
দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে কাল বৃহস্পতিবার দেশের মাটিতে পা রাখছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তাঁর এই প্রত্যাবর্তন শুধু একজন রাজনৈতিক নেতার দেশে ফেরা নয়, বরং বাংলাদেশের রাজনীতির নতুন অধ্যায়ের সূচনা হিসেবে দেখছে বিএনপি।
তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন স্মরণীয় করে রাখতে ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে নেতাকর্মী-সমর্থকের ঢল নামাতে বড় প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি। জনসমাগমের দিক দিয়ে অতীতের সব রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের রেকর্ড ভাঙার প্রত্যাশা করছেন বিএনপি নেতারা।
বিএনপি নেতাদের দাবি, তারেক রহমানের দেশে ফেরা উপলক্ষে যে উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে, তাতে উপস্থিতির দিক দিয়ে অতীতের সব আয়োজন ছাড়িয়ে যাবে। নেতাকর্মীর পাশাপাশি সাধারণ মানুষও এই গণসংবর্ধনায় অংশ নেবেন।
ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় ২০০৮ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে সপরিবারে যুক্তরাজ্যে যান তারেক রহমান। এরপর থেকে সেখানেই অবস্থান করছিলেন। স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান কয়েকবার দেশে এলেও তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারেননি।
বিএনপি সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন তিনি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে রাজধানীর কুড়িলের ৩০০ ফুট এলাকায় গণসংবর্ধনার আয়োজন করেছে দলটি। পুরো আয়োজন সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ রাখতে কাজ করছেন নেতাকর্মীরা। নিরাপত্তা নিশ্চিতে দলের পাশাপাশি সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তরফেও নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের জন্য ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে আনুষ্ঠানিক অনুমতি পেয়েছে দলটি। মঞ্চ নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। দফায় দফায় দলটির শীর্ষ নেতারা অনুষ্ঠানস্থল পরিদর্শন করছেন।
বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, সংবর্ধনায় অন্তত ৫০ লাখ মানুষের উপস্থিতির প্রত্যাশা করছেন তারা। বিশেষ করে সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলের শক্তি দেখানোর লক্ষ্যও রয়েছে এই আয়োজনের পেছনে। গতকাল মঙ্গলবার গণসংবর্ধনা মঞ্চ পরিদর্শন শেষে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আশা করছি, অর্ধকোটি মানুষের উপস্থিতি হবে।
এরই মধ্যে সারাদেশ থেকে নেতাকর্মী ঢাকা আসতে শুরু করেছেন। দলের শীর্ষ নেতারা তারেক রহমানকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানাবেন।
স্থায়ী কমিটির বৈঠক
তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে গত সোমবারের বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ সময় তারেক রহমানকে ঢাকা থেকে নির্বাচন করতে অনুরোধ জানান নেতারা।
বৈঠকে তারেক রহমানের সংবর্ধনার মঞ্চে কারা উপস্থিত থাকবেন সেটি নিয়েও কথা বলেছেন নেতারা। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ছাড়াও ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি এবং দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সুপার ‘টু’ নেতারা থাকবেন। এর বাইরে জুলাইযোদ্ধা নিহত ও আহত পরিবারের একজন করে সদস্য থাকবেন।
দেশে পৌঁছার পর তারেক রহমান বিমানবন্দর থেকে সরাসরি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। এরপর এভারকেয়ার হাসপাতালে তাঁর মা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেখতে যাবেন।
শাহজালালে নিরাপত্তা জোরদার
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও এর আশপাশ এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বেসামরিক বিমান চলাচল (বেবিচক) কর্তৃপক্ষ জানায়, নিরাপত্তাজনিত কারণে বিমানবন্দরে নির্ধারিত যাত্রী ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবেন না। বেবিচক কর্তৃপক্ষের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আজ বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত নির্ধারিত যাত্রী ছাড়া সব ধরনের সহযাত্রী ও ভিজিটরের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে।
দেশে ফেরার প্রস্তুতিতে তারেক রহমান
বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরার সার্বিক প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ট্রাভেল পাস হাতে পেয়েছেন তিনি। বিমান বাংলাদেশের নির্ধারিত ফ্লাইটটি আজ বুধবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে। তাঁর সফরসঙ্গী পাঁচজন। এর মধ্যে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান, মেয়ে জাইমা জারনাজ রহমানও রয়েছেন।
সর্বোচ্চ গুরুত্ব নিরাপত্তা
বৃহস্পতিবার বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এ কে এম শামছুল ইসলামকে। সরকারের তরফেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। দেশে ফেরার পর তারেক রহমান যাতায়াতের সময় পাবেন পুলিশি পাহারাসহ বিশেষ নিরাপত্তা। এ ছাড়া তাঁর বাসভবন ও অফিসেও থাকবে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা।
এদিকে নিরাপত্তাজনিত হুমকির কথা উল্লেখ করে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফেরার আগে তারেক রহমানের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) নিরাপত্তার আবেদন করেছে দলটি।