্ঘদিন পর্যন্ত এসিড প্রশমনের ওষুধ সেবনের ফলে এই ভিটামিনের ঘাটতি দেখা দেয়। বিশেষত বয়স্কদের এ সমস্যা আরও বেশি হতে পারে।

এ ধরনের ওষুধ সেবনের ফলে একুইট ইন্টারেস্টেসিয়াল নেফ্রাইটিস নামক কিডনির মারাত্মক ব্যাধি সৃষ্টি হতে পারে। এতে ক্ষুধামান্দ্য, বমি, জ্বর, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্তক্ষরণ পর্যন্ত হতে পারে।

দীর্ঘদিন এসিড প্রশমনের ওষুধ সেবনের সঙ্গে স্মৃতিভ্রমের যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা। সুতরাং মুড়ি-মুড়কির মতো ওষুধ সেবনের বাতিক থেকে
বেরিয়ে আসুন।

লেখক : মেডিসিন স্পেশালিস্ট ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট, সিএমএইচ, ঢাকা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭:১৭:৩৯ ● ৮৫ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ