সীমান্ত ভ্রমণের সাতটি দিন ও প্রাসঙ্গিক কথা -পর্ব :৭ - স্বপন চক্রবর্তী
Home Page » সাহিত্য » সীমান্ত ভ্রমণের সাতটি দিন ও প্রাসঙ্গিক কথা -পর্ব :৭ - স্বপন চক্রবর্তীবঙ্গ-নিউজ: কাজি নজরুল ইসলাম বলেছিলেন, “সঙ্কোচ শরম বলি’ জান নাকো কিছু, উন্নত করিছ শির যার মাথা নীচু। মৃত্যু–পথ যাত্রীদল তোমার ঈঙ্গিতে, গলায় পরিছে ফাঁসি হাসিতে হাসিতে। বিনয়ের ব্যভিচার নাহি তব পাশ, তুমি চাও নগ্নতার উলঙ্গ প্রকাশ। নিত্য অভাবের কুন্ড জ্বালাইয়া বুকে, সাধিতেছ মৃত্যু-যজ্ঞ পৈশাচিক সুখে।…. দারিদ্র অসহ, পুত্র হয়ে জায়া হয়ে কাঁদে অহরহ”। সুকান্ত ভট্টাচার্য বলেছেন, ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি”।
তার মানে দারিদ্রের জ্বালা অসহনীয়। উত্তর বঙ্গের বিশেষ করে নিলফামারী ও কুড়িগ্রাম অঞ্চলের আশ্বিন-কার্তিকের মঙ্গা ( দুর্ভীক্ষ ) এতটাই প্রবল ছিল যে, নজরুল ও সুকান্তের কবিতার উপরোক্ত বর্ণনার সাথে অনেকটাই মিলে যায়। আমরা ইথিওপিয়ার দুর্ভীক্ষের ছবি দেখেছি। বিশ্ব বিবেক দয়ার্দ্র ও অশ্রুসিক্ত হয়েছে। উত্তরবঙ্গেও দরিদ্র কৃষক, বা কামলা কিষাণ ক্রমাগত খাদ্য সংগ্রহে ব্যর্থ হয়ে দিশে হারা হয়ে যেতো। শেষ সম্বল ঘটি বাটি বিক্রী করে হলেও খাদ্যের সংস্থানে বের হতে হতো। কচু,ঘেচু, কলার মুচি, কলার মাইচ, শাক-লতাপাতা ইত্যাদি খেয়েও জীবন ধারন অসম্ভব হতো। চোখের সামনে আদরের শিশুর কান্না পিতামাতাকে বিচলিত করে তুলতো। উপায়ান্তর না দেখে পাগলের মতো হয়ে গিয়ে অক্ষমতার গ্লানি মাথায় নিয়ে রাগের মাথায় কেহ বৌকে তালাক দিয়ে বসতো। শিশু গুলোর দুর্দশা হতো সীমাহীন। দুতিন মাস কোন রকমে অতিবাহিত হলে কাজের সংস্থান হয়ে যেতো। দরজা দিয়ে অভাব ঢুকে যে ভালবাসাকে জ্বানালা দিয়ে পালাতে বাধ্য করেছিল, তা আবার ফিরে আসতে লাগলো। আবার ঘর পাততে আকাঙ্খা জেগে যায়। শিশুদের মায়া ভরা মুখ পিতার বুকেও মায়া জড়ায়। কিন্তু তখন বাদ সাধে ধর্ম, বাদ সাধে কিছু গন্যমান্য ব্যক্তি। কেহ বলে তালাক হয়ে গেছে। আবার কেহ বলে হয়নি। কেহ বলে ইদ্দত কাল শেষে হিল্লাহ বিয়ে দিতে ,কেহ বলে অন্য কোন ব্যবস্থা। কিন্তু শরৎ চন্দ্রের বিলাসী গল্পের সেই উক্তির মতো বলতে হয়, “ এটা যে অন্ন পাপ, লুচি নয় সন্দেশ নয়, পাঁঠার মাংস নয়, এটা যে অন্ন পাপ ”। অর্থাৎ এটা মহা পাপের মধ্যে পড়ে গেছে। এইভাবে গরীবদের বিধি বাম হয় সর্বত্র। সুবিধাবাদী লোক ওঁৎ পেতে থাকে এই বিপদে গরীবের উপকার করতে, হিল্লাহ বিবাহ করতে। তাদের মন দুর্ভীক্ষের কষাঘাতে আক্রান্ত গরীবের জন্য একমুঠো অন্নের সংস্থান করেনি সত্য, তাই বলে এখনো চুপ করে থাকলে হয়তো বিষয়টি অমানবিক হবে। তাই বিবাহ করার সময় তারা এগিয়ে আসে।
এই মঙ্গা নিয়ে রাজনীতিবিদরাও কম যান না। একবার মঙ্গায় অসংখ্য লোক মারা যাবার এক অভিযোগ করে বসে বিরোধী দল। বলা হয় না খেয়ে উত্তরাঞ্চলে অসংখ্য লোক মারা গেছে। বিরোধী দলের আনীত এই অভিযোগ, সরকারি দল চরমভাবে অস্বীকার করে বলে বসে। সরকারি দল থেকে বলা হয় যে, ”না খেয়ে দেশে একটি লোকও মারা যায়নি”। দলটির নাম এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না। তখন বাংলার অগ্নিকন্যা খ্যাত মতিয়া চৌধুরী তাঁর স্বভাব সূলভ ভঙ্গিতে জবাব দিলেন, “ না খেয়ে একটি লোকও মারা যায় নি। যত লোক মরেছে সব পিত্তশূলে”। বেগম মতিয়া চৌধুরীর এক সময় ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। পরে ন্যাপ এবং সর্বশেষ আওয়ামী লীগে যোগ দেন। মনে প্রাণে তিনি বঙ্গবন্ধুর একজন একনিষ্ঠ ভক্ত। আওয়ামী লীগ তখন বিরোধী দলে ছিল। মতিয়া চৌধুরীও এই দলে। মতিয়া চৌধুরীসহ এমন ভাবে কঠোর ভাষায় বিরোধী দলীয় রাজনীতিকগন সরকারের সমালোচনা করতে পিছ পা হতেন না। এটা করাও যে অনুচিৎ তা কিন্তু নয়।
তবে এই অধিকার টুকুকে সুযোগ হিসাবে নিয়ে নিষ্ঠুরতম এক ঘটনার জন্ম দিয়েছিলেন আমাদের দেশের রাজনীতিক গন। এতে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধার পরিবর্তে ঘৃণারই জন্ম হয়েছে। যদিও তাদের এই জঘণ্য কর্মটিকে সঠিক বলে প্রমাণের একটি ব্যর্থ প্রচেষ্টা এখনো কম বেশী অব্যাহত রয়েছে। এমনি একটি নিষ্ঠুরতম রাজনীতির খেলা হয়েছিল কুড়িগ্রামের চিলমারীতে। চলবে-
বাংলাদেশ সময়: ২০:১৮:৩৭ ● ৭৭৭ বার পঠিত
পাঠকের মন্তব্য
(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)-
প্রতিষ্ঠিত হয়ে বিয়ে করতে চায় সিলেটের ছেলেমেয়েরা
মঙ্গলবার ● ৫ ডিসেম্বর ২০২৩ -
মধ্যনগরে কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরন
সোমবার ● ৪ ডিসেম্বর ২০২৩ -
এবার ট্রেনে সেবা দিচ্ছে বিমানের মতো ‘ট্রেনবালা’
সোমবার ● ৪ ডিসেম্বর ২০২৩ -
ভূমিকম্পে খসে পড়েছে ঢাবির হলের পলেস্তারা
রবিবার ● ৩ ডিসেম্বর ২০২৩ -
কার বিরহে বিলীন হতে চান প্রভা!
রবিবার ● ৩ ডিসেম্বর ২০২৩ -
মেসি মেসি’ স্লোগান রোনালদোর সামনেই
রবিবার ● ৩ ডিসেম্বর ২০২৩
-
মধ্যনগরে কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরন
সোমবার ● ৪ ডিসেম্বর ২০২৩ -
প্রতিষ্ঠিত হয়ে বিয়ে করতে চায় সিলেটের ছেলেমেয়েরা
মঙ্গলবার ● ৫ ডিসেম্বর ২০২৩ -
এবার ট্রেনে সেবা দিচ্ছে বিমানের মতো ‘ট্রেনবালা’
সোমবার ● ৪ ডিসেম্বর ২০২৩
আর্কাইভ
Head of Program: Dr. Bongoshia
News Room: +8801996534724, Email: [email protected] , [email protected]