ইয়ারজানের ‘জান’ বাবাই

Home Page » খেলা » ইয়ারজানের ‘জান’ বাবাই
সোমবার ● ১১ মার্চ ২০২৪


বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব–১৬ দলের গোলরক্ষক ইয়ারজান

 

বঙ্গনিউজঃ   ইয়ারজান; রোববারের পর থেকে ফুটবল অঙ্গনে এই নামটি থাকবে লোকের মুখে মুখে। অন্তত আগামী কয়েকটা দিন সবাই তাঁকে নিয়ে গল্প করবে। তাঁর পুরোনো গল্প খুঁজবে কিংবা তাঁর জীবনযুদ্ধের কথা মন দিয়ে শুনবে। তবে ইয়ারজান কেবল ফুটবল মাঠের যোদ্ধাই নন, বাস্তবেও তিনি এক যোদ্ধা; যিনি কিনা কঠিনেরে করেছেন আপন!

ছোটবেলা থেকেই অভাবের সঙ্গে দিন কাটানো ইয়ারজানের কাছে ফুটবল ছিল খানিকটা সময়ের জন্য দুঃখ ভেলার উপলক্ষ মাত্র। পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের খোপড়াবান্দি গ্রামের মেয়ে তিনি। বাবা আব্দুর রাজ্জাক শারীরিকভাবে অসুস্থ, কোনো কাজ করতে পারেন না। সে জন্য মা রেণু বেগমকেই সংসারের ঘানি কাঁধে নিতে হয়। তিন বেলা খাবার ঠিক রাখতে মেয়েকে বাসায় রেখেই অন্যের জমিতে কাজে নেমে পড়তেন রেণু বেগম।

এর মধ্যে ইয়ারজান সময় পেলেই পাড়ার অন্য বান্ধবীদের নিয়ে ফুটবল মাঠে নেমে পড়তেন। এভাবে দিনের পর দিন ফুটবল খেলে কিছুটা নিয়মকানুন রপ্তও করে ফেলেন। একটা সময় অনুশীলনের দুয়ার খোলে। এর পর আর পেছনে ফিরতে হয়নি। সাফের বয়সভিত্তিক দলে জায়গা পেয়ে নিজেকে আরও দক্ষ করে তোলেন। সব শেষ অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপে গোলকিপারের দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁর ঘাড়ে। আর দায়িত্ব পেয়েই দেখান ঝলক। গতকাল ফাইনালে দুটি পেনাল্টি আটকে হয়ে যান ফাইনালের নায়ক। নির্বাচিত হন সেরা কিপারও।

এমন প্রাপ্তির দেখা পেয়ে আবেগি ইয়ারজান চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। তবে সেরার দিনে বাবাকে ঠিকই স্মরণ করেছেন। জানিয়েছেন এই সাফল্যের ভাগ বাবাকেও দিতে চান, ‘আমার অনেক ভালো লাগছে। প্রথম টুর্নামেন্ট জিতলাম। সেরা গোলকিপার হওয়ার অনুভূতি একেবারেই আলাদা। প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নেমেই সেরা হয়েছি, শিরোপা জিতেছি। অনেক খুশি আজ আমি। এই সাফল্যের কৃতিত্ব আমি আমার বাবা ও কোচকে (গোলকিপার কোচ আরিফ আহমেদ পান্নু) দিতে চাই।’

এর পর আর কথা বাড়াতে পারেননি ইয়ারজান। আনন্দাশ্রু ঝরতে শুরু করে তাঁর দুই চোখ বেয়ে। পাশে থাকা কোচ পান্নু অবশ্য সব কৃতিত্বই দিয়েছেন ইয়ারজানকে, ‘আমরা কোচ হিসেবে বড়জোর কিছু কৌশল শিখিয়ে দিতে পারি। আজ ইয়ারজান যা করেছে, সব কৃতিত্ব তার। শিরোপানির্ধারণী টাইব্রেকারে সে তার স্নায়ুকে স্বাভাবিক রেখে অসাধারণ সেভ করেছে। টাইব্রেকারের আগ মুহূর্তে ও একটু ঘাবড়ে গিয়ে কান্না করছিল।

আমি কাছে ডেকে নিয়ে শুধু বলেছি– কোনো চাপ নিও না, তুমি শুধু একটা সেভ দাও। দেখবা আরও সেভ দিয়ে ফেলবা। তোমার ওপর আমার পূর্ণ আস্থা আছে। আল্লাহর অশেষ রহমত ছিল। ও দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়তে পেরেছে।’

বাংলাদেশ সময়: ১১:৪৯:৪১ ● ৭৩ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ