নটরডেম কলেজ,যেখান থেকে আমি প্রতিনিয়ত শিখি- ড. জেবউননেছা

Home Page » শিক্ষাঙ্গন » নটরডেম কলেজ,যেখান থেকে আমি প্রতিনিয়ত শিখি- ড. জেবউননেছা
মঙ্গলবার ● ২৬ মার্চ ২০২৪


 প্রিন্সিপাল ফাদারের সাথে লেখক

সকালে নটরডেম কলেজে গিয়েছিলাম একটি কাজে।কলেজে প্রবেশ করতে গিয়েই আমি কনফিউজড হয়ে গেলাম,কলেজ কি খোলা নাকি বন্ধ? একটি শব্দ ও নেই।
অফিসে গিয়ে জানতে চাইলাম,শিক্ষার্থীদের কি ছুটি আজ? আমাকে জানালো,পরীক্ষা চলছে।আমি বললাম তাই বলে এত পিনপতন নীরবতা? আমাকে জানালো হলো, আমাদের কলেজে যখন ক্লাশ হয়,তখনও এমনই থাকে।কোন শব্দ নেই।তবে শব্দ ছাড়া ক্লাশের গল্প আগেই শুনেছিলাম।
যাই হউক,অফিসে বললাম প্রিন্সিপাল ফাদারের সাথে দেখা করতে চাই।আমার লেখা একটি বই উপহার দিব।
আমাকে অনুমতি দেয়া হলো।ফাদারের কক্ষে গিয়ে আমি অবাক হইনি বরং বিস্মিত হয়েছি,চাকচিক্যময় পৃথিবীতে, শো অফের পৃথিবীতে দেশের অন্যতম সেরা কলেজের ফাদারের কক্ষ এতটা ছিমছাম।
ফাদার আমাকে আগে থেকেই জানেন এবং চিনেন।
আমি ফাদারকে বললাম, ফাদার অভিনন্দন আপনার শিক্ষার্থীদের সফলতা আমাকে অভিভূত করেছে।
ফাদার বললেন,অনেক মনে করে আমরা সব মেধাবীদের নিয়ে নেই।আচ্ছা আপনি বলেন, শিক্ষার্থীরা ভাল করল,তাদের সময় ১ লক্ষ ২০ হাজার জিপি এ-৫ পেয়েছে। আমার কলেজে ২১০০ জন বিজ্ঞানে।আর আমরা মানবিকে জিপিএ ৩ এবং বানিজ্য বিভাগে জিপিএ-৩ চাই।আমরা বোর্ড নিয়ম অনুসরন করে সর্বোচ্চ জিপিএ -৫ নেইনা।আমরা এক ঘন্টার লিখিত পরীক্ষা নেই।এরপর কঠিন মৌখিক পরীক্ষা নেই।আমাদের কলেযে জিপিএ -৫ পাওয়া শিক্ষার্থী কম। তাহলে আমরা সব মেধাবীদের নেই।এ কথা সবাই কেন বলে?
আমি: ফাদার অনেকে হয়ত না জেনে বলেন,যারা জানেন তারা বলেন না।আমি বললাম,ফাদার আমি আপনাকে আমার সম্পাদিত “মুক্তিযুদ্ধ : বুদ্ধিজীবীর দৃষ্টিকোণ ও অভিজ্ঞতা ‘ বইটি উপহার দিতে এসেছি,এই বইয়ে আপনার কলেজের একজন শহিদের গল্প আছে।যার কবর এখনো শহিদের কবর হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি।তবে আমি এটা নিয়ে কাজ করছি।জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ কাউন্সিল,মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মহোদয়কে জানিয়েছি।
এই কথা শুনে ফাদার খুশি হলেন।।আমি ফেরার সময় ফাদারকে বললাম,ফাদার আমি গর্বিত এজন্য যে,আমি একজন নটরডেমিয়ানের স্ত্রী এবং একজন নটরডেমিয়ানের অভিভাবক। কোন দিন যদি কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সেবা করার জন্য আমি অভিভাবক হিসেবে নিযুক্ত হই,তাহলে আমি আপনার কলেজের নিয়ম অনুসরণ করব।কারণ আমি কোন ধরণের অপকর্ম যেমন: নিয়োগ ব্যবসায়ী দুর্নীতিবাজ,তোষামোদকারীদের প্রশ্রয় দিবনা।কারণ আমি দেশটাকে ভালবাসি। নিজের আখের গোছানোর জন্য কোন দায়িত্বগ্রহণ করতে রাজী নই ফাদার।কারণ আমার কোন পিছুটান নেই।
ফাদার পুনরায় খুশি হলেন।
আমি ধীরে ধীরে বেরিয়ে গেলাম ফাদারের কক্ষ থেকে। মনে মনে ভাবতে লাগলাম একটা কলেজ এতটা শৃঙ্খলাসম্পন্ন কি করে হয়।কেন আমরা সব প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমন করে গড়ে তুলতে পারছিনা।
যে কলেজের শিক্ষার্থীরা দেশ বিদেশে ছড়িয়ে আছেন,সে কলেজের অধ্যক্ষের কক্ষ এত ছিমছাম।এটাইত শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য। ছোট বেলা শিখেছিলাম দুটি প্রবাদ
“চকচক করলেই সোনা হয়না” এবং “ফলবান বৃক্ষ নত হয়। ” এই দুই প্রবাদের বাস্তবায়ন পুরোটাই দেখে এলাম নটরডেম কলেজে।
একজন অধ্যক্ষ ড. হেমন্ত পিউস রোজারিও, ফাদার,যার বিনয়ী এবং অহমিকা মুক্ত আচরণ আমাকে বারে বারে মুগ্ধ করে।
আর একটি হলো সাদামাটা এক চিলতে অধ্যক্ষের কক্ষ।যেখানে কাঠের চেয়ারই বসার আসন।নেই কোন আধুনিকতার তিল পরিমাণ ছোঁয়া।
এই শো অফের যুগে এই কলেজ একটি ব্যতিক্রম।যা থেকে আমিও শিখি সারাদিন।আসুন আমরাও শিখি। একটি প্রতিষ্ঠান দাড়াতে পারে শুধুমাত্র আন্তরিকতা, প্রচেষ্টা, শৃঙ্খলার মাধ্যমে।পৃথিবীটা থাকার জায়গা না।তাই যা করি, তাই যেন সততা নিয়ে করি,যেন হাশরের মাঠেও রাব্বুল আলামিনের কাছে পরিস্কার থাকতে পারি।
সর্বত্র সততা এবং দেশপ্রেমের জয় হউক।

সূত্রঃ লেখকের ফেইসবুক

বাংলাদেশ সময়: ১৫:২৪:৩৫ ● ১১২ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ