রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন:৩১৪ তম পর্ব-জালাল উদ্দীন মাহমুদ

Home Page » সাহিত্য » রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন:৩১৪ তম পর্ব-জালাল উদ্দীন মাহমুদ
সোমবার ● ২৪ জুলাই ২০২৩


জালাল উদ্দীন মাহমুদ

হাজেরা আপার জল চিকিৎসা -১২
হাজেরা খাতুন। আমার ব্যাচমেট। পোস্টিং আমাদের সপ্তপদী মার্কেট শাখার সাথেই লাগানো জোনাল অফিসে। সেদিন মানে কাজেমউদ্দিন স্যারের জল চিকিৎসা পর্ব ব্যর্থ হবার পরের দিন অফিস শুরুর সাথে সাথে হাজেরা আপা হাজির। আমাকে দেখেই হাউ-কাউ করে বলে উঠল
– জালাল , এ রফিক সাহেব যে এতো বড় কবিরাজ তোরা তা আমাকে আগে বলিসনি কেন?
আমি বললাম- আপনাকে কে বলল যে রফিক সাহেব বড় কবিরাজ?
-কাজেমউদ্দিন স্যার বলল। কয়েকদিন ধরেই আমি অসুস্থ । আজ সকালে অফিসে এসে একটু বেশি অসুস্থ বোধ করছিলাম। তখন কাজেমউদ্দিন স্যার বলল রফিক সাহেব নাকি বিখ্যাত কবিরাজ। জল চিকিৎসা না কী চিকিৎসা করে উনি নাকি সব রোগ ভালো করে দিতে পারেন। আপনি নাকি সব জানেন।
হাজেরা আপা হয়তো বয়সে আমার চেয়ে বছর দু‘য়েক সিনিয়র হবেন। আমি সব সময় তাকে আপনি সম্বোধন করে কথা বলতাম। কিন্তু সে আমাকে তুই, তুমি, আপনি যখন যা মন চায় তাই বলেই সম্বোধন করত। শুধু আমাকে না অন্যদের বেলাতেও তাই করত। এটা আমাদের গা সওয়া ।
উত্যক্তকারী’ কাজেমউদ্দিন স্যারকে জল চিকিৎসার নামে শায়েস্তা করতে না পারার ব্যর্থতায় এমনি তো মেজাজ বিগড়ে ছিল এরপর হাজেরা আপার স্বেচ্ছায় জলচিকিৎসা নেয়ার প্রস্তাবে আমার মেজাজটা সেদিন লাগাম-ছাড়া হয়ে গেল।
বললাম-আপনি যানতো আপা। ওসব জল চিকিৎসা আপনার দরকার নাই। অসুস্থ বোধ করলে ভালো একজন ডাক্তার দেখান। আমার কথার ঝাঁজে মনে হয় হাজেরা আপারও মেজাজ বিগড়ে গেল। চিৎকার করে বলল-তুমি ডেকে এনে কাজেমউদ্দিন স্যারকে চিকিৎসা করাতে চাও আর আমার বেলায় এত আপত্তি কেন? আমি কি তোর শত্রু?
আপার চিৎকার শুনে রফিক সাহেব আর মিন্নাত আমার সামনে আসল। রফিক সাহেব হাজেরা আপাকে সালাম দিয়ে জিজ্ঞাসা করল-কি আপা? কেমন আছেন?
উত্তরটা আমিই দিলাম।
-রফিক সাহেব, হাজেরা আপা জলচিকিৎসা নিতে এসেছে।
-এটা নিশ্চয় কাজেম স্যার প্রচারণা চালিয়েছেন, রফিক সাহেবের কন্ঠে বিরক্তি।
-তোরা কাজেম স্যারের চিকিৎসা করবি আর আমার বেলায় এত আপত্তি কেন? অ্যাঁ ?
হাজেরা আপাকে চরম অসন্তুষ্ট মনে হচ্ছে ।
মিন্নাত প্রথমে বিষয়টি বুঝতে পারে নাই। হাজেরা আপা যে চিকিৎসা নিতে এসেছে এটা পরে বুঝতে পেরে এমন জোরে হাসি দিল যে তার মুখে যে পান ছিল তার পিক আপার গলায়-বুকে ছিটকে পড়ল।
আপা চিৎকার করে বলে উঠলো-হারামজাদা মিন্নাত, তুমি আমার গায়ে পানের পিক ফেললি?
দেখলাম মিন্নাত একেবারে ভড়কে গেছে। সে বারবার বলতে লাগলো-সরি আপা ,সরি আপা। কিন্তু আপার রাগ কিছুতেই পড়ে না। মিন্নাত উপায়ন্তর না দেখে পকেট থেকে রুমাল বের করে বোকার মতো বলে উঠলো-মুছে দিচ্ছি আপা, মুছে দিচ্ছি।
হাজেরা আপা আরো জোরে চিৎকার করে বরে উঠলো-খবরদার, হারামজাদা গায়ে হাত দিবি না। রীতিমত সিনেমার ডায়ালগ।
সহজ সরল স্বভাবের মিন্নাত এত জোরে ধমক খেয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘামতে লাগলো। তার মুখে বিন্দু বিন্দু ঘামের ফোটা।
হাজেরা আপা এবার রফিক সাহেবকে ধরল-আপনি আমার চিকিৎসা করবেন কিনা বলেন। মরার জালালের আমি কোন ধার ধারি না। না পারেন তো বলে দাও। নামের আগে আমরা জনাব লিখি কিন্তু হাজেরা আপা আঞ্চলিক ঢং-এ নামের আগে প্রায়ই ”মরার” শব্দটি জুড়ে দিত।
এ চিকিৎসা যে ভুঁয়া আর কাজেম উদ্দিন স্যারকে অপদস্থ করার জন্য একটা ফাঁদ তা আমরা হাজেরা আপাকে বলতে পারছিলাম না। কাজেম উদ্দিন স্যারের সাথে কাছাকাছি সিটে বসে চাকরি করে। আপাকে জানালে সে স্যারকে নিশ্চিত বলে দিবে। আমরা ঝামেলায় পড়ে যাব তখন।
শুনেছিলাম জেদী মেয়েরা এমনিতেই ভয়ংকর হয়, তার উপর আবার জেদটা যদি চুড়ান্ত সীমায় গিয়ে পৌঁছে তাহলে তো আর কোনো কথাই নাই ।
জেদী হাজেরা আপার চাপাচাপি ও তার সাথে ভুলবোঝাবুঝি হবার সম্ভাবনাতে রফিক সাহেব বোধ হয় দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ল। দেখলাম সে সিদ্ধান্তের জন্য আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। বুঝলাম আমি বললেই সে এই অপচিকিৎসা শুরু করতে রাজি আছে। আসলে মজার কিছু পেলে রফিক সাহেবের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার জ্ঞান লোপ পায়। কিন্তু আমি তো তখন মারাত্মক ও ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথাই চিন্তা করছি। তাছাড়া সাউন্ড টেস্টের নামে মোমবাতি দিয়ে মারধর করা আর আকণ্ঠ পানি পান করলে আপা তো ভীষণ কষ্ট পাবে। আমি সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না। সবাই চুপচাপ। হাজেরা আপাই নীরবতা ভাঙলো। বললো-ঠিক আছে। থাক তোরা। আর জালাল যে আমার ভালো চায় না সেতো আমি বুঝতেই পারছি,আগে থেকেও জানি। ঠিক আছে যাই। মরার জালালের সাথে আমি আর কোনও সম্পর্ক রাখব না। আপা যেতে উদ্যত হলো।
রফিক সাহেব আপাকে থামিয়ে দিয়ে তার সামনে বসাল। বলল-আপা জালাল সাহেব যা ভাবে ভাবুক, আমি আপনার জল চিকিৎসা করব। তবে আপনি জালাল সাহেবকে ভুল বুঝবেন না। সেটা আমি সহ্য করতে পারব না। আপনি দুপুরে লাঞ্চের বিরতির একটু আগে আসবেন। তবে আমি সবসময় বলব আপনার এ চিকিৎসার দরকার নাই।
আপা হন হন করে চলে গেল। তার যাবার ঢং দেখে মনে হলো চিকিৎসা নিতে আর সে আসবে না।
আমি স্বস্তি পেলাম। এ নিয়ে আর কারো সাথে আলাপও হলো না।
কিন্তু আমার ধারণা ভুল। দুপুরে লাঞ্চের বিরতির আগেই আপা ঠিকই হাজির। চিকিৎসা নিতে প্রস্তুত।
রফিক সাহেব আমার দিকে তাকিয়ে সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল-আপনি খাতা কলম নেন। সাউন্ড টেস্ট এর রিডিং লিখে রাখেন। আর হাবিবকে বলেন জগ ভর্তি পানি রেডি রাখতে।
( চলবে )

বাংলাদেশ সময়: ৯:০৯:৪২ ● ৩০২ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ