সীমান্ত ভ্রমণের সাতটি দিন ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা ; পর্ব- ২: স্বপন চক্রবর্তী
Home Page » সাহিত্য » সীমান্ত ভ্রমণের সাতটি দিন ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা ; পর্ব- ২: স্বপন চক্রবর্তীবঙ্গ-নিউজ: ( গত নভেম্বর’২১ এর শেষ সপ্তাহে হাতীবান্ধা উপজেলার দইখাওয়া সীমান্তে বেড়াতে গিয়েছিলাম। তার উপর কিছু লিখার জন্য অনুরোধও ছিল। তাই বসে বসে সময় ক্ষেপন করেছি মাত্র। জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা হেতু সন্নিবেশিত ভুল তথ্য শুধরে দিলে উপকৃত হবো )।
দেখা হয়েছে ক্লাস ফ্রেন্ড সুধীরের সংগে। সুধীর ধীর গতি প্রকৃতির একজন সংগীত শিল্পী, অভিনয় শিল্পী ও একজন বিএসসি শিক্ষক। তবে আমার মতোই অবসরপ্রাপ্ত। সহপাঠি বন্ধু গণেশ তার মোটর সাইকেলে করে নিয়ে যায় সুধীরের বাড়ি। গণেশও একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার। সুধীর আমার যাবার সংবাদ পেয়েই তার বৌকে দিয়ে পায়েসের ব্যবস্থা করেছিল। “বৌ “ কথাটা আমি ইচ্ছে করেই এখানে ব্যবহার করেছি। কারণ বৌ ঢাকাইয়াদের মধ্যে প্রচলন থাকলেও উত্তরাঞ্চলে এটা বলা নিষেধ। সেখানে বৌ বলতে শুধু বৌমা সম্পর্কীয় মহিলাদেরকে বলা হয়। নিজের স্ত্রীকে পরিচয় করতে বলা হয় ”মাইয়া” আর নিজের কন্যাকে বলে “বেটি”। যাক সে কথা। সুধীরের বাড়িতে ছিল মিষ্টি ,পিঠা, ডিম কলা চা ইত্যাদি। লোভনীয় বটে। কিন্তু খেতে গেলেই চিন্তা হয় ডায়বেটিসের কথা। আবার মনকে এই বলে শান্তনা দেই যে, ”একদিন খেলে আর কি হবে”। এই বলে প্রতি বাড়িতেই চলেছে আমার জন্য নিষিদ্ধ সব খাবার। চা দিয়ে বলে যে, সামান্য চিনি দেওয়া। এই কথা বলাতে কড়া মিষ্টির চাও খেতে দ্বিধা করিনি। সাথে থেকেছে মোয়া –মুড়কি আর মিষ্টি। গ্রামে নুডুলস নেই, ফাস্টফুড নেই, চিপস্ নেই, নেই পেটিস,সেমাই সিঙ্গাড়া ,রোলস ইত্যাদি। আছে সব ঘরে তৈরী ভেজাল বিহীন সব উপাদেয় খাবার। দীর্ঘদিন পর একটা ব্যতিক্রমী তৃপ্তির স্বাদ গ্রহণ করলাম। ডাক্তারদের পরামর্শ, দাওয়াত উপেক্ষা করুন। এবার সেই উপদেশের যৌক্তিকতা উপলব্ধি করেছি প্রতি পলে পলে।
দেখা পেয়েছিলাম ক্লাসফ্রেন্ড কাম বন্ধু আকরাম হোসেনের। বন্ধু আকরাম হোসেনের সাথে সেখানকার সম্মানিত ব্যক্তিগণ বন্ধুত্ব পাতিয়ে দেন। আর এক বন্ধু রবীন আমার খুব প্রিয় ছিল। কিন্তু তার অকাল প্রয়াণের কারনে দেখা হয়নি, মনে খুব ব্যাথা অনুভব করেছি। রবীনের শূন্যতা আমার আনন্দকে অর্ধেক কমিয়ে দিয়েছে। তার ছেলেমেয়েদের সঙ্গে দেখা করেছি। কেন যেন একটু শোক-বিহ্বল হয়ে পড়েছি তার ছেলে মেয়েকে দেখে। পুত্র শুভ আমাদেরকে অনুসরণ করে মণীন্দ্রদের বাড়ি গিয়েছে এবং পরিবেশনে সহায়তা করেছে। শুভদের বাড়িতেও আপ্যায়িত হয়েছি। রবীনের ছোট ভাই মনীন্দ্র আমাদেরকে পিঠা খাবার অনুরোধ জানালে বলতে হয়েছে যে, সকালে বাসী পিঠা খাব। বাসী পিঠা শীতে খুব মিঠা,এই বলে অন্তত একটা দিনের জন্য রক্ষা পেয়েছিলাম। ভোরে আবারও তাগিদ। পিঠা খেয়েছি পরম তৃপ্তি সহকারে। অনেক এবং রকমারি পিঠা। তারপরও রাতের খাবার গ্রহণ থেকে রেহাই মিলেনি। তাপসদের বাড়িতে নিমন্ত্রণ খেতে হয়েছে। তাপসদের বাড়ির সাথে ছিল আমার অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। তার বাবা ছিলেন স্কুল শিক্ষক। জীবনে তাঁকে কারো সাথে রূঢ় আচরণ করতে দেখিনি। তাপসের মায়ের আন্তরিক মমতা আমাকে চির ঋণী করেছে। তাপসের মা মেনকা বৌদির কাছে যা পেয়েছি তা অতুলনীয় এবং চির স্মরণীয় । এ সব মনে হয়েছে যেন আমার পক্ষে এক অসাধ্য সাধন করার গল্প। কোন চিন্তা বা পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়াই এসব হলো। জানিনা দ্বিতীয়বার আর হবে কিনা। একঘেঁয়ে ইট-পাথরের নাগরিক জীবন থেকে মুক্ত হাওয়ায় অকৃত্রিম ভালো বাসায় সিক্ত হয়ে ঘুরে বেড়ালাম সপ্তাহব্যপী। দীর্ঘ সময় হাতে নিয়ে যেতে পারলে হয়তো উপর্যুপরি খাবারের অত্যাচার হতে কিছুটা রেহাই মিলতো।
দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে সফরে গিয়ে দেখি হারাতে হয়েছে অনেককে। অনেকেই চলে গেছেন অনন্ত লোকে। সে তালিকাও অনেক বড়। তাদের জন্য খুব স্মৃতি কাতর হয়ে পড়লাম। প্রাক্তন চেয়ারম্যান জনাব আনছার আলী মিয়া ও প্রাক্তন চেয়ারম্যান আবুল কাশেম (সাবু) মিয়ার সাথে জীবনে আর দেখা হবে না। তাঁরা এখন পরপারে। জগবন্ধু নাই, বনমালী নাই, আজিজুল ভাই নাই, মন্টু নাই, দীনেশ নাই। সে তালিকাও অনেক দীর্ঘ হতে দীর্ঘতর হতে চললো। তাঁদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি।
জনাব মোঃ ওয়ালী উল্লাহ মোবাইল করে জানালেন তিনি দেখা করবেন মাস্টার নারায়ণ বাবুর বাড়িতে। সেখানে নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হলাম মিত্র গজেন বাবুকে নিয়ে। জনাব ওয়ালী উল্লাহ একজন প্রাক্তন মেম্বার। অতি দীর্ঘ দেহী শালপ্রাংশু একজন জনপ্রিয় মানুষ। আমি তার নিকটে গেলে একেবারেই আমাকে একজন লিলিপুটিয়ান মানুষ মনে হয়। তিনি বাইসাকেল চালিয়ে আসলেন। সাইকেল চালানোর সময় সাইকেলটিকে আর দেখা যায় না তার পাঞ্জাবী পরিহিত অতি লম্বা দেহটির জন্য। বয়সের ভাড়ে ন্যুব্জ হয়ে গেছে। রসিকতা তবু এতটুকু ম্লান হয়ে যায়নি। এখনো মোটামোটি খেতে পারেন ভালো বলে মনে হলো। আপ্যায়ণ হলো এবং দীর্ঘ সময় ধরে আলাপ হলো নারায়ণদার বাড়ী। সেখান থেকে বের হয়ে নিকটেই একটি বালিকা বিদ্যালয়ে নিয়ে গেলেন গজেন বাবু। দেখলাম দেয়ালে তাঁরই খুব বড় একটা ছবি ঝুলানো আছে। তিনি স্কুলটির একজন ডোনার। শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ আন্তরিক ভাবে চা-বিস্কুট খাওয়ালেন। যাকে হাফ পেন্ট পড়া সুন্দর ফুটফুটে অতিব ছোট্ট শিশুটি দেখেছি, সেই রমা অধিকারী এখানকার শিক্ষকমন্ডলীর একজন সদস্যা। সে এখন নিজেই শিশুদের জ্ঞান বিতরণের মহান ব্রত পালন করে যাচ্ছে। তাকেও পরিচয় দিতে হয়েছে,তবেই চিনেছে। সেখানেও বিভিন্ন প্রসঙ্গে অনেক কথা হলো। পরিশেষে কেষ্টকুমার দার হাত হতেও নিষ্কৃতি মিলেনি। সুব্রতর আজু (দাদু) কেষ্ট কুমার দা একজন রুচিশীল অবস্থাপন্ন কৃষক মানুষ। নিজে চা বাগান করেছেন। ঢাকায় আসলে বিমানে করে চলে আসেন শুনেছি। তাঁর এক ছেলে কলেজের অধ্যক্ষ, অন্য ছেলে ঢাকায় একটি সরকারি অফিসে চাকুরি করে। ফিরে আসার মুহূর্তে খাবার খেয়ে আসতে হলো তাঁর বাড়ি হতে। তখন কেবল খেয়েদেয়ে রওয়ানা হয়েছি মিত্রর বাড়ি হতে। সেই মুহূর্তে কেষ্টকুমারদার বাড়িতে যেতে হবে ,বার্তা এলো। যত অজুহাতই দেখাই কোনটা তাঁদের যুক্তির নিকট ধুপে টেকে না। বাধ্য হয়ে সেখানেও খেতে হয়েছে। আমার ছেলে স্বননের নিরব এক অস্থিরতা ধরা পড়লো আমার দৃষ্টিতে। অবশেষে নিমন্ত্রণ থেকে রেহাই পেতে ভ্রমণ সংক্ষিপ্ত করতে হলো। অনিচ্ছা সত্বেও টিকিট কনফার্ম করে নিলাম। এভাবেই কেটে গেল সীমান্ত ভ্রমণের সাতটি দিন।
(চলবে)-
বাংলাদেশ সময়: ২০:১৮:৪৮ ● ৬৯৪ বার পঠিত
পাঠকের মন্তব্য
(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)-
সাফিউল ইসলাম- এর কবিতা প্রিয় বাংলাদেশ
মঙ্গলবার ● ২৮ নভেম্বর ২০২৩ -
নারায়ণগঞ্জ বিএনপি সভাপতির আবেদন মনোনয়নপত্র বাতিল চেয়ে
মঙ্গলবার ● ২৮ নভেম্বর ২০২৩ -
মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তির লটারি আজ
মঙ্গলবার ● ২৮ নভেম্বর ২০২৩ -
মুখ খুললেন মীম জিৎতের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে
মঙ্গলবার ● ২৮ নভেম্বর ২০২৩ -
সাজঘরে জাকির প্যাটেলের স্পিনে
মঙ্গলবার ● ২৮ নভেম্বর ২০২৩ -
গাজায় যুদ্ধবিরতি বর্ধিত করার পর দুই পক্ষের ৪৪ জন মুক্ত
মঙ্গলবার ● ২৮ নভেম্বর ২০২৩
-
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাদ পড়লেন বিতর্কিত এমপি রতন; নতুন প্রার্থী রনজিত
সোমবার ● ২৭ নভেম্বর ২০২৩ -
রাসেল হাসান - এর কবিতা মুজিব
সোমবার ● ২৭ নভেম্বর ২০২৩ -
নাটোরে পার্কিং করা ৩ বাসে আগুন
সোমবার ● ২৭ নভেম্বর ২০২৩ -
২৩০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন সারা দেশে
সোমবার ● ২৭ নভেম্বর ২০২৩ -
কোন বয়সে বেশি ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন
সোমবার ● ২৭ নভেম্বর ২০২৩ -
মিধিলির পর সৃষ্টি হতে চলেছে ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম
মঙ্গলবার ● ২৮ নভেম্বর ২০২৩
আর্কাইভ
Head of Program: Dr. Bongoshia
News Room: +8801996534724, Email: [email protected] , [email protected]