২৩ নাবিকের ভাগ্য নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা

Home Page » জাতীয় » ২৩ নাবিকের ভাগ্য নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা
বৃহস্পতিবার ● ১৪ মার্চ ২০২৪


ফাইল ছবি

বঙ্গনিউজঃ     ভারত মহাসাগরে বাংলাদেশের পতাকাবাহী ‘এমভি আবদুল্লাহ’ জাহাজ জিম্মি করে সোমালিয়া উপকূলের দিকে নিয়ে যাচ্ছে জলদস্যুরা । জাহাজে থাকা ২৩ নাবিককে জিম্মি করে গুলি ছুড়ে ভয় দেখাচ্ছে তারা। টাকা না দিলে একজন একজন করে গুলি করে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। এদিকে নাবিকদের জিম্মি করার খবরে নাবিকদের পরিবারে বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।

নাবিকদের স্বজনরা চট্টগ্রামে জাহাজটির মালিকপক্ষের কার্যালয়ে ছুটে এসে নাবিকদের উদ্ধারের আকুতি জানিয়েছে। অন্যদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় ও মালিকপক্ষ জিম্মি নাবিকসহ জাহাজটি উদ্ধারে তৎপরতা শুরু করেছে। পররাষ্ট্র পর্যায়ে যোগাযোগ চলছে বলে বলে জানিয়েছে নৌ-মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া জাহাজের বীমাকারী যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন মালিকপক্ষ।

জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার পর জাহাজের চিফ অফিসার মো. আবদুল্লাহ গোপনে মালিকের কাছে একটি অডিও বার্তা পাঠিয়েছেন। ৩ মিনিট ৩৪ সেকেন্ডের ওই অডিও বার্তায় তিনি জিম্মিদশার পুরো ঘটনা বর্ণনা করেছেন। দেশে পরিবারকে দেখেশুনে রাখার আকুতি জানিয়েছেন।

মো. আবদুল্লাহ তার অডিও বার্তায় সোমালিয়ান জলদস্যুরা জাহাজে ওঠার পর কার সঙ্গে কী আচরণ করেছে, সেই বর্ণনাও দিয়েছেন। অডিও বার্তার শুরুতেই সালাম দিয়ে নিজের নাম বলে তিনি জানান, সাড়ে ১০টার সময় একটা হাইস্পিড বোট জাহাজের দিকে আসতে দেখে এলার্ম বাজানো হয়। সহায়তার জন্য বিভিন্ন জায়গায় ফোন দিলেও তারা রিসিভ করেনি। এর মধ্যে জলদস্যুরা চলে আসে।
জাহাজে উঠেই দস্যুরা ক্যাপ্টেন ও সেকেন্ড অফিসারকে জিম্মি করে। এরপর সবাইকে একসঙ্গে করে ফাঁকা গুলি ছোড়ে। সেকেন্ড অফিসারকে হালকা মারধর করেছে, তবে আর কারও গায়ে হাত তোলেনি তারা।

এর কয়েক মিনিটের মধ্যে ফিশিং বোট নিয়ে আরও জলদস্যু আসতে থাকে। সবার হাতেই প্রায় অস্ত্র ছিল। নানা ভয়ভীতি দেখাচ্ছিল। এ সময় তাদের বোটের তেল শেষ হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশি জাহাজের পাম্প দিয়ে তেল নিয়ে নেয়। এরপর জাহাজের ইঞ্জিনও বন্ধ করে দেয় তারা।

অডিও বার্তায় জানানো হয়, এখন পর্যন্ত আল্লাহর রহমতে কারও কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। জাহাজেরও কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে সবাই ভয়ে আছে। তিনি জাহাজে থাকা সবার জন্য দোয়া চেয়েছেন। একই সঙ্গে দেশে পরিবারকে দেখে রাখার আকুতি জানান ওই কর্মকর্তা। তাদের সান্ত্বনা জানানোর কথাও বলেন।

তবে শোনা যাচ্ছে, জিম্মি দশায় থাকা নাবিকদের কাছে বিপুল অর্থ দাবি করা হচ্ছে। দ্রুত টাকা না দিলে মেরে ফেলার কথাও বলছে তারা।

আরেকটি কোম্পানির জাহাজে কর্মরত চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর এলাকার আরমান হোসেন বাবু নামের একজনের কাছে অডিওবার্তায় এক নাবিক (নাম জানা সম্ভব হয়নি) বলেছেন, ‘আমাদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে ডাকাতরা (জলদস্যু)। আমি ওয়াশরুম থেকে ভয়েস দিচ্ছি। ওরা সাত-আটজন আছে। আমাদের ওদের ডেরায় নিয়ে যাবে। ওদের সবার কাছে গান (অস্ত্র) আছে।’

অডিওবার্তায় আরও বলা হয়, ‘আমরা মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে দুবাইয়ের পথে যাচ্ছিলাম। ওরা (জলদস্যু) দুই মাস আগে ইরানি একটি ফিশিং বোট আটক করেছিল। ওটা আমাদের জাহাজের সঙ্গে বর্তমানে বাঁধা আছে। ওটা থেকেই মূলত জলদস্যুরা আমাদের আক্রমণ করে। ওই ফিশিং বোটটা ওরা হয়ত ছেড়ে দেবে। ওই বোটের জন্য আমরা ডিজেল দিলাম। আমাদের নিয়ে ওরা হয়ত ওদের আস্তানায় চলে যাবে।’ ১৫ মিনিটেই জাহাজ দখল

মালিকপক্ষকে জাহাজের ক্যাপ্টেন আবদুর রশিদ জানান, মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে ভারত মহাসাগরে অবস্থান করা জাহাজটি থেকে তিনি জানান, জলদস্যুরা তাদের জাহাজে আক্রমণ করছে। এর ১৫ মিনিট পরই তিনি একটি ই-মেইল বার্তায় জানান, জলদস্যুরা জাহাজের দখল নিয়ে ফেলেছে। সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, নাবিকদের একটি কেবিনে আটকে রেখেছে জলদস্যুরা। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জাহাজের ইন্টারনেট সংযোগ। ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে নাবিকদের কাছে থাকা ডলার। ৪৫০ নটিক্যাল মাইল দূরের সোমালিয়া উপকূলের দিকে জাহাজটি নিয়ে যাচ্ছে তারা।

জলদস্যুরা জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর প্রধান কর্মকর্তা আতিক উল্লাহ খান চট্টগ্রামে মালিকপক্ষের কাছে একটি অডিওবার্তায় বলেন, আমাদের দিকে দ্রুতগতির একটি বোট আসতে দেখে আমরা আল্যার্ম দিই। সবাই ব্রিজে যাই। ক্যাপ্টেন স্যার আর জাহাজের দ্বিতীয় কর্মকর্তা ব্রিজে ছিলেন তখন। আমরা এসওএস (জীবন বাঁচানোর জরুরি বার্তা) করলাম। ইউকে এমটিওতে (যুক্তরাজ্যের মেরিটাইম ট্রেড অপারেশন) যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। তারা ফোন রিসিভ করেনি। এরপর ওরা চলে এল।’ কবির গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান কেএসআরএমের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘সর্বশেষ মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নাবিকদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। সবাই নিরাপদে আছেন। এসআর শিপিং এর আগেও একবার এমন পরিস্থিতিতে পড়েছিল। ফলে আমরা এবারও পরিস্থিতি ভালোভাবে সামাল দিতে পারব আশা করছি।’

২০১০ সালের এই কবির গ্রুপের মালিকানাধীন জাহাজ ‘জাহান মণি’ আরব সাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল। তারা জাহাজের ২৫ নাবিকসহ মোট ২৬ জনকে প্রায় তিন মাস জিম্মি করে রাখে। ২৮ লাখ ডলার মুক্তিপণ দিয়ে নাবিকদের মুক্ত করে আনা হয়।

জাহাজে খাবার আছে ২৫ দিনের ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়া এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে ২৫ দিনের মতো খাবার রয়েছে। এ ছাড়া জাহাজটিতে বিশুদ্ধ পানি রয়েছে ২০০ টন। জাহাজের প্রধান কর্মকর্তা মো. আতিকউল্লাহ খান এক অডিওবার্তায় জাহাজটির মালিকপক্ষ কবির গ্রুপের কর্মকর্তাদের কাছে এ তথ্য জানিয়েছেন।

অডিওবার্তায় তিনি বলেন, ‘আমাদের জাহাজে ২০-২৫ দিনের রসদ (খাবার) আছে। ২০০ টন বিশুদ্ধ পানি আছে। আর জাহাজে রয়েছে ৫৫ হাজার টন কয়লা।’ রসদ যাতে দ্রুত ফুরিয়ে না যায়, সে জন্য অপ্রয়োজনে ব্যবহার না করার জন্য সবাইকে জানানো হয়েছে।’

যুক্তরাজ্যের মেরিটাইম ট্রেড অপারেশন (ইউকে এমটিও) তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসু থেকে ৬০০ নটিক্যাল মাইল পূর্বে এ ঘটনা ঘটেছে। দুটি নৌযানে (একটি বড় এবং আরেকটি ছোট) চড়ে জাহাজটির কাছাকাছি এসে জলদস্যুরা জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। ইউকে এমটিও সমুদ্র চলাচলকারী অন্য জাহাজগুলোতে সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরা করতে বলেছে।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘জাহাজটি জলদস্যুদের কবলে পড়ার পর এখন রেশনিং করে চলতে হবে। ২০০ টন পানি দিয়ে সাধারণত এক মাস চলা যায়। রেশনিং করলে আরও বেশি দিন যাবে। একইভাবে ২৫ দিনের খাবার রেশনিং করে আরও কিছুদিন চালিয়ে নেওয়া যাবে। তবে জ্বালানি নিয়ে খুব সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘দ্রুত জাহাজ ও নাবিকদের ছাড়িয়ে আনা গেলে খাবার-জ্বালানি নিয়ে সমস্যা হবে না। আবার জলদস্যুরা উপকূলের কাছাকাছি নেওয়ার পর প্রয়োজনে খাবার-পানির ব্যবস্থা করে।’

জাহাজে বন্দি ২৩ নাবিকের পরিচয় জলদস্যুদের হাতে জিম্মি এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের মাস্টার হিসেবে আছেনÑ চট্টগ্রামের রাশেদ মোহাম্মদ আব্দুর, চিফ অফিসার চট্টগ্রামের খান মোহাম্মদ আতিক উল্লাহ, সেকেন্ড অফিসার চট্টগ্রামের চৌধুরী মাজহারুল ইসলাম, থার্ড অফিসার ফরিদপুরের ইসলাম মো. তারেকুল এবং ডেক ক্যাডেট টাঙ্গাইলের হোসাইন মো. সাব্বির।

এ ছাড়া চিফ ইঞ্জিনিয়ার নওগাঁর শাহিদুজ্জামান এ এস এম, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার খুলনার ইসলাম মো. তৌফিকুল, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার নেত্রকোনার উদ্দিন মো. রোকন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার চট্টগ্রামের আহমেদ তানভীর, ইঞ্জিন ক্যাডেট লক্ষ্মীপুরের খান আইয়ুব, ইলেকট্রিশিয়ান উল্লাহ ইব্রাহিম খলিল, এবিল সি-ম্যান (নাবিক) নোয়াখালীর হক মোহাম্মদ আনোয়ারুল, চট্টগ্রামের রহমান মো. আসিফুর, চট্টগ্রামের হোসাইন মো. সাজ্জাদ, অর্ডিনারি সি-ম্যান (সাধারণ নাবিক) নাটোরের মোহাম্মদ জয়, সিরাজগঞ্জের হক মো. নাজমুল, ওয়লার চট্টগ্রামের হক আইনুল, চট্টগ্রামের শামসুদ্দিন মোহাম্মদ, বরিশালের হোসাইন মো. আলী, ফায়ারম্যান চট্টগ্রামের শাকিল মোশাররফ হোসেন, চিফ কুক চট্টগ্রামের ইসলাম মো. শফিকুল, জেনারেল স্টুয়ার্ড চট্টগ্রামের মোহাম্মদ নূর উদ্দিন ও ফাইটার হিসেবে আছেনÑ নোয়াখালীর আহমেদ মোহাম্মদ সালেহ।

টাকা না পেলে একজন করে মেরে ফেলার হুমকি

জিম্মি হওয়া জাহাজের নাবিকরা তাদের স্বজনদের ফোন করে জানিয়েছেন, তাদের এখন নেওয়া হচ্ছে সোমালিয়াতে। মুক্তিপণ আদায়ে চাপ দিচ্ছে জলদস্যুরা। টাকা না পেলে মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়েছে।
জাহাজের চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খান তার স্ত্রীর কাছে পাঠানো অডিওবার্তায় বলেন, ‘এই মেসেজটা সবাইকে পাস করে দিও। আমাদের থেকে মোবাইল নিয়ে নিচ্ছে আর কি। ফাইনাল কথা হচ্ছে যে, এখানে যদি টাকা না দেয়, আমাদের একজন একজন করে মেরে ফেলতে বলছে। তাদের যত তাড়াতাড়ি টাকা দিবে, তত তাড়াতাড়ি ছাড়বে বলছে। এই মেসেজটা সবাইকে পাস করে দিও। এখন মোবাইল নিয়ে নিচ্ছে।’

জাহাজের চিফ ইঞ্জিনিয়ার সাইদুজ্জামান জাহাজের মালিকপক্ষের কাছে পাঠানো অডিওতে বলেন, ‘স্যার আমাদের মোবাইল টোবাইল সব সিজ করে নিচ্ছে। এটাই শেষ সুযোগ। আমাদের জাহাজের যে ইন্টারনেট সার্ভিস আছে, ওটা যদি ওপেন রাখেন আর কি, ওখানে যে কোনো সিচুয়েশনে মেসেজ রাখার চেষ্টা করব।’

জাহাজটির ক্রু নুরুদ্দিনের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার হাজবেন্ড, র‌্যাংক জিএস, নুরুদ্দিন মঙ্গলবার দুপুর দেড়টা বাজে কল দিয়ে বলে যে, আমাদের জলদস্যু অ্যাটাক করছে। আমরা সঙ্গে সঙ্গে অফিসে জানাই। মাঝখানে আছরের সময় একবার উনার সঙ্গে কথা হয়েছে। লাস্ট কথা হয়েছে একবার ৬টা ৪৯-এ ইফতারের পর।

তিনি বলেন, ‘আমাকে ভিডিও কল দিয়ে অনেক কান্নাকাটি করেছে। বলেছে, আমাদের অবস্থা অনেক খারাপ। আমাদের সোমালিয়াতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমার বাচ্চাকে দেখতে চায়। আমি ভিডিওতে দেখাই। এরপর দুটি অডিও পাঠায়। বলে যে, আমাদের সোমালিয়াতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এখন সব আল্লাহর হাতে। মুক্তিপণ যদি না দেয়, আমাদের একজন একজন করে মেরে ফেলবে।’

বীমাকারী সংস্থাটি জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে আটকা পড়া এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি কীভাবে উদ্ধার করা যায়, সে বিষয়ে চলছে নানা পরিকল্পনা। তবে এখনো কোনো সুরাহা মেলেনি বলে জানা গেছে।

কবির গ্রুপের মিডিয়া অফিসার মিজানুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘জলদস্যুরা যোগাযোগ না করা পর্যন্ত নাবিক বা জাহাজ উদ্ধারের জন্য আলোচনা শুরু করার সুযোগ নেই। জাহাজ ছিনতাই করার পর জলদস্যুরা সাধারণত কোনো যোগাযোগ করার আগে বা মুক্তিপণ দাবি করার আগে নিরাপদ এলাকায় পৌঁছানোর চেষ্টা করে।’

তিনি জানান, জাহাজটির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে দস্যুরা। তারা সোমালিয়া উপকূলের দিকে যাচ্ছে। উপকূলে পৌঁছতে আরও একদিন সময় লাগবে হয়ত। যুক্তরাজ্যভিত্তিক জাহাজের বীমাকারী সংস্থাটি জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা শুরু করেছে।

জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি বাংলাদেশ এদিকে বুধবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে এক ব্রিফিংয়ে সোমালিয়ার জলদস্যুদের সঙ্গে এখনো আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ স্থাপন করা যায়নি বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

তিনি বলেছেন, ‘দ্বিতীয় পক্ষের মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়েছে। তবে নাবিকদের ছাড়াতে মুক্তিপণ দেওয়া হবে কিনা কৌশলগত কারণে এখনই তা প্রকাশ করা হবে না। জাহাজ আটকের বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রিপরিষদে অনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার।’

চলছে পররাষ্ট্র পর্যায়ে আলোচনা অন্যদিকে বুধবার সকালে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশি জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’ এখনো অপহরণকারীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। জাহাজে থাকা নাবিকদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। জাহাজটি উদ্ধার করতে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহযোগিতা চেয়েছি। তাদের দ্রুত সুস্থতার সঙ্গে ফিরিয়ে আনতে পররাষ্ট্র পর্যায়ে আলোচনা চলছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে খালিদ মাহমুদ বলেন, ‘জাহাজটি সোমালিয়া থেকে ছয়শ’ নটিক্যাল মাইল দূরে। ফলে অপহরণকারীদের পরিচয়ের বিষয়ে আমরা এখনো নিশ্চিত নই। তারা কোন দেশের নাগরিক, সেটি সম্পর্কেও আমরা এখনো কোনো তথ্য পাইনি। বিষয়টি ভারত মহাসাগরে ঘটেছে। আমরা ভারতের সহযোগিতাও চেয়েছি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রেখে কাজ করছি। তবে এখনো অপহরণকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি।’

ছেলেকে ফিরে পেতে জোছনা বেগমের আকুতি ‘আম্মু, ওরা মোবাইল নিয়ে নিচ্ছে। এখনো ইফতার করিনি। তারা খাবার দিলে ইফতার করব। কবির গ্রুপের চাচার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। যেভাবেই হোক, আমাদের ছাড়ানোর ব্যবস্থা করেন, আম্মু’- জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজের চতুর্থ প্রকৌশলী চট্টগ্রামের তানভীর আহমেদ মঙ্গলবার রাত ৮টায় সর্বশেষ মুঠোফোনে তার মা জোছনা বেগমকে এই আকুতি জানান। বুধবার পর্যন্ত ছেলের সঙ্গে তার আর কোনো যোগাযোগ হয়নি।

জোছনা বেগম বুধবার সকালে ছুটে আসেন চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে কবির গ্রুপের কার্যালয়ে। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘মোবাইল কেড়ে নেওয়ার আগে ছেলের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা হয়। জাহাজটি সোমালিয়ার দিকে নিয়ে যাচ্ছে দস্যুরা। তবে তারা কারও গায়ে হাত তোলেনি। জাহাজে পানির পরিমাণ কম। নাবিকদের জন্য দোয়া করতে বলেছে।’ তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমরা টাকা-পয়সা, চাকরি কিচ্ছু চাই না। সরকারের কাছে আবেদন, যেন সবাইকে সুস্থভাবে ফেরত দেওয়া হয়। আমরা তাদের সুস্থভাবে ফেরত চাই।’

জিম্মি জাহাজের নাবিক শফিকুল ইসলামের স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। ভাইয়ের খোঁজ নিতে ছুটে আসেন বড় ভাই দিদারুল আলম। তিনি বলেন, ‘শফিকুল ইসলামের স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। মঙ্গলবার মুঠোফোনে কথা হলে শুধু টেনশন না করতে বলেছেন।’ নাবিক আইনুল হকের মা লুৎফে আরা বেগম এক সন্তানকে নিয়ে বুধবার সকালে কবির গ্রুপের কার্যালয়ে আসেন। আইনুল হকের মায়ের আকুতি, ‘যেভাবেই হোক আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিন।’

নূরউদ্দিনের মায়ের আহাজারি কর্ণফুলী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়া জাহাজের ২৩ নাবিক ও ক্রুদের মধ্যে একজন চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার নুরউদ্দিন এবং তিনজন আনোয়ারার বৈরাগ ইউনিয়নের বন্দর সেন্টার এলাকার। তারা হলেনÑ বৈরাগ বন্দরের মৃত আইয়ুব আলীর ছেলে শামসুদ্দিন শিমুল (৩১), উত্তর বন্দর এলাকার মো গাজু মিয়ার ছেলে সাজ্জাদ হোসেন (২৭) ও বদলপুরা এলাকার আক্তার হোসেনর ছেলে আসিফুর রহমান (২৪)।

বুধবার দুপুরে নুরউদ্দিনের শাহ মিরপুর এলাকার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার মা ইসলাম খাতুন কিংকর্তব্যবিমুঢ হয়ে আছেন। তার চার বছরের ছেলেটা দাদির কোলে শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকাচ্ছিল। বাড়িতে স্বজনদের দুশ্চিন্তা। নুরুদ্দিনের মা ইসলাম খাতুন আহাজারি করে বলেন, ‘আঁর পুতুরে আঁর বুকুত আনি দ, কোম্পানি টেঁয়া নদিলি ডাহাইতে আঁর পুতুরে মারি ফেলাইবু (আমার ছেলেকে আমার বুকে ফিরিয়ে দিন, জাহাজের কোম্পানি টাকা না দিলে জলদস্যুরা আমার ছেলেমে মেরে ফেলবে)।’

নুরউদ্দিনের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার লিচুতলার বাড়িতে আড়াই বছরের সন্তানকে রেখে স্বামীর খোঁজ নিতে আসেন কবির গ্রুপের কার্যালয়ে। তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কথা হয় নুরউদ্দিনের সঙ্গে। তখন জানিয়েছিলেন তাদের জাহাজ সোমালিয়ার উপকূলের দিকে নিয়ে যাচ্ছে দস্যুরা। জাহাজে তখন ৫০ জনের মতো জলদস্যু ছিল। সবার হাতে ছিল অস্ত্রশস্ত্র। পরে একটি অডিওবার্তা পাঠায় তার মুঠোফোনে। নুরউদ্দিনের অডিওবার্তায় শোনা যায়, ‘ফাইনাল কথা, এখানে টাকা না দিলে একজন একজন করে মেরে ফেলবে বলছে।’

রাজুর বাড়িতে কান্নার রোল

জলদস্যুদের জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিক আনোয়ারুল হক রাজুর (২৯) নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বাড়িতে চলছে কান্নার রোল। পরিবারে বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। তাকেসহ জিম্মি সবাইকে মুক্তির দাবি জানিয়েছেন স্বজনরা।

বুধবার দুপুরে রামপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আজিজুল হক মাস্টার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, জিম্মি নাবিক রাজুর বাবা-মা, ভাই-বোন সবাই কান্নাকাটি করছেন। আনোয়ারুল হক রাজু রামপুর গ্রামের আজিজুল হক মাস্টারের ছেলে। এক বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার ছোট। ২০১৬ সালে চট্টগ্রামের ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউট (এনএমআই) থেকে সিডিসি কোর্চ শেষে নাবিক হিসেবে জাহাজে যোগদান করেন।
নাবিক রাজুর বড় ভাই জিয়াউল হক রনি (৩২) বলেন, ‘গত নভেম্বরের শেষ দিকে রাজু সিঙ্গাপুর থেকে জাহাজে ওঠে। সোমবার সে আমার মোবাইলে মেসেজ করে, ‘সোমালিয়ান পাইরেটস অনবোর্ড। বাঁচি থাকলে দেখা হবে, দোয়া কইরেন…’। এরপর রাত ১০টায় ভয়েজ মেসেজে জানায়, ‘আমাদের সোমালিয়ার দিকে নিয়ে যাচ্ছে, দোয়া করবেন’।” বাবা আজিজুল হক মাস্টার বলেন, ‘অপহরণের খবর শোনার পর থেকে আমাদের পরিবারে হতাশা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। তার মা ক্ষণে ক্ষণে ছেলের জন্য মূর্ছা যাচ্ছে। আমার ছেলেসহ জিম্মি সবাইকে উদ্ধার করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সহযোগিতা কামনা করছি।’

নাবিক রাজুর মা দৌলত আরা বেগম (৬০) কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমার ভাঙা ঘর ছিল। এখন বিল্ডিং দিচ্ছি। কাজ শেষ হলে দুই ছেলেকে একসঙ্গে বিয়ে করাবো। অনেক আশা নিয়ে আছি। কিন্তু আমার ছেলেসহ ২৩ মায়ের ছেলে জলদস্যুদের হাতে জিম্মি। আমি আমার ছেলেসহ সবার মুক্তি চাই। সরকারের উচ্চমহলের সহযোগিতা চাই।’

টাঙ্গাইলে সাব্বিরের বাড়িতে বিষাদের ছায়া স্টাফ রিপোর্টার, টাঙ্গাইল জানান, জেলার নাগরপুর উপজেলার সহবতপুর ইউনিয়নের ডাঙা ধলাপাড়া গ্রামে নাবিক সাব্বিরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, হাউমাউ করে কাঁদছেন তার বাবা হারুন অর রশিদ। বুক চাপড়ে কান্না আর বিলাপ করছেন মা সালেহা বেগম। জলদস্যুদের কবলে পড়া জাহাজের ২৩ নাবিকের সঙ্গে একমাত্র ছেলে সাব্বিরের জিম্মি হওয়ার খবর শুনে বাবা-মায়ের এ অবস্থা।

তার একমাত্র বোন মিতু আক্তার জানান, সোমবার বিকালে সে ফেসবুকে আপলোড দিয়েছে- ‘বিষুব রেখা অতিক্রম করলাম’। মাথা ন্যাড়া করে ছবি আপলোড করেছে। এক মাস আগে সে বাড়ি এসেছিল। এক দিন বাড়িতে থেকে আবার কর্মস্থলে চলে গেছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। মঙ্গলবার দুপুরে এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজটি জলদস্যুদের কবলে পড়ার খবর পেয়ে সবাই আতঙ্কে সময় কাটাচ্ছেন। তাদের বাবা-মা খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন- তারা কথা বলার অবস্থায় নেই। তারা শুধু কেঁদেই চলেছেন আর বলছেন- ‘আমার ছেলেকে এনে দাও’। তার একমাত্র ভাইয়ের খারাপ কিছু হলে বাবা-মাকে বাঁচানো যাবে না। তিনি অতি দ্রুত তার ভাইসহ সবাইকে জিম্মিদশা থেকে মুক্ত করে আনার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান। এদিকে সাব্বিরের জিম্মি হওয়ার খবর শুনে তার স্বজনরাও উদ্বিগ্ন। গ্রামের লোকজন বাড়িতে এসে ভিড় করছেন। আত্মীয়স্বজনরা বাড়িতে এসে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। তাদের একটাই দাবি, সরকার যেন সাব্বিরসহ সব জিম্মিদের দ্রুত মুক্ত করে আনে।

নাবিক জয়ের পরিবারে দুশ্চিন্তা

বাগাতিপাড়া (নাটোর) প্রতিনিধি জানান, জিম্মি জাহাজের ২৩ নাবিক ও ক্রুদের মধ্যে রয়েছেন নাটোরের বাগাতিপাড়ার জয় মাহমুদ। জলদস্যুদের হাতে আটকা পড়ার খবরে দুশ্চিন্তা ভর করেছে তার পরিবার ও আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে। জয় উপজেলার পাকা ইউনিয়নের সালাইনগর এলাকার জিয়াউর রহমানের ছেলে। সে ওই জাহাজের অর্ডিনারি সি-ম্যান (সাধারণ নাবিক) হিসেবে কর্মরত আছেন।

জয় মাহমুদের বাবা জিয়াউর রহমান জানান, বাড়ির বাইরে থাকায় ফোনে প্রথম ছেলের আটকের বিষয়ে জানতে পারেন। পরে বাসায় আসলে বিষয়টি নিশ্চিত হন। হঠাৎ ছেলের জলদস্যুদের হাতে আটকের খবরে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন বলে জানান তিনি। সেই সঙ্গে তিনি জয় মাহমুদসহ আটক বাংলাদেশি নাবিকদের দ্রুত উদ্ধার করে দেশে ফেরত আনারও দাবি জানান।
কান্না থামছে না আলী হোসেনের নববিবাহিত স্ত্রীর নবপরিণীতা স্ত্রীকে রেখে আড়াই মাস আগে বাংলাদেশি পণ্যবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ’র নাবিক হিসেবে যোগ দেন বরিশালের বানারীপাড়ার মেরিন ইঞ্জিনিয়ার আলী হোসেন (২৬)। জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়া জাহাজের ২৩ নাবিককের মধ্যে রয়েছেন তিনি।

আলী হোসেন বানারীপাড়ার বিশারকান্দি ইউনিয়নের উমারেরপাড় গ্রামের এমাম হোসেনের ছেলে। মঙ্গলবার দুপুরে জলদস্যুরা তাদের জিম্মি করার পর বিকাল ৩টার দিকে মুঠোফোনে স্ত্রীকে ফোনে জানান, সোমালিয়ান জলদস্যুরা তাদের জাহাজে হামলা করে সবাইকে জিম্মি করেছে। মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়ায় হয়তো মুক্তি পাওয়ার আগে আর যোগাযোগ হবে না। তাদের জন্য যেন বাবা-মাসহ পরিবারের সবাই দোয়া করেন। এরপর থেকে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এরপর থেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। অঝোরে কাঁদছেন তার সদ্যবিবাহিত স্ত্রী ইয়ামনি। আহাজারি করে বলছেন, ‘কোরবানির ঈদে বাড়িতে ফেরার কথা ছিল আলীর। পরিকল্পনা ছিল দুইজন মিলে ঈদের ছুটিতে কোথাও ঘুরতে যাবেন।’

এদিকে ছেলের জিম্মি হওয়ার খবর পাওয়ার পর থেকেই শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছেন আলী হোসেনের মা নাসিমা বেগম। তিনিও অঝোরে কাঁদছেন। ছেলেকে ফিরে পেতে পড়ছেন দোয়া-দরুদ। ছেলেসহ জিম্মি সবাইকে স্বজনের কাছে ফিরিয়ে দিতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন তিনি।

জিম্মি নাবিক আলী হোসেনের বাবা স্থানীয় ইউবিসি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক দপ্তরি এমাম হোসেন জানান, কোরবানির ঈদে বড় ভাই জুলফিকারের সঙ্গে বাড়িতে এসে একসঙ্গে কোরবানি দেওয়ার কথা বলেছিল আলী হোসেন।

স্বামীহারা হোমায়রা বেগমের আর্তনাদ প্রায় এক মাস আগে স্বামী আজহার মিয়া মারা যান। এখনো স্বামী হারানোর শোক কাটিয়ে উঠতে পারেননি লক্ষ্মীপুরের হোমায়রা বেগম। এর মধ্যেই ছোট ছেলে সাগরে ডাকাতদের কবলে পড়েছে। এই শোকে ভেঙে পড়েছেন তিনি। ইঞ্জিনিয়ার ক্যাডেট আইয়ুবের মা কিছুক্ষণ পরপরই ছেলেকে বুকে ফিরে পেতে আর্তনাদ করছেন। কারো সান্ত্বনায় তার কান্না থামছে না।

বুধবার দুপুরে লক্ষ্মীপুরের রায়পুরের রাখালিয়া গ্রামের বাড়িতে গিয়ে আইয়ুবের মাকে ছেলের জন্য আর্তনাদ করতে দেখা যায়। ইঞ্জিনিয়ার ক্যাডেট আইয়ুব খান রায়পুর উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের রাখালিয়া গ্রামের বিরন বেপারী বাড়ির মৃত আজহার মিয়ার ছোট ছেলে। হোমায়রা বেগম জানান, সোমবার বিকালে আইয়ুব তার সঙ্গে শেষবার কথা বলেছেন। মঙ্গলবার তার অন্য ছেলেদের সঙ্গেও কথা হয়েছে। কেউ তাকে কিছু জানায়নি। গত রাতে তিনি নাতির কাছ থেকে শুনে মেজো ছেলেকে ফোন করে বিষয়টি জানতে চান। ছেলে তাকে জানিয়েছে, আইয়ুবের জন্য চিন্তা না করতে। ভারত মহাসাগরে আইয়ুবদের জাহাজ সোমালিয়ান জলদস্যুরা অস্ত্র ঠেকিয়ে কব্জা করেছে।

এসব শোনার পর থেকেই আর স্বাভাবিক অবস্থায় নেই তিনি। আইয়ুবের কোনো খবরও পাওয়া যাচ্ছে না। তার ছেলে কেমন আছে, এসব বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে হোমায়রা বেগম বলেন, ‘আমি

আমার বাবারে চাই। আমি আর কী চাইতাম। আমি দু’দিন ধরে কোরআন শরিফ জান-প্রাণ দিয়ে পড়ছি। আল্লাহ আপনি রহমত নাজিল করে দেন।’
উৎকণ্ঠায় তারেকুলের পরিবার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলামের গ্রামের বাড়িতে চলছে আহাজারি। বুধবার দুপুরে তার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের মধুখালীর রায়পুর ইউনিয়নের ছকড়িকান্দি গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তারেকুলের বাবা মো. দেলোয়ার হোসেনের নিবিষ্টচিত্তে কোরআন তেলাওয়াত করছেন।

সাংবাদিকদের দেখে সন্তানকে ফিরে পাওয়ার জন্য সবার সহায়তা চান। সরকারের প্রতি আর্তি জানান, ওই জাহাজের সবাইকে জীবিত উদ্ধারের।

তারেকুলের মা হাসিনা বেগমের কান্নার শব্দে পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। ছেলের ছবি দেখে অনবরত কান্না করছেন আর তাকে ফিরিয়ে আনতে সরকারের কাছে বার্তা পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ করছেন।

তিনি বলেন, ‘সাত বছর বয়স থেকে কখনো নামাজ-রোজা বাদ দেয়নি আমার ছেলে। এমন একটি সোনার ছেলে কেমনে এমন দুর্দশায় পড়ল!’

তারেকুলের আত্মীয়-স্বজনসহ প্রতিবেশীরা তাকে ফিরে পেতে সরকারের কাছে আকুতি জানান।

বাংলাদেশ সময়: ৯:৩৩:২৪ ● ৯২ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ