ময়মনসিংহে ট্রাক চাপা দেওয়া চালকের পায়ে সমস্যা, লাইসেন্সও ছিল না

Home Page » প্রথমপাতা » ময়মনসিংহে ট্রাক চাপা দেওয়া চালকের পায়ে সমস্যা, লাইসেন্সও ছিল না
মঙ্গলবার ● ১৯ জুলাই ২০২২


ধৃত ট্রাকড্রাইভার ( ইনসেটে) ও ভুমিষ্ঠ হওয়া শিশু

বঙ্গ-নিউজ:  গত ১৬ জুলাই দুপুরে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার জাহাঙ্গীর আলম তার আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও তার এক কন্যা সন্তানকে নিয়ে রাস্তা পারাপারের জন্য মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এমন সময় হঠাৎ ময়মনসিংহগামী একটি ট্রাক বেপরোয়া গতিতে চাপা দেয় তাদের।

ঘটনাস্থলেই নিহত হন মো. জাহাঙ্গীর আলম (৩৫), তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রত্না বেগম (২৬) এবং তার ৩ বছর বয়সী কন্যা সন্তান সানজিদা আক্তার। দুর্ঘটনার সময় অন্তঃসত্ত্বা রত্না বেগমের ওপর দিয়ে ট্রাক চলে যাওয়ায় তার গর্ভে থাকা কন্যা সন্তান অলৌকিকভাবে ভূমিষ্ঠ হয়। নবজাতককে আহত অবস্থায় স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়।

পরবর্তীতে নবজাতকে ময়মনসিংহ সদরের একটি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এই দুর্ঘটনায় নিহত জাহাঙ্গীর আলমের পিতা বাদী হয়ে ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানায় সড়ক পরিবহন আইনের একটি মামলা দায়ের করেন।

সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, নিহত জাহাঙ্গীর আলম পেশায় একজন নির্মাণ শ্রমিক। দুর্ঘটনায় নিহত কন্যা সন্তান ছাড়াও তার পরিবারে ৮ ও ১০ বছর বয়সী দুই ছেলে ও মেয়ে সন্তান রয়েছে। দুর্ঘটনায় ভূমিষ্ঠ শিশুর ডান হাতের কনুই এর উপরের হাড়ে ফ্র্যাকচার ও কলার বোন ভেঙ্গে গেছে। বর্তমানে ময়মনসিংহের লাবীব হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।

চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় ঘাতক ট্রাক চালক মো. রাজু আহমেদ ওরফে সিপন’কে ঢাকার সাভার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

র‍্যাব জানায়, রাজু গত ১১ জুলাই থেকে একটানা মালামাল পরিবহন করে আসছিল। এরমধ্যে সে একবার রাজশাহী থেকে আম নিয়ে কিশোরগঞ্জের তারাইলে মালামাল আনলোড করে পুনরায় রাজশাহী ফিরে যায়।

পরবর্তীতে গত ১৫ জুলাই চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট হতে প্রথম দফায় গাড়ির মালিকের আম এবং রাজশাহীর নৌহাটা থেকে আরেক দফায় আলু বোঝাই করে কিশোরগঞ্জের তাড়াইলের এক ব্যবসায়ীর নিকট পৌঁছে দেওয়ার জন্য রাত ১২ ঘটিকার সময় রওয়ানা হয়।

পথিমধ্যে সে হালকা বিরতি নিয়ে দুর্ঘটনার পূর্ব পর্যন্ত একটানা গাড়ি চালিয়ে আসছিল এবং কিশোরগঞ্জ যাওয়ার পথে ময়মনসিংহের ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ডের সন্নিকটে পৌঁছালে রাস্তা পারাপারের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা নিহত জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী-সন্তানকে চাপা দেয়।

দুর্ঘটনার পর উপস্থিত লোকজন ট্রাকটি থামায়। তখন সুযোগ বুঝে রাজু ঢাকাগামী একটি বাসে উঠে পড়ে। পরবর্তীতে বাস থেকে সে ময়মনসিংহ বাইপাসে নামে এবং সেখান থেকে একটি সিএনজি করে প্রথমে মুক্তাগাছা এবং পরে অপর একটি বাসে করে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পৌঁছায়। সেখান থেকে সে তার পরিচিত বিভিন্ন ট্রাক চালকের ট্রাকে উঠে আত্মগোপনে থাকে। গতকাল এমন একটি ট্রাক সাভারে পৌঁছালে সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‍্যাবের আইন ও গনমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, রাজু ১০ শতাংশ কমিশনে ট্রাকটি চালিয়ে আসছিল। গাড়িতে সবসময় কাঁচামাল পরিবহন করা হতো। গাড়িটির ট্যাক্স টোকেন এবং ফিটনেস সার্টিফিকেট মেয়াদ উত্তীর্ণ।

গাড়িটির ধারণ ক্ষমতা ৭ টন হলেও দুর্ঘটনার সময় গাড়িটির ওজন ছিল প্রায় দ্বিগুণ, ১৩.৫ টন। ভারী যানবাহন চালনার জন্য কোনো বৈধ লাইসেন্স ছিল না তার। মধ্যম সারির গাড়ীর ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল, যা ২০১৬ সালে হারিয়ে যায়।

তিনি আরও জানান, রাজু ২০০২ সালে যশোরের এক ট্রাক ড্রাইভারের হেলপার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে দুর্ঘটনার শিকার হয়। সেই দুর্ঘটনায় তার বাম পা মারাত্মকভাবে জখম হওয়ার ফলে সে প্রায় ৬ বছর গাড়ি চালায়নি। তার বাম পায়ে এখনও সমস্যা আছে। বিগত ১০ বছর ধরে সে নিয়মিত ট্রাক চালাচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১:১৭:২১ ● ৫৭৭ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ