অতুলপ্রসাদ সেন-স্বপন চক্রবর্তী
Home Page » সাহিত্য » অতুলপ্রসাদ সেন-স্বপন চক্রবর্তী
( পঞ্চকবি খ্যাতদের একজন হলেন অতুলপ্রসাদ সেন। তাঁর জন্ম দিনে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কিছু লিখেছিলাম । )
প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়া-শোনা শেষ করেই তিনি সোজা চলে গেলেন বিলেতে। লন্ডনের মিডল টেম্পলে শুরু করলেন পড়াশোনা। একদিন সেখানেই ঘটলো অদ্ভুত এক ঘটনা। বড় মামা কৃষ্ণগোবিন্দ গুপ্ত সপরিবারে বিলেতে আসলেন। বড় মামার মেয়ে ছিলেন হেমকুসুম। হেমকুসুম সুন্দরী সুশ্রী সু-গায়িকা। সুন্দর বেহালাও বাজান। তার বেহালা শুনতে শুনতে কখনও কখনও ব্যারিস্টারি পড়ুয়া সেই দাদাটি তন্ময় হয়ে পড়তেন। কখনও কখনও মায়ের জন্য যখন মন খারাপ হতো তখনই সেই হেমকুসুমই কাছে এসে সান্তনা দিতেন। আর এভাবেই শুরু হলো ভালো লাগা। ক্রমশ দানা বেঁধে উঠলো গভীর এক বন্ধুত্ব। গভীর এক ঘনিষ্ঠতা। যাকে বলা যায় ভাই-বোনের এক নিষিদ্ধ সম্পর্ক। ব্যারিস্টারি পড়ুয়া সেই ছাত্রটি আর কেউ নন, তিনি ছিলেন বাংলা সঙ্গীত জগতের বিশিষ্ট সুরকার , গায়ক, গীতিকার,সঙ্গীতজ্ঞ অতুল প্রসাদ সেন। ঊনিশ শতকের দ্বিতীয় ভাগে বাঙ্গালী যে চারজন কিংবদন্তী সঙ্গীতজ্ঞ পেয়েছিলেন , তাঁরা হরেন, রবীন্দ্রনাথ, ঠাকুর, দ্বিজেন্দ্র লাল রায়, রজনীকান্ত সেন, এবং অতুল প্রসাদ সেন। বয়োকনিষ্ঠ কাজী নজরুল ইসলাম এসেছেন তারও অনেক পরে। তা গানের সংখ্যার বিচারে অতুলপ্রসাদ সেন তার সমসাময়িক তিন সঙ্গীতজ্ঞের চাইতে ছিলেন বেশ পিছিয়ে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেখানে লিখেছেন প্রায় দু’হাজারের অধিক গান, দ্বিজেন্দ্রলাল রায় যেখানে লিখেছেন প্রায় পাঁচশত গান এবং রজনীকান্ত সেন লিখেছেন প্রায় দু’শ নব্বইটি গান, সেখানে অতুলপ্রসাদ সেন লিখেছেন প্রায় দু’শ আটটি গান। তবে পঞ্চকবির মধ্যে কাজী নজরুলের গানের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি- প্রায় চার হাজার গান।
যা হোক, অতুলপ্রসাদ সেন গানের মধ্যে গানের স্বকীয় তাল লয়, অক্ষুন্ন রেখে হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের মূর্ছনায় বা তার মিশেলে গানের মধ্যে তিনি যে অন্তলীন মুগ্ধতা তৈরী করেছিলেন, তার সেই অতুলনীয় কাজের জন্য তিনি হয়ে রইলেন সবার থেকে আলাদা।
বাংলা সঙ্গীত জগতের মৌলিক প্রতিভায় ভাস্বর এক নক্ষত্র। ২০শে অক্টোবর ছিল অতুল প্রসাদ সেনের জন্মদিন। ১৮৭১ সালের এই দিনে তিনি ঢাকায় তার মাতুলালয়ে জন্ম গ্রহণ করেন। তাদের আদি নিবাস শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মগর গ্রামে।
আমার ধারণা, সঙ্গীত প্রেমি বাঙ্গালি মানুষ একজনও পাওয়া যাবে না যিনি অতুলপ্রসাদ সেনের গান শুনেনি। তাঁর সেই বিখ্যাত গানগুলির কথা আজ বারবার মনে পড়ে যায়- “উঠো গো ভারত লক্ষী” । ১৮৯০ সালে ইংলেন্ড যাবার পথে ভেনিসের কাছে জাহাজে বসেই একটা বিদেশী গানের সুরে মোহিত হয়ে ঐ সুরকে মাথায় রেখে অতুলপ্রসাদ সেন লিখে ফেলেন এই বিখ্যাত গানটি। কিংবা “ বল বল বল সবে, শত বীণা বেনু রবে” অথবা “ হও ধর্মেতে ধীর হও কর্মেতে বীর” কিংবা অত্যাশ্চর্য সেই গান, যা স্বাধীনতা যুদ্ধের অনুপ্রেরণা ছিল, “ মোদের গরব মোদের আশা, আ-মরি বাংলা ভাষা।” অথবা আরও বলা যায়- “ কে তুমি বসি নদীকূলে একেলা,কার লাগি এতো উতলা, কে তরী বাহি আসিবে গাহি খেলিবে তার সনে খেলা। “অথবা- “কেন এরে মোর ঘরে আগে নাহি বলিয়া” বা “ আমায় রাখতে যদি আপন ঘরে, বিশ্ব ঘরে পেতাম ঠাঁই” ইত্যাদি।
বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ দীলিপ কুমার রায় তাঁর সম্পর্কে একবার বলে ছিলেন –জীবনে গভীর বেদনা গভীর যন্ত্রণা বেশ ভালো, যদি সেই বেদনা আঁধারে তারার মতো ফুল ফুটাতে পারে। এ কথা থেকে একটা জিনিষ পরিষ্কার বুঝা যায় যে, অতুলপ্রসাদ সেন দেশাত্মবোধক গান অথবা ভক্তিরসের গান বা প্রেমের গান লিখলেও গানের আঁধার ছিল তাঁর ব্যক্তিগত বেদনা, ব্যক্তি গত যন্ত্রণা। তা প্রশ্ন হলো কি তাঁর সেই যন্ত্রণা ? যা গভীর অন্ধকারে নক্ষত্রের মতো অসংখ্য গানের ফুল ফুটিয়ে ছিল ?
( চলবে )
বাংলাদেশ সময়: ১৯:৫৭:৩৬ ● ৬৭৭ বার পঠিত
পাঠকের মন্তব্য
(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)-
আয়ের ওপর ১০ শতাংশ কর আরোপ: ফ্রিল্যান্সিংয়ে বড় ধাক্কার শঙ্কা
শনিবার ● ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ -
১৭ মিনিটের ব্যবধানেই দুই এমপির মৃত্যু
শনিবার ● ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ -
জয় মায়ের জন্মদিন উদযাপন করলেন
শুক্রবার ● ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ -
ভূমধ্যসাগরে এ বছর ২৫০০ অভিবাসনপ্রত্যাশী নিখোঁজ
শুক্রবার ● ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ -
সেনাশাসন জারি মণিপুরে
শুক্রবার ● ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ -
মধ্যনগরে সমিতির মধ্যস্বত্বভোগী চক্রের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন
শুক্রবার ● ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩
-
১৭ মিনিটের ব্যবধানেই দুই এমপির মৃত্যু
শনিবার ● ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ -
আয়ের ওপর ১০ শতাংশ কর আরোপ: ফ্রিল্যান্সিংয়ে বড় ধাক্কার শঙ্কা
শনিবার ● ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩
আর্কাইভ
Head of Program: Dr. Bongoshia
News Room: +8801996534724, Email: [email protected] , [email protected]