
বঙ্গ নিউজ ডেস্ক:দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) অনির্দিষ্টকালের জন্য শাটডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর গণঅনশন করবেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গতকাল জবি ঐক্যের পক্ষ থেকে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রইছউদ্দীন এ ঘোষণা দেন।
৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসন বৃত্তি, পূর্ণাঙ্গ বাজেট, দ্বিতীয় ক্যাম্পাস বাস্তবায়ন এবং শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার তদন্ত ও বিচার দাবিতে আন্দোলন করছেন জবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
অধ্যাপক রইছউদ্দীন বলেন, ‘আমরা অধিকার জানাতে এসেছি। আমাদের ওপর নির্বিচারে হামলা চালিয়েছে পুলিশ । এটি অরাজকতা ও অন্যায়। দাবি আদায় না করে আমরা ঘরে ফিরব না।’ ১৪ মে কালো দিবস পালনের ঘোষণা দেন তিনি।
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনি (তথ্য উপদেষ্টা) ছাত্রদের কাতারের একজন। আমরা আশা করেছিলাম, আপনি আমাদের বুঝবেন ও সহযোগিতা করবেন। জুলাই বিপ্লব সফল না হলে আপনি উপদেষ্টা হতে পারতেন না। এখন আপনার আচরণ ফ্যাসিবাদীর মতো।’
গতকাল সকাল থেকে কাকরাইল মোড়ে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। অন্তত ৩০টি বাসে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যোগ দেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আন্দোলনের কারণে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে শিক্ষার্থীরা অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি যান চলাচলের ব্যবস্থা করে দেন।
আন্দোলনের মধ্যে দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার। তবে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি। পরে বিকেলে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ। এ বৈঠকের বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদী বলেন, আমাদের পিতৃতুল্য শিক্ষকরা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার (মাহফুজ আলমের ওপর বোতল ছুড়ে মারা) জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। পেটোয়া বাহিনী যে হামলা করল, সেজন্য কী সরকার কোনো দুঃখ প্রকাশ করেছে? বুধবার শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে কথা বলার সময় তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টার ওপর বোতল ছুড়ে মারেন এক শিক্ষার্থী। জবির অর্থনীতি বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ইশতিয়াক হুসাইন জানিয়েছেন, তিনি উপদেষ্টাকে উদ্দেশ করে বোতল ছুড়ে মারেননি। গতকাল ক্ষমা চেয়ে তিনি বলেন, বুধবারের ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বোতল ছুড়ে মারিনি। বোতলটি আকাশের দিকে নিক্ষেপ করি। কাউকে আহত বা অপমান করার জন্য নয়। আমি রাজনীতি করি না। ছাত্রদল, শিবির, ছাত্রলীগ কিছুই না। এদিকে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আলম বলেন, ইশতিয়াককে ধরতে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট অভিযান চালাচ্ছে।
সড়ক বন্ধে ভোগান্তি
টানা দু’দিন কাকরাইল মসজিদ মোড় অবরোধের কারণে কাকরাইল-শাহবাগ রোডে গাড়ি চলাচল বন্ধ ছিল। এতে আশপাশের রাস্তায় যানজট দেখা দেয়। গতকাল মৎস্য ভবন, কাকরাইল মোড় ও মিন্টো রোড থেকে বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ।
গৃহিণী জেসমিন আরা বলেন, ‘প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে কাকরাইল মোড়ে বাসে বসে আছি। চাকা ঘুরছে না। ঢাকা মেডিকেলে যাওয়া প্রয়োজন। আমার ভাই ভর্তি।’ শিক্ষার্থী জান্নাতুন নাইম বলেন, ‘বান্ধবী সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি। দুই ঘণ্টার ওপর বসে আছি। আর না পেরে হেঁটে যাচ্ছি।’
গত বুধবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে জবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের লংমার্চে পুলিশ লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করলে অন্য অনেকের সঙ্গে আহত হন দুই সাংবাদিক। তারা হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন।
জবি সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা পোস্টের প্রতিনিধি মাহতাব হোসেন লিমন ফুসফুসে ইনফেকশন নিয়ে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে তাঁকে গতকাল এখানে আনা হয়েছে।
পুলিশের লাঠির আঘাতে আহত হয়েছেন জবি প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও ঢাকা ট্রিবিউনের প্রতিনিধি সুবর্ণ আসসাইফ। এক্স-রেতে তাঁর কাঁধের কলার বোন ভেঙে গেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন।
ভুল হলে শিক্ষা নিয়ে এগোতে চাই : তথ্য উপদেষ্টা
গতকাল রাতে নিজের ফেসবুক পেজে এক পোস্টে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম লিখেছেন, ভুল হলে তা থেকে শিক্ষাগ্রহণ করে আমরা এগোতে চাই। জবি থেকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে দু’জন শিক্ষার্থী ভাই শহীদ হয়েছেন; অনেক ভাইবোন আহত হয়েছেন। জবির ভাইবোনদের বলব, আপনাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্যই আমি গিয়েছিলাম। জুলাই আমাদের মধ্যে ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ের আত্মিক বন্ধন তৈরি করেছে। আশা করি, এ বন্ধন কোনো একক ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য ছিন্ন হবে না। আপনাদের যে কোনো প্রয়োজনে, ঝুঁকিপূর্ণ হলেও আপনারা আমাকে সঙ্গে পাবেন।
বোতল ছুড়ে মারা প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে তিনি লেখেন, গত এক সপ্তাহব্যাপী সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি দলের নিয়মিত আক্রমণ ও হত্যার হুমকির কারণে ন্যায্যভাবেই অনুমান করেছিলাম এটা হুমকিদাতা দলের কাজ হতে পারে। আমার হতাশা ও ক্ষুব্ধতা কাউকে আঘাত করলে আমি আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি।