রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন;৩১৭ তম পর্ব-জালাল উদ্দীন মাহমুদ

Home Page » সাহিত্য » রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন;৩১৭ তম পর্ব-জালাল উদ্দীন মাহমুদ
মঙ্গলবার ● ২৫ জুলাই ২০২৩


জালাল উদ্দীন মাহমুদ

হাজেরা আপার জল চিকিৎসা-১৫

তিন দিন ছুটি নিয়ে পুরোদমে বিশ্রামে থেকে আপা হাসিমুখে আমাদের সাথে দেখা করতে আসলেন। বললেন- তার শরীর এখন আগের চেয়ে ভালো।এখন হাল্কা হাল্কা লাগে।
ঝড়ে বোধ হয় বক পড়েছে,ফকিরের কেরামতি বেড়েছে।
আপা আসা মাত্রই মিন্নাত আলী আগ্রহভরে আপার পিছনে দাঁড়ায়ে তার কথা শুনছিল। মোটা সাইজের আপার শরীর হাল্কা হাল্কা লাগছে শোনার সাথে সাথে সে সশব্দে হাসতে শুরু করল। মুখে পান ছিল । তার পানের পিক আপার পীঠের দিকের শাড়ীতে লাগল। মিন্নাত শাড়ীতে টোকা দিয়ে দিয়ে তা সরাতে চেষ্টা করল। আপা আজ তেমন রাগল না। নরম গলায় শুধু বলল-তুই আমার সামনে থেকে দূর হয়ে যা। আপা অফিসার সমিতির আসন্ন ইলেকশনের একজন পদপ্রার্থী। আগের মতো রাগ রাগ ভাব আর নাই। ভোটের আগে আরো ভালো মানুষ হবার চেষ্টা করছে। প্রকৃতপক্ষেও সে একজন ভালো মানুষ। পানের পিকের জন্য একদিন অবশ্য মিন্নাতকে বকেছিল । কিন্তু ভোটের আগে দিয়ে আপা কারো সাথে ঝগড়া, মনোমালিন্য করতে রাজি নয়। তাই একদিকে যেমন আজ মিন্নাতকে কড়া ধমক দিচ্ছে না তেমনি চিকিৎসার বিষয়টি আপস রফার দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন। আপা রাজি হলো যে, মোমবাতি দ্বারা আঘাত করা ও আকন্ঠ পানি পান করার বিষয়টি আর ডিজিএম স্যারের কানে তুলবে না। স্টাফ অফিসারের কাছ থেকে আরো দুইদিনের ছুটি নিয়ে বাসায় গিয়ে ফুলরেস্ট নিবে।
আপা আমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যাবার সাথে সাথে রফিক সাহেব আমার কাছে এসে বসল। তার চোখে মুখে সদ্য বিপদমুক্ত হবার সুস্পষ্ট ছাপ। আমিও যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম।
এমন সময় লেডিস কর্নারের ইনচার্জ জাঁহানুর আমাদের সামনে এসে দাঁড়াল। তার চোখে মুখে চরম বিরক্তির ভাব। রফিক সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলল –
-একটা কথা বলতে চাই রফিক ভাই।
-কী কথা ?
-আপনারা হাজেরা আপার সাথে এই যে তামাশা করলেন এটা কি ঠিক করেছেন ? আমি পিওন হাবিবের কাছ থেকে সব শুনেছি।
বুঝলাম ঘটনাটা জানাজানি হয়ে গেছে । আস্তে আস্তে সবাই জানবে । সবার কথা না হয় পরে ভাবা যাবে- আপাতত জাঁহানুরকে সামলাই ।
আমরা সমবেতভাবে তাকে বোঝালাম আমরা এসব করতে চাইনি । হাজেরা আপা স্বেচ্ছায় ধরা খেয়েছে। আমরা দুষ্ট কাজেম উদ্দিন স্যারকে জব্দ করতে চাই ।
-আর একটা কেলেঙ্কারি করা বাকী আছে ? না ?
-কেলেঙ্কারি ? কিসের কেলেঙ্কারি ?
-হাজেরা আপাকে নিয়ে একটা ঘটনা তো ঘটেছে। এখন কি আর কাজেম উদ্দিন স্যার কে নিয়ে এসব করা আর উচিৎ হবে ? আগে তারটা হলে না হয় কথা ছিল। একই ভুল করে বারবার সর্বনাশ ডেকে আনা কি ঠিক ? ভেবে দেখবেন রফিক ভাই।
জাঁহানুর চলে গেল। স্পষ্টই বোঝা গেল তার কথা-বার্তা রফিক সাহেবের উপর প্রভাব ফেলেছে ।
রফিক সাহেব জানাল কাজেমউদ্দিন স্যার যা খুশি করুক। সে আর এখন এসব জল চিকিৎসার মধ্যে নাই। রফিক সাহেবের কথা শুনে মিন্নাত অপ্রত্যাশিতভাবে হাত তালি দিয়ে বলে উঠলো-উচিৎ শিক্ষা হয়েছে এবার। এরপর স্বভাব সুলভ ভঙ্গিতে হাসতে হাসতে চেয়ারে ঢলে পড়ল। কার উচিৎ শিক্ষা হয়েছে তা কিন্তু সে পরিস্কার করে বলল না। মনে হয় রফিক সাহেবকে ইঙ্গিত করেছিল সেদিন।
/////
দুইদিন পর ছুটি থেকে ফিরে এসে আপা দেখা করতে আসল। রফিক সাহেবের চিকিৎসায় সে নাকি সন্তুষ্ট। এখন নাকি তার অনেক ভালো লাগছে। এর আগে কয়েক রাত ঘুমাতে না পেরে সে অসুস্থবোধ করায় রফিক সাহেবের কাছে চিকিৎসা নিতে এসেছিল । শুধু কাজেম উদ্দিন স্যারের কথাতেই সে আসেনি। আসলেই তার চিকিৎসার দরকার ছিল। সে এখন ভালো বোধ করছে। রফিক সাহেবকে ধন্যবাদ জানাতে এসেছে।
তা হলে তো প্রমাণিত হল ঝড়ে বক মরে ফকিরের কেরামতি বাড়ে। রেস্ট নিয়ে সে ভালো হলেও রফিক সাহেবের চিকিৎসার জন্য সে ভালো হয়েছে বলে মনে করছে। বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর। আপা বিশ্বাস করেছে তাই সে আমাদের চিকিৎসা নিয়ে কোনো তর্কে জড়াতে চায় না। শুধু আর একবার রফিক সাহেবের চিকিৎসা নিতে আগ্রহী।
ন্যাড়া কয়বার আর বেল তলায় যাবে। তার চিকিৎসা করে আমাদের চাকরি যাবার যোগাড় । উপস্থিত বুদ্ধি আর ভাগ্য গুণে আমরা আপাতত রক্ষা পেয়েছি। তাই চিকিৎসা তো দুরে থাক -এ নিয়ে আমরা আর আলাপ করতেও আগ্রহী নই ।কিন্তু আপার মুখের উপর সরাসরি না বলি কেমনে ?
বাঙালির নাকি তিন হাত ডানহাত- বামহাত আর অজুহাত । আমিও একটা অজুহাত বের করে বললাম-আপনি আলামত হিসাবে মোমবাতি ফেরৎ চাওয়ায় রফিক সাহেব মাইন্ড করেছেন। আর চিকিৎসা করবেন না। পাশের টেবিল থেকে রফিক সাহেব গুরু-গম্ভীর কন্ঠে কৃত্রিমভাবে বলে বসল-সে জীবনে কোনদিন আর জল-চিকিৎসা করবেন না। পরোপকার করতে গেলে নিজের ক্ষতি হয়। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল , বুঝলেন জালাল সাহেব , যেচে কাউকে উপকার করতে নাই - তাহলে আপনি নিজেই বিপদে পড়বেন। রফিক সাহেবের অভিনয় দেখে আমার হাসি পেল। হাসি চেপে রেখে আমি মাথা দুলিয়ে তার কথাতে সায় দিলাম।
হাজেরা আপা অনেক অনুরোধ করল। চিকিৎসার ফলে রোগ ভালো হলে সবাই যে আমাদের জন্য দোয়া করবে-তাও বোঝাতে চেষ্টা করল। কিন্তু রফিক সাহেবের ঐ এক কথা। সে আর চিকিৎসা করবে না। সে কবিরাজি ছেড়ে দিবে।
( চলবে )

বাংলাদেশ সময়: ২০:২৫:৩৩ ● ৩০৯ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ