সেন্টমার্টিনে রুদ্ধশ্বাস সাত ঘণ্টা

Home Page » জাতীয় » সেন্টমার্টিনে রুদ্ধশ্বাস সাত ঘণ্টা
সোমবার ● ১৫ মে ২০২৩


ঘূর্ণিঝড় মোকার আঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত টেকনাফ- সেন্টমার্টিন
বঙ্গ-নিউজ:  অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার কেন্দ্রস্থল বাংলাদেশে আঘাত হানলে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন লন্ডভন্ড হওয়ার শঙ্কা ছিল। ঝড়ের কেন্দ্রস্থল মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের দিকে গেলেও, মোখার  আঁচ কাঁপিয়ে দিয়ে গেছে সেন্টমার্টিনকে। সে কথা ঝড়ের পর রোববার বিকেলে টেলিফোনে জানালেন দ্বীপের বাসিন্দা হাফিজুর রহমান।

আগের রাতে তাঁর সঙ্গে যখন কথা হয়, তখন বাঁচার আকুতি জানাচ্ছিলেন ৪০ বছর বয়সী এই ব্যবসায়ী। বলছিলেন, ‘আমাদের বাঁচান। টেকনাফ নিয়ে যান। প্রশাসনকে জানান।’ ঝড় শেষে বললেন, ‘ভাই বেঁচে গেছি, এবারের মতো। ঘর ভেঙে গেছে, কিন্তু প্রাণে বেঁচে আছি।’

ঘূর্ণিঝড়ে নৌ যোগাযোগ বন্ধ থাকায় গতকাল সেন্টমার্টিনে আসা-যাওয়া সম্ভব ছিল না। তবে মোবাইল নেটওয়ার্ক সচল থাকায় সেখানকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে পাওয়া গেল মোকার তাণ্ডবের খবর। তাঁরা জানান, রোববার সকাল ১০টায় শুরু হয় ঝোড়ো হাওয়া। বিকেল ৫টায় তা থামে। বাঁচি কী মরি অবস্থার মধ্যে রুদ্ধশ্বাস ৭ ঘণ্টা কাটিয়েছেন সেন্টমার্টিনে থেকে যাওয়া ৮ হাজার বাসিন্দা।

টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান জানান, ঘূর্ণিঝড় দিক বদলে মিয়ানমারের দিকে যাওয়া, আঘাতের সময় ভাটা থাকায়, উত্তরমুখী বাতাস বয়ে যাওয়ায় ক্ষয়ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ব্যাপক প্রচারণা ও সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া সম্ভব হয়েছে। কারও প্রাণহানি হয়নি।

তবে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. জোবাইর। তিনি জানান, দ্বীপের ৫০ শতাংশ ঘরবাড়ি, গাছপালা এবং আবাসিক হোটেলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আর সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান সমকালকে বলেন, ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিসংখ্যান এখনই বলা যাচ্ছে না। সরেজমিন পরিদর্শনে ক্ষয়ক্ষতির ওয়ার্ডভিত্তিক তালিকা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান জানিয়েছেন, সেন্টমার্টিনে ১ হাজার ২০০ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেঙে পড়েছে হাজারো গাছপালা।

সেন্টমার্টিনের তেলপাড়ার বাসিন্দা আব্দুল আজিজও মোবাইল ফোনে জানিয়েছেন, সকাল ১০টায় বৃষ্টির সঙ্গে বাতাস শুরু হলেও তা শক্তিশালী হয় দুপুর ১২টার দিকে। বিকেল ৫টার পর বাতাসের বেগ কমে। বাতাসের তাণ্ডবে ঘরবাড়ি, হোটেল এবং গাছপালা ভেঙেছে। তবে যতটা ভয় পেয়েছিলেন, তত ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

স্থানীয়দের বরাতে জানা গেছে, দ্বীপের গলাচিপা এলাকায় পরিবেশ অধিদপ্তরের গবেষণা প্রতিষ্ঠান মেরিন পার্কের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। হলবনিয়া এলাকায় মৃত কবির আহমেদের বসতি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। তাঁর পরিবারের ছয়জন আশ্রয়কেন্দ্রে থাকায় কারও ক্ষতি হয়নি।

কোনারপাড়া এলাকায় ভেঙে পড়েছে উদয় কটেজ ও শর্ট কটেজ নামে একতলাবিশিষ্ট দুটি আবাসিক হোটেল। উদয় কটেজের মালিক কামাল উদ্দিন বলেন, দুপুর ১টায় ঝড়ের গতি বাড়ে। তখন বিধ্বস্ত হয় কটেজটি।

কক্সবাজার আবহাওয়া দপ্তরের আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান জানিয়েছেন, রোববার দুপুর ২টা ২০ মিনিট থেকে ঘূর্ণিঝড়টি সেন্টমার্টিন অতিক্রম শুরু করে। সেই সময়ে সেন্টমার্টিনে ঝড়ের গতি ছিল ঘণ্টায় ১২১ কিলোমিটার। টেকনাফে ছিল ১১৫ কিলোমিটার।

৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের সেন্টমার্টিনের জনসংখ্যা প্রায় ১১ হাজার। তাঁদের মধ্যে প্রায় আড়াই হাজার মানুষ টেকনাফে সরে যান ঝড়ের আগেই। অন্যদের মধ্যে সাড়ে ৪ হাজারের মতো মানুষ দুটি আশ্রয়কেন্দ্রে এবং ৩৭টি হোটেল, রিসোর্ট ও কটেজে ঠাঁই নেন।

বাংলাদেশ সময়: ১১:০০:০৯ ● ২০৭ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ