বিশ্ববাজারে চীনের সস্তা বৈদ্যুতিক গাড়ি

Home Page » বিজ্ঞান-প্রযুক্তি » বিশ্ববাজারে চীনের সস্তা বৈদ্যুতিক গাড়ি
বুধবার ● ১১ জুন ২০২৫


বিশ্ববাজারে চীনের সস্তা বৈদ্যুতিক গাড়ি

বঙ্গ নিউজ ডেস্ক: চীনের বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি) নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বিওয়াইডির অন্যতম জনপ্রিয় একটি মডেল ‘সিগাল’। ২০২৩ সাল থেকে চীনে এই গাড়ি বিক্রি হচ্ছে। সম্প্রতি ‘ডলফিন সার্ফ’ নাম দিয়ে এটি ইউরোপের বাজারে ছাড়া হয়েছে। ইউরোপীয়রা সিগাল পছন্দ করেন না বলেই অন্য নামে গাড়িটি সেখানকার বাজারে ছেড়েছে বিওয়াইডি। চলতি সপ্তাহে যুক্তরাজ্যে গাড়িটি বিক্রি শুরু হবে। সেখানে এটির দাম পড়বে প্রায় ১৮ হাজার পাউন্ড। বৈদ্যুতিক গাড়ি হিসেবে পশ্চিমা বাজারের জন্য এটি সত্যিই একটি সস্তা গাড়ি। খবর বিবিসির

বিওয়াইডি ইতিমধ্যে চীনের সবচেয়ে বড় গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। গত ২০২৪ সালে বিওয়াইডি বিশ্বের শীর্ষ অতিধনী যুক্তরাষ্ট্রের ইলন মাস্কের টেসলা ব্র্যান্ডকে ছাড়িয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বড় ইভি নির্মাতায় পরিণত হয়েছে। দুই বছর আগে থেকে ইউরোপীয় বাজারে প্রবেশের পর থেকে বিওয়াইডি বেশ দ্রুত তাদের বাজার সম্প্রসারণে সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে। যুক্তরাজ্যে বিওয়াইডির বিক্রয় ও বিপণন পরিচালক স্টিভ বিটি বলছেন, ‘আমরা ১০ বছরের মধ্যে ইউরোপের বাজারে এক নম্বর হতে চাই।’

কিছু বিশ্লেষকের মতে, বৈশ্বিক মোটরশিল্পের চেহারা বদলে দিতে পারে বিওয়াইডি। প্রতিষ্ঠানটির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ও ইইউ কঠোর শুল্কনীতি প্রণয়নে বাধ্য হয়েছে।

বার্মিংহাম বিজনেস স্কুলের ব্যবসা ও অর্থনীতির অধ্যাপক ডেভিড বেইলি বলছেন, চীনা ব্র্যান্ডগুলো ইউরোপীয় বাজারে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করছে। বেইলি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, চীনে ইতিমধ্যে বড় অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ায় এবং আধুনিক ব্যাটারি প্রযুক্তি ব্যবহার করার ফলে তাদের বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরির খরচ কম পড়ছে। এর ফলে ইউরোপীয় গাড়ি নির্মাতারা চীনা কোম্পানিগুলোর তুলনায় অনেক পিছিয়ে পড়ছে।

২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী ১ কোটি ৭০ লাখ ব্যাটারি ও প্লাগ-ইন হাইব্রিড গাড়ি বিক্রি হয়েছে, যার মধ্যে ১ কোটি ১০ লাখ বিক্রি হয়েছে শুধু চীনে। পরামর্শক সংস্থা রো মোশনের তথ্য অনুযায়ী, চীনা বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি) প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের বাইরে বৈশ্বিক ইভি ও প্লাগ-ইন হাইব্রিড গাড়ির বাজারে ১০ শতাংশ হিস্‌সা দখল করে নিয়েছে। এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে কিছু বিশেষজ্ঞ আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে চীনা গাড়িগুলো হ্যাকার ও তৃতীয় পক্ষের জন্য নিরাপত্তাঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এর পাশাপাশি ইউরোপের গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এটি একটি নতুন চ্যালেঞ্জও বটে।

বৈদ্যুতিক গাড়ি শিল্পে চীনের প্রতিযোগিতা
চীন ২০০১ সালে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) যোগ দেয়। এর পর থেকে দেশটির গাড়িশিল্প দ্রুত উন্নতি করতে শুরু করে। এই প্রক্রিয়া আরও ত্বরান্বিত হয় ২০১৫ সালে, যখন চীনের কমিউনিস্ট পার্টি ‘মেড ইন চায়না ২০২৫’ নামে একটি উদ্যোগ চালু করে। বৈদ্যুতিক বাহনসহ বেশ কয়েকটি প্রযুক্তি শিল্পে চীনকে শক্তিশালী করে তোলার জন্য তখন ১০ বছরের ওই পরিকল্পনাটি হাতে নেওয়া হয়েছিল।

বিওয়াইডি একসময় মূলত মুঠোফোনের ব্যাটারি তৈরি করত। তবে দেশটির রাষ্ট্রীয় অর্থায়নের ফলে বিওয়াইডির মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বৈদ্যুতিক গাড়ির নির্মাতাদের মধ্যে দ্রুত বড় হতে থাকে।

ইলেকট্রিক ভেহিকলস ইউকের প্রধান নির্বাহী ড্যান সিজার বলেন, চীনের তৈরি গাড়ির মান খুব ভালো। এ ছাড়া চীন অত্যন্ত দ্রুত গাড়ি তৈরির কৌশল রপ্ত করে ফেলছে।

কম শ্রম, কম খরচ, সরকারি ভর্তুকি ও সরবরাহ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় বিশ্ববাজারে চীন কোম্পানিগুলো ভালো করছে বলে দাবি তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের। ২০২৩ সালের শেষের দিকে সুইস ব্যাংক ইউবিএসের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিওয়াইডি একাই পশ্চিমা প্রতিযোগীদের চেয়ে ২৫ শতাংশ কম খরচে গাড়ি তৈরি করতে সক্ষম। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালায়েন্স ফর আমেরিকান ম্যানুফ্যাকচারিং বলেছিল, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের গাড়িশিল্প বিলুপ্তির পথে চলে যেতে পারে।

বাইডেন প্রশাসনও নাটকীয় পদক্ষেপ নিয়েছিল। তারা চীনের তৈরি বৈদ্যুতিক বাহনের ওপর আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছিল। তখন এর নিন্দা করেছিল বেইজিং। ২০২৪ সালের অক্টোবরে ইউরোপীয় ইউনিয়নও (ইইউ) চীনের তৈরি ইভির ওপর ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছিল।

নিরাপত্তা, স্পাইওয়্যার ও হ্যাকিংয়ের উদ্বেগ
বর্তমানে অধিকাংশ বৈদ্যুতিক যানবাহন কোনো না কোনোভাবে ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত। যেমন স্যাটেলাইট নেভিগেশনের জন্য গাড়িচালকদের ফোন প্রায় গাড়ির সিস্টেমের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। টেসলার ওভার-দ্য-এয়ার আপডেট একটি গাড়ির সফটওয়্যার যেকোনো স্থান থেকে আপগ্রেড করতে পারে। এর ফলে তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল যে গাড়িগুলো হ্যাক করা যেতে পারে। এমনকি কি–বোর্ডের এক স্পর্শেও এ গাড়িগুলোকে অচল করে দেওয়া সম্ভব।

এ বছরের শুরুতে একটি ব্রিটিশ সংবাদপত্র রিপোর্ট করেছিল যে সামরিক ও গোয়েন্দাপ্রধানদের বৈদ্যুতিক গাড়িতে চড়ার সময় সরকারি বিষয় নিয়ে আলোচনা না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

ডিফেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান দ্য রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের গবেষক জোসেফ জারনেকি বলেছেন, নিরাপত্তার সম্ভাব্য ঝুঁকি প্রশমিত করা যেতে পারে। চীনা গাড়ি নির্মাতারা অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে আছে। যদিও তারা চীনের আইন মেনে চলতে বাধ্য। এতে জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের প্রয়োজন হতে পারে। তবে কেউই নিরাপত্তাঝুঁকি হিসেবে বিবেচিত হয়ে তাদের আন্তর্জাতিক রপ্তানির ক্ষমতা নষ্ট করতে চায় না।

ইলেকট্রিক ভেহিকলস ইউকের প্রধান নির্বাহী ড্যান সিজার আরও বলেন, ‘জার্মানি বা অন্য কোথাও গাড়ি তৈরি হলেও এতে বেশ কিছু চীনা যন্ত্রাংশ থাকবে। বাস্তবতা হলো, আমাদের অধিকাংশেরই চীন, যুক্তরাষ্ট্র বা কোরিয়ায় তৈরি স্মার্টফোন ও অন্যান্য জিনিস রয়েছে। এ নিয়ে আমরা খুব একটা ভাবি না। তাই আমি মনে করি, চীন কী করতে সক্ষম তা নিয়ে কিছু ভীতিকর প্রচারণা চলছে। আমাদের এই বাস্তবতা মেনে নিতে হবে যে চীন ভবিষ্যতের একটি বড় অংশ।’

বাংলাদেশ সময়: ১১:৪৮:২৪ ● ৫৩ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ