গণতন্ত্র চ্যালেঞ্জের মুখে

Home Page » প্রথমপাতা » গণতন্ত্র চ্যালেঞ্জের মুখে
রবিবার ● ৮ অক্টোবর ২০২৩


গণতন্ত্র চ্যালেঞ্জের মুখে

 বঙ্গ-নিউজঃ   বিশ্বের অনেক দেশেই গণতন্ত্র চ্যালেঞ্জের মুখে বলে মন্তব্য করেছেন মালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাউসা মারা। তিনি বলেন, ‘সাগর ও আকাশপথের পাশাপাশি মহাকাশেও প্রতিযোগিতায় জড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তাদের প্রতিযোগিতার প্রেক্ষাপটে এই অঞ্চলের দেশগুলোকে নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির স্বার্থে আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক ভারসাম্য নিয়ে ভাবতে হবে। গতকাল শনিবার ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন’ শীর্ষক তিন দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে গতকাল গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ওই সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে বিশেষ বক্তৃতা করেন মাউসা মারা। এতে আরও বক্তব্য দেন সিজিএস চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী, সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ও বে অব বেঙ্গল কনভারসেশনের চেয়ার জিল্লুর রহমান।

মাউসা মারা বলেন, ‘বিশ্বে শক্তিশালী অনেক দেশের উদ্ভব হচ্ছে এবং তারা প্রতিবেশীর ওপর প্রভাব বিস্তার করছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীন বিশ্বের নানা প্রান্তে নানা সংস্থা ও উদ্যোগের মাধ্যমে প্রভাব খাটাচ্ছে। ন্যাটো, জি২০, ব্রিকস এর উদাহরণ। তাদের মধ্যে এই প্রতিযোগিতা চলতেই থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘ইউরোপ ধনী হলেও সেখানে বিভাজন তৈরি হয়েছে। এই বিভাজনে তাদের শক্তি ক্ষয় হচ্ছে। ফলে শক্তির ভরকেন্দ্র এখন ন্যাটো। আবার যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মতবিরোধের কারণে মাঝারি শক্তির কিছু দেশের মধ্যে নেতৃত্বের আকাঙ্ক্ষা দেখা দিয়েছে।’ এ তালিকায় সৌদি আরব, তুরস্ক, জাপান, ব্রাজিল, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও নাইজেরিয়া রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

মালির সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হবে এবং এতে কোনো পক্ষই জয়লাভ করবে না। কারণ রাশিয়ার যেমন বিপুল সম্পদ নেই, তেমনি ইউক্রেনের পর্যাপ্ত সমরাস্ত্র নেই। তবে শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্র হিসেবে দুর্বল হয়ে পড়বে রাশিয়া।

মাউসা মারা বলেন, ‘বিশ্বের নানা প্রান্তে গণতন্ত্রের অবক্ষয় ঘটছে। গণতন্ত্র আজ চ্যালেঞ্জের মুখে। জাতীয়তাবাদ ও উগ্রবাদের উত্থান ঘটছে। এতে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে।’ তাঁর মতে, বিশ্বের অনেক দেশে গণতন্ত্রকে শাসন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেও মনে করা হয় না। আফ্রিকায় প্রায়ই নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করার ঘটনা ঘটছে।

সম্মেলন উদ্বোধনের পর একাধিক সেশন হয়। এর মধ্যে ‘রোল অব সিএসওস, এনজিওস অ্যান্ড থিঙ্কট্যাঙ্ক ইন ট্রাক-২ ডিপ্লোমেসি’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘নাগরিক সমাজের সংস্থাগুলোর অবস্থান ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে। বিশেষ করে যারা মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী।’

করোনা-পরবর্তী নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সমাজে নাগরিক সংস্থাগুলোর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। একই সঙ্গে তারা আর্থিক ও আইনগত দিক থেকে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।’ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘নাগরিক সমাজকে পুনরুজ্জীবিত হতে হবে। জনগণের কাছে ফিরে যেতে হবে। একে অন্যের সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে হবে।’ জনগণের উন্নয়ন ও বড় লক্ষ্য অর্জনে তথ্য আদান-প্রদান এবং সহযোগিতার জন্য একটি আঞ্চলিক প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার পরামর্শ দেন তিনি।

সার্বিয়ার আগোরা স্ট্র্যাটেজি গ্রুপের সিনিয়র ফেলো জোভান রাতকোভিচ বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যখন সংলাপ কম হয়, তখন নাগরিক সমাজ ভূমিকা রাখতে পারে। কারণ দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই, আইনের শাসনের উন্নতি, বাকস্বাধীনতা এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে নাগরিক সমাজের ভূমিকা অপরিহার্য।’

সরকার পক্ষের নাগরিক প্রতিনিধি প্রসঙ্গেও অনুষ্ঠানে আলোচনা হয়। বক্তারা বলেন, ‘সবাই আসলে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি নন। যারা সরকারের সুবিধাভোগী, তারা মূলত রাজনৈতিক সমাজের বর্ধিত অংশ। তাদের গভর্নমেন্টালি অর্গানাইজড, নন-গভর্নমেন্টাল অর্গানাইজেশন বলা হয়।’

আরেক সেশনে অংশ নিয়ে দৈনিক নিউএজ সম্পাদক নূরুল কবীর বলেন, ‘বাংলাদেশ নিয়ে একটি ক্যাম্পেইন চলছে, তা হচ্ছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দেশ এবং ২০১৪ ও ২০১৮ সালে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন হয়েছে। এটি ভুল তথ্য। বিশ্বজুড়ে ভুল তথ্যের বিস্তার মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য বড় হুমকি। যারা ক্ষমতায় রয়েছেন, তারা ভুল তথ্য দিয়ে নিজের ক্ষমতা সুসংহত করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১০:২২:০২ ● ১২২ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ