
বঙ্গ নিউজ ডেস্ক:জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের মধ্যে এখনও ১৮৫ জন ঢাকার তিন হাসপাতালে অবস্থান করছেন। তাদের মধ্যে ১৭ জন এখনও হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার অবস্থায় আছেন। অন্যদের একাধিকবার ছাড়পত্র দেওয়া হলেও তারা হাসপাতালে থাকছেন।
রাজধানীর জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) এবং বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএমইউ) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এ তথ্য জানা গেছে। বর্তমানে নিটোরে ৭৪ জন, চক্ষুবিজ্ঞানে ৫৫ ও বিএমইউতে ৫৬ জন আছেন।
হাসপাতালের নিয়মশৃঙ্খলা না মানায় কয়েক মাস ধরে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে থাকা জুলাইযোদ্ধাদের সঙ্গে চিকিৎসক-নার্স-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পর্কের অবনতি হয়। গত ২৮ মে নিরাপত্তার দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করেন চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফরা। এ সময় তাদের ওপর জুলাইযোদ্ধা ও সাধারণ রোগীর স্বজনরা হামলা চালান বলে অভিযোগ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ওই সংঘর্ষের সময় পঙ্গু হাসপাতাল থেকে বেশ কয়েকজন জুলাইযোদ্ধা গিয়ে তাতে যোগ দেন। এ ঘটনায় চিকিৎসকসহ ১৫ জন আহত হন। সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তখন থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত পুরো হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে আছে।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর হাসপাতাল পরিদর্শনে যান এবং জুলাইযোদ্ধাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। তবে সেবা চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। অচলাবস্থার কারণে প্রতিদিন কয়েকশ সাধারণ রোগী চিকিৎসাসেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক খায়ের আহমেদ চৌধুরী বলেন, বর্তমানে যে ৫৫ জন হাসপাতালে আছেন, এর মধ্যে আটজনকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়ার প্রয়োজন। বাকিদের একাধিকবার ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। তারা হাসপাতাল ছেড়ে যাচ্ছেন না। পঙ্গু হাসপাতাল একই পরিস্থিতি নিটোর বা পঙ্গু হাসপাতালে।
এখানে ৭৪ জন জুলাইযোদ্ধা অবস্থান করছেন। হাসপাতালটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কেনান বলেন, বর্তমানে হাসপাতালে যারা অবস্থান করছেন, তাদের কারও হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন নেই। তারা দু-এক মাস পরপর ফলোআপে এসে চিকিৎসা নিতে পারবেন। তবে কয়েকজন আহতকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো জরুরি। তাদের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। ঈদের পর কয়েকজনকে বিদেশে পাঠানো হবে।
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) কেবিন ব্লকের তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় আহত আছেন ৫৬ জন। এখানে ৮০টি কেবিন আছে। বাকি কেবিনগুলোতে অন্য রোগী ভর্তি করতে দেন না জুলাইযোদ্ধারা– এমন অভিযোগ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। এই ৫৬ জনের মধ্যে ৯ জনকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া প্রয়োজন বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বিএমইউর পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু নোমান মোহাম্মদ মোছলেহ বলেন, আহতদের মধ্যে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ রয়েছে। তাদের মনমানসিকতা এক রকম নয়। আহতের একটি অংশ হাসপাতালে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে। তারা অনেক রাত পর্যন্ত বাইরে থাকেন, কেবিনে উচ্চ স্বরে গানবাজনা করেন। অন্য রোগীরা এ নিয়ে অভিযোগ করছেন। আমরা বিষয়টি মানবিকভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি।
জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী) অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান বলেন, জুলাইযোদ্ধাদের সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি উন্নতির চেষ্টা করা হচ্ছে। তাদের দাবি নিয়ে কাজ করছে সরকার। তবে এসব দাবি বাস্তবায়নে সময় লাগবে। তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য এ পর্যন্ত ৫৭ জনকে বিদেশে পাঠানো হয়েছে। চিকিৎসা শেষে ২০ জন ফিরে এসেছেন। ঈদের পর আরও ২০ জনকে বিদেশে নেওয়ার প্রস্তুতি আছে।