এখনই ফিলিস্তিন রাষ্ট্র নয়- ডোনাল্ড ট্রাম্প

Home Page » জাতীয় » এখনই ফিলিস্তিন রাষ্ট্র নয়- ডোনাল্ড ট্রাম্প
মঙ্গলবার ● ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫


এখনই ফিলিস্তিন রাষ্ট্র নয়- ডোনাল্ড ট্রাম্প

গাজা উপত্যকায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি প্রস্তাব প্রকাশ করেছে হোয়াইট হাউস। বলা হচ্ছে, এই প্রস্তাবে হামাস ও ইসরায়েল রাজি হওয়া মাত্রই যুদ্ধ বন্ধ করা হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সোমবার হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরে তারা যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা তুলে ধরেন ট্রাম্প। ইসরায়েল এই প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে। ট্রাম্প বলেছেন, হামাস এতে রাজি না হলে গাজায় ইসরায়েল যা করতে চায়, তাতেই যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন দেবে।

হোয়াইট হাউসের প্রস্তাবগুলো হলো:

১. গাজাকে উগ্রপন্থী ও সন্ত্রাসবাদ মুক্ত করা হবে। যাতে এখান থেকে প্রতিবেশীদের জন্য নতুন করে হুমকি সৃষ্টি না হয়।

২. গাজার বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তি সহ্য করছে। তাই উপত্যকাকে স্থানীয়দের কল্যাণের জন্য পুনর্নির্মাণ করা হবে।

৩. ইসরায়েল ও হামাস এই প্রস্তাবে সম্মত হলে, সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধ শেষ হবে। ইসরায়েলি বাহিনী জিম্মিদের মুক্তি দেবে। সব সামরিক অভিযান, যেমন বিমান ও আর্টিলারি হামলা স্থগিত থাকবে।

৪. ইসরায়েল এই প্রস্তাব মেনে নেওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সব জিম্মিদের (জীবিত বা মৃত) ফেরত দেওয়া হবে।

৫. সব জিম্মি ফেরত দেওয়ার পর, ইসরায়েল যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ২৫০ বন্দিকে মুক্তি দেবে। এ ছাড়া, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে আটককৃত গাজার ১ হাজার ৭০০ বাসিন্দাকেও মুক্তি দেবে। প্রতিটি ইসরায়েলি জিম্মির বিনিময়ে তেল আবিব ফেরত দেবে ১৫ জনকে।

৬. সব জিম্মি ফেরত আসার পর, হামাসের যেসব সদস্য শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও অস্ত্র জমা দেবে তাদের সাধারণ ক্ষমা করা হবে। এই গোষ্ঠীর যেসব সদস্য গাজা ছাড়তে চাইবে তাদের নিরাপদে অন্য দেশে পাঠানো হবে।

৭. এই প্রস্তাব গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে গাজায় পূর্ণ সহায়তা পাঠানো শুরু হবে। পাশাপাশি অবকাঠামো (পানি, বিদ্যুৎ, পয়ঃনিষ্কাশন, হাসপাতাল) পুনর্গঠন, ধ্বংসাবশেষ অপসারণ ও সড়ক চালুর জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পৌঁছানো হবে।

৮. জাতিসংঘ ও এর সংস্থা এবং রেড ক্রিসেন্টের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় এমন আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে গাজায় সহায়তা প্রবেশ ও বিতরণ করা হবে। রাফাহ ক্রসিং খোলার বিষয়টিও গত ১৯ জানুয়ারি হওয়া চুক্তির অধীনে কার্যকর হবে।

৯. গাজা একটি অন্তর্বর্তী শাসনের অধীনে থাকবে। যেটি পরিচালিত হবে অরাজনৈতিক ফিলিস্তিনি কমিটি দ্বারা। তারা গাজার মানুষের জন্য দৈনন্দিন জনসেবা ও পৌরসভার কাজ পরিচালনা করবে। এই অরাজনৈতিক কমিটি গঠিত হবে যোগ্য ফিলিস্তিনি ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের নিয়ে। এই কমিটির কাজ তদারকি করবে ‘বোর্ড অব পিস’ নামের আরেক আন্তর্জাতিক সংস্থা। যেটির সভাপতি হবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অন্য সদস্যদের নাম পরে ঘোষণা হতে পারে। তবে এই সদস্যদের মধ্যে থাকবেন যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার। এই সংস্থা (বোর্ড অব পিস) একটি কাঠামো নির্ধারণ ও গাজা পুনর্গঠনের জন্য তহবিল পরিচালনা করবে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) তাদের সংস্কার কর্মসূচি সম্পন্ন এবং নিরাপদ ও কার্যকরভাবে গাজার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার উপযোগী হলে এই সংস্থার দায়িত্ব শেষ হবে।

১০. ট্রাম্প একটি অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করবেন। এতে সহযোগিতা করবেন মধ্যপ্রাচ্যের আধুনিক শহরগুলো তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

১১. একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হবে, যেখানে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে অগ্রাধিকারমূলক শুল্ক ও প্রবেশাধিকার হার নির্ধারণ করা হবে।

১২. কাউকে গাজা ছাড়তে বাধ্য করা হবে না। যারা যেতে চাইবে, তারা যেতে পারবে ও ফিরে আসতেও পারবে। মানুষকে গাজায় থেকে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হবে এবং একটি উন্নত গাজা গড়ার সুযোগ দেওয়া হবে।

১৩. গাজার শাসনে হামাস বা অন্য কোনো দলের সরাসরি, পরোক্ষ ভূমিকা থাকবে না। সব সামরিক অবকাঠামো যেমন- টানেল, অস্ত্র তৈরির কারখানা ধ্বংস করা হবে। নতুন গাজা একটি সমৃদ্ধ অর্থনীতি গড়ার ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে।

১৪. হামাস ও অন্যান্য দল কোনো হুমকি সৃষ্টি করবে না- সে বিষয়ে আঞ্চলিক অংশীদাররা নিশ্চয়তা দেবে।

১৫. আরব ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে মিলে যুক্তরাষ্ট্র অস্থায়ীভাবে গাজায় ‘ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাবিলাইজেশন ফোর্স (আইএসএফ)’ মোতায়েন করবে। এই বাহিনী গাজার পুলিশ বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেবে এবং জর্ডান ও মিশরের সঙ্গে পরামর্শ করবে। আইএসএফ ইসরায়েল ও মিশরের সঙ্গে সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করবে।

১৬. ইসরায়েল গাজা দখল করবে না। আইএসএফ যখন নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবে, ইসরায়েল তখন তাদের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে (আইডিএফ) ধাপে ধাপে গাজা থেকে প্রত্যাহার করবে।

১৭. হামাস যদি এই প্রস্তাব গ্রহণে বিলম্ব বা প্রত্যাখ্যান করে তবে উল্লিখিত পদক্ষেপগুলো (যেমন সহায়তা বৃদ্ধি) কেবল আইএসএফের কাছে আইডিএফের হস্তান্তর করা এলাকায় চালু হবে।

১৮. সহনশীলতা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য একটি আন্তঃধর্মীয় সংলাপ প্রক্রিয়া স্থাপন করা হবে।

১৯. গাজার পুনর্গঠন ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সংস্কার কর্মসূচি সম্পন্ন হওয়ার পরই আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মতো একটি বিশ্বাসযোগ্য পথ তৈরি হবে।

এবং
২০. যুক্তরাষ্ট্র শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও রাজনৈতিক দিক নির্দেশনায় ঐকমত্য গড়ার জন্য ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে সংলাপ আয়োজন করবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫:২৬:৪৯ ● ৪৮ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ