রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন: ২৯০ তম পর্ব:-জালাল উদ্দীন মাহমুদ

Home Page » সাহিত্য » রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন: ২৯০ তম পর্ব:-জালাল উদ্দীন মাহমুদ
শনিবার ● ১০ জুন ২০২৩


জালাল উদ্দীন মাহমুদ

ছুটি নিয়ে ছুটাছুটি -২
————————-
ব্যাংকে ছুটি নিয়ে বিড়ম্বনার থেকে কষ্টদায়ক বোধ হয় আর হয় না- এ বিষয়টি উল্লেখ করে রাজশাহীর জনাব খন্দকার আমানুল ইসলাম স্যার (ব্যাংকে চাকরিকাল ১৯৬৫-২০০০ ) লিখেছেন -
“স্থান ও পাত্রের নাম উল্লেখ করতে চাই না। কারণ জানি না আজ তিনি ইহজগতে আছেন কি না।পাকিস্তান আমলের কথা বলছি । বৃহত্তর রংপুর জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের থানা সদর।অল্প কিছু দিন হলো হাবিব ব্যাংকের একটি শাখা এখানে খোলা হয়েছে। মাত্র দুজন অফিসার - একজন ম্যানেজার, অন্যজন সেকেন্ড অফিসার। কোনও ক্যাশিয়ার নাই। স্থানীয় লোকজন এবং গ্রাহক সকলেই সেকেন্ড অফিসারকে ক্যাশিয়ার হিসাবেই সম্বোধন করতো। কারণ তাকেই ক্যাশ লেনদেন করতে হতো।
তো শাখার এ সেকেন্ড অফিসার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য এম,এ,পাশ করে অগ্রণী ব্যাংকের পূর্বসূরী হাবিব ব্যাংকে অফিসার হিসাবে যোগ দেন। তার পারিবারিক ঐতিহ্যও ঈর্শনীয়। বাবা একজন নামকরা ডাক্তার এবং আওয়ামী লীগের সক্রিয় প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। সু পাত্রও বটে। তাই ঘটকরা বসে থাকেনি। বিয়ের দিনক্ষণ ত্বরিত নির্ধারিত হয়ে গেল। কিন্তু বাদ সাধলো এই ছুটি। যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করা হল।কিন্তু ছুটির খবর নাই।কারণ শুধু ছুটি চাইলেই তো হবেনা। তার পরিবর্তে একজন রিলিভার লাগবে। এদিকে বিয়ের দিন দ্রুত এগিয়ে আসছে।সুতরাং টেলিগ্রাম ভেজো। Date of marriage fixed on………….and everything is settled. Please grant leave and send reliver immediately. যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে তার এ টেলিগ্রামে জবাব এলো “postpond marriage,reliver not available.” বুঝুন ব্যাপারটা!!!”
** ** **
জনাব খন্দকার আমানুল ইসলাম স্যার ছুটি নিয়ে তার চাকরি জীবনের আর একটি ঘটনার উল্লেখ করেছেন-
“ আমি তখন গাইবান্ধা শাখায় সেকেন্ড অফিসার। ঐ শাখার আমার পূর্বের সেকন্ড অফিসারের সঙ্গে ম্যানেজারের বনিবনা হচ্ছিল না দীর্ঘদিন দিন থেকেই।কারণ ব্রাঞ্চ ম্যানেজার ননগ্রাজুয়েট আর সেকন্ড অফিসার এম,এ,। আঞ্চলিক কার্যালয়ে বিষয়টি জানিয়ে একজন ভালো কর্মকর্তা দেওয়ার অনুরোধ জানালে জোনাল হেড আমাকে সেখানে পোস্টিং দেন। নতুন শাখায় আমার অবশ্য এ্যাডজাস্টমেন্টের কোন সমস্যা হয়নি।
আমার স্ত্রী প্রমবারের মত সন্তান সম্ভবা এবং সে সময় তার মা- ভাইয়ের বাড়িতে তখন অবস্থান করছিলো। প্রসবের নির্ধারিত দিন ঘনিয়ে আসলে ছুটির আবেদন জানালাম এবং যথারীতি অবাঙালি স্টাফ অফিসারের ইন্ধনে তা প্রতাখ্যান করা হলো বার্ষিক ক্লোজিং এর অজুহাতে।
এদিকে বার্ষিক ক্লোজিং উপলক্ষে জোনাল হেডের ব্রাঞ্চ ভিজিটের কর্মসূচি অনুযায়ী অক্টোবরের প্রথম দিকে একদিন আমাদের শাখায় পদার্পণ করে আমাকে মনমরা দেখে স্যারের ভালো লাগেনি ।ম্যানেজারের সাথে লাঞ্চ করতে গিয়ে আমার ব্যাপারটা তিনি অবহিত হন।তাই লাঞ্চ থেকে ফিরেই আমার পিঠ চাপড়িয়ে সহানুভূতির সাথে বললেন “Mr.Islam don’t worry, your releiver will come today positively. ঠিক তাই, তবে একজন নয়,ঐদিন সন্ধ্যায় একজন এবং পরের দিন সকালে আরো একজন রিলিভার এসে হাজির হয়ে গেল।
তাদর একজনকে ফেরত পাঠিয়ে অন্যজনকে দ্বায়িত্বভার অর্পণ করে পরদিন রাজশাহী রওনা হলাম যেখানে আমার স্ত্রী সদ্যপ্রসূত কন্যা নিয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করছিল।
১৯৬৬ সালের ৪ঠা অক্টোবর আমি আমার প্রথম কন্যা সন্তানের গর্বিত পিতা হই।
** ** **
ছুটি নিয়ে বিড়ম্বনা ব্যাংকারদের সারা জীবনের। আমিও ব্যতিক্রম নই। আমার জীবনে ছুটি নিয়ে বিড়ম্বনার অনেক ঘটনা আছে। তার মধ্যে অন্ততঃ ৩টি ঘটনা আমি এ প্রসংগে উল্লেখ করতে চাই। সেসব ঘটনা আমার জন্য দুঃখজনক হলেও কিছুটা রঙে ভরা ছিল। রঙে ভরা দুঃখজনক সে ঘটনাগুলো এখন একে একে উপস্থাপন করছি-
পরবর্তী পর্ব আগামীকাল রাত সাড়ে নয়টায় ।।।

বাংলাদেশ সময়: ১১:১০:১৩ ● ১৮৬ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ