গরু ও মাদক চোরাচালান সিন্ডিকেটের প্রধান গ্রেপ্তার

Home Page » সারাদেশ » গরু ও মাদক চোরাচালান সিন্ডিকেটের প্রধান গ্রেপ্তার
বৃহস্পতিবার ● ৫ জুন ২০২৫


গরু ও মাদক চোরাচালান সিন্ডিকেটের প্রধান গ্রেপ্তার

বঙ্গ নিউজ ডেস্ক: মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে গরু ও মাদক চোরাচালানে জড়িত চক্রের প্রধান এবং রামুর গর্জনিয়ার যুবলীগ নেতা শাহীনুর রহমান ওরফে শাহীনকে (৩২) কে গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী। আজ বৃহস্পতিবার সকালে গর্জনিয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপির সদস্য ও তাঁর শ্বশুর শাকের আহমদের বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ি থানার পুলিশ ও বিজিবি সূত্রে জানা যায়, গত এক দশকের বেশি সময় ধরে মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে গরু ও মাদক চোরাচালান সিন্ডিকেট চালাচ্ছিলেন শাহীন। র‌্যাব-পুলিশ একাধিকবার অভিযান চালিয়েও তাঁকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তবে সেনাবাহিনীর অভিযানে তিনি এবার ধরা পড়েছেন।
সেনাবাহিনী জানায়, শাহীনের বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি, অস্ত্র, মাদকসহ ২০টি মামলা রয়েছে। তাঁর নামে গঠিত ‘শাহীন বাহিনী’র প্রায় ৪০–৪৫ জন সদস্য রয়েছে, যাদের কাছে রয়েছে ভারী অস্ত্র, মাদক ও বিপুল পরিমাণ টাকা।

বৃহস্পতিবার বিকেলে সেনাবাহিনীর রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের লেফটেন্যান্ট কর্নেল মনোয়ার হোসেন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে সেনাবাহিনীর চারটি দল বুধবার রাত থেকে অভিযান চালায়। বৃহস্পতিবার সকালে শ্বশুরের বাড়ি থেকে শাহীনকে গ্রেপ্তারের পর তাঁর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে একটি একে ২২, তিনটি একনলা বন্দুক, ২০ হাজার ইয়াবা, ১০টি ধারালো অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়। এ সময় আরও দুজন সহযোগীকেও গ্রেপ্তার করা হয়।

‘ত্রাসের রাজত্ব’ ও সিন্ডিকেটের উত্থান

স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, ২০১০ সালের দিকে ঈদগড়ের কালু ও কলিম ডাকাতের মাধ্যমে অপরাধজগতে প্রবেশ করেন শাহীন। পরে নিজেই ‘শাহীন বাহিনী’ গড়ে তোলেন। এই বাহিনী রাবারবাগান দখল, চাঁদাবাজি, অপহরণ, খুন ও মাদক চোরাচালানে জড়ায়।

স্থানীয় কয়েকজন জনপ্রতিনিধি জানান, ২০১৪ সালের পর সীমান্তে চোরাচালানের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ চলে যায় শাহীনের হাতে। তখন প্রতি মাসে মিয়ানমার থেকে এক লাখের বেশি গরু-মহিষ আসত। একই সঙ্গে ইয়াবা ও আইসের চালানও খালাস হতো তাঁর বাহিনীর মাধ্যমে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ ও হুইপ সাইমুম সরওয়ার কমলের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠার পর যুবলীগের রাজনীতিতে যোগ দেন শাহীন। অভিযোগ রয়েছে, ওই সময়েই তাঁর সিন্ডিকেট শক্তিশালী হয়। ২০২২ সালের পর রাখাইনে সংঘাত শুরু হলে সীমান্তে তাঁর প্রভাব আরও বাড়ে।

২০২৩ সালের জানুয়ারিতে র‌্যাব শাহীনকে গ্রেপ্তার করলেও জামিনে বেরিয়ে আবার সক্রিয় হন তিনি।
স্থানীয় মানুষেরা জানান, চোরাচালান রোধে প্রতিবাদ করায় গত কয়েক বছরে অন্তত ১২টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ২০২৪ সালের ১৬ মার্চ গুলিতে নিহত হন থিমছড়ির আবু তালেব, ২২ এপ্রিল নিহত হন জাফর আলম ও তাঁর ছেলে সেলিম, ৮ মে খুন হন আবুল কাশেম। তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করায় ইউপি সদস্য মনিরুলের পা ভেঙে দেয় বাহিনীর সদস্যরা। প্রতিবন্ধী নুরুল আবছারও গুলিবিদ্ধ হন।

২০২৪ সালের ৩ জুন মাদক চোরাচালানে বাধা দিতে গিয়ে বিজিবির সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হন শাহীন বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড নেজাম উদ্দিন।

নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসরুরুল হক বলেন, শাহীন দীর্ঘদিন ধরে সীমান্তে চোরাচালান সিন্ডিকেট চালিয়ে আসছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে ২০টি মামলা রয়েছে।

রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তৈয়বুর রহমান বলেন, সেনা অভিযানের পর এলাকাজুড়ে স্বস্তি ফিরেছে। তাঁকে রিমান্ডে এনে পুরো সিন্ডিকেট চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে বিজিবির নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কফিল উদ্দিন এবং র‌্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কামরুল হাসান উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা বলেন, সীমান্তে চোরাচালান ও সন্ত্রাস দমনে যৌথ অভিযান চলমান থাকবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০:১১:১৯ ● ৬৯ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ