স্বাবলম্বী দেড় হাজার কৃষক, ওপরে শিম নিচে মাছ

Home Page » সারাদেশ » স্বাবলম্বী দেড় হাজার কৃষক, ওপরে শিম নিচে মাছ
বৃহস্পতিবার ● ৯ নভেম্বর ২০২৩


শিম ও মাছ চাষ করেন প্রায় দেড় হাজার কৃষক।

মৎস্য ঘেরে মাছ চাষের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে শিম চাষ করে সাবলম্বী যশোরের কেশবপুরের কয়েকটি গ্রামের প্রায় দেড় হাজার পরিবার। কেশবপুর বাজার থেকে ভরতভায়না পর্যন্ত গ্রামীণ সড়কের দুপাশে দেখা মেলে শিমগাছের। এই গাছের মাচার আড়ালে দেখা যায় ছোট-বড় জলাশয়। সেই জলাশয়ের পাড় ঘেঁষে এখন শুধু শিমগাছের লতা। সড়কের দুই পাশে যতদূর চোখ যায় ততদূর সারি সারি শিমগাছের সমারোহ।

এ  উপজেলার গৌরিঘোনা ইউনিয়নে মোট বাসিন্দা প্রায় ৩৫শ’। এর মধ্যে শিম ও মাছ চাষ করেন প্রায় দেড় হাজার কৃষক। এ ইউনিয়নের ভরতভায়না, সন্যাসগাছা, ভেরচি, বুড়লি প্রভৃতি গ্রামে বেশিরভাগ মানুষই জলাশয়ে (ছোট-বড় ঘের) মাছ চাষের পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে শিমের আবাদ করে থাকেন। দু-একবার কীটপতঙ্গ আক্রমণ করলেও সম্প্রতি সময়ে লাভের মুখ দেখেছেন কৃষকেরা।

সন্যাসগাছা গ্রামের কৃষক আফসার সরদার বলেন, শিমগাছগুলোর এই সময়ে একটু পরিচর্যা প্রয়োজন হয়। বাজারে শিমের বেশ দাম। জলাশয়ের পাশে তিনশ’ মান্দা শিমগাছ লাগিয়েছি। গতদিন প্রতি কেজি শিম বিক্রি করেছি ৮৩ টাকা কেজি দরে। সেদিন খেত থেকে ১৩ কেজি শিম তুলেছি।

তিনি আরও বলেন, গত সপ্তাহে প্রতিকেজি শিম বিক্রি করেছিলাম ১১০ টাকা কেজি দরে। আস্তে আস্তে বাজারে শীতকালীন সবজি উঠছে, আর দামও কমছে। গত মাসে বৃষ্টির আগে এই শিমই বিক্রি করেছি ১৮০-১৯০ টাকা কেজি দরে। সেইসময় খেত থেকে সর্বোচ্চ ৩২ কেজি শিম তুলেছি।

তিনি বলেন, এখন শিমের একটাই শত্রু, সেটি হচ্ছে কালোমাকড়। গাছের পাতার নিচে এই মাকড় লাগলে পুরো পাতার রস খেয়ে ফেলে। এতে পাতা শুকিয়ে যায়। এই পোকা ওষুধে যেতে চাইছে না। ডিলারদের কাছ থেকে এক ধরণের ওষুধ নিয়ে ছিটাচ্ছি।

কৃষি বিভাগের লোকজন আসে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাঝেমধ্যে আসে। দু’একটা ওষুধের কথা বলে, কাজ হয় না।

পাশের গ্রাম ভরতভায়নার বাসিন্দা লাভলু হোসেন বলেন, ঘেরের পাশে আমার ১০ কাঠা জমি রয়েছে। মাসখানেক আগে ১৯০ টাকা কেজি দরে শিম বিক্রি করেছি। আস্তে আস্তে শিমের দাম কমে আসছে। দিন পনেরো আগেও দেড়শ টাকা দরে বিক্রি করেছি। ৩১ অক্টোবর এক মণ শিম বেঁচেছি ১১০ টাকা দরে। কালোমাকড় মারার জন্য একটু আগে ডিলারের কাছ থেকে পাইন ও আশামিল ৭২ নামে দুটো ওষুধ এনেছি। বিকেলে এগুলো গাছে প্রয়োগ করা হবে।

সন্যাসগাছা গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ঘের রয়েছে ৪৬ শতক জমিতে। এই ঘরে চিংড়ি ও সাদা মাছ যেমন, রুই-কাতলা চাষ করছি। ঘেরের পাড়ে কিছু লাউ গাছ আছে। গত মাস থেকে প্রতিদিনই লাউ কাটি। নিজেদের খাওয়ার পাশাপাশি সেগুলো বিক্রি করি। ১০ থেকে ১৫টি লাউ প্রতিদিন কাটা হয়। প্রতিটি লাউ ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে বিক্রি করেছি। দুইদিন আগে ১৮ কেজি শিম বিক্রি করেছি ১১০ টাকা দরে। এবার সর্বোচ্চ ১৯০ টাকা কেজি দরে শিম বিক্রি করেছি। সপ্তাহখানেক হলো কুমেড়োর ফলন শেষ হয়েছে। দুই হাজার টাকার বেশি কুমড়ো বেঁচেছি।

তিনি বলেন, তিন মাস পর মাছ তুলি। গত সপ্তাহে ১৫ হাজার টাকার মাছ বেঁচেছি। আমাদের গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই ঘেরের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে সবজি চাষ করে।

গৌরীঘোনা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর আফজাল হোসেন বলেন, গৌরীঘোনা, সুফলাকাটি, মঙ্গলকোট প্রভৃতি ইউনিয়নের মানুষ ঘেরের সঙ্গে সবজি চাষ করে থাকেন। আমাদের এই অঞ্চলে যেমন মাছের উৎপাদন ভালো তেমন সবজিও। এখানে বর্তমানে শিম চাষ বেশি হচ্ছে। এছাড়া লাউ, পালংশাক, কুমড়ো, টমেটোরও আবাদ হয়।

কেশবপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার রিমা আক্তারের বলেন, গোটা যশোর জেলা সবজি চাষে এগিয়ে। তেমন কেশবপুরেও বেশি সবজি চাষ হয়। আগাম সবজি হিসেবে গৌরীঘোনা ও সুফলাকাটি ইউনিয়ন এগিয়ে। এখানে বর্তমানে বেশ শিম চাষ হচ্ছে। কিছুদিন আগে আমরা গিয়েছিলাম তরমুজ চাষ দেখতে। এসব জায়গায় গ্রীষ্মকালীন তরমুজও ভালো হয়।

শিমগাছে কালোমাকড়ের আক্রমণ বিষয়ে তিনি বলেন, মূলত কালোমাকড় বলে কিছু নেই। অন্য কোনও পোকা কিংবা মাছি কি না- সেই বিষয়ে নিশ্চিত হতে আমি উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দিয়েছি। তাকে স্যাম্পল আনতে বলেছি। আগে দেখি, তার পরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, তিন মৌসুমের মধ্যে এই উপজেলায় খরিপ-১ এ ৭৫০ হেক্টর, খরিপ-২ এ ৮৪১ হেক্টর এবং রবি মৌসুমে কম-বেশি ৯৮০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়। এরমধ্যে খরিপ-১ এ গৌরীঘোনা ইউনিয়নে সমতল ও ঘের মিলিয়ে ১৩৫ হেক্টর, খরিপ-২ এ ১৬৩ হেক্টর এবং রবি মৌসুমে ১৭০-১৮০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়ে থাকে। এতে পর্যায়ক্রমে উৎপাদন ১৬.৫ থেকে ১৭ মেট্রিক টন, ১৭-১৭ মেট্রিক টন এবং রবি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২০-২২ মেট্রিক টন।

কেশবপুরের সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সজীব সাহা বলেন, সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী গৌরীঘোনা ইউনিয়নে ছোটবড় ১ হাজার ৪৫২টি ঘের রয়েছে, যার আয়তন ৭৬০ হেক্টর এবং সুপলাকাটিতে ১২১৬টি ঘেরের আয়তন ১৩৩০ হেক্টর। গত বছর গৌরীঘোনা থেকে মাছের উৎপাদন হয় ২৪২৬ মে.টন এবং সুফলাকাটি থেকে ৪৪৮৫ মেট্রিক টন। গত অর্থবছরে কেশবপুর উপজেলায় মোট উৎপাদন ৩৬ হাজার ৭৮৯ মেট্রিক টন। এরমধ্যে গলদা চিংড়ি ২১৯২ মেট্রিক টন আর বাগদা চিংড়ি ২৫২ মেট্রিক টন। চিংড়ি মাছের ৭০ শতাংশের বেশি উৎপাদন হয় গৌরীঘোনা ও সুপলাকাটি ইউনিয়নে বলে তিনি জানান।

বাংলাদেশ সময়: ১৫:১৭:১৩ ● ১৭৭ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ