ব্যর্থতায় ভরাডুবি পেস উইকেট আর ব্যাটারদের

Home Page » ক্রিকেট » ব্যর্থতায় ভরাডুবি পেস উইকেট আর ব্যাটারদের
মঙ্গলবার ● ২৬ মার্চ ২০২৪


বঙ্গনিউজঃ   সিলেট টেস্টের তৃতীয় দিন সন্ধ্যায় প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর পাঠানো হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় লেখা ছিল– ‘খেলা দেখে ভালো লাগছে না। কথা বলার ইচ্ছা করছে না।’ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নাজমুল হোসেন শান্তদের ব্যাটিং দেখে লিপু চুপ হয়ে গেলেও নির্বাচক আব্দুর রাজ্জাক ছিলেন সরব। ম্যাচ চলাকালেই মিডিয়াতে প্রতিক্রিয়া দেন তিনি। ছন্নছাড়া ব্যাটিং তাঁকেও যে হতবিহ্বল করে দিয়েছে, সে কথা না বলে পারেননি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ দলের ম্লান পারফরম্যান্স অস্বস্তিতে ফেলেছে ক্রিকেট সংগঠকদেরও। প্রথম ইনিংসে পিছিয়ে থাকার পরও দ্বিতীয় ইনিংসে পরিকল্পিত ব্যাটিং দেখতে না পাওয়া হতাশ করেছে জাতীয় দলের সাবেকদের। কেউ কেউ ব্যাটারদের একাগ্রতা ও নিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। মিনহাজুল আবেদীন নান্নু ও হাবিবুল বাশার জানান, নিখুঁত পরিকল্পনা না থাকায় মানহীন ব্যাটিং প্রদর্শনী হয়েছে। আর বিকেএসপির সাবেক ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদীন ফাহিম তো ব্যাটারদের মধ্যে ভালো করার তাড়নাই দেখতে পাননি।

অথচ পেস-সহায়ক কন্ডিশনে বাংলাদেশের বোলিংয়ের শুরুটা ভালোই হয়েছিল। প্রথম সেশনে শ্রীলঙ্কার পাঁচ উইকেট তুলে নেওয়ায় টস জিতে বোলিং নেওয়ার যৌক্তিকতা প্রমাণ হয়। ৫৭ রানে পাঁচ উইকেট হারানো দলই জোড়া সেঞ্চুরিতে প্রথম ইনিংস শেষ করে ২৮০ রানে, ৬৮ ওভারে। অথচ পুরোনো বলে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ মুখ থুবড়ে পড়ে। ৮৩ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে টালমাটাল দল। ‘নাইটওয়াচম্যান’ তাইজুলের কল্যাণে (৪৭ রান) ৫১.৩ ওভারে অলআউট হয় ১৮৮ রানে। কেন ব্যাটারদের এ হাল– জানতে চাওয়া হলে সাবেক নির্বাচক হাবিবুল বাশার বলেন, ‘গত দুই-তিন বছর ধরে এ রকম উইকেটে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের টেস্ট দলের ব্যাটাররা এ রকম উইকেটে খেলে না। আমি থাকলে এ রকম উইকেট বানাতে দিতাম না। কারণ গত তিন বছর ধরে ঘরোয়া ক্রিকেটে দেখছি এ রকম উইকেটে ব্যাটাররা রান করতে পারে না। তারা এখনও এ ধরনের উইকেটে ব্যাট করতে শেখেনি। ঘরোয়া ক্রিকেটেও দুইশ-আড়াইশ রানের বেশি হয় না ইনিংসে। মুমিনুল সফল হয়েছে, কারণ সে নিয়মিত লিগে খেলে।’

৯২ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে আরও পরিণত ব্যাটিং করে শ্রীলঙ্কা। প্রথম ইনিংসের চেয়েও ভালো খেলেন ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ও কামিন্দু মেন্ডিস। এ দুই ব্যাটার উভয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করায় লঙ্কানদের জয় নিশ্চিত জেনে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। যে লড়াই ছিল পরাজয়ের ব্যবধান কমানোর। এই কাজও চাপহীন থেকে করতে পারেননি ব্যাটাররা। তৃতীয় দিন সন্ধ্যায় ৮.৪ ওভারে পাঁচ উইকেট হারিয়ে বিশাল পরাজয় নিশ্চিত করে ফেলেন। গতকাল মুমিনুল হক ও মেহেদী হাসান মিরাজের লড়াইয়ে ব্যবধান কিছুটা কমে। সিলেট টেস্ট বাংলাদেশ হেরেছে ৩২৮ রানে। শ্রীলঙ্কার ভালো ব্যাটিং করার কারণ ব্যাখ্যা করেন বাশার, ‘প্রথম ইনিংসে ওরা দেখিয়েছে নতুন বলে কিছুটা সংগ্রাম করলেও শাইন কমে যাওয়ার পর ব্যাট করা সহজ। প্রথম ২০ ওভার কঠিন, পরে সহজ। আমরা উভয় ইনিংসেই এই জায়গায় ভুল করেছি। উইকেটে সব সময় কিছু না কিছু ছিল, তবে নতুন বলে টিকে গেলে খেলা সহজ হয়ে গেছে যেটা কামিন্দু মেন্ডিস ও ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা দেখিয়েছে।’ বিকেএসপির সাবেক ক্রিকেট উপদেষ্টা ও বিশ্লেষক নাজমুল আবেদীন ব্যাটিং ব্যর্থতার পেছনে খেলোয়াড়দের মানসিক দৃঢ়তার ঘাটতি দেখেন, ‘সারাদিন ফিল্ডিংয়ের পর পাঁচশ রান তাড়া করতে নেমে সন্ধ্যায় ব্যাটিংয়ে মনোসংযোগ রাখা কঠিন। এই পরিস্থিতিতে মানসিক দৃঢ়তা লাগে। আমার মনে হয়, নিজেদের ধরে রাখতে না পারার খেসারত দিয়েছে বাংলাদেশ। তবে চেষ্টা করলে যে রান করা যায়, প্রথম ইনিংসে দেখিয়েছে তাইজুল।’ এ ক্রিকেট বিশ্লেষকের মতে, পেস ও বাউন্সি কন্ডিশনে খেলার অনভ্যস্ততার কাছে পরাজিত বাংলাদেশ। তিনি বলেন, ‘আমরা ঘরোয়া ক্রিকেটে এ ধরনের উইকেট ও বোলিংয়ের বিপক্ষে খেলি না। এ ধরনের পরিস্থিতি খুব কম মোকাবিলা করি। কিন্তু আমি নিশ্চিত, শ্রীলঙ্কা তাদের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নিয়মিত এ ধরনের ম্যাচ খেলে। ওদের একটা প্রদেশের সঙ্গে অন্য প্রদেশের যখন ক্রিকেট খেলা হয়, তখন এভাবেই খেলে।’ তবে ফাহিম মনে করেন প্রথম ইনিংসে লিড নেওয়া গেলে দ্বিতীয় ইনিংসে ভালো করার সুযোগ থাকত।

বিসিবির সাবেক প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু টেস্টের ব্যাটিং দেখে রীতিমতো হতাশ, ‘যাচ্ছেতাই ব্যাটিং। দ্বিতীয় ইনিংসে ভীষণ খারাপ করেছে। এভাবে ব্যাটিং করে টেস্ট ম্যাচ হয় না। আপনি খেলায় না জেতেন, অন্তত ৯০ ওভার ব্যাটিং করার পরিকল্পনা তো থাকতে হবে। উইকেটে গিয়েই শট খেলার চেষ্টা করে সবাই। টেস্টে তো এ রকম খেলে না। খেলোয়াড়দের নিজস্ব মূল্যায়নের যথেষ্ট অভাব। এখানে কেউ পরিকল্পনা করে ব্যাটিং করে না। এখানে এত রান তাড়া করার ক্ষেত্রে পরিকল্পনা করতে হতো। খেলায় না জিতি, ভালো ব্যাটিংয়ের চেষ্টা করা উচিত ছিল। এখানে যে ভুলগুলো হয়েছে সেগুলো শুধরে দ্বিতীয় টেস্টে ভালো খেলতে হবে।’ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট টেবিলে চার থেকে সাতে অবনমিত হওয়া বাংলাদেশের দ্বিতীয় টেস্ট চট্টগ্রামে ৩০ মার্চ থেকে।

বাংলাদেশ সময়: ১০:৫২:০৫ ● ৪৯ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ