ডেঙ্গুর টিকা পরীক্ষামূলক প্রয়োগের পরিকল্পনা

Home Page » জাতীয় » ডেঙ্গুর টিকা পরীক্ষামূলক প্রয়োগের পরিকল্পনা
সোমবার ● ৩১ জুলাই ২০২৩


ডেঙ্গুর টিকা পরীক্ষামূলক

 বঙ্গ-নিউজঃ   ডেঙ্গু পরিস্থিতি বাগে আনতে জীবাণুবাহী এডিস মশা নিধনের পাশাপাশি এ ভাইরাস প্রতিরোধী টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের পরিকল্পনা করেছে সরকার। এরই মধ্যে টিকা-সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি উপদেষ্টা কমিটির (নাইট্যাগ) সঙ্গে বৈঠক করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পরামর্শ নিয়ে দ্রুত টিকা প্রয়োগের চিন্তা করা হচ্ছে। তবে কোন সংস্থার মাধ্যমে, কীভাবে টিকা আসবে, কোন হাসপাতালে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হবে, বিস্তারিত জানাননি অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) এবং ডব্লিউএইচও বলেছে, বর্তমানে ডেঙ্গুর যে দুটি টিকা প্রয়োগ হচ্ছে, এর একটি ফ্রান্সের বহুজাতিক ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান সানোফির তৈরি ডেঙ্গুভ্যাক্সিয়া; অন্যটি জাপানের ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান তাকেদার বানানো কিউডেঙ্গা। এসব টিকা বাজারজাতও হচ্ছে। অন্তত ২০টি দেশ প্রয়োগ করেছে। তবে সব বয়সীকে এ টিকা দেওয়া হচ্ছে না। এসব টিকা অনুমোদন না দিলেও কার্যকারিতা এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করছে ডব্লিউএইচও।

জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী বলেন, ডেঙ্গুপ্রবণ দেশগুলোতে টিকার প্রয়োগ হচ্ছে। ব্রাজিল দিচ্ছে; এ বছর ইন্দোনেশিয়া প্রয়োগের কথা জানিয়েছে। আবার ডেঙ্গু নেই– এমন দেশও টিকা নিচ্ছে। সুইডেনে মানুষ ব্যক্তি উদ্যোগে কিনছেন এবং ডেঙ্গুপ্রবণ দেশে যাওয়ার আগে নিচ্ছেন। এসব টিকার ডেঙ্গু প্রতিরোধ সক্ষমতা ৮০ শতাংশের বেশি এবং টিকা প্রয়োগের পর প্রায় ৯০ শতাংশ ডেঙ্গু আক্রান্ত হলেও, তাদের হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন পড়ছে না। বাংলাদেশের মতো ডেঙ্গুপ্রবণ দেশগুলোর জন্য এসব টিকা হবে কার্যকরী পদক্ষেপ। প্রতি ডোজে ২ হাজার ৬০০ টাকার মতো খরচ পড়বে।

ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ফল ভালো হলে অনুমোদনের পক্ষে মত দিয়ে তিনি বলেন, আমরা সরাসরি প্রয়োগের পক্ষে নই। এমনকি সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচিতেও যুক্ত করতে বলছি না। আগে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হোক।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন বিষয়ে অধ্যাপক সাইফ উল্লাহ বলেন, সংস্থাটি সব টিকার পূর্ব কার্যকারিতা যাচাই করে, তা নয়। তারা টিকা আবিষ্কারের অনেক বছর পর নানা তথ্যের ভিত্তিতে অনুমোদন দেয়। অন্যান্য রোগ প্রতিরোধের টিকা কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন ছাড়াই অনেক দেশ প্রয়োগ করেছে।

সূত্র জানায়, ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট ডেঙ্গুর টিকা তৈরিতে কাজ করছে। তাদের টিকা তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালে রয়েছে। এটির প্রয়োগ শুরু হলে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা টিকা তৈরি কার্যক্রম দেখতে দেশটি সফর করবে।

নাইট্যাগের সদস্য ও আইইডিসিআরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মাহমুদুর রহমান বলেছেন, ডেঙ্গু টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এটি করার আগে শুধু ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদন লাগবে। ঔষধ প্রশাসন কিংবা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নাইট্যাগের কাছে পরামর্শ চাইবে। এ টিকা প্রয়োগের আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অবশ্যই ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে হবে।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক (ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ও প্রশাসন) মো. সালাহউদ্দিন বলেন, দেশে ডেঙ্গুর কোনো টিকা নিবন্ধিত নেই। করোনা টিকার মতো এ প্রতিষেধকও আমদানি করতে হবে। এ জন্য ঔষধ প্রশাসন থেকে অনুমোদনের প্রয়োজন হবে।

অধিদপ্তরের পরিচালক (এমআইএস) অধ্যাপক ডা. মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, ডেঙ্গু টিকার বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিবেচনায় রেখেছে। একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্যে বিশ্বের কিছু দেশ অনুমোদন দিয়েছে। এর কার্যকারিতাও বিবেচনা করা হচ্ছে। সত্যিকার অর্থে আমাদের জন্য কার্যকরী হলে অবশ্যই অধিদপ্তর পদক্ষেপ নেবে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আহমেদুল কবীর বলেন, পরীক্ষামূলক প্রয়োগের বিষয়ে টিকা-সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি উপদেষ্টা কমিটির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে আরেকটি বৈঠক হবে। এ টিকার ট্রায়াল দ্রুত কীভাবে করা যায়, তা শক্তভাবেই বিবেচনা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ৯:৫৯:২৮ ● ১৭৮ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ