সাড়ে ১২ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি বন্যায়

Home Page » প্রথমপাতা » সাড়ে ১২ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি বন্যায়
শনিবার ● ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩


রৌমারীর চরশৌলমারী এলাকায়- বন্যার পানিতে পচে যাওয়া ফসল দেখছেন এক কৃষক.
 বঙ্গ-নিউজঃ      ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে কুড়িগ্রামের রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বন্যায় অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিনষ্ট হয়েছে আট হাজার ২৯২ হেক্টর জমির আমনের বীজতলা, রোপা আমন ও শাকসবজি ফসল। ১২ কোটি ৩৭ লাখ ৭৬ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি কৃষি বিভাগের। দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বানের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত ১১ হাজার ১৭৩ কৃষক।

কৃষি অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে রৌমারী উপজেলায় আট হাজার ৩৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয়। বন্যার পানিতে তলিয়ে যায় এক হাজার ৩২৭ হেক্টর জমির ফসল। এর মধ্যে ৪২৪ হেক্টর জমির ফসল পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। আংশিক ক্ষতি হয় ৯০৩ হেক্টর জমির ফসল। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ৪ হাজার ৯৮৩। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আট কোটি টাকা। এ ছাড়া রাজীবপুরে চলতি মৌসুমে দুই হাজার ১৭৭ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয়। বানের পানিতে তলিয়ে যায় ৯৬৫ হেক্টর জমির ফসল। তার মধ্যে পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩১৬ হেক্টর জমির ফসল। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ৬৪৯ হেক্টর জমির ফসল। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ছয় হাজার ১৯০। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ চার কোটি ৩৭ লাখ ৭৬ হাজার টাকা।
সরেজমিন ঘুরে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির চিত্র দেখা গেছে রৌমারী ও রাজীবপুরের বেশ কিছু এলাকায়। এর মধ্যে রয়েছে– যাদুরচর ইউনিয়নের যাদুরচর চাক্তাবাড়ি, যাদুরচর নতুনগ্রাম, ধনারচর হাট খোলাপাড়া, গোলাবাড়ি আকন্দপাড়া, কোমরভাঙ্গি পুরাতনপাড়া, চরশৌলমারী ইউনিয়নের চর গেন্দার আলগা, ঘুঘুমারী, সুখেরবাতি, নয়াপাড়া, খেদাইমারী, পশ্চিম খেদাইমারী ও মশালের চর, বন্দরের ইউনিয়নের ফলুয়ারচর, বাঘমারা, পালেরচর, বলদমারা। এসব এলকায় আমনের বীজতলা, রোপা আমন ও শাকসবজি ক্ষেত পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। এ ছাড়া রাজীবপুর সদর ইউনিয়নের মুন্সিপাড়া, আজগর দেওয়ানীপাড়া, বদরপুর, মদনেরচর, মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের কির্ত্তনটারী, শিকারপুর, বড়বের, ভেলামারী ও কোদালকাটি ইউনিয়নের শংকর মাধবপুর, চর সাজাই, উত্তর কোদালকাটি, বিলপাড়া, চর সাজাই সরকারপাড়া, চর সাজাই বাজারপাড়া এলাকায় ফসলহানি হয়েছে।

যাদুরচর ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আব্দুল বাতেন জানান, তিনি এক বিঘা ২১ শতাংশ জমিতে আমনের চারা রোপণ করেছিলেন। বানের পানিতে তলিয়ে সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। একই ইউনিয়নের ধনারচর নতুনগ্রাম আদর্শপাড়া গ্রামের দুলাল হোসেনের দাবি, তাঁর তিন বিঘা জমির রোপা আমন বন্যার পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে।

চরশৌলমারী ইউনিয়নের খেদাইমারী এলাকার রাসেল মণ্ডল বলেন, ছয় বিঘা জমিতে আামন চাষ করেছিলেন তিনি। কিন্তু বন্যার পানিতে জমি তলিয়ে সব ফসল নষ্ট হয়েছে। একই ইউনিয়নের সুখেরবাতি গ্রামের কৃষক আমির হামজা জানান, তাঁর চার বিঘা জমির রোপা আমন বন্যার পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না তিনি।

রাজীবপুর সদর ইউনিয়নের শিবেডাঙ্গী এলাকার কৃষক মোগল হোসেন মণ্ডল বলেন, ‘অনেক কষ্ট কইরা দুই বিঘা জমিতে আমন ধান গারছিলাম (রোপণ)। বান আইসা আমার সব ধান তলাইয়া গেছিল। এহন পানি কমে গেছে। কিন্তু সব ধান গাছ পচে গেছে। এই বানে আমার অনেক বড় ক্ষতি হইল। এহন কী দিয়া, কী করুম। খুব চিন্তায় আছি।’

কথা হয় কোদালকাটি ইউনিয়নের উত্তর কোদালকাটি এলাকার কৃষক আমিনুল ইসলামের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, তাঁর দুই বিঘা জমিতে আমনের চারা রোপণ করেছিলেন। বানের পানিতে জমির সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।

রৌমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে বন্যা হয়েছে। বন্যায় ফসলের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসন ও প্রণোদনার আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। একই ধরনের কথা বলেন, রাজীবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রতন মিয়া।

বাংলাদেশ সময়: ১১:০৬:৪৯ ● ১৫০ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ